ফ্লোরিডার স্কুলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে রাজনীতিকদের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা৷ একটি বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং জাতীয় রাইফেল সংস্থার প্রতি তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ফ্লোরিডায় বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহতদের স্বজন, ঐ স্কুলের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষ শনিবার ফোর্ট লডেরডেলে এ বিক্ষোভ মিছিল করে৷ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পরিবর্তনের দাবি জানান তারা৷ গত বুধবার ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ড শহরের কাছে একটি স্কুলে বন্দুক নিয়ে ঢুকে পড়ে এক প্রাক্তন ছাত্র৷ তার ছোড়া এলোপাথাড়ি গুলিতে প্রাণ হারায় ১৭ জন৷
ঐ স্কুলের শিক্ষার্থী এমা গনজালেস বলেন, ‘‘তারা (রাজনীতিবিদরা) বলে একজন ভালো ছেলে একটা খারাপ ছেলের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে বন্দুকের মাধ্যমে, কারণ, খারাপ ছেলেদের হাতে বন্দুক থাকে৷ এটা কোনো নীতি হতে পারে না৷'' পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ধিক্কার দেন তিনি৷ এমা যখন বলতে থাকেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শেম অন ইউ' বিক্ষোভকারীদের সবাই তার সাথে গলা মেলান৷ এইসময় এমা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘১৯ বছরের যে প্রাক্তন ছাত্রটি (নিকোলাস ক্রুজ) এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সে মানসিকভাবে অসুস্থ বলেই সবাই জানতো, তাহলে সে কীভাবে এআর-১৫ সেমি অটোমেটিক রাইফেল কেনার বৈধতা পায়?''
এফবিআই'র ভুল স্বীকার
এফবিআই জানিয়েছে, নিকোলাস ক্রুজের কর্মকাণ্ডের আভাস তারা পেয়েছিলেন, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ জানুয়ারি মাসে ক্রুজের ঘনিষ্ট একজন এফবিআইকে ফোন করে জানিয়েছিল ক্রুজের কাছে অস্ত্র আছে এবং তার আচরণ ভীষণ অস্বাভাবিক৷ কিন্তু সংস্থাটি ঐ ব্যক্তির কথায় গুরুত্ব দেয়নি৷ এফবিআই স্বীকার করেছে যে, তারা এই তথ্যগুলো স্থানীয় মিয়ামি পুলিশ কর্মকর্তাদের জানায়নি, জানালে হয়ত ক্রুজকে আগেই আটকানো যেতো৷
নিহতদের জন্য মোমবাতি মিছিল
ফ্লোরিডার স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার পর ওই দিন সন্ধে থেকেই স্কুলের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষক, অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা৷ নিহত বন্ধুদের স্মৃতিতে মোমবাতি মিছিলের আয়োজন হয়৷ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তাঁদের ভেঙে পড়ার দৃশ্য৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
কান্নার রোল
বন্ধুদের স্মৃতিতে মোমবাতি নিয়ে মিছিল করছিলেন ওঁরা৷ কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই কান্নার বাঁধ ভাঙে৷ এভাবেই হাউ হাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে আরো অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে৷ সকলের মুখেই প্রিয়বন্ধুদের হারানোর শোক৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
আলোর পথযাত্রী
শোকে মোমবাতি জ্বালানো পশ্চিমা বিশ্বে প্রচলিত রীতি৷ ফ্লোরিডাতেও তার অন্যথা হয়নি৷ ছাত্র-ছাত্রী থেকে অভিভাবক সকলেই উপস্থিত হয়েছিলেন স্কুলের সামনে৷ হাতে মোমবাতি৷ সকলের চেহারাতেই তখনো আতঙ্ক৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
ভয়াবহ
দুপুরেই স্কুলে ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ ঘটনা৷ বন্দুকধারী ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১৭ জনের, যার অধিকাংশই ছাত্র৷ পরে পুলিশ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র
জানা গিয়েছে, ওই বন্দুকবাজ স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র৷ কিছুদিন আগে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ কিন্তু কেন এমন কাজ সে করল, তা এখনো জানা যায়নি৷
ছবি: Reuters/Handout
নিহত শিক্ষাকর্মীরাও
শুধু ছাত্ররাই নয়, গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষাকর্মীরাও৷ ছাত্রদের পাশাপাশি তাঁদের নামও ঘুরেছে স্মৃতিতর্পণ করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের হাতে৷
ছবি: Reuters/J. Drake
আর নয়
মোমবাতি মিছিলে যোগ দেওয়া বহু মানুষের হাতেই ছিল প্ল্যাকার্ড৷ সেখানে লেখা ‘আর নয়’৷ মার্কিন মুলুকে বন্দুকের ব্যবহার কমানোর জন্য বহুদিন ধরেই আন্দোলন করছে নাগরিক সমাজ৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
কার কথা কে শোনে
ঘটনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, অ্যামেরিকায় যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ কিন্তু কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? গত এক বছরে বারবার ঘটেছে এমন ঘটনা৷ সরকার কিছুই করে উঠতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
ভয়, আতঙ্ক
অনেকেই বলছেন, মার্কিন সিভিল আন্দোলনের সময়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে৷ বস্তুত, সে সময় রাস্তাঘাটে যখন-তখন গুলি চলতো৷ আবার কি সে দিকেই যাচ্ছে মার্কিন সংস্কৃতি? প্রশ্ন তুলেছেন স্কুলে শোক প্রকাশ করতে আসা অনেকেই৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
8 ছবি1 | 8
এদিকে, ব্রোওয়ার্ড কাউন্টির শেরিফ জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে তার অফিস ক্রুজের বিরুদ্ধে ২০টি ফোন কল পেয়েছিল৷ এর মধ্যে অন্তত ২ টি ছিল তার মায়ের৷ ক্রুজের মা গত বছরের নভেম্বরে মারা যান৷ ক্রুজ অটিস্টিক এবং তাকে দীর্ঘদিন মানসিক চিকিৎসা নিতে হয়েছিল৷ এরুপরও সে এআর-১৫ রাইফেল কিনতে সমর্থ হয়৷
শনিবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এফবিআইর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, এতগুলো সংকেত পেয়েও এফবিআই শ্যুটারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷''
বিক্ষোভ সমাবেশে এমা গনজালেস বলেন, ‘‘এই ঘটনার পর রাজনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন, মানসিক বিকারগ্রস্ততাই স্কুলে শ্যুটিংয়ের ঘটনার কারণ৷ কিন্তু তারা কেউই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের কথা বলছেন না৷''
আর একজন শিক্ষার্থী স্টোনম্যান ডগলাস বলেন, ‘‘ক্রুজতো একটা ছুরি নিয়েও হামলা চালাতে পারতো৷ কিন্তু ‘বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন' না থাকায় আমি আমার স্বজন, বন্ধু, প্রিয়জনকে হারিয়েছি৷ আমি আর তাদের দেখতে পাবো না৷''
এদিকে, ১৭ জনকে হত্যার দায়ে ক্রুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷ সে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ৬ তথ্য
ফ্লোরিডার স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার পর ফের মার্কিন মুলুকে বন্দুক ব্যবহারের প্রচলন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কীভাবে বন্দুক কেনা যায় সে দেশে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Breed
বন্দুকের শিকার
অ্যামেরিকায় সাধারণ নাগরিকের বন্দুক ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চলছে৷ রাজনীতিতেও এর ঢেউ লেগেছে বহু সময়৷ তথ্য বলছে, প্রতিবছর বন্দুকের লড়াইয়ে অ্যামেরিকায় মৃত্যু হয় ৩৩ হাজার মানুষের৷ এর সঙ্গে অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে লড়াই, আত্মহত্যা, হত্যার চেষ্টার ঘটনা ধরলে সংখ্যাটি হবে ৩ গুণেরও বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Sladky
১৮ বছর হলেই বন্দুক
মার্কিন আইন অনুযায়ী বয়স ১৮ বছর হলেই সে দেশের যে কোনো নাগরিক বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ শটগান বা রাইফেলও কিনতে পারেন৷ সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ কার্তুজ৷ তবে হ্যান্ড গান, লিভলভার কিনতে হলে অপেক্ষা করতে হয় ২১ বছর বয়স পর্যন্ত৷
সকলকে অবশ্য বন্দুক কেনার ছাড়পত্র দেওয়া হয় না৷ অতীতে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, দাগী অপরাধী কিংবা রাষ্ট্র যাদেরকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করে, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয় না৷ যদিও অভিযোগ, অস্ত্রের খোলা বাজার থাকায় অনেকেই বেআইনি অস্ত্র সংগ্রহ করে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Krzaczynski
চাইলেই কি বিক্রি করা যায় বন্দুক
অস্ত্রের দোকান বা বন্দুকের দোকান খোলার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হয়৷ ২১ বছর না হলে এ ধরনের দোকান খোলার অনুমতি মেলে না৷ সকলকে বন্দুকের দোকান তৈরির ছাড়পত্রও দেওয়া হয় না৷ সেক্ষেত্রেও দেখা হয় আবেদনকারীর ট্র্যাক রেকর্ড৷
ছবি: DW/I. Pohl
আবেদনকারীর অতীত পরীক্ষা
যাঁরা দোকান খুলতে চান, কিংবা যাঁরা বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন, সকলেরই অতীত সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হয়৷ স্থানীয় প্রশাসন ঠিক করে কারা সেই তদন্ত করবে৷ সাধারণত এফবিআই এই কাজটি করে থাকে৷ তবে অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনও একটি তদন্ত চালায় আলাদা ভাবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/R. Barrera
খোলা রাস্তায় বন্দুক
বন্দুক কেনা গেলেও খোলা রাস্তায় বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে৷ কোনো কোনো রাজ্যে বন্দুক খাপে ভরে ঘোরা যায়৷ অধিকাংশ জায়গায় হ্যান্ড গান সঙ্গে রাখলে তার লাইসেন্সও সঙ্গে রাখতে হয়৷ তবে অধিকাংশ রাজ্যেই শট গান সঙ্গে নিয়ে যত্রতত্র ঘোরা যায়৷ তার জন্য কোনো বিধিনিষেধ নেই৷