পুটিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৫ সালে৷ আশির দশকে তিনি কেজিবি এজেন্ট হিসেবে জার্মানির ড্রেসডেনে কর্মরত ছিলেন৷ বার্লিন ওয়ালের পতনের পর রাশিয়ায় ফিরে গিয়ে বরিস ইয়েলৎসিনের ক্রেমলিনে প্রবেশ করেন তিনি৷ ইয়েলৎসিন তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে পুটিনের নাম ঘোষণা করলে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়৷

বড় পদে যাওয়ার আগ অবধি রাশিয়ার সাধারণ জনতা পুটিনকে বলতে গেলে চিনতেনই না৷ ১৯৯৯ সালের আগস্টে চেচনিয়ার একদল সশস্ত্র মানুষ রাশিয়ার দাগেস্তান দখল করে নিলে পুটিন লাইম লাইটে আসেন৷ প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিন তখন তাঁকে চেচনিয়াকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব দেন৷ সেবার বর্ষবরণের আগের রাতে অপ্রত্যাশিতভাবে পদত্যাগ করেন ইয়েলৎসিন এবং পুটিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন৷

সোচিতে একটি প্রীতি হকি গেমে পুটিনের দল ১৮-৬ গোলে জয়লাভ করে৷ এরমধ্যে আটটি গোলই করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট!

পুটিন বিরোধীদের এক ব়্যালিতে এভাবে মুখে টেপ লাগিয়ে তার উপরে পুটিন লিখে হাজির হয়েছিলেন এক প্রতিবাদকারী৷ ২০১৩ সালে সেদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা রিয়া নোভোস্টিকে সংস্কারের ঘোষণা দেয় ক্রেমলিন এবং সেটির দায়িত্ব উগ্র পশ্চিমাবিরোধী মতের জন্য পরিচিত এক ক্রেমলিনপন্থির হাতে তুলে দেয়া হয়৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রেস ফ্রিডম সূচকে ১৭৮টি দেশের মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান ১৪৮তম৷

রাশিয়ায় অনেকে বিশ্বাস করেন পুটিন কাজে বিশ্বাসী৷ এই ভাবমূর্তি গড়তে গিয়ে গণমাধ্যমে মাঝেমাঝেই ঊর্দ্ধাঙ্গ অনাবৃত ঘৌড়সওয়ারের বেশে বা জুডোতে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার বেশে পুটিনের ছবি প্রকাশ হয়৷ রাশিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারায় পুটিনের প্রশংসা করেন অনেকে, পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগও রয়েছে৷

২০০৭ সালে পুটিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি যখন ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করে, তখন সমালোচকরা দাবি করেন, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক ছিল না৷ পুটিনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রণের কণ্ঠরোধে অভিযোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে দাঙ্গা পুলিশ৷ সেই বিক্ষোভ ব়্যালিতে একটি পোস্টারে লেখা ছিল, ‘ধন্যবাদ, না!’

ক্রাইমিয়ার সেভাস্টোপোলে একটি ছোট সাবমেরিনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে পুটিনকে৷ বলা হয়ে থাকে, কৃষ্ণ সাগরের গভীরে তিনি গিয়েছিলেন এই সাবমেরিনে করে৷ এরকম ছবি মাঝে মাঝেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ কখনো তিনি বুনো বাঘকে কাবু করেন চেতনানাশক দিয়ে কিংবা ওড়ের বিলুপ্তপ্রায় সারসের সঙ্গে৷ এভাবে এক দুঃসাহসী অভিযাত্রীর বেশে পুটিনকে উপস্থাপন করা হয়৷

বারাক ওবামা সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ‘ফটোগ্রাফড’ মানুষ৷ তবে পিট সুজার মতো তাঁর এত কাছাকাছি যাবার সৌভাগ্য খুব কম মানুষেরই আছে৷ ওবামা-দম্পতির মানবিক ও অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলিও ধরে রাখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি৷ যেমন ২০১২ সালে অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অ্যামেরিকা ও ব্রাজিলের বাস্কেটবল ম্যাচের সময় তোলা এই ছবিটি৷

বারাক ওবামার অনবদ্য রসবোধ পিট সুজার ক্যামেরায় বার বার ধরা পড়েছে৷ যেমন এখানে ৩ বছরের এক ‘স্পাইডারম্যান’-এর অদৃশ্য জালে আটকে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ সুজা অবশ্য কোনো একটি ছবিকে সবচেয়ে প্রিয় বলতে পারেন না৷ ওবামা নিজে এই ছবিটিকে ২০১৫ সালের ফেভারিট হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷

এই ছবিটি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ বারাক ও মিশেল ওবামার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রিন্স জর্জ ১৫ মিনিট বেশি জেগে থাকার অনুমতি পেয়েছিল৷ বাথরোব পরে সে দিব্যি ওবামা-দম্পতির সঙ্গে হাত মেলালো৷ তাঁর সুবিধার জন্য ওবামা হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছিলেন৷ প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেট ওবামা দম্পতিকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ করেছিলেন৷

দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষ হওয়া সত্ত্বেও ওবামা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে চান না – অন্তত অ্যামেরিকার সেই সব শিশুদের জন্য, যারা ওভাল অফিসে তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পায়৷ যেমন জেকব ফিলাডেলফিয়া৷ ওবামা মানুষের সঙ্গে কত সহজে মিশতে পারেন, এই ছবি তারই এক দৃষ্টান্ত৷

এই ‘কুল’ বা স্বতঃস্ফূর্ত স্মার্ট ভাবমূর্তি বজায় রাখতে ওবামা বেশ পছন্দ করেন৷ যেমন ২০১২ সালে নির্বাচনি প্রচারের সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তোলা এই ছবিতে তাঁকে বেশ খোশমেজাজে দেখা যাচ্ছে৷

অন্য কোনো ছবিতে সামাজিক বৈষম্য সম্পর্কে ওবামার মনোভাবের এত স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় না৷ শুনলে নির্বাচনি বুলি মনে হলেও পিট সুজার তোলা এই ছবি সেই বার্তা তুলে ধরছে৷

হোয়াইট হাউসের প্রেস অফিস সুন্দর ছবির ক্ষমতা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন৷ জামাইকার রাজধানী কিংস্টন থেকে দেশে ফেরার আগে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ বিমানে ওঠার সময়ে আকাশে শোভা পাচ্ছিল সুন্দর রামধনু৷ ২০০৮ সালেই সুজা সেনেটর ওবামার উত্থান সম্পর্কে এক ছবির সংগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন৷

রিসেপশন, নৈশভোজের আমন্ত্রণ অথবা রাষ্ট্রীয় সফর – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির উপর থেকে নজর কখনোই সরে যায় না৷ কিন্তু সেই সব হইহট্টগোলের বাইরে তাঁরা যে কোনো স্বাভাবিক পরিবারের মতোই আচরণ করেন৷ যেমন ফুটবল খেলা দেখতে দেখতে সন্ধ্যায় টিভির সামনে বসে নৈশভোজ সেরে নেওয়ার এই দৃশ্য দেখিয়ে দিচ্ছে৷

সারাদিন ধরে বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে সিদ্ধান্তের পটভূমি হলেও ছুটির পর হোয়াইট হাউস খেলার মাঠ হয়ে যায়৷ বারাক ওবামা পারিবারিক কুকুর ‘বো’-কে নিয়ে খেলায় মেতে ওঠেন৷

এই ছবিটিও ওবামার পছন্দের ভাবমূর্তি তুলে ধরে৷ এমন এক মানুষ, যিনি ক্ষমতার শীর্ষে উঠেও নিজের স্বাভাবিক সত্তা হারাননি৷ কয়েকজন সেক্রেটারি ও কংগ্রেসের কর্মীর সঙ্গে তিনি দিব্যি বাস্কেটবল খেলায় মেতে উঠেছেন৷ কিন্তু প্রেসিডেন্টকে হারানোর সাহস কার মনে আছে!