মার্কিন সমাজে যেমন বহু বিভাজন, বহু গোষ্টী, ঠিক সেইভাবেই ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবার সম্ভাবনা৷ এখন কোন গোষ্ঠী কাকে ভোট দেবে, সেটাই হলো প্রশ্ন৷
বিজ্ঞাপন
নারী ভোট
নির্বাচনি প্রচার অভিযানের শুরু থেকেই মহিলারা ভোটার হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে একটি বিশেষ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেন৷ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প ক্লিন্টনের চেয়ে অনেক কম মহিলাদের ভোট পাবেন৷ সেজন্য অবশ্য তিনি নিজেই প্রধানত দায়ী৷ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এবং টুইটারে তিনি বিশেষ বিশেষ মহিলাকে মেদবহুল বা কুশ্রী বলে অভিহিত করেছেন, অথবা এক মহিলা সাংবাদিকের রজঃশ্রাব নিয়ে বদরসিকতা করেছেন৷ এই পন্থায় ট্রাম্প স্বয়ং রিপাবলিকান মহিলা ভোটারদেরও সহানুভূতি হারিয়েছেন৷ ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচার অভিযানে নারী অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলি স্থান পায়নি৷ সে তুলনায় হিলারি ক্লিন্টন গোড়া থেকেই নারী-পুরুষের সমান পারিশ্রমিক, গর্ভপাত বা পরিবার ও পেশার মতো বিষয়গুলিকে তাঁর প্রচারণায় গুরুত্ব দিয়েছেন৷
নীচের তলার শ্বেতাঙ্গ
কম শিক্ষা বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্বেতাঙ্গ পুরুষরাই হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোট ব্যাংক৷ এই গোষ্ঠীর মানুষেরা ভারী শিল্পে চাকুরি কমায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ তাই ‘‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন’’, ট্রাম্পের এই শ্লোগানের অর্থ তাদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা৷ ট্রাম্প যে চীন থেকে চাকরি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মুক্তবাণিজ্য ও অভিবাসনের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেছেন, তা এই শ্রেণির মানুষদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়৷ ট্রাম্প তাঁর এই গোঁড়া সমর্থকদের কাছে এক ধরণের অ্যান্টি পলিটিসিয়ান, যিনি সাধারণ রাজনীতিকদের ঠিক বিপরীত৷ এদের কাছে পলিটিক্যাল করেক্টনেসের কোনো মূল্য নেই৷ এদের চোখে হিলারি ক্লিন্টন হলেন ওয়াশিংটনের এস্ট্যাবলিশমেন্টের অঙ্গ৷
আফ্রো-অ্যামেরিকান
কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনিরা চিরকালই প্রধানত ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়ে থাকেন৷ হিলারি ক্লিন্টনও এবার এই ভোট পাবার আশা করতে পারেন৷ এখন প্রশ্ন হলো, ক্লিন্টন অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকানদের ভোট দিতে যেতে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন কিনা – তিনি তো আর বারাক ওবামা নন৷ অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিভিন্ন জাতিবাদী মন্তব্যের দরুণ এই গোষ্ঠীর ভোটারদের কাছে অপ্রিয় এবং অপাত্র৷ গত জুলাই মাসে এনবিসি টেলিভিশনের একটি জরিপ অনুযায়ী কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মাত্র ছয় শতাংশ ট্রাম্পকে ভোট দেবেন৷ অপরদিকে ওহাইও-র মতো সুইং স্টেটের শতকরা একশো ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ হিলারিকে ভোট দেবেন বলে জরিপে প্রকাশ৷
হিস্প্যানিক
দক্ষিণ অ্যামেরিকা থেকে আগত মানুষেরা যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে বাড়ছেন, সেভাবে আর কোনো জনগোষ্ঠী বাড়ছে না৷ চার বছর আগে তাদের একটা বড় অংশ বারাক ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প মেক্সিকানদের সম্বন্ধে যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, অথবা তাঁর মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা এই গোষ্ঠীর মানুষদের আরো বেশি করে হিলারির দিকে ঠেলে দিতে পারে৷ তবে ২০১২ সালে মাত্র ৪৮ শতাংশ হিস্প্যানিক ভোট দিতে গিয়েছিলেন৷
এভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিষ্টান
এভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিষ্টানরা চিরকাল রিপাবলিকানদের ভোট দিয়ে থাকেন, কিন্তু তারাও ট্রাম্পের নানা কীর্তিকলাপে অসন্তুষ্ট, যদিও তার মানে এই নয় যে, এই ধর্মপ্রাণ, গোঁড়া খ্রিষ্টানরা ক্লিন্টনকে ভোট দেবেন৷ সম্ভবত বেশ কিছু এভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিষ্টান শেষমেষ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন৷
মিলেনিয়ালস
১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, সেই সব মার্কিনিরা ছিলেন ২০০৮ ও ২০১২ সালে বারাক ওবামার সবচেয়ে উৎসাহী সমর্থক৷ তবে এই মিলেনিয়ালদের অনেকে এবার প্রাইমারি পর্যায়ে হিলারির ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বি বার্নি স্যান্ডার্সের দিকে ঝুঁকেছিলেন৷ ট্রাম্পের পরিবর্তে তারা নিশ্চয় ক্লিন্টনকেই ভোট দেবেন, যদি হিলারি তাদের ভোট দিতে যেতে অনুপ্রাণিত করতে পারেন৷
ট্রাম্প আর ক্লিন্টন সম্পর্কে এখনও যা জানার আছে
দুই মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট পদপ্রার্থী সম্পর্কে সব কিছু জেনে ফেলেছেন বলে ভাবছেন? না, এখনও আপনাদের চমকে দেবার মতো কিছু তথ্য আছে...
ছবি: picture alliance/dpa/A. Filippov
মুখোশের আড়ালে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মানে এলাহি কাণ্ড৷ প্রাক-নির্বাচন পর্ব চলে মাসের পর মাস ধরে, প্রার্থীদের মুখ দেখতে দেখতে যেন অরুচি হয়ে যায়৷ তা সত্ত্বেও কিছু মজার খবর নেপথ্যেই থাকে৷
ছবি: DW/M. Santos
রক্ষণশীল হিলারি
হিলারি ক্লিন্টন বড় হয়েছেন ইলিনয়ের এক কনজারভেটিভ পরিবারে৷ বাবা ছিলেন পর্দা তৈরির কারখানার মালিক৷ তরুণ বয়সে হিলারি ছিলেন রিপাবলিকান, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যারি গোল্ডওয়াটার ও রিচার্ড নিক্সনের মতো কনজারভেটিভ প্রার্থীদের সমর্থন করেছেন৷ তিনি ডেমোক্র্যাট হন পরে৷ সেই সঙ্গে তাঁর চুলের কেয়ারিও বদলে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ron Sachs
উদারপন্থি ডোনাল্ড
গোড়ার দিকে ট্রাম্প যে কোন দলকে সমর্থন করেন – অথবা আদৌ কোনো দলকে সমর্থন করেন কিনা – তা বলা শক্ত ছিল৷ অতীতে তিনি বিল ও হিলারি ক্লিন্টন সহ ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের তাঁর সমর্থন দিয়েছেন, মাঝেমধ্যে রীতিমতো উদারপন্থি সব মন্তব্য করেছেন৷ ডোনাল্ড রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দেন প্রৌঢ় বয়সে, যা তাঁর দলের সকলের খুব ভালো লাগেনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. A. Clary
বিলকে গোড়ায় ‘হ্যাঁ’ বলেননি হিলারি
হিলারি ক্লিন্টনের নাম দুনিয়া প্রথম জেনেছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে৷ অথচ বিল নাকি যখন প্রথম ‘প্রোপোজ’ করেন, তখন হিলারি তাঁকে ‘না’ বলেছিলেন৷ হিলারি তাঁকে বিয়ে করতে সম্মত হওয়ার আগে বিলকে বেশ কয়েকবার ‘প্রোপোজ করতে হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP/Greg Gibson
বিউটি কুইনদের সঙ্গে ট্রাম্প
১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল অবধি ট্রাম্প ছিলেন মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ এবং মিস টিন ইউএসএ বিউটি কনটেস্টগুলোর মালিক বা অংশীদার৷ সেই সূত্রে তিনি নাকি মাঝে মাঝে ড্রেসিং রুমে গিয়ে হাজির হতেন, এ কথা বলেছেন ট্রাম্প নিজেই৷ ছবিতে মিস ক্যালিফর্নিয়া যে ট্রাম্পকে কি বলছেন, তা জানা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াল-মার্টের পরিচালকমণ্ডলীর প্রথম মহিলা সদস্য
ওয়াল-মার্ট ঠিক শ্রমিকবান্ধব কোম্পানি বলে পরিচিত নয়৷ তাদের প্রথম মহিলা বোর্ড মেম্বার হয়েছিলেন হিলারি ক্লিন্টন৷ এমনকি এর বহু বছর পরে হিলারি ওয়াল-মার্টের একটি শাখায় তাঁর আত্মজীবনী স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jim Lo Scalzo
অভিনেতা ট্রাম্প
রিয়াল এস্টেট দিয়ে শুরু করলেও, ট্রাম্প একাধিক ফিল্ম ও টিভি শো-তে আবির্ভূত হয়েছেন, তার মধ্যে সর্বাগ্রে ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ শো-টির নাম করতে হয়৷ তিনি স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ডের সদস্য ও ফিল্ম-টেলিভিশনে তাঁর কাজের জন্য বছরে এক লাখ দশ হাজার ডলার পেনশন পেয়ে থাকেন৷ হলিউড ওয়াক অফ ফেম-এ তাঁর ‘স্টার’ যোগ হয় ২০০৭ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Stern
গরু চেনেন হিলারি
ছবিতে বিল ক্লিন্টনকে দেখা যাচ্ছে গো-পরিদর্শক হিসেবে, কিন্তু হিলারিই আসলে গরু চেনেন৷ সত্তরের দশকের শেষে ‘ক্যাটল ফিউচার’ নিয়ে ফাটকা খেলে এক হাজার ডলারকে লাখ ডলারে পরিণত করেছিলেন হিলারি৷ কেউ কেউ এ-তে দুর্নীতির গন্ধ পেলেও, প্রসঙ্গটি নিয়ে হিলারির বিরুদ্ধে কোনোদিন কোনো অভিযোগ আনা হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Honda
কুস্তিগীরদের আখাড়ায়
ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের বস ভ্যান্স ম্যাকমেহনের সাথে নাকি দীর্ঘদিনের কাজিয়া ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ সেজন্য ট্রাম্পকে একাধিকবার রিং-এর ভিতরে দেখা গেছে৷ এমনকি রেসলিং-এর হল অফ ফেম-এও প্রবেশাধিকার পেয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images
তেতাল্লিশ রকমের চুলের কেয়ারি
অ্যামেরিকার ফার্স্ট লেডি হিসেবে হিলারি তাঁর সাজগোজের স্টাইল নিয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন৷ ১৯৯৬ সালে ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ ম্যাগাজিন দাবি করে যে, হিলারি ক্লিন্টন হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন ৪৩ রকমের হেয়ারস্টাইল দেখিয়েছেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মনিকা লিউইনস্কি সম্পর্কে কথা বলার সময় হিলারির কি হেয়ারস্টাইল ছিল৷ হোয়াইট হাউসের ইন্টার্ন মনিকা লিউইনস্কির সঙ্গে বিল ক্লিন্টনের অ্যাফেয়ার আজ ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Naltchayan
আসক্তি মাদকে নয়
ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করে থাকেন যে, তিনি কখনো মদ্যপান বা ধূমপান করেননি৷ কথাটা বিশ্বাসযোগ্য, কেননা যারা তাঁকে চেনেন ও তাঁর সঙ্গে যাদের সাক্ষাৎ হয়েছে, সকলেই জানিয়েছেন যে, ট্রাম্পের কোনো ধরণের নেশা নেই – এক ক্ষমতার নেশা ছাড়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Betancour
দুনিয়াদারি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারি ক্লিন্টন তাঁর আগের যে কোনো সেক্রেটারি অফ স্টেটের চেয়ে বেশি দেশ সফর করেছেন, সাকুল্যে ১১২টি (অবশ্য ফ্লাইট মাইলের হিসেবে কন্ডোলিজা রাইস তাঁর থেকে এগিয়ে)৷ ২০১৩ সালে হিলারি যখন ঐ পদ ছাড়েন তখন তাঁর মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা তাঁকে ১১২ নম্বর লেখা জার্সিটি উপহার দেন৷
ছবি: Getty Images/Department of State
শুচিবাই
ট্রাম্প আর ক্লিন্টন যে তাঁদের দ্বিতীয় বিতর্কের আগে হাত মেলাননি, তা নিয়ে অনেক কিছু বলা ও লেখা হয়েছে৷ কিন্তু বাস্তব সত্য হলো এই যে, ট্রাম্প কারো সঙ্গে করমর্দ্দন করতে পছন্দ করেন না, কেননা তাঁর জীবাণু সংক্রমণের ভয় আছে, যেমন ছিল হাওয়ার্ড হিউস, মাইকেল জ্যাকসন ও অ্যাডল্ফ হিটলারের৷
ছবি: picture alliance/AP Images/S. Walsh
গ্র্যামি বিজয়ী ক্লিন্টন
অনেকের কানেই ক্লিন্টনের কণ্ঠস্বর বিশেষ শ্রুতিমধুর নয়৷ তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘ইট টেকস এ ভিলেজ’ বইটির অডিও সংস্করণের জন্য ১৯৯৭ সালে বেস্ট স্পোকেন ওয়ার্ড পার্ফর্মেন্সের গ্র্যামি লাভ করেন৷ প্রসঙ্গত, সেলিন ডিয়ন সে-বছর সেরা অ্যালবামের গ্র্যামি লাভ করেছিলেন৷
ছবি: picture-lliance/dpa
আইন-আদালত
ট্রাম্পের সব কিছুই একটু অতিরঞ্জিত, কাজেই তাঁর বিচারবিভাগীয় কাহিনিই বা বাদ যাবে কেন? যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারাল ও প্রাদেশিক আদালতগুলি মিলিয়ে ট্রাম্প প্রায় সাড়ে তিন হাজার মামলায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷ তা সত্ত্বেও গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ওঠার মতো নয়৷ তবে ডোনাল্ডও ছাড়বার পাত্র নন...৷