যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের শহরতলী এলাকায় ইহুদিদের নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে হামলায় অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছেন৷ আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
নিউইয়র্কের পাশ্ববর্তী মনসি এলাকায় ইহুদি ধর্মাম্বলীদের একটি বাড়িতে শনিবার সন্ধ্যায় হানুক্কাহ নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান করতে শতাধিক মানুষ জড়ো হন৷ এ সময় ছুরি হাতে এক ব্যক্তি প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি হামলা চালায় বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ডিসেম্বর মাসের ২২ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ধর্মীয় রীতিতে হানুক্কাহ নববর্ষ উদযাপন করে থাকেন ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা৷
হামলাকারীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ৷ তাবে তাকে চিহ্নিত করা গেছে বলে দাবি পুলিশের৷
এ ঘটনার পূর্ণ তদন্তের আদেশ দিয়েছেন নিউইর্কের গভর্নর আন্ড্রেও কিউমো৷
ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহ' উল্লেখ করে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিও বলেন, ‘‘এ এলাকাটিতে অনেক ইহুদি পরিবার রয়েছে৷ তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন৷ তারা অত্যন্ত আতঙ্কিত৷ এমনকি নিজেদের ধর্মীয় পোশাক পরে বাইরে যেতেও ভয় পান তারা৷''
এ হামলাকে ‘বর্বর আক্রমণ' বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷
মনসি এলাকায় মূলত অর্থোডক্স ইহুদিরা বাস করেন৷ নিউইয়র্ক ও এর আশেপাশের এমন এলাকাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ অন্তত ছয়টি ইহুদিবিদ্বেষী হামলার কথা জানিয়েছে৷
নিউইয়র্ক গভর্নর কিউমো বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইহুদী বিদ্বেষ ও ধর্মান্ধতা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক৷ এ বিষয়ে আমরা জিরো-টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবো৷''
আরআর/এডিকে (এপি, এএফপি)
জার্মানিতে ইহুদি উপাসনালয়ে যত হামলা
জার্মানির হালে শহরে বুধবার ইহুদিদের একটি উপাসনালয়ে হামলার চেষ্টা হয়েছে৷ তবে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন এক জার্মান আততায়ী৷ ছবিঘরে কয়েকটি সিনাগগে হামলার ঘটনা তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago Images/S. Schellhorn
কোলন, ১৯৫৯: স্বস্তিকা ও হেট স্পিচ
১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে ‘ডয়চে রাইশপার্টাই’ নামের একটি চরম ডানপন্থি দলের সদস্যরা কোলনের সিনাগগে স্বস্তিকা এঁকে দিয়েছিল৷ এছাড়া ‘জার্মানদের দাবি: ইহুদিরা চলে যাও’ শব্দগুলোও লিখে দেয় তারা৷ এরপর জার্মানির বিভিন্ন এলাকায়ও ইহুদিবিরোধী গ্রাফিতির দেখা পাওয়া গিয়েছিল৷ ঐ ঘটনায় জড়িতদের ধরা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন ‘মানুষের উসকানিমূলক’ কিছু করতে না পারে সেজন্য সংসদে আইন পাস হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/Joko
ল্যুবেক, ১৯৯৪: অগ্নিসংযোগ
মার্চ মাসের এই ঘটনা সারা বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল৷ চরম ডানপন্থি চার ব্যক্তি ল্যুবেকের সিনাগগে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল৷ এই ঘটনার এক বছর পর আবারও একই সিনাগগে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
এসেন, ২০০০: পাথর ছোড়া
লেবানন থেকে আসা ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি ২০০০ সালের অক্টোবরে এসেন শহরের পুরনো সিনাগগে পাথর ছুড়ে মেরেছিল৷ ‘মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত’-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শেষে এই হামলা করা হয়৷ এই ঘটনায় একজন পুলিশ আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/B. Boensch
ড্যুসেলডর্ফ, ২০০০: অগ্নিসংযোগ ও পাথর নিক্ষেপ
ইহুদি ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নিতে ১৯ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিন ও ২০ বছর বয়সি মরক্কোর এক নাগরিক আগুন ও পাথর দিয়ে ড্যুসেলডর্ফের নতুন সিনাগগে হামলা করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
মাইনৎস, ২০১০: মলটফ ককটেল হামলা
১৯৩৮ সালে নাৎসি বাহিনী মাইনৎসের একটি সিনাগগ পুড়িয়ে দিয়েছিল৷ সেখানে নতুন করে একটি সিনাগগ নির্মাণ করা হয়৷ তবে উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরই সেখানে মলটফ ককটেল হামলা চালানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg/Bildarchiv Steffens
ভুপার্টাল, ২০১৪: অগ্নিসংযোগ
ফিলিস্তিনি তিন তরুণ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ভুপার্টালের সিনাগগের প্রবেশ দরজায় দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মেরেছিল৷ তবে এই ঘটনায় ইহুদিবিদ্বেষের পক্ষে ‘প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলে আদালত রায় দিয়েছিলেন৷ জার্মানির ইহুদি ও বিদেশি গণমাধ্যম এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
বার্লিন, ২০১৯: ছুরি নিয়ে হামলা
অক্টোবরের ৪ তারিখ শাবাতের পূর্বে বার্লিনের নতুন সিনাগগে স্থাপন করা একটি বেড়ায় ছুড়ি নিয়ে উঠে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন৷ পরে ছেড়েও দেন৷ ইহুদি নেতারা পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে বিচারব্যবস্থার ‘ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Avers
হালে, ২০১৯: গুলি
ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষ্যে ৯ অক্টোবর সিনাগগে উপস্থিত হয়েছিলেন ৭০-৮০ জন মানুষ৷ অস্ত্র নিয়ে সেই সিনাগগে ঢোকার চেষ্টা করেছিল ২৭ বছর বয়সি জার্মান আতাতয়ী৷ তবে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে সিনাগগে ঢুকতে না পেরে রেগে গিয়ে গুলি করে দুইজন পথচারীকে হত্যা করেন তিনি৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন, ইহুদি-বিদ্বেষের কারণেই তিনি হামলা চালিয়েছেন৷