মানুষের প্রিয় পোষ্য হল কুকুর৷ পশ্চিমে তাদের জন্য বিশেষ খাবার, খেলনা, আসবাবপত্র, লোম ছাঁটার সেলুন, গয়নাগাটি, ডাক্তার, থেরাপিস্ট, সবই আছে৷ তাহলে টেলিভিশনই বা থাকবে না কেন?
Hund im Pulloverছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
বিজ্ঞাপন
মানুষেরা সোফায় বসে বিয়ার হাতে টেলিভিশন দেখতে দেখতে অলস, মেদবহুল ও কায়িক পরিশ্রম বিমুখ হয়ে পড়ে৷ সেটা কি এবার কুকুরদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে? মার্কিন মুলুকের ‘‘ডগ টিভি''-র প্রোগ্রাম দেখে কি কুকুররা তাদের সবচেয়ে প্রিয় ‘হাঁটতে যাওয়া'-ও ছেড়ে দেবে?
মানুষের সবচেয়ে প্রিয় পোষ্য হবার দামও দিতে হয় কুকুরদের, মালিক-মালকিন যখন কাজে বা বাজারে গেছেন, তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা একা বাড়িতে বা ফ্ল্যাটে আবদ্ধ থেকে৷ অর্থাৎ সুখী সারমেয় জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল একাকিত্ব এবং বোর হওয়া – অনেকটা একলা থাকা মানুষদের মতোই৷
একলা থাকা মানুষেরা, তা তারা যে বয়সেরই হোন, সাধারণত একাকিত্ব ও বোরডম দূর করার জন্য যে ম্যাজিক বক্সটির দ্বারস্থ হন, সেটি হল টেলিভিশন: হাজারটা চ্যানেলে কতরকমের যে অনুষ্ঠান চলছে চব্বিশ ঘণ্টা, তার ইয়ত্তা নেই৷ কিন্তু কুকুররা? তাদের জন্যে কি একটাও চ্যানেল থাকবে না?
কুকুরও আমাদেরই মতো প্রাণী
কুকুর জার্মানদের কাছে বেশ আদরের৷ অনেক জার্মানই শখ করে বাড়িতে বিভিন্ন জাতের কুকুর পোষেন৷ তবে জার্মানির হাইডেলব্যার্গের একটি সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানিতে কুকুর পোষেন বিত্তবান লোকেরা৷
ছবি: AP
রোদ দেখে কুকুরও আনন্দিত
কুকুর যে খুবই প্রভুভক্ত গৃহপালিত পশু তা আমাদের সকলেরই জানা৷ তবে কুকুর শুধু গৃহপালিত পশু নয়, জার্মানিতে কুকুরকে প্রাণী হিসেবেই ভাবা হয়৷ আর তারই কিছু নমুনা দেখা যাক আজকের এই ছবিঘরে ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিত্তবানেরাই কুকুর পোষেন
অনেক জার্মানই শখ করে বাড়িতে বিভিন্ন জাতের কুকুর পোষেন৷ তবে জার্মানির হাইডেলব্যার্গের একটি সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, জার্মানিতে কুকুর পোষেন বিত্তবান লোকেরা৷ এই চকচকে বিশাল কুকুরটির ওজন ১১১ কেজি৷ মাসে ৫০ কেজি খাবার খায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরের সেলুন
কুকুরকে চুল কাটার জন্য সেলুনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ যেন যেখানে সেখানে চুল না পড়ে যায় এবং ওকে দেখতেও যেন কুকুরের মালিকের মতোই ফিটফাট মনে হয়৷ এদেশে কখনো রাস্তায় কুকুরকে মালিক ছাড়া দেখা যায়না৷ গৃহপালিত কুকুর পথচারী বা বা অন্য কাউকে কামড় দেয়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরও দেশের জন্য কাজ করে
কুকুর যে শুধু পরিবারের সাথেই থাকে, তাদের সঙ্গ দেয় তা নয়৷ ট্রেনিংপ্রাপ্ত কুকুরও আছে, যেগুলো অবৈধভাবে টাকার নোট পাচারকারীদের ধরিয়ে দিতে সরকারকে সাহায্য করে৷ এই ছবিটি ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরেররই একটি দৃশ্য, যাতে পাঁচশো টাকার নোট পাচারকারী ধরা পড়েছে, বুদ্ধিমান কুকুরটির সাহায্যে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুর পালুন/ফিট থাকুন
বাইরে যে আবহাওয়াই থাকুক না কেন, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে কুকুরকে দিনে কয়েকবার বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে হয়৷ এদেশে অতিরিক্ত ওজনের মানুষদের ওজন কমানোর জন্য অনেক সময় ডাক্তাররাও কুকুর পোষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ তখন তাকে কুকুরের জন্য হলেও বাইরে বের হতেই হবে, হাঁটতে হবে৷
ছবি: Maksim Nelioubin
কুকুরেও চাই বিনোদন
নিজে যে শুধু গরম পোশাক পরেন তাই নয়, প্রচণ্ড শীতের সময় প্রিয় কুকুরটিরও যেন কষ্ট না হয় তাই ওকেও গরম পোশাক পরিয়ে নিয়ে যান গাড়িতে করে হাওয়া খেতে৷ ঠিক যেন পরিবারের একজন সদস্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কুকুরের রেস্তোরাঁ
কুকুরের মন-মেজাজ ভালো রাখতে মাঝে মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় ওদেরই জন্য তৈরি বিশেষ রেস্তোরাঁতে৷ যেখানে কুকুর নিজের খাবার নিজেই পছন্দ করতে পারে তার ব্যবস্থা রয়েছে৷ কুকুরের জন্য আলাদা রেস্তোরাঁ, হোটেল, স্কুল, সেলুন, দোকান, গোরস্থান সবই রয়েছে৷
ছবি: picutre-alliance/dpa
মা আর সন্তান
মা বলে কথা! আদর করে মুখে তুলে খাওয়াতেই যেন আনন্দ৷ নিঃসন্তান এই মাকে কুকুরটিই দিয়েছে সন্তানের ভালোবাসা৷ মা’কে কিছুক্ষণ না দেখলেই অস্থির হয়ে পড়ে৷ মা বাইরে থেকে ফিরে এলে লাফিয়ে কোলে ওঠে নয় তো লেজ নেড়ে তার আনন্দ প্রকাশ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিয়মিত ডাক্তারের চেম্বারে
কুকুরকে চেকআপের জন্য নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়৷ রাস্তায় কোন কুকুর কখনো কোন পথচারীকে কামড় দিয়েছে, একথা সহজে শোনা যায়না৷ কুকুর সেভাবেই ট্রেনিংপ্রাপ্ত৷ কুকুরে জন্যও রয়েছে স্বাস্থ্যবীমা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুকুরের খেলনার দোকান
কুকুরের খেলনা বা ব্যবহারযোগ্য জিনিসের দোকান৷ এখানে প্রায় বেশিরভাগ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই কুকুর বা বেড়ালের টিনজাত খাবারের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে৷
ছবি: DW/V.Weitz
গর্বিত মা
তিন জাতের তিন কুকুরের গর্বিত পালক মা৷ এই কুকুরগুলোই তার গর্ব৷ শুধু তাই নয়, মা মহিলাটি গর্ব করে বলেন ওরা শুধু তার সন্তান নয়, তাঁর বডিগার্ডও বটে৷ কারণ তাঁর বিশাল বাড়িতে এই তিন সন্তানদের নিয়েই থাকেন তিনি৷ বাড়ির দেয়ালে ওদের ছবি টাঙানো৷ হাতব্যাগেও থাকে ওদেরই ছবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একই পরিবারের সদস্য
একটি সাধারণ কুকুরের মূল্য কিন্তু ২০০ ইউরোর কম নয়৷ তবে কুকুরের জাত বুঝে কয়েক হাজার ইউরোও হতে পারে৷ তাছাড়া একটি কুকুরের জন্য মাসে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়, সে টাকায় সহজেই একটি বাচ্চাও বড় হতে পারে৷ আর এরা ঠিক যেন ৬টি সন্তান ! একইসাথে বেড়ে উঠছে৷
ছবি: AP
12 ছবি1 | 12
সেরা ডগ-সিটার
কেন থাকবে না, ভাবলেন রন লেভি, এবং চব্বিশ ঘণ্টার ডগ চ্যানেল চালু করলেন, সপ্তাহে সাতদিন৷ অবশ্য চতুষ্পদদের জন্য টিভি প্রোগ্রাম করাটা যতো সোজা ভাবা হচ্ছে, ততোটা নয়৷ চ্যানেল খোলার আগে কুকুরদের আচরণ ও মানসিকতা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করতে হয়েছে – যেমন বস্টনের টাফ্টস ইউনিভার্সিটিতে৷
বহু ফ্ল্যাটে ক্যামেরা বসিয়ে একা থাকা কুকুরদের ভাবসাব পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকরা৷ দেখা গেছে, টেলিভিশন চালু থাকলে কুকুররা ভালো বোধ করে, বিশেষ করে প্রোগ্রামে যা দেখানো হচ্ছে, তা যদি তাদের মনের মতো হয়৷ এই সব গবেষণা লব্ধ তথ্য থেকেই রন লেভি-র দাবি, তাঁর ‘‘ডগ টিভি'' হল কুকুরদের জন্য সেরা ডগ-সিটার৷
অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা
সব কুকুরের মানসিক পরিস্থিতি কিংবা প্রয়োজন তো এক হয় না, তাই নানা ধরনের প্রোগ্রাম ডেভেলপ করা হয়েছে৷ একটি অনুষ্ঠানের নাম ‘‘রিল্যাক্সেশন'': দেখানো হচ্ছে কুকুরের ঘুমন্ত বাচ্চা, হ্রদের জলে দাঁড়টানা নৌকো, সেই সঙ্গে পিয়ানোয় টুংটাং মিউজিক৷ এই প্রোগ্রামটা হল যে সব কুকুর যাকে-বলে-কিনা হাইপারঅ্যাকটিভ, তাদের ঠাণ্ডা করার জন্য৷
‘‘স্টিমিউলেশন'' বা ‘উত্তেজনা' প্রোগ্রামটি হল যে সব কুকুররা নড়তে চড়তে চায় না, তাদের চাঙ্গা করার জন্য৷ প্রোগ্রামটিতে ছটফটে সব ছবি দেখিয়ে অলস কুকুরদের সচল করা হয়৷ হয়তো কোনো গোল্ডেন রিট্রিভার জাতীয় কুকুর বাগানে একটি লাল বলের পিছনে ধাওয়া করছে, তার মালকিন প্রশংসা করে বলছেন: ‘‘গুড ডগ!'' ক্যামেরার অ্যাঙ্গল কিন্তু সবসময় কুকুরটির নাক বরাবর৷
পরে দেখা যাচ্ছে এক অ্যাসেশিয়ান কুকুর সুইমিং পুলে একটি রবারের খেলনার পিছনে সাঁতার কাটছে; অথবা একটি ছোট কুকুর জলের উপর সার্ফিং করছে৷ কিন্তু দেখাটাই তো কুকুরদের সব নয়, তারা দুনিয়াটাকে দেখে – বা শোঁকে – তাদের নাক দিয়ে৷ তাছাড়া কুকুররা নাকি ঠিকমতো রং দেখে না৷ কাজেই তারা ঠিকমতো টেলিভিশনের ছবি দেখবে কি করে? সেও এক প্রশ্ন৷
ছবি: Reuters
আসলে তিন থেকে পাঁচ মিনিটের ক্লিপগুলোতে কুকুরদের হাঁকডাক কিংবা মানুষের রাগারাগি, চিল্লাচিল্লি গোত্রীয় কিছু নেই৷ কাজেই কুকুরদের এগুলো ভালো লাগারই কথা৷ অন্যদিকে ‘‘এক্সপোজার'' পর্যায়ের ক্লিপগুলিতে বাস্তবতার ছোঁয়া আছে, কেননা এখানে মানুষ এবং তার পোষ্যকে নানা দৈনন্দিন পরিস্থিতিতে দেখানো হয়েছে: ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাত; ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়িতে করে যাওয়া৷ এবং অবশ্যই বেচারা ডাকপিয়নকে দন্তপ্রদর্শন৷
লেভি-র পরের প্রকল্প? প্রশ্ন করার প্রয়োজন আছে কি? স্বভাবতই ‘‘ক্যাট টিভি'' বা মার্জার টিভি৷