যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি ছাত্র নিহত
৬ জানুয়ারি ২০২৩সৈয়দ ফয়সাল আরিফের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না প্রবাসীরা৷ এই মৃত্যুর বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কেমব্রিজ সিটি হল প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়৷ প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও আরিফের সহপাঠীরা অংশ নেন সেখানে৷ ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, কম্যুনিটি লিডার ইকবাল ইউসুফ সেই সমাবেশে বলেন, “বস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি৷ আমরা কখনো কোনো দাঙ্গায় লিপ্ত হইনি৷ তবু কেন আমাদের টার্গেট করা হয়েছে? কেন আমাদের নিষ্পাপ আরিফের বুকে বিদ্ধ হবে পুলিশের বুলেটে৷”
মা-বাবা একমাত্র ছেলে আরিফ বছর সাতেক আগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন৷ ২০ বছর বয়সি এই তরুণ পড়ালেখা করছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বস্টন ক্যাম্পাসে৷
আরিফের বাবা মো. মুজিবউল্লাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, “ও ছিল খুবই মেধাবি৷ আশা করেছিলাম সে ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার হবে কিন্তু এখন সব আশা শেষ হয়ে গেল৷”
শান্তশিষ্ট কেমব্রিজ শহরের চেস্টনাট স্ট্রিটে ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে৷ হটলাইনে পুলিশ খবর পায়, এক তরুণ ছোরা হাতে একটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে বেরিয়েছে৷ পরে পুলিশ সেখানে যায় এবং তাদের গুলিতে প্রাণ হারায় আরিফ৷
মিডলসেক্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ম্যারিয়েন রায়ান বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুলিশের হটলাইনে ফোনটা করেছিলেন কেমব্রিজপোর্টের এক বাসিন্দা৷ তিনি বলেছিলেন, এক তরুণ খালি গায়ে ঘরের জানালা দিয়ে লাফিয়ে রাস্তায় নেমেছে, তার হাতে বড় আকারের একটি ছুরি রয়েছে৷ তরুণটি নিজেকে ছুরিকাঘাতে আহত করার চেষ্টা করছে৷
এ খবর জেনে ডজনখানেক পুলিশ সেখানে যায়৷ তারা ওই তরুণকে থামতে বললে তাতে সাড়া না দিয়ে তিনি চেস্টনাট স্ট্রিট দিয়ে দৌড়াতে থাকেন৷ পুলিশের পক্ষ থেকে ছুরিটি ফেলে দিতে বলা হয়৷ তরুণটি তখন ছুরি উঁচিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যায় বলে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির ভাষ্য৷
তিনি বলেন, ‘‘এ অবস্থায় পুলিশ তার দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে৷ গুরুতর অবস্থায় বস্টন জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷ ”
কেমব্রিজের পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যে কোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক৷ আমরা আরিফের মৃত্যুকেও সহজভাবে নিচ্ছি না৷ সরেজমিনে তদন্ত চলছে৷ যদি অন্যায়ভাবে গুলি চালানো হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে৷”
স্থানীয় একটি টিভিতে দেওয়া সাক্ষাতকারে ওই এলাকার বাসিন্দা এক নারী বলেছেন, আরিফের হাতে কোনো ছুরি তিনি দেখেননি৷
এ পরিস্থিতিতে পুলিশ ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির পক্ষ থেকে সবার কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে৷ জানতে চাওয়া হয়েছে পুলিশ গুলি করার সময় আরিফের হাতে আদৌ কোনো ছুরি ছিল কিনা৷
সিটি হল প্রাঙ্গণের প্রতিবাদ সমাবেশে কম্যুনিটি লিডার ইউসুফ বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে যে পুলিশের বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির মধ্যে অন্তত পাঁচটি বিদ্ধ হয়েছে আরিফের বুকে৷ এ অবস্থায় নীরব থাকার অবকাশ নেই৷ আমাদের সংঘবদ্ধ আওয়াজ ওঠাতে হবে এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে৷”
বস্টন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইকবাল ইউসুফ বলেন, পুলিশের এ ধরনের আচরণে তিনি ‘হতবাক'৷
‘‘বস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি৷ এখানে যদি পুলিশের গুলিতে মানুষের প্রাণ ঝরে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে কেউ নিরাপদ নন ভাবতে হবে৷”
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পারভিন চৌধুরী, সেক্রেটারি তানভির মুরাদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, সেলিম জাহাঙ্গীর ও আশরাফউদ্দিন তালুকদারও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন৷
কেমব্রিজের মেয়র সম্বুল সিদ্দিকী বিদেশ থেকে ফিরবেন সোমবার৷ এ বিষয়ে তিনি সেদিন বিকেলেই কম্যুনিটির নেতাদের সাথে বৈঠকে বসবেন৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)