ইসলামিক স্টেট সদস্য আল শফি আলশেখের বিচার করতে যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে বুধবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হচ্ছে৷ তার আগে মঙ্গলবার জুরি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সুদানে জন্মগ্রহণ করা আলশেখ শিশু বয়সে যুক্তরাজ্যে যান৷ আইএস-এ যোগ দিতে ২০১২ সালে তিনি সিরিয়া গিয়েছিলেন৷ সেখানে তিনি চারজনের একটি গ্রুপের সদস্য ছিলেন৷ ব্রিটিশ উচ্চারণের কারণে গ্রুপটি ব্রিটিশ ব্যান্ড ‘বিটলস'-এর নামে পরিচিত ছিল৷
৩৩ বছর বয়সী আলশেখের বিরুদ্ধে মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলি ও স্টিভেন সটলফ এবং ত্রাণকর্মী পিটার কাসিগ ও কেয়লা ম্যুলারকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এছাড়া আলশেখের বিটলস গ্রুপ প্রায় ১৫ দেশের অন্তত ২৭ জনকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে৷
অপহৃত হওয়া কয়েকজনকে তাদের দেশের সরকার অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিয়েছিল৷ বাকিদের গলা কেটে হত্যা করা হয় এবং সেই ভিডিও প্রকাশ করা হয়৷
আরেক সহযোগী ৩৭ বছর বয়সি আলেকজান্ডা কোটির সঙ্গে মিলে আলশেখ বন্দিদের দেখাশোনা করতেন৷ তারা বন্দিদের ওয়াটার-বোর্ডিং, ইলেকট্রিক শকসহ নানাভাবে নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ বিচারের সময় তাদের কাছে নির্যাতনের শিকার হওয়া কয়েক বন্দির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে৷
ইসলামিক স্টেটের শক্তি এখন কেমন?
২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাঘুজে সংঘাতের পর ইসলামিক স্টেট তথা আইএস-এর পতন ঘটেছিল৷ এরপর সেটি এখন গেরিলা সংগঠনে পরিণত হয়েছে৷ বুধবার মার্কিন অভিযানে তাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা প্রাণ হারান৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
পতন
২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তের বাঘুজে সংঘাতের পর ইসলামিক স্টেট তথা আইএস-এর পতন ঘটেছিল৷ এরপর ঐ বছরের অক্টোবরে আইএস-এর প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হন৷ একসময় ইরাক ও সিরিয়ার একটি বিশাল এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে সংগঠনটি গেরিলা হামলা চালানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Cacace
দুই শীর্ষ নেতার মৃত্যু
বাগদাদির মৃত্যুর পর আইএস এর প্রধান হন ইরাকের আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি৷ একসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দি ছিলেন৷ গত বুধবার রাতে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযানের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি নিহত হন৷ কুরেশি ছাড়া সংগঠনটির আর কোনো নেতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় না, কারণ আইএস এখন গোপনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷
ছবি: Mohamed Aldaher/REUTERS
কত সদস্য আছে?
বাঘুজে লড়াই শেষে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট জানিয়েছিল, প্রায় তিন হাজার বিদেশিসহ সংগঠনে এখনও ১৪ থেকে ১৮ হাজার সদস্য আছে৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আইএস-এর অনেক স্থানীয় সদস্য হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে৷ কিন্তু সুযোগ পেলেই তারা আবার আবির্ভূত হতে পারে৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
তিনবছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা
সপ্তাহ দুয়েক আগে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের হাসাকা শহরের একটি জেলখানায় হামলা চালায় আইএস৷ সেখানে তাদের সদস্যদের বন্দি রাখা হয়েছিল৷ ঐ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস জানিয়েছে, হামলায় তাদের ৪০ জন সদস্য, কারাগারের ৭৭ জন নিরাপত্তা প্রহরী ও চারজন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান৷ আর ইসলামিক স্টেটের ৩৭৪ জন হামলাকারী বা বন্দি ঐ হামলায় নিহত হন৷
মার্কিন সরকারের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত তিন মাসে আইএস ইরাকে ১৮২টি ও সিরিয়ায় ১৯টি হামলা চালিয়েছে৷ আইএস এখনও প্রাণঘাতী ও জটিল হামলা চালাতে সক্ষম৷
ছবি: HUSSEIN FALEH/AFP/Getty Images
ভবিষ্যৎ কৌশল?
ইসলামিক স্টেটের পূর্বসূরি সংগঠনের নাম ছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক৷ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র ঐ সংগঠনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল৷ এরপর ঐ সংগঠনের সদস্যরা গোপনে চলে গিয়েছিলেন৷ তারপর সুযোগ বুঝে সামনে এসেছিল তারা৷ এবারও কি সেই কৌশল নেবে তারা?
ছবি: SDF/AP photo/picture alliance
কী ছিল সেই কৌশল?
ইরাকে শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় সুন্নিদের মধ্যে অসন্তোষ এবং সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সামনে আসা শুরু করেছিল আইএস৷ ২০১২ ও ২০১৩ সালে ইরাকের বিভিন্ন কারাগারে হামলা চালিয়ে অনেক সদস্যকে মুক্ত করে তারা৷ একই সময়ে মানুষজনকে ভয় দেখিয়ে এবং চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি উপায় ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করেছিল৷ এরপর ২০১৪ সালে মসুল ও ইরাকের উত্তরাঞ্চলের এক বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল আইএস৷
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
7 ছবি1 | 7
আলশেখ ও কোটি ২০১৮ সালে তুরস্কে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন৷ পরে তাদের ইরাকে মার্কিন বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ ঐ বছরই তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাজ্য৷
২০২০ সালের অক্টোবরে তাদের বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ফোলি, সটলফ, কাসিগ ও ম্যুলারকে হত্যার কথা স্বীকার করেন আলেকজান্ডা কোটি৷ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে৷
বিটলসের আরেক সদস্য আইন ডেভিস সন্ত্রাসবাদের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তুরস্কের কারাগারে সাত বছরের সাজা ভোগ করছেন৷
গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ এমওয়াজি, যিনি ‘জিহাদি জন' নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি ২০১৫ সালে সিরিয়ার মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন৷