বৃহস্পতিবার সকাল৷ অরেগন রাজ্যের রোজবার্গ শহরের আম্পকোয়া কমিউনিটি কলেজ৷ সশস্ত্র আততায়ী একটি ক্লাসে ঢুকে ন'জনকে হত্যা করে, আহত হন সাতজন৷ আততায়ী নিজেও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমার মুখে তার নাম কোনোদিন শুনবেন না’’: শেরিফ জন হ্যানলিন
01:52
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারা অনুযায়ী, ২৬ বছর বয়সি হত্যাকারীর নাম ইতিমধ্যেই মিডিয়ায় প্রকাশ হয়ে গেছে, যদিও কর্তৃপক্ষ এখনও সরকারিভাবে তার নাম ঘোষণা করেননি৷ ডগলাস কাউন্টি শেরিফ জন হ্যানলিন একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, তিনি আততায়ীর নাম ঘোষণা করে তার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য সফল হতে দিতে চান না৷
সিএনএন-এর খবর অনুযায়ী আততায়ীর সাথে ছিল তিনটি হ্যান্ডগান ও একটি ‘‘লং গান''; সে বডি আর্মার পরে ছিল৷ আততায়ী দৃশ্যত ভীত ছাত্রদের একের পর এক উঠে দাঁড়িয়ে তাদের ধর্ম কী, তা বলতে বলে – তারপর তাদের একের পর এক গুলি করে মারে৷ এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী আততায়ী লেকচার হলে ঢোকার পরেই অধ্যাপককে অতি কাছ থেকে গুলি করে মারে৷
তারপর সে অকুস্থলে দাঁড়িয়ে উপস্থিত ছাত্রদের একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে: ‘‘তুমি কি খ্রিষ্টান? যদি তুমি খ্রিষ্টান হও, তবে তুমি উঠে দাঁড়াও৷ যেহেতু তুমি খ্রিষ্টান, সেহেতু তুমি ঈশ্বরকে আর এক সেকেন্ডের মধ্যেই দেখতে পাবে৷'' তারপর সে গুলি চালায়; এইভাবে একজনের পর একজনকে হত্যা করে৷
অরেগন-এর হত্যাকাণ্ড ধরলে, যুক্তরাষ্ট্র্রে এ বছর ২৯৪টি ‘মাস শুটিং' বা এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে, বলে জানাচ্ছে মাস শুটিং ট্র্যাকার ওয়েবসাইট, একটি ক্রাউড-সোর্সড ডাটাবেজ৷ যুক্তরাষ্ট্রের শিথিল আগ্নেয়াস্ত্র আইনের বিরোধীরা এই ওয়েবসাইটটি চালান৷
স্বয়ং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি৷ ‘‘এ যেন গতানুগতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে'', বলেছেন ওবামা৷ ‘‘এ নিয়ে খবর করা গতানুগতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে আমার প্রতিক্রিয়া জানানোটাও গতানুগতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আমরা যেন অবশ হয়ে পড়েছি৷''
‘‘আমার মুখে তার নাম কোনোদিন শুনবেন না’’: শেরিফ জন হ্যানলিন
01:52
This browser does not support the video element.
প্রেসিডেন্ট তাঁর বার্তায় মার্কিন গান লবিকেও এক হাত নিয়েছেন৷ ‘‘এই মুহূর্তে নানা ধরনের প্রেস রিলিজ ছাড়া হচ্ছে, বলে আমি ধরে নিতে পারি৷ ‘আমাদের আরো বন্দুক চান', হবে একটি যুক্তি, ‘আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা আইনের সংখ্যা কমাও৷' সেটা কি কেউ বিশ্বাস করে?'', বলেছেন ওবামা৷
‘‘অ্যামেরিকায় আজ প্রতিটি পুরুষ, মহিলা অথবা শিশুকে ধরলে, সকলের মাথাপিছু অন্তত একটি করে বন্দুক আছে৷ কাজেই আরো বেশি বন্ধুক আমাদের নিরাপত্তা বাড়াবে, এই যুক্তি কি আন্তরিকভাবে উত্থাপন করা চলে?'' প্রশ্ন করেছেন বারাক ওবামা৷
‘প্লিজ গুলি কোরো না’
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷