কাতারে মার্কিন কর্মকর্তা এবং তালেবান সদস্যদের মধ্যে আলোচনা কি আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে? কিন্তু এটা ঠিক যে এই আলোচনা আফগান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে অবনতি ঘটাবে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A. Khan
বিজ্ঞাপন
জুলাইতে কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলস আফগান তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন৷ আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানে সংকটের অবসান ঘটিয়ে শান্তি স্থাপন৷ এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন এমন একজন তালেবান সদস্য সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, ‘‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে৷ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে৷'' তবে সেই আলোচনাকে শান্তি আলোচনা বলতে রাজি নন তিনি৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রে যে আলোচনা হবে সেই আলোচনা ঐ পথে যাবে বলে জানান তিনি৷
অন্যদিকে, আফগান সরকার বার বার তালিবানদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও তারা ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷ যদিও যুক্তরাষ্ট্র বরাবর বলে আসছে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ার বিষয়টি সেখানকার জনগণের মতামতের উপরই নির্ভর করছে৷
আফগান সরকারের অবস্থান
তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে সবরকমের ছাড় দিতে প্রস্তুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি৷ এমনকি তাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাবও রেখেছেন৷ পাশাপাশি এটি কার্যকর করতে সংবিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও এনেছেন৷ কিন্তু তালেবান ঈদের সময় তিনদিনের যুদ্ধবিরতি ছাড়া কোনো শর্তেই রাজি হয়নি৷ অথচ আফগান সরকার তাদের কাছে বার বার আর্জি জানাচ্ছে শান্তি প্রক্রিয়া আফগানিস্তানের নেতৃত্বেই হওয়া উচিত৷
সাবেক তালেবান সদস্য এবং কাবুলের প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদ মুজদাহ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা কাবুল সফর করেছেন এবং তালেবানের সাবেক সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ এর মধ্যে কয়েকটিতে উপস্থিত ছিলাম আমি৷ আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, যাতে তালেবান এবং যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় আফগান সরকার কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করে৷''
ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছেন৷ তাঁর ধারণা ছিল, এতে তালেবান জঙ্গিরা চাপের মুখে থাকবে৷ কিন্তু এরপরও আফগান অঞ্চলে তালেবানের আধিপত্য কমেনি৷
মুজদাহ বললেন, ‘‘আফগানিস্তানে কিছুটা হলেও সাফল্য অর্জন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে মার্কিন কূটনীতিকদের আশংকা, শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হলে ট্রাম্প কোনো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেবেন৷'' শান্তি আলোচনায় তালেবানের অন্যতম শর্ত হলো, আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়া৷ এবং এজন্য একটা সময় ঠিক করার প্রস্তাব দেবে তারা৷
আফগানিস্তানে অফুরন্ত ক্ষমতার লড়াই
২০০১ সালে আফগানিস্তানকে তালেবানমুক্ত করতে অভিযান শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু এখনও শান্ত হয়নি দেশটি৷ বরং গত কয়েকমাসে জঙ্গি হামলা আরও বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
ঠুনকো নিরাপত্তা
গত কয়েকমাসে বিভিন্ন হামলায় শত শত লোক হতাহত হয়েছেন৷ ফলে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে৷ এছাড়া জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও উঠে এসেছে৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
চাপে সরকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এবং তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করছে৷ এসব গোষ্ঠীর হাতে থাকা বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Hossaini
ঘোষণা দিয়ে হামলা শুরু
গতসপ্তাহে ঘোষণা দিয়ে তালেবান বসন্তকালীন হামলা শুরু করেছে৷ দেশটিতে কঠোর ইসলামি শাসন চালু করতে চায় তারা৷ আফগানিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গতবছর আরও আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা ঘোষণা করার প্রতিক্রিয়ায় এমন হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান৷
ছবি: Reuters
মার্কিন নীতি
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানে আরও মার্কিন সেনা মোতায়েনের চিন্তা করছেন৷ এই সেনারা আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার কাজ করবে৷ এছাড়া যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন সেখানে মার্কিন উপস্থিতি থাকবে বলেও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
শান্তি প্রক্রিয়া
ফেব্রুয়ারি মাসে ‘কোনো শর্ত ছাড়াই’ আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তালেবানের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ কিন্তু জঙ্গি গোষ্ঠীটি সে ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি৷ তাদের অভিযোগ, আলোচনার প্রস্তাব একটি ‘ষড়যন্ত্র’৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ময়দানে তালেবান এখন সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে তারা আলোচনায় বসতে রাজি হচ্ছে না৷ বর্তমানে তালেবানের হাতে ২০০১ সালের পর সবচেয়ে বেশি আফগান জেলার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
পাকিস্তানের সমর্থন
আফগানিস্তানে হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিরা পাকিস্তানে নিরাপদে আস্তানা গড়তে পারে বলে কাবুল ও ওয়াশিংটনের অভিযোগ৷ তবে পাকিস্তান সবসময় তা অস্বীকার করে এসেছে৷ কাবুল ও ইসলামাবাদ সবসময় একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের দেশের জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ করে থাকে৷
ছবি: DW/H. Hamraz
অকার্যকর সরকার
ক্ষমতার অফুরন্ত লড়াইয়ের মাঝে জনমত সমীক্ষায় প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে৷ আফগান সরকারের দুর্নীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গড়ে ওঠা জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের কারণে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Pempel
7 ছবি1 | 7
মাসুদ সাইফুল্লাহ/এপিবি
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷