আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে জুলাই মাসে একটি আইন প্রণয়ন করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন৷ কিন্তু নিম্ন আদালতের রায়ের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না৷ এবার সুপ্রিম কোর্ট সেটা সম্ভব করে দিল৷
বিজ্ঞাপন
নতুন আইনে বলা হয়েছে, মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা তৃতীয় কোনো দেশ পাড়ি দিয়ে ঐ সীমান্ত পৌঁছছেন তাঁদের প্রথমে তৃতীয় ঐ দেশে নিরাপত্তার আবেদন করতে হবে৷ এর মানে হচ্ছে হন্ডুরাস, এল সালভেদর কিংবা নিকারাগুয়া থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা যেহেতু মেক্সিকো পাড়ি দিয়ে সীমান্ত পৌঁছেছেন, তাই তাদের প্রথমে মেক্সিকোতে নিরাপত্তার আবেদন করতে হবে৷
ফলে মেক্সিকো ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের সরাসরি মেক্সিকো সীমান্তে গিয়ে আর আশ্রয় আবেদনের সুযোগ থাকছে না৷
মধ্য অ্যামেরিকার দেশগুলো ছাড়াও আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আশ্রয়প্রার্থীরা মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হয়ে থাকেন৷
মার্কিন সীমান্ত যখন ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’
উন্নত জীবনের আশায় প্রতি বছর মধ্য অ্যামেরিকা থেকে অসংখ্য মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন৷ অভিবাসন থামাতে মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া নীতি সত্ত্বেও তাঁদের অনেকেই হার মানতে প্রস্তুত নন৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
অ্যামেরিকায় প্রবেশের স্বপ্ন
হাতে গোনা যে কয়েকজন শরণার্থী এ যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে, ১৫ বছর বয়সি হন্ডুরাসের বায়রন গার্সিয়া তাদের অন্যতম৷ ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সেও হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে অ্যামেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamayo
পথের শেষে অপেক্ষা
সবার এমন সৌভাগ্য হয় না৷ মেক্সিকোর উত্তরে সীমান্তে অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই৷ মার্কিন সীমান্তের কাছে টিহুয়ানা শহরে তাঁবু খাটিয়ে শীতের মধ্যেও খোলা আকাশের নীচে তাদের রাত কাটাতে হয়৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
আপদকালীন সাহায্য
ল্যাটিন অ্যামেরিকার এই শরণার্থীদের অনেকে প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন৷ প্রায় সহায়সম্বলহীন এই মানুষগুলির জন্য টিহুয়ানা শহরে খাদ্যের ব্যবস্থা করেন সাহায্যকারীরা৷ অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হবে, এমন আশায় অপেক্ষা করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamayo
টিহুয়ানায় আগমন
২০১০ সাল থেকে ‘পুয়েবলো সিন ফ্রন্তেরাস’ সংগঠন শরণার্থীদের এই ‘ক্যারাভ্যান’ আয়োজন করে আসছে৷ এভাবে তারা অভিবাসীদের সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়৷ মার্কিন কর্তৃপক্ষ অবশ্য খুব কম মানুষকে সে দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Duenes
হিংসালীলা থেকে দূরে
মূলত হন্ডুরাস, এল সালভাদোর ও নিকারাগুয়া থেকেই বেশিরভাগ মানুষ এই যাত্রায় যোগ দেন৷ তাঁদের অনেকেই নিজেদের দেশে স্থানীয় মাফিয়ার হত্যার হুমকি, জোর করে অর্থ আদায় ও হিংসার শিকার হয়েছেন৷ রাজনৈতিক নিপীড়নের ঘটনাও বিরল নয়৷
ছবি: Getty Images/D. McNew
কূটনৈতিক সংকট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে ন্যাশানাল গার্ড বাহিনীকে সীমান্তে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অ্যামেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যে কূটনৈতিক সংকটের ফলে উদ্যোক্তারা যাত্রা বন্ধ করে দেন৷ তবে প্রায় ৬০০ মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে টিহুয়ানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Heng
মরিয়া প্রচেষ্টা
কয়েকজন শরণার্থী মরিয়া হয়ে সীমান্তের কাঁটাতার পেরোনোর চেষ্টা করেছেন৷ ‘পুয়েবলো সিন ফ্রন্তেরাস’ সংগঠনের এক সদস্যের মতে, এই শরণার্থীরা যে অপরাধী বা সন্ত্রাসবাদী নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তা দেখিয়ে দিতে চান তাঁরা৷ তাঁর মতে, ভয়ভীতি ছাড়া বাঁচার তাগিদেই মানুষ এমন কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamajo
সাফল্যের সম্ভাবনা কম
বেশিরভাগ শরণার্থীর জন্য অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে সত্যি কম৷ একটি সূত্র অনুযায়ী গত বছর মার্কিন কর্তৃপক্ষ এল সালভাদোর, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালার ৭৫ থেকে ৭৯ শতাংশ শরণার্থীদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কয়েক বছরও অপেক্ষা করতে হয়৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ
যাবতীয় প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষ মার্কিন সীমান্তে অপেক্ষা করতে প্রস্তুত৷ সীমান্ত কর্তৃপক্ষ আরও মানুষকে প্রবেশ করতে দেবে, তাদের মনে এই আশা ও প্রার্থনা কাজ করে৷ সেই সুযোগ পেলে তবেই আশ্রয়ের আবেদন করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
9 ছবি1 | 9
ট্রাম্প প্রশাসন ১৫ জুলাই আইন প্রণয়নের পর গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নিম্ন আদালত নয়টি রাজ্যে ঐ আইন কার্যকরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷
তবে সুপ্রিম কোর্ট বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷
অবশ্য অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা আইনজীবী লি জেলার্ন্ট আশা করছেন, তাঁরা আবার আশ্রয়প্রার্থীদের পক্ষে রায় নিয়ে আসতে সমর্থ হবেন৷