যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে আবার গুলি চললো। উইসকনসিনে অপ্রাপ্তবয়স্ক পড়ুয়ার গুলিতে মৃত দুই, আহত ছয়। পড়ুয়াও মারা গেছে।
গুলিচালনার ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ স্কুলে পৌঁছায়। ছবি: Cullen Granzen/REUTERS
বিজ্ঞাপন
উইসকনসিনের ম্যাডিসনে বেসরকারি স্কুল অ্যাবান্ডান্ট লাইফ খ্রিস্টান স্কুলে এই গুলিচালনার ঘটনা ঘটে। এই স্কুলে চারশ জন ছাত্রছাত্রী পড়ে। কিন্ডারগার্টেন থেকে ১২ ক্লাস পর্যন্ত পড়ানো হয়।
ম্যাডিসনের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, গুলিচালনার ঘটনায় যে ছয়জন আহত হয়েছেন, তার মধ্যে দুইজনের অবস্থা সংকটজনক। দুইজন সামান্য আহত হয়েছিলেন। তাদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়। বন্দুকধারীর গুলিতে মৃত দুইজনের মধ্যে একজন শিক্ষক।
ম্যাডিসনের পুলিশ প্রধান শন বার্নেস বলেছেন, বন্দুকধারীর হাতে হ্যান্ডগান ছিল। তাকে ঘটনাস্থলে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
তার বা অন্য যারা মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন, তাদের পরিচয় জানায়নি পুলিশ। এমনকী বন্দুকধারী ছেলে না মেয়ে সেকথাও জানানো হয়নি। কেন সে গুলি চালিয়েছিল, সেটাও জানাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ যা বলেছে
বার্নেস জানিয়েছেন, অভিযুক্ত বন্দুকধারী স্কুলের পড়ুয়া। সে তার হ্যান্ডগান দিয়ে হামলা করেছে। তাকে ঘটনাস্থলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি।
ঘটনা ক্লাসরুমের ভিতরে না বাইরে হয়েছে, সেটাও পুলিশ জানায়নি।
বার্তাসংস্থা এপি ও মার্কিন মিডিয়া সিএনএন পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, আক্রমণকারী একজন ১৭ বছর বয়সি মেয়ে। সে প্রথমে অন্যদের উপরে হামলা করে। পরে নিজেকে গুলি করে।
যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে গুলির ঘটনায় মামলা ও তার পরিণতি
যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে গুলির ঘটনায় বিভিন্ন সময় মামলা হয়েছে৷ এসব মামলার রায় কী হয়েছে, জানবো ছবিঘরে৷
দুই শিক্ষার্থীর হামলায় এক শিক্ষকসহ ১৩ জন নিহত হয়েছিল৷ এরপর স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছিল৷ কিন্তু সরকারি ইমিউনিটির কারণ দেখিয়ে প্রায় সবগুলোই খারিজ করে দেয়া হয়৷ শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে নিহত শিক্ষকের মেয়ের করা মামলাটি চলেছিল৷
ছবি: MARK LEFFINGWELL/AFP/Getty Images
আপস
শিক্ষকের মেয়ের অভিযোগ ছিল, হামলাকারীদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও পুলিশ তার বাবার চিকিৎসা করতে চিকিৎসকদের সেখানে যেতে দেয়নি৷ মামলাটি সাড়ে ১৩ কোটি টাকায় রফা হয়েছিল৷ নিহতদের পরিবারেরাও দুই হামলাকারীর পরিবার ও হামলাকারীদের বন্দুক পেতে সহায়তা করা দুই ব্যক্তির সঙ্গে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় আপস করেছিল৷
ছবি: BOULDER DAILY CAMERA/AFP/Getty Images
রেড লেক সিনিয়র হাইস্কুল, মিনেসোটা, ২০০৫
সাবেক শিক্ষার্থী জেফ ওয়াইজের হামলায় সাতজন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ আহত হয়েছিলেন কয়েকজন৷ হতাহতদের পরিবার স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নয় কোটি ও স্কুলে সংকটকালীন সমস্যা মোকাবিলার পরিকল্পনা তৈরি করা একটি কোম্পানির সঙ্গে ১৩ কোটি টাকায় আপস করেছিল৷
ছবি: JEFF HAYNES/AFP/Getty Images
ভার্জিনিয়া টেক ইউনিভার্সিটি, ২০০৭
শিক্ষার্থী সেয়ুং-হুইয়ের হামলায় ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন৷ আহত ২৩ জন৷ হতাহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার স্কুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল৷ কিন্তু ২০১৩ সালে ভার্জিনিয়া সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, তৃতীয় পক্ষের কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করার আইনি দায়িত্ব স্কুলের নয়৷
ছবি: Tannen Maury/dpa/picture-alliance
স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুল, কানেক্টিকাট, ২০১২
অ্যাডাম লানজার গুলিতে ছয় ও সাত বছর বয়সি ২০ জন শিশু ও ছয়জন স্টাফ প্রাণ হারান৷ নিহত পাঁচ শিশু ও চার স্টাফের পরিবার হামলায় ব্যবহার করা বুশমাস্টার এআর-১৫ রাইফেল প্রস্তুতকারক রেমিংটন আর্মসের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল৷ পরে সেটি সাড়ে ছয়শ কোটি টাকায় রফা হয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রে গুলির ঘটনায় কোনো অস্ত্র প্রস্তুতকারকের আপসে যাওয়ার এটিই প্রথম ঘটনা৷
সাবেক শিক্ষার্থী নিকোলাস ক্রুজের হামলায় তিনজন স্টাফ ও ১৪ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারান৷ হামলার সময় স্কট পেটারসন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা স্কুলে দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন৷ কিন্তু গোলাগুলি চলার সময় তিনি বাইরে থাকায় ব্যাপক সমালোচিত হন৷ পরে তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার মামলা করা হয়৷ এ বছরের শেষে বিচার শুরু হওয়ার কথা৷
ছবি: WPLG-TV/dpa/picture-alliance
সান্তা ফে হাইস্কুল, টেক্সাস, ২০১৮
শিক্ষার্থী দিমিত্রিয়স প্যাগুর্টজিসের শটগান ও রিভলবার দিয়ে চালানো হামলায় ১০ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হন৷ নিহত দুইজনের পরিবার হামলাকারীর পরিবারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিরাপদে না রাখার অভিযোগে মামলা করেছে৷ এছাড়া বয়স পরীক্ষা করে না দেখে অস্ত্র বিক্রি করায় অস্ত্র বিক্রির অনলাইন পোর্টাল লাকিগানার ডটকমের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে নিহত কয়েকজনের পরিবার৷ দুটি মামলারই প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষায় আছে৷
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, সমীক্ষা অনুসারে স্কুল বা অন্যত্র যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের মধ্যে তিন শতাংশ নারী, বাকিরা সকলেই পুরুষ।
বার্নেস জানিয়েছেন, অভিযুক্তের পরিবার তাদের সবধরনের সাহায্য করছে।
স্কুলের ডিরেক্টর অফ রিলেশনস বারবারা উইয়ার্স বলেছেন, একমাস আগেই স্কুলে অ্যাকটিভ শুটার প্রশিক্ষণ হয়েছিল।
তিনি জানিয়েছেন, স্কুলের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পুলিশ অফিসার নেই। তবে আক্রমণের সময় পড়ুয়ারা খুবই ভালোভাবে পরিস্থিতি সামলেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বার্নেস বলেছেন, ''আজ শুধু ম্যাডিসনের জন্য নয়, অ্যামেরিকার জন্যই দুঃখের দিন। এই ঘটনা আমাদের সমাজে সহিংসতার কথা মনে পড়িয়ে দেয়। ওই স্কুলবাড়ির প্রতিটি পড়ুয়া এই ঘটনায় চিরদিনের মতো প্রভাবিত হবে। সারা জীবন ধরে তাদের মনে এই আতঙ্ক থেকে যাবে।''
২০২৪ সালের ৩২২তম ঘটনা
কে-১২ স্কুল শুটিং ডেটাবেস ওয়েবসাইট অনুসারে, ম্যাডিসনে এই গুলিচালনার ঘটনা হলো এই বছরে স্কুলে গুলিচালনার ৩২২তম ঘটনা। অ্যামেরিকার ইতিহাসে স্কুলে গুলিচালনার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছিল গতবছর। তারপরই দুই নম্বরে থাকবে ২০২৪ সালে ৩২২টি স্কুলে গুলিচালনার ঘটনা।
মেয়র সত্যা রোডস কনওয়ে বলেছেন, ''দেশের জন্য, সমাজের জন্য স্কুলে গুলিচালনার ঘটনা বন্ধ করতেই হবে।''