‘বিস্কুট আর ব্যান্ড-এইড’
১ মার্চ ২০১৩সিরিয়া সংঘাত তৃতীয় বছরে পড়ল৷ নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই এক লাখ ছাড়িয়ে থাকতে পারে৷ বাশার আল-আসাদের প্রশাসন বিদ্রোহী ও বেসামরিক জনতার বিরুদ্ধে ক্রমেই আরো বেশি নৃশংস পন্থা অবলম্বন করছে, এমনকি স্কাড মিসাইল ব্যবহার করতে পর্যন্ত দ্বিধা বোধ করছে না৷ অপরদিকে আসাদ যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ডাক শুনে রাজনৈতিক উত্তরণে সম্মত হবেন, তারও কোনো লক্ষণ নেই৷
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বৃহস্পতিবার রোমে বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন সিরিয়ার বিরোধী জোটকে অতিরিক্ত ৬০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দেবে, তবে যুদ্ধাস্ত্রের জন্য নয়৷ এই সাহায্য হবে সিরিয়ার ‘‘মুক্ত এলাকাগুলির'' পুনর্নির্মাণ ও সহায়তার জন্য৷
এএফপি সংবাদ সংস্থার বিবরণ অনুযায়ী এক মার্কিন কর্মকর্তা যোগ করেছেন যে, মার্কিন সাহায্যের উদ্দেশ্য হল চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলির ক্রমবর্ধমান প্রভাব খর্ব করা এবং প্রদর্শন করা যে, বিদ্রোহীরা আসাদ প্রশাসনের নৃশংসতা কিবা আল-কায়েদার সঙ্গে সংযুক্ত চরমপন্থিদের কর্মসূচি ছাড়াই সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ দৈনন্দিন জীবনের গ্যারান্টি দিতে সক্ষম৷
যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎ সিরিয়ার জনগণের জন্য প্রায় ৩৮৫ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সাহায্য দিয়েছে, যা বিভিন্ন এনজিও'র মাধ্যমে বণ্টন করা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘‘নন-লিথাল এইড'', অর্থাৎ যে সাহায্য যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধাস্ত্রের জন্য নয়, তার পরিমাণও এবার ১১০ মিলিয়ন ছাড়াতে চলেছে৷ কেরি এ'ও বলেছেন যে, সশস্ত্র বিদ্রোহীদের আলাদাভাবে ‘‘খাদ্য ও চিকিৎসার সরঞ্জাম'' দেওয়া হবে৷
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে সিরিয়ার ক্ষেত্রে ২০১১ সালে লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের মতো অতদূর যেতে রাজি নয় - অন্তত আপাতত নয় - সেটা স্পষ্ট৷ এবং সেটাই বিদ্রোহীদের ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের হতাশার কারণ৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে কেরির পূর্বসূরি হিলারি ক্লিন্টনের আমলেই প্রেসিডেন্ট ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সিরীয় বিদ্রোহীদের অস্ত্র প্রদানের একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিল, কিন্তু ওবামা সে পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যামেরিকার এই নাতিশীতোষ্ণ প্রতিক্রিয়ার জন্যই এমন একটি ভ্যাকুয়ামের সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি মাথা চাড়া দিতে পারছে, যা দীর্ঘ মেয়াদে আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় মার্কিন প্রভাবের হানি ঘটাবে৷
অপর এক বিশ্লেষক বলেছেন, আসল মুশকিল হল এই যে, ইরাক এবং আফগানিস্তানের পর যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ার মতো রুচি নেই৷ কিন্তু সেটাই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের কাছে উদ্বেগ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কেরি আগামী রবিবার রিয়াধে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতে যা উপলব্ধি করতে পারেন৷
এসি / এসবি (এএফপি)