কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ উইসকনসিনে জেতার পর তার জয় নিশ্চিত হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট, কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৪টি।
ট্রাম্প কোথায় জিতলেন?
ট্রাম্প উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, ওহাইও এবং টেক্সাসে জিতেছেন। ওহাইওতে ১৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে। টেক্সাসে আছে ৪০টি। দুই রাজ্যেই গতবার ট্রাম্প জিতেছিলেন। তবে বারাক ওবামা ২০০৮ ও ২০১২-তে ওহিওতে জিততে পেরেছিলেন।
ডেমোক্র্যাটদের আশা ছিল, তারা টেক্সাস ছিনিয়ে নিতে পারবে। কারণ, এখানে শহর ও আধা শহরের সংখ্যা বেশি। কিন্তু টেক্সাস রিপাবলিকান ট্রাম্পের সঙ্গেই থেকেছে।
ট্রাম্প নর্থ ও সাউথ ডাকোটা, লুইসিয়ানা, ওয়াইওমিংয়ে জিতেছেন। তিনি কানসাস ও আইওয়াতেও জিতেছেন।
মিয়ামি থেকে ডিডাব্লিউর সাংবাদিক বেঞ্জামিন আলবারেজ গ্রুবের জানিয়েছেন, সেখানে রাস্তায় প্রচুর ট্রাম্প সমর্থক জড়ো হয়েছেন। তারা গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছেন। রিপাবলিকানদের পতাকা হাতে নিয়ে ঘুরছেন। মিয়ামির বিখ্যাত কিউবান রেস্তোরাঁ ভরে আছে ট্রাম্পের সমর্থকে।
ট্রাম্পের এক নারী সমর্থক জানিয়েছেন, তিনি কড়া ধাঁচের মানুষ। অ্যামেরিকার এখন এরকম একজন নেতা চাই।
আরেক নারী বলেছেন, ''কোভিডের আগে সবকিছু ভালো ছিল। গত তিন বছরে কিছুই হয়নি। আমরা সেই সময়ে ফিরে যেতে চাই।''
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: যে রাজ্যগুলোর ফলাফল পার্থক্য গড়ে দেবে
কমলা হ্যারিস না ডনাল্ড ট্রাম্প কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা নির্ধারিত হতে পারে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাজ্যর ফলাফলে৷ এই রাজ্যগুলো পরিচিত ‘সুইং স্টেট’ নামে৷
ছবি: Mario Tama/Getty Images
সুইং স্টেট কেন গুরুত্বপূর্ণ
যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫০টি রাজ্য৷ প্রতিটির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট৷ কোন একটি রাজ্যে যেই প্রার্থী জয়ী হবেন তিনি সবকটি ইলক্টোরাল ভোট পাাবেন৷ ব্যতিক্রম শুধু মেইন ও নেব্রাস্কা৷ বেশিরভাগ রাজ্যেই কে এগিয়ে সেটি সমর্থনের ভিত্তিতে ও জরিপের মাধ্যমে আগেভাবে ধারণা করা যায়৷ কিন্তু কয়েকটি রাজ্য আছে যেগুলোতে অনুমান করা কঠিন৷ ‘সুইং স্টেট’ নামে পরিচিত এই রাজ্যগুলোতেই মনযোগ এখন দুই প্রার্থীর শিবিরের৷
ছবি: Nathan Posner/Anadolu/picture alliance
কোন রাজ্যগুলো
সময়ের সাথে সাথে সুইং স্টেটের পরিবর্তন হয়েছে৷ জনসংখ্যা বা ইস্যুর কারণে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য এমন সুইং স্টেটের তালিকায় ঢুকেছে৷ চলতি বছর গর্ভপাতের অধিকারের মতো অভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি রাজ্যগুলোর নিজস্ব ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ দেখে নিন কোন রাজ্যগুলো এবার ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷
ছবি: Paul Sancya/AP/picture alliance
অ্যারিজোনা
মেক্সিকো সীমান্তবর্তী অ্যারিজোনা রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অনিয়মিত অভিবাসন৷ বাইডেন প্রশাসনে এই সীমান্তের অভিবাসন সংকট সমাধানের দায়িত্ব ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কাঁধে৷ অনেকে মনে করেন তিনি তাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ট্রাম্প এই ব্যাপারে হ্যারিসকে আক্রমণ করার সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করছেন না৷ অ্যারিজোনার ভোটারদের এক তৃতীয়াংশ হিস্পানিক৷ এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট ১১টি৷ গতবার জিতেছিলেন বাইডেন৷
ছবি: Go Nakamura/REUTERS
জর্জিয়া
১৯৯২ সালের পর গত নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো কোন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে জর্জিয়ায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র দশমিক দুই শতাংশ৷ এই রাজ্যের ৩৩ শতাংশ ভোটার কৃষ্ণাঙ্গ, যা কমলা হ্যারিসের পক্ষে যেতে পারে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় এই রাজ্যের নির্বাচনের ফল পাল্টানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে, যার বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে৷ রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট ১৬টি৷
ছবি: John Moore/Getty Images
মিশিগান
ফোর্ড, জেনারেল মোটর্স, ক্রাইসলারের মতো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা মিশিগান৷ গত বছর বাইডেন এই রাজ্যে জিতে অ্যামেরিকার বাজারে চীনের ইলেক্ট্রিক গাড়ি রুখতে বিশাল অঙ্কের করারোপ করেন৷ রাজ্যের ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ আরব-অ্যামেরিকান৷ এবার গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নতুন করে তাদের সমর্থন আদায়ের চ্যালেঞ্জ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সামনে৷ রাজ্যটির ইলক্টোরাল ভোট ১৫টি৷
ছবি: Scott Olson/Getty Images
নেভাদা
দক্ষিণ সীমান্তবর্তী রাজ্য নেভাদার জন্যেও অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ এক ইস্যু৷ এখানকার জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হিস্পানিক৷ রাজ্যটি অতিমাত্রায় পর্যটননির্ভর৷ বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্য সুইং রাজ্যগুলোর মধ্যে নেভাদার অর্থনীতিই সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে৷ একইসাথে সব রাজ্যের মধ্যে নেভাদাতে বেকারত্বের হারও শীর্ষে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনে নেভাদায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন৷ ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ছয়টি৷
সুইং স্টেটের তালিকায় নবীনতম রাজ্য নর্থ ক্যারোলিনা৷ জুলাইতে বাইডেন সরে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত ট্রাম্প এখানে এগিয়ে ছিলেন৷ হ্যারিস সেই ব্যবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হন৷ গত ১১টি নির্বাচনে এখান থেকে মাত্র একবার জিতেছেন ডেমোক্রেটরা৷ গত তিন দশকে এখানকার জনসংখ্যায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে৷ শ্বেতাঙ্গদের হার ৭৫ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৬০ শতাংশে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনে ১৬ ইলোক্টোরাল ভোটের রাজ্যটিতে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Evan Vucci/AP/dpa/picture alliance
পেনসিলভেনিয়া
অন্য রাজ্যের তুলনায় পেনসিলভেনিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চাপ বেশি৷ প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনে ফ্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরে টেক্সাসের পর এটি সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী রাজ্যে পরিণত হয়েছে৷ ট্রাম্পের অবস্থান ফ্র্যাকিংয়ের পক্ষে৷ হ্যারিস শুরুতে বিপক্ষে থাকলেও এখন বিকল্প খোলা রাখার পক্ষে৷ ১০ সেপ্টেম্বর এই রাজ্যে বিতর্কে মুখোমুখি হন ট্রাম্প-হ্যারিস৷ ১৯ ইলেক্টোরাল ভোটের রাজ্যটিতে ২০২০ সালে জিতেছেন বাইডেন৷
ছবি: Win McNamee/Getty Images
উইসকনসিন
গত দুইটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়া রাজ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল উইসকনসিন৷ প্রতিবারই মাত্র ২৫ হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়েছেন এখানকার ভোটাররা৷ এখানকার প্রতিটি ভোটই তাই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ এই রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ১০৷ দশমিক ছয়-তিন শতাংশ ভোটের ব্যবধানে ২০২০ সালের নির্বাচনে জিতেছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
9 ছবি1 | 9
এক পুরুষ সমর্থক বলেছেন, ''ট্রাম্পই চাকরি দিতে পারেন।''
হ্যারিস যেখানে জিতলেন
কমলা হ্যারিস নিউ ইয়র্কে জিতেছেন। এই রাজ্য সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে থাকে। তিনি ইলিনয়ে জিতেছেন। এখানে প্রচুর গ্রামীণ এলাকা থাকলেও শিকাগোর মতো শহর আছে। ডেমোক্র্যাটরা তাই এই রাজ্য থেকে সচরাচর জিতে থাকেন। এখানে ১৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিজের রাজ্য ডেলাওয়ারে হ্যারিস জিতেছেন। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে থাকা আরেক রাজ্য নিউ জার্সিতেও হ্যারিস জিতেছেন।
হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটনে জিতেছেন। তিনি ম্যাসাচুসেটস, রোডস আইল্যান্ড, কানেকটিকাটে জিতেছেন। তিনি ওরেগন জিততে চলেছেন।
জর্জিয়ার মধ্যবয়সি নারীর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন তিনি হ্যারিসকে পছন্দ করেন, তার জবাব ছিল, কারণ, তিনি সব বিষয়ে ট্রাম্পের একেবারে উল্টো অবস্থানে আছেন।
এখানেই একটি পোস্টারে লেখা, 'আপনারা কি ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট চান, নাকি ম্যাডম্যান প্রেসিডেন্ট চান?'
ওয়াশিংটন ডিসি সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের শক্ত জমি। সারাদিন ধরে ভোটদাতাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে মনে হয়েছে, এখানে অন্তত প্রচুর মানুষ কমলা হ্যারিসকে ভোট দিচ্ছেন।
মার্কিন নির্বাচন: ইলেক্টোরাল কলেজ কী?
01:19
কত সময় লাগবে?
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটগণনার ক্ষেত্রে অনেকটা সময় লাগে। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ব্যবধান খুব কম হলে আবার গণনা হয়। ফলে তার জন্য সময় লাগে। তাই এই ভোটগণনায় সময় লাগবে।