২০১৯ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক সিনাগগে হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা ও তিনজনকে আহত করেছিলেন জন আর্নেস্ট৷ তার কয়েক সপ্তাহ আগে কাছের এক মসজিদে আগুনও লাগিয়েছিলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
সে কারণে বৃহস্পতিবার তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সান ডিয়াগোর আদালত৷ এই সময় তিনি কোনো প্যারোলেরও আবেদন করতে পারবেন না৷
২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল সান ডিয়াগোর এক সিনাগগেহামলা চালান ১৯ বছর বয়সি আর্নেস্ট৷ তার গুলিতে ৬০ বছর বয়সি লরি গিলবার্ট-কেয় নিহত হন৷ রাব্বিসহ তিনজন আহত হন৷ এরপর তিনি সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে ৯১১-এ ফোন করে তার হামলার কথা জানান এবং পুলিশ আসার জন্য অপেক্ষা করেন৷
এই হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি পাশের শহরের এক মসজিদে ভোরবেলায় আগুন লাগিয়েছিলেন৷ অবশ্য এতে কেউ আহত হননি৷
বিভীষিকাময় আণবিক বোমা হামলার স্মরণে
কোনো যুদ্ধে আণবিক বোমার ব্যবহারের একমাত্র উদাহরণ স্থাপন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে আণবিক বোমা হামলা চালিয়েছিল তারা, যার বিভীষিকা আজও বয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
প্রথম বোমা নিক্ষেপ
১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট৷ ঘড়িতে বাজছে ঠিক সকাল সোয়া আটটা৷ জাপানের হিরোশিমা নগরিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান ‘এনোলা গে’ থেকে ছোড়া হয় প্রথম আণবিক বোমা ‘লিটল বয়’৷ মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় গোটা নগরীর বাড়ি ঘর, দালান কোঠা৷ আণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান সেখানকার ২০ ভাগ মানুষ৷ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে লক্ষাধিক৷
ছবি: Three Lions/Getty Images
দ্য এনোলা গে
আদতে হিরোশিমায় বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল ঐ বছরের ১লা আগস্ট৷ কিন্তু টাইফুনের কারণে তা বাতিল করা হয়৷ পাঁচদিন পর ‘এনোলা গে’ ১৩ জন ক্রু নিয়ে হামলার জন্য রওনা হয়৷
ছবি: gemeinfrei
দ্বিতীয় বোমা হামলা
হিরোশিমায় হামলার তিনদিন পর, অর্থাৎ ৯ই আগস্ট, অ্যামেরিকা দ্বিতীয় আণবিক বোমাটি ফেলে নাগাসাকি শহরে৷ আসলে তাদের লক্ষ্য ছিল কিয়োটো৷ কিন্তু এতে মার্কিন প্রতিরক্ষাবাহিনী সায় না দেয়ায় নাগাসাকিকে বেছে নেয়া হয়৷ এই বোমাটির নাম ছিল ‘ফ্যাট ম্যান’৷ এতে বিস্ফোরক ছিল ২২ হাজার টন টিএনটি৷ বোমা হামলার চার মাসে সেখানে প্রাণ হরান ৭০ হাজার মানুষ৷
ছবি: Courtesy of the National Archives/Newsmakers
কৌশলগত হামলা
১৯৪৫ সালে নাগাসাকিতে ছিল মিৎসুবিশি কোম্পানির ইস্পাত ও অস্ত্র কারখানা৷ সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবারে হামলা চালানোর টর্পেডোও তৈরি হতো৷ নাগাসাকিতে তখন মাত্র অল্প কয়েকজন সেনা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হামলা শিকার
বোমা হামলার সময়ই কেবল নয়, তেজস্ক্রিয়তায়ও কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ তেজস্ক্রিয়তা, পোড়া ও ক্ষতের কারণে ১৯৪৫ সালের শেষে কেবল হিরোশিমাতেই নিহত হয়েছেন ৬০ হাজার মানুষ৷ পাঁচ বছর পরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৩০ হাজারে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
যুদ্ধাপরাধ?
হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা হামলার পর জাপানিরা আতঙ্কে ছিলেন যে, রাজধানী টোকিওতে হয়ত তৃতীয় হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র৷ তাই আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ঐ হামলা দুটির নির্দেশ দেন৷ তাঁর মনে হয়েছিল এতে বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে৷ ইতিহাসবিদরা অবশ্য এ ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: AP
পুনর্গঠন
হিরোশিমা নগরীর ‘সিটি সেন্টার’ বোমা হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যা আবার নতুন করে গড়া হয়৷ কেবল ‘ওটা’ নদীর ধারে দ্বীপটিতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি৷ সেখানে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ: শান্তি জাদুঘর, শিশুদের শান্তি স্মারক স্তম্ভ, শিল্প ও বাণিজ্য ভবনের ধ্বংসস্তূপ আর শিখা অর্নিবাণ, যেটা জ্বলবে বিশ্বের সব আণবিক বোমা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত৷
ছবি: Keystone/Getty Images
স্মরণের সংস্কৃতি
১৯৫৫ সালে নাগাসাকিতে অ্যাটোমিক বোমার জাদুঘর এবং একটি ‘পিস পার্ক’ বা শান্তি উদ্যান নির্মাণ করা হয়৷ সেখানে গিয়ে অনেকেই বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করেন৷ এটা জাপানিদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পারমাণবিক যুদ্ধের নারকীয়তার বৈশ্বিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে হিরোশিমা ও নাগাসাকি৷
ছবি: Getty Images
এক মুহূর্তের নীরবতা
প্রতি বছর হিরোশিমায় এ দিনটি উপলক্ষ্যে অনেক বড় পরিসরে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়৷ বোমাটি যখন নিক্ষেপ করা হয়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তটিতে ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মানুষ, নিহতদের স্বজন, সাধারণ নাগরিক, রাজনীতিবিদ – সবাই এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন৷ অনেকেই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের জন্য অঙ্গীকার করেন এদিন৷
ছবি: Kazuhiro Nogi/AFP/Getty Images
জীবিত শেষ সদস্য নিহত
যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর যে দলটি ঐ ‘অ্যাটম বোমা’ নিক্ষেপ করেছিল সেই দলের জীবিত শেষ সদস্য থিওডোর ভ্যানকির্ক ২০১৪ সালের ৩০শে জুলাই মারা যান৷ জর্জিয়া রাজ্যে অবসরপ্রাপ্তদের একটি আবাসে ৯৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি৷ ‘ডাচ’ নামে পরিচিত কির্ক বোমা নিক্ষেপকারী বিমান এনোলা গে-র নেভিগেটর ছিলেন৷ সে সময় তাঁর বয়স ছিল ২৪ বছর৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
10 ছবি1 | 10
সিনাগগে হামলার কিছুক্ষণ আগে আর্নেস্ট ইন্টারনেটে একটি ইহুদি ও মুসলিমবিরোধী ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করেন৷ সেখানে তিনি বলেন, একই সময়ে নিউজিল্যান্ডে দুই মসজিদে হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার ঘটনা থেকে তিনি উৎসাহ পেয়েছেন৷ এছাড়া কয়েকমাস আগে পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গে সিনাগগে হামলা চালিয়ে ১১ জনকে হত্যার ঘটনাও তিনি ম্যানিফেস্টোতে উল্লেখ করেন৷
রায় ঘোষণার আগে আর্নেস্টকে কোনো বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি৷ তিনি বর্ণবাদী বক্তব্য দিতে পারেন এই আশঙ্কায় বিচারক ঐ সিদ্ধান্ত নেন৷
সিনাগগে নিহত ব্যক্তির মেয়ে হানা কেয় আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি' মহামারি আকার ধারণ করেছে৷