ফ্লোরিডায় এখনো কান্না থামেনি৷ সতীর্থদের হারানোর শোক সঙ্গে নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা যেদিন স্কুলে ফিরেছে, সেদিনই গির্জায় হয়ে গেল অদ্ভুত এক বিয়ের অনুষ্ঠান৷ সেখানে বর-কনের হাতে ছিল রাইফেল আর মাথায় বুলেট-শোভিত মুকুট!
বিজ্ঞাপন
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এক স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে ১৭ জন মারা যায়৷ মর্মান্তিক এ ঘটনার পর ফ্লোরিডায় তো বটেই, দেশের অন্যান্য স্থানেও বন্দুকবিরোধী আইন কঠোর করার দাবিতে আন্দোলন হয়েছে৷ প্রায় অনায়াসে বন্দুক রাখার আইনকে কঠোর করার দাবি আদায়ে অভিনব সব কর্মসূচি পালন করেছেন প্রতিবাদকারীরা৷ প্রতিবাদ, বিক্ষোভে একেবারে সামনের কাতারে ছিল ফ্লোরিডার শিক্ষার্থীরা৷
বুধবার, অর্থাৎ বন্দুক হামলার ১০ দিন পর মারজোরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা৷ কিন্তু তাদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার দিনেই পেনসিলভানিয়া রাজ্যের এক গির্জায় বন্দুক বিক্রির প্রচলিত আইনের সমর্থনে আয়োজন করা হয় এক অনুষ্ঠান৷ নিউফাউন্ডল্যান্ড শহরের অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত বিয়ে নবায়নের৷ আড়াইশ'র মতো জুটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷ সবার সঙ্গে ছিল এআর-ফিফটিন রাইফেল৷ এই রাইফেল দিয়েই ফ্লোরিডার স্কুলে ১৭ জনকে হত্যা করেছিল ১৯ বছর বয়সি এক প্রাক্তন ছাত্র৷
সব বর বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সাদা-কালো পোশাক পরে৷ কণেদের পরনে ছিল ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাক৷ তবে অভিনবত্ব ছিল মুকুটে৷ অনেকেই সগর্বে মাথায় তুলে নিয়েছিলেন এমন মুকুট যাতে লাগানো ছিল রাইফেলের গুলি৷
তবে কারো রাইফেলেই গুলি ছিল না৷ গির্জায় প্রবেশের আগেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রত্যেকটি রাইফেল সময় নিয়ে দেখে তবেই প্রবেশ করতে দেন অভ্যাগতদের৷
তারপরও এমন এক আয়োজনের কারণে নিউফাউন্ডল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক৷ গির্জার পাশের একটি প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দেয় শঙ্কা৷ বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাম্পাসের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ৷
তবে নিউফাউন্ডল্যান্ডের ‘ওয়ার্ল্ড পিস অ্যান্ড ইউনিফিকেশন স্যাঙ্কচুয়ারি'-তে বন্দুক নিয়ে এমন আয়োজন নতুন কিছু নয়৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে এই গির্জার অনুসারী৷ অনুসারীরা মনে করেন, বন্দুক ক্রয়ের আইন কঠোর করে কখনোই যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলা রোধ করা যাবে না৷ বরং তাদের মতে, বন্দুক এমন এক ‘লৌহদণ্ড' (রড অফ আয়রন), যা দিয়ে ‘শয়তান', অর্থাৎ বন্দুকবাজ অপশক্তিকে প্রতিহত করা যায়৷
বুধবারের অনুষ্ঠানে বন্দুক আইনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়৷ সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজক হিউং জিন মুন বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে অশুভকে দমনের জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে বন্দুক রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বক্তব্যও দেন৷
যুদ্ধবিগ্রহে প্রযুক্তির বিপ্লব
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই বিশেষজ্ঞরা প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে যে ভয়াবহ ‘বিপ্লব’ ঘটছে, তা থেকে সাবধান করে দিয়েছেন৷ কিন্তু আগে থেকে যেসব অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর কী হবে?
ছবি: Imperial War Museums
এআই: ‘যুদ্ধবিগ্রহে তৃতীয় বিপ্লব’
এআই-এর শতাধিক বিশেষজ্ঞ প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তারা বলছেন, এখনও কোনো হত্যাকারী রোবট সৃষ্টি হয়নি, কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এর সম্ভাবনা বেড়ে চলেছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারুদ আর পারমাণবিক অস্ত্রের পর এ ধরনের অস্ত্র ‘যুদ্ধ বিগ্রহে তৃতীয় বিপ্লব’ ঘটাতে পারে৷
ছবি: Bertrand Guay/AFP/Getty Images
বারুদ
‘যুদ্ধবিগ্রহে প্রথম বিপ্লব’ ঘটায় চীন৷ দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে গান পাউডার , অর্থাৎ বারুদ আবিষ্কার করে তারা, যেটা বন্দুকে ব্যবহার করা যায়৷ এর ব্যবহার ধীরে ধীরে পরবর্তী দুই শতকে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/E. Gooch/Hulton Archive
কামান
বারুদ আবিষ্কারের পর যুদ্ধক্ষেত্রে কামান ব্যবহার শুরু হয়৷ ষোড়শ শতাব্দীতে এসে সৈন্যরা বিভিন্ন শহর, নগরের প্রতিরক্ষা দেয়ালে বা দুর্গে এই কামান স্থাপন করে এবং এর ভেতর ভারী ধাতব বল প্রবেশ করিয়ে বারুদ ভরে প্রতিপক্ষের দিকে ছোড়া হয়৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে এই কামান ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, যার স্বরূপ দেখা গেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
মেশিনগান
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বিভিন্ন ধরনের বন্দুক আবিষ্কারে সফলতা দেখা যায় এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও এদের ব্যবহার বেড়ে যায়৷ সুরক্ষিত স্থানে থেকে শত্রুর উপর আক্রমণের প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠে মেশিনগান৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ থেকে মেশিনগান ব্যবহার করেছিল সেনারা৷
ছবি: Imperial War Museums
যুদ্ধ বিমান
১৯০৩ সালে যুদ্ধ বিমান আবিষ্কার হয়৷ এর ছ’বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রথম অস্ত্র ছাড়া সামরিক বিমান চালু করে, যেটি রাইট মিলিটারি ফ্লাইয়ার নামে পরিচিত৷ এর পরবর্তী বছরগুলোতে যুদ্ধ জাহাজ এবং বোমারু বিমানের উদ্ভাবন হয়৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে এগুলোর ব্যবহার হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb/U.S. Airforce
যান্ত্রিকীকরণ
যন্ত্রপাতি বহন এবং স্থানান্তরে আগে সেনাবাহিনী সৈন্য ও ঘোড়াদের কাজে লাগাতো৷ কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ট্যাংক এবং সাজোয়া যানের ব্যবহার শুরু হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে জার্মানির নাৎসিরা এই সব যানবাহনের আরও সংস্করণ করে বিধ্বংসী যানে পরিণত করে৷ এর মাধ্যমে করা হামলাকে বলা হয় ‘লাইটনিং ওয়ার’৷
ছবি: ullstein bild - SV-Bilderdienst
ক্ষেপণাস্ত্র
যদিও কামান বেশ কার্যকর তবে এর রেঞ্চ সীমিত৷ ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কয়েক শত কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ক্ষেপণাস্ত্র আবিষ্কার হয়৷ প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি হলো জার্মান ভি-২, যেটি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহনে সক্ষম৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেট ইঞ্জিন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জেট বিমানের আবির্ভাব ঘটে৷ জেট ইঞ্জিন খুব তাড়াতাড়ি বিমানের গতি বাড়াতে পারে, পাশাপাশি দ্রুত লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এটি৷
ছবি: picture-alliance
পারমাণবিক অস্ত্র
‘যুদ্ধবিগ্রহে দ্বিতীয় বিপ্লব’ ঘটে ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট, যখন যুক্তরাষ্ট্র ‘লিটল বয়’ নামক ভয়াবহ আণবিক বোমা ফেলে জাপানের হিরোশিমাতে৷ এতে মুহূর্তে প্রাণ হারায় ৬০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP
ডিজিটাইজেশন
গত কয়েক দশকে বিশ্ব দেখেছে কীভাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে৷ এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজ হয়েছে৷ পাশাপাশি অনেক অস্ত্রের উন্নয়নও সহজ হয়েছে৷ বিশ্বের সশস্ত্রবাহিনীগুলো সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সাইবার প্রতিরক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে৷