যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন : বাইডেনে অনাস্থা ডেমোক্র্যাট দলেই
১১ জুলাই ২০২৪
শুধু প্রতিপক্ষ নয়, ডেমোক্র্যাট দলের নেতারাও অস্বস্তিতে ফেলছেন জো বাইডেনকে৷ তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে এখনই সরে দাঁড়ানো উচিত বাইডেনের৷
বিজ্ঞাপন
সেনেটর পিটার ওয়েলচ, হলিউড তারকা, ডেমোক্র্যাট দলের অন্যতম তহবিল সংগ্রহকারী জর্জ ক্লুনি, এমনকি সাবেক হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও আছেন তুলেছেন এমন দাবি৷
ন্যান্সি পেলোসি ইঙ্গিতে সরে দাঁড়ানোর কথা বললেএ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকারটুকু বাইডেনকেই দিতে চান৷ তএমএসবিএনসি চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, ‘‘পুরো বিষয়টি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে৷আমরা সবাই আসলে তাকে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে সাহস জোগাচ্ছি, কারণ, সময় তো দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে৷''
সময়-স্বল্পতা বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠছে ডেমোক্র্যাট শিবিরে৷ বাইডেনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা আর নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে ক্রমশ৷ বিশেষ করে রিপাব্লিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সর্বশেষ বিতর্কে বাইডেনের ভাঙা কণ্ঠে নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলা, কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলা অনেক ডেমোক্র্যাট নেতাকেই উদ্বিগ্ন করেছে৷ সে উদ্বেগ এতটাই যে, তারা মনে করছেন নিজের, দলের এবং দেশের স্বার্থে বাইডেনের উচিত এখনই নির্বাচনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানো৷
বুধবার ওয়াশিংটন পোস্ট-এ পিটার ওয়েলচ লিখেছেন, ‘‘বিতর্কে বাইডেনের ভয়াবহ পারফর্ম্যান্স থেকে আমরা নজর সরিয়ে রাখতে পারি না৷ দেশের ভালোর জন্য আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি নির্বাচনি দৌড় থেকে (নিজেকে) প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি৷'' ডেমোক্র্যাট দলের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের আইন প্রণেতা প্যাট রায়ান এবং আর্ল ব্লুমেনআওয়ারও বাইডেনের প্রতি নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান৷
২০২৪: নির্বাচনের রেকর্ডের বছর
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি বাস করেন এমন ৭৬টি দেশে এ বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এসব নির্বাচনের ফল গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন৷
ছবি: Rui Vieira/empics/picture alliance
৭৬ দেশে নির্বাচন
লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বলছে, এ বছর ৭৬টি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এসব দেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ বাস করেন৷ এর আগে কোনো বছর এতগুলো দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি৷
ছবি: THIBAUD MORITZ/AFP
কঠিন পরীক্ষার মুখে গণতন্ত্র
গণতন্ত্রের আদর্শিক ধারনা এবং শাসনব্যবস্থা হিসেবে তার যে শক্তি, তার একটা বড় পরীক্ষা এবছরের নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে হবে বলে মনে করছেন আলী রীয়াজ৷ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: DW
বাংলাদেশ
৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন৷ চীন, ভারত, রাশিয়া ও জাপানসহ অনেক দেশ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হয়নি৷ আর বড় সব দল নির্বাচনে না আসায় দুঃখ বা হতাশা প্রকাশ করে নির্বাচনে হওয়া অনিয়মগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহবান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
তাইওয়ান
তাইওয়ানকে ঘিরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে৷ তাই সেদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর আগ্রহ ছিল৷ ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্বাধীনতাপন্থি এবং চীনবিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতা লাই চিং-তে জয়ী হয়েছেন৷
ছবি: Carlos Garcia Rawlins/REUTERS
পাকিস্তান
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হন৷ তবে ইমরান খানের দল পিটিআই ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনেছে৷ এরই মধ্যে জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে নওয়াজ শরীফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল৷
ছবি: NAVESH CHITRAKAR/REUTERS
ইন্দোনেশিয়া
১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন৷ সুহার্তোর স্বৈরাচারী শাসনের সময় সুবিয়ান্তো সেনাপ্রধান ছিলেন৷
ছবি: Agung Kuncahya B./Xinhua/IMAGO Images
রাশিয়া
১৫-১৭ মার্চ রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এর মাধ্যমে পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: Sergei Bobylev/Tass/dpa/picture alliance
ভারত
এপ্রিল-মে মাসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক এই দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ নরেন্দ্রো মোদীর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থি হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Paranjpe
সাউথ আফ্রিকা
২৯ মে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদের পতনের পর এটি দেশটির সপ্তম নির্বাচন হবে৷ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে এবার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস এএনসিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে৷ কারণ অর্থনীতি ধুঁকছে, বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও ভালো নেই, তাছাড়া বেকারত্বের হার প্রায় ৩২ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Curtis
মেক্সিকো
২ জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটিতে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন৷ মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র ক্লওদিয়া শেইনবাউম (বামে) ও সাবেক বিরোধী সেনেটর খোচিতিল গালভেসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে৷
ছবি: Fernando Llano/Marco Ugarte/AP Photo/picture alliance
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
৬-৯ জুনের নির্বাচনের আগে ইইউর অনেক দেশে উগ্র ডানপন্থি দলগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে৷ ইইউ নির্বাচন শেষে তারা ক্ষমতায় যেতে না পারলেও এমন ফল করতে পারে, যা ইইউর নীতির উপর আরও বেশি প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে, তাদের হাত আরও শক্তিশালী করতে পারে৷ সেটি হলে ব্রাসেলস হয়ত ইইউর বিভিন্ন দেশে আইনের শাসনজনিত সমস্যা নিয়ে বেশি কথা বলতে পারবে না৷ গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ার জন্য যে মূলবোধগুলো প্রয়োজন তাও রক্ষায় কাজ করতে পারবে না৷
ছবি: InaPlavans/Zoonar/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো গণতান্ত্রিক দেশটিতে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এবার ডনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে৷ সেটি হলে দেশটির গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে৷ কারণ ট্রাম্প প্রায়ই বলছেন, তিনি পুনরায় নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের শায়েস্তা করতে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করবেন৷ অথচ কার্যকরী গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা৷
ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ
আলী রীয়াজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ভবিষ্যতে যেসব দেশ ও অঞ্চল গণতন্ত্রের পতাকাবাহী হতে পারে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ৷ সেখানকার নির্বাচনে বড়রকমের ব্যত্যয় ঘটলে বর্তমানে গণতন্ত্র যে পশ্চাদপসরণ অবস্থায় আছে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হবে৷
ছবি: Rui Vieira/empics/picture alliance
13 ছবি1 | 13
হলিউড অভিনেতা জর্জ ক্লুনিও ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে সন্দিহান৷ নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা নিজস্ব মতামতে সেই সন্দেহ প্রকাশ করার পাশাপাশি বাইডেনকে অবিলম্বে নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি৷
বাইডেন অবশ্য ন্যান্সি পেলোসি, পিটার ওয়েলচ, প্যাট রায়ান, আর্ল ব্লুমেনআওয়ার, জর্জ ক্লুনিদের কথায় কান দিতে নারাজ৷ ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে পারফর্ম্যান্স যে ভালো ছিল না, তা মানছেন তিনি৷ তবে ৮১ বছর বয়সি মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন, ওই বিতর্ক ছিল স্রেফ একটা ‘খারাপ পর্ব'৷
বাইডেনের তিনসহকারিকীজানেন
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ওভারসাইট কমিটিও জানতে চায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা জো বাইডেনের আছে কিনা৷ রিপাব্লিকান দলের প্রাধান্যের এ কমিটি এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য হোয়াইট হাউসের তিন কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠিয়েছে৷
সেই তালিকায় আছেন বাইডেনের স্ত্রীর অন্যতম সহকারি অ্যান্থনি বার্নাল, ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ অ্যানি টোমাসিনি এবং সিনিয়র অ্যাডভাইজার অ্যাশলে উইলিয়ামস৷
তাদের ডেকে পাঠানোর কারণ জানাতে দিয়ে রিপাব্লিকান দলের আইন প্রণেতা জেমস কমার বলেন, ‘‘হোয়াইট হাউসের এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার স্বার্থেই কমিটির সামনে আসতে হবে৷ তা (স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা) অ্যামেরিকানদের প্রাপ্য৷'' হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ওভারসাইট কমিটির দাবি, ‘‘ বাইডেনের এক সাবেক সহকারির মতে, অ্যানি টোমাসিনি, অ্যান্থনি বার্নাল এবং অ্যাশলে উইলিয়াম- এই তিন কর্মী বাইডেনের চারপাশে এক রক্ষা-বলয় তৈরি করে রেখেছেন৷'' তাই তারা মনে করছেন, এই তিনজনের কাছ থেকে জো বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে৷
তবে হোয়াই হাউসের মুখপাত্র ইয়ান স্যামস বলেছেন, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ওভারসাইট কমিটির এই উদ্যোগ নিছক ‘ভিত্তিহীন রাজনৈতিক স্টান্টবাজী৷''