চাবেসের সামনে চ্যালেঞ্জ
৬ অক্টোবর ২০১২‘‘আগে আগে এসে ভোট দিয়ে দেবেন, যাতে দিনের আলো থাকতে থাকতেই বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে যায়৷ ভোর ৩টায় উঠে পড়বেন, কফি খাবেন, চকোলেট খাবেন, তারপর ব্রেকফাস্ট সেরেই সবাই মিলে চলে আসবেন ভোট দিতে৷ ভোট দেবেন আপনার ভবিষ্যতের জন্য, আপনার জীবনের জন্য... ভোট দেবেন চাবেসকে৷'' কারাকাসে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বিশাল এক জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছেন যিনি, বোঝার উপায় নেই ক'দিন আগেও তিনি লড়েছেন ক্যান্সারের সঙ্গে৷ সেই যুদ্ধে জয়ী বলা যায় তাঁকে৷ মারণব্যাধির চোখ রাঙানি নেই, কিন্তু সামনে আছেন এনরিকে কাপ্রিলেস৷ গেল ১৪ বছর ভেনেজুয়েলায় যা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি, আটমাসে তাই করে দেখিয়েছেন কাপ্রিলেস৷
রোববার নির্বাচন৷ আগে হলে বলে দেয়া যেত উগো চাবেসই জিতবেন৷ কিন্তু এবার আর এত জোর দিয়ে কথাটা বলার জো নেই৷ বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে, আট মাস ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ৪০ বছর বয়সী এই তরুণ এখন এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে যেখান থেকে চাবেস-যুগের অবসানের আশা করা যেতেই পারে৷
অধিকাংশ জনমত জরিপে অবশ্য চাবেসই এখনো এগিয়ে৷ তবে কাপ্রিলেসের উন্নতিটা শেষ দিকে এসে খুব চোখে পড়ছে৷ দুটো জরিপ এগিয়ে রেখেছে তাঁকেই৷ ৫৮ বছর বয়সী চাবেসের সঙ্গে সার্বিক ব্যবধানটা সাড়ে দশ পয়েন্টে নামিয়ে এনেছেন - মিরান্দা রাজ্যের সাবেক মেয়রের জন্য এটাই বা কম কী!
ভোটের আগে নিজের শেষ ভাষণে বৃহস্পতিবার কাপ্রিলেসও কম যাননি৷ নাটকীয়তায় ছাড়িয়ে গেছেন চাবেসকেও৷ ১৪ বছরের চাবেস শাসনের সমালোচনা করে ভোটারদের তিনি বলেছেন, ‘‘অতীতকে পেছনে ফেলার সময় এসে গেছে৷'' কাপ্রিলেস ১৪ বছরের অতীতকে বা এতটা সময় ধরে দেশ পরিচালনা করে আসা চাবেসকে খাটো করেননি৷ চাবেসের উদ্দেশ্যে বরং তাঁর কথা ছিল, ‘‘প্রেসিডেন্ট চাবেস, আপনি যা যা করতে পেরেছেন তার জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে৷ তবে এ মুহূর্তে আপনার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়েও বলতেই হচ্ছে, সময় এসেছে এগিয়ে চলার এবং জেনে রাখুন, এগিয়ে যেতে উদগ্রীব মানুষদের আপনি আর আটকে রাখতে পারবেন না৷''
কাপ্রিলেস তীব্র সমালোচনা করছেন চাবেসের, বলছেন নির্বাচিত হলে তিনি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, বিশেষ করে বামপন্থী, যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলোর পেছনে ব্যয় কমিয়ে দেশকে নতুন প্রান্তে নিয়ে যাবেন৷ চাবেস ব্যাপক জাতীয়করণ করে বেসরকারি খাতকে প্রায় ধংস করে দিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর না হয়ে দেশকে দ্বিধাবিভক্ত করেছেন, খাদ্যঘাটতি দূর করতে পারেননি, মানুষকে বাসস্থান গড়ে দিতে পারেননি - এভাবে সমালোচনার পাহাড় গড়েও অবশ্য জরিপে এখনো পিছিয়েই আছেন আইনের স্নাতক এই তরুণ রাজনীতিবিদ৷ চাবেস এসবের জবাবে দেখাচ্ছেন হাজার হাজার লোককে বাসস্থান গড়ে সেগুলোর অধিকার হাতে তুলে দেয়ার দৃশ্য টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করার বাস্তব দৃষ্টান্ত, প্রবীণদের দেখিয়ে বলছেন, ‘‘আমি আপনাদের পেনশন দিয়েছি'', দরিদ্র মায়েদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘‘আমি আপনাদের বিশেষ ভাতা দিয়েছি'', আরো বলছেন, ‘‘আমি কিন্তু সবার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিনা খরচে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি৷''
চাবেসের শেষ কথা একটাই, ‘‘জনগণের প্রতি আনুগত্য আমাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছে৷ ভেনেজুয়েলার জনগণ, জেনে রাখো, চাবেস হারবে না৷''
এসিবি/ডিজি (রয়টার্স)