যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেই নাগরিক হয়ে যাওয়ার সুবিধা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘জন্ম অভিবাসন' রুখতে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ভিসা পাওয়া কঠিন করা হবে৷
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই ‘অবৈধ অভিবাসন' বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এর ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রে আসছে নারীদের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার প্রবণতা বন্ধের উদ্যোগ৷
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাজিজ-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ‘জন্ম অভিবাসন' আইনের সুবিধা নিয়ে অন্য দেশ থেকে আসা নারীরা ৩৩ হাজার শিশুর জন্ম দিয়েছেন৷ ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৩৮ লাখ শিশু জন্ম নিয়েছিল৷
এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিদেশ থেকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ভিসা পেতে সহায়তা করে এমন তিনটি নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়৷
মার্কিন সীমান্ত যখন ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’
উন্নত জীবনের আশায় প্রতি বছর মধ্য অ্যামেরিকা থেকে অসংখ্য মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন৷ অভিবাসন থামাতে মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া নীতি সত্ত্বেও তাঁদের অনেকেই হার মানতে প্রস্তুত নন৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
অ্যামেরিকায় প্রবেশের স্বপ্ন
হাতে গোনা যে কয়েকজন শরণার্থী এ যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে, ১৫ বছর বয়সি হন্ডুরাসের বায়রন গার্সিয়া তাদের অন্যতম৷ ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সেও হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে অ্যামেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamayo
পথের শেষে অপেক্ষা
সবার এমন সৌভাগ্য হয় না৷ মেক্সিকোর উত্তরে সীমান্তে অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই৷ মার্কিন সীমান্তের কাছে টিহুয়ানা শহরে তাঁবু খাটিয়ে শীতের মধ্যেও খোলা আকাশের নীচে তাদের রাত কাটাতে হয়৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
আপদকালীন সাহায্য
ল্যাটিন অ্যামেরিকার এই শরণার্থীদের অনেকে প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন৷ প্রায় সহায়সম্বলহীন এই মানুষগুলির জন্য টিহুয়ানা শহরে খাদ্যের ব্যবস্থা করেন সাহায্যকারীরা৷ অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হবে, এমন আশায় অপেক্ষা করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamayo
টিহুয়ানায় আগমন
২০১০ সাল থেকে ‘পুয়েবলো সিন ফ্রন্তেরাস’ সংগঠন শরণার্থীদের এই ‘ক্যারাভ্যান’ আয়োজন করে আসছে৷ এভাবে তারা অভিবাসীদের সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়৷ মার্কিন কর্তৃপক্ষ অবশ্য খুব কম মানুষকে সে দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Duenes
হিংসালীলা থেকে দূরে
মূলত হন্ডুরাস, এল সালভাদোর ও নিকারাগুয়া থেকেই বেশিরভাগ মানুষ এই যাত্রায় যোগ দেন৷ তাঁদের অনেকেই নিজেদের দেশে স্থানীয় মাফিয়ার হত্যার হুমকি, জোর করে অর্থ আদায় ও হিংসার শিকার হয়েছেন৷ রাজনৈতিক নিপীড়নের ঘটনাও বিরল নয়৷
ছবি: Getty Images/D. McNew
কূটনৈতিক সংকট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে ন্যাশানাল গার্ড বাহিনীকে সীমান্তে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অ্যামেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যে কূটনৈতিক সংকটের ফলে উদ্যোক্তারা যাত্রা বন্ধ করে দেন৷ তবে প্রায় ৬০০ মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে টিহুয়ানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Heng
মরিয়া প্রচেষ্টা
কয়েকজন শরণার্থী মরিয়া হয়ে সীমান্তের কাঁটাতার পেরোনোর চেষ্টা করেছেন৷ ‘পুয়েবলো সিন ফ্রন্তেরাস’ সংগঠনের এক সদস্যের মতে, এই শরণার্থীরা যে অপরাধী বা সন্ত্রাসবাদী নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তা দেখিয়ে দিতে চান তাঁরা৷ তাঁর মতে, ভয়ভীতি ছাড়া বাঁচার তাগিদেই মানুষ এমন কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamajo
সাফল্যের সম্ভাবনা কম
বেশিরভাগ শরণার্থীর জন্য অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে সত্যি কম৷ একটি সূত্র অনুযায়ী গত বছর মার্কিন কর্তৃপক্ষ এল সালভাদোর, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালার ৭৫ থেকে ৭৯ শতাংশ শরণার্থীদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কয়েক বছরও অপেক্ষা করতে হয়৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ
যাবতীয় প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষ মার্কিন সীমান্তে অপেক্ষা করতে প্রস্তুত৷ সীমান্ত কর্তৃপক্ষ আরও মানুষকে প্রবেশ করতে দেবে, তাদের মনে এই আশা ও প্রার্থনা কাজ করে৷ সেই সুযোগ পেলে তবেই আশ্রয়ের আবেদন করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
9 ছবি1 | 9
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থে বি-ওয়ান এবং বি-টু ভিসা নিয়ে অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরতে এসে সন্তান জন্ম দেয়ার মাধ্যমে নাগরিত্ব নেয়া রুখতে হবে৷ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম বিবৃতিতে বলেন, ‘‘জন্ম অভিবাসন শিল্প মূল্যবান হাসপাতাল সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, অপরাধকর্ম বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে৷''
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, দেশে জন্ম নেয়া সব শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পেয়ে যায়৷
নতুন আইনে কনসুলার অফিসারদের সন্দেহ হলে কারো বি ক্যাটাগরির ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন৷তবে ভিসাপ্রার্থী অন্তঃসত্ত্বা কিনা তা জানতে সরাসরি প্রশ্ন করা যাবে না বা কোনো পরীক্ষাও করানো যাবে না৷
যুক্তরাষ্ট্র নয়, মেক্সিকোতে যাচ্ছেন মধ্য অ্যামেরিকার অভিবাসীরা
যুক্তরাষ্ট্রে নর্দার্ন ট্রায়াঙ্গেল বা গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস আর এল সালভাদর-এর বেশিরভাগ অভিবাসী মেক্সিকোতে যাওয়ার এবং সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত তাদের৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
যুক্তরাষ্ট্র আর প্রথম পছন্দ নয়
মেক্সিকোর গুয়াতেমালা সীমান্তের কাছে টেনোসিক এ আশ্রয় কেন্দ্রের শরণার্থী এই ব্যক্তি, যিনি হন্ডুরাস থেকে এসেছেন৷ তিনি জানালেন তার পরিকল্পনা ছিল পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাকাপাকিভাবে থেকে যাওয়া৷ কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সব বদলে গেছে৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মেক্সিকোতে দীর্ঘ সময় থাকা
গুয়াতেমালার কনসেপসিওন বাওতিস্তা তার নবজাতক সন্তানকে নিয়ে একই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন৷ তিনি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু তারা বর্তমানে মেক্সিকোতে থাকার কথাই ভাবছেন৷ কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর অভিবাসন নীতি কীভাবে কাজ করে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মেক্সিকো: যা একসময় ট্রানজিট দেশ ছিল
...তবে সময় যাওয়ার সাথে সাথে তিনি বুঝতে পেরেছে মেক্সিকোতে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে৷ মেক্সিকোর টেনোসিক আশ্রয়প্রার্থীদের তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে এদের মধ্যে খুব কম মানুষই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী৷ অনেকে তাদের দরিদ্র, সহিংসতার দেশে ফিরে যাচ্ছে৷ আর বেশিরভাগই মেক্সিকোতে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে৷ মেক্সিকো আসলে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ট্রানজিট দেশ৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
কঠোর অভিবাসন নীতি
ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে৷ ক্যালিফোর্নিয়ায় কৃষকরা মূলত মেক্সিকো থেকে কর্মী আনত চাষবাসের সময় এবং ফসল তোলার সময়৷ কিন্তু এই নীতির কারণে মেক্সিকোর অনেক মানুষ নিজের দেশেই কাজ যোগাড় করছে৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
২০১৭ সালে মেক্সিকোতে রেকর্ড ২২,৫০০ আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন জমা পড়েছে
টেনোসিকের শরণার্থী কেন্দ্রে মধ্য অ্যামেরিকা থেকে আসা শরণার্থীরা ফুটবল খেলছে৷ ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর মেক্সিকোতে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের সংখ্যা ১৫০ ভাগ বেড়েছে৷ তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার চেয়ে ক্যানাডায় যেতে আগ্রহী হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মানবপাচারকারীদের অর্থ চাহিদা বাড়ছে
গুয়াতেমালা সীমান্তের কাছে প্রত্যন্ত একটি এলাকায় দুই অভিবাসন প্রত্যাসী অভিবাসন কর্মকর্তাকে ফাঁকি দিয়ে অ্যামেরিকায় পালানোর চেষ্টা করছিলো৷ গুয়াতেমালার এক ব্যক্তি জানিয়েছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মানবপাচারকারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ দাবি করছে৷ কয়েক বছর আগে যেখানে একজনকে পাঠাতে ৬ হাজার মার্কিন ডলার নিতো, বর্তমানে সেখানে ১০ হাজার ডলার নিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মেক্সিকোর সব অভিবাসীরা বাড়ি ফিরতে চায় না
মেক্সিকোর অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে মধ্য অ্যামেরিকা থেকে আসা শরণার্থীরা প্রায়ই প্রত্যন্ত এলাকা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে এবং ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত ডিসেম্বরে ফেরত পাঠানো হয়েছে এমন এক ব্যক্তি জানালেন, আমরা অনেকবার উত্তর অ্যামেরিকায় গিয়েছি, প্রত্যেকবারই যাওয়াটা ভীষণ কষ্টকর ছিল৷