ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৯, ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ এবং ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত একক দল বা জোট সরকারের বড় তরফ হিসেবে ক্ষমতায় থেকেছে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ ও তাদের বাভেরীয় সহযোগী সিএসইউ৷
বিজ্ঞাপন
নাৎসি জার্মানির পতনের পর জার্মানিতে যখন একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন নাৎসি-পূর্ব ভাইমার প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন রাজনীতিক মিলে জার্মান রাজনীতির পুনর্বিন্যাসের জন্য সচেষ্ট হন৷ বিভিন্ন শহরে বিক্ষিপ্ত আলাপ-আলোচনা থেকে জন্ম নেয় একটি ঐক্যবদ্ধ ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন বা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সংঘ৷ তারিখটা ছিল ১৯৪৫ সালের ২৬শে জুন৷ মনে রাখতে হবে, সরকারিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে তখনও মাস দু'য়েক বাকি৷
ভাইমার প্রজাতন্ত্রের আমলে গণতান্ত্রিক দলগুলির মধ্যে অনৈক্যের ফলেই নাৎসিরা ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়েছিল, এই ধারণা থেকেই ‘ইউনিয়ন' – অর্থাৎ সিডিইউ-সিএসইউ দলগুলির জন্ম৷ বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্টদের মধ্যে বিরোধ থেকে আডল্ফ হিটলারের উত্থান সম্ভব হয়েছে, বলে ইউনিয়ন দলগুলির নেতৃবর্গের ধারণা ছিল৷ সেই বিভেদ অতিক্রম করার জন্য উভয় সম্প্রদায়ের খ্রিষ্টানদের নিয়ে ও ‘সংঘ' নাম দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হয়৷ সেই সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিচারে একটি উদারপন্থি-রক্ষণশীল ধারা৷ কনরাড আডেনাউয়ার ছিলেন এই সামগ্রিক মনোভাবের ধারক ও বাহক৷ ১৯৫০ সালের ২১শে অক্টোবর তারিখে সিডিইউ দলের প্রথম দলীয় সম্মেলনে তিনি দলের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন৷
জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ২০১৭: কবে, কী হচ্ছে
তিনটি রাজ্যে নির্বাচনের পাশাপাশি জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৭ সালে৷ চলুন জেনে নেই জাতীয় নির্বাচনের টাইমলাইন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
জার্মানির বড় নির্বাচনের বছর
জার্মানিতে চলতি বছর আয়োজন করা হচ্ছে একের পর এক নির্বাচন৷ একদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর পদে লড়ছেন, অন্যদিকে পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটা নিশ্চিত যে, ২০১৭ সালের শেষে জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থা এখনকার মতো থাকবে না৷
ছবি: Getty Images
জুন ১৯: দলের মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন ছিল
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আবেদনের শেষ দিন ছিল জুন ১৯৷ সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আগ্রহী দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আবেদন জানাতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
জুলাই ৭: কোন কোন দল লড়ছে?
সংসদ নির্বাচনে কোন কোন দল অংশ নিতে পারবে তা ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ যদি কোন দল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে পরবর্তী চারদিনের মধ্যে জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে নালিশ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
জুলাই ১৭: কারা কারা থাকছেন?
চলতি বছরের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কোন কোন প্রার্থী কোন কোন এলাকায় লড়বেন, তা চূড়ান্ত করতে হবে৷ জার্মানিতে একসঙ্গে দু’টি ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ প্রথমটি প্রার্থীকে, দ্বিতীয়টি দলকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
জুলাই ২৭: ব্যালটে নাম উঠানোর লড়াই
যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে, তাদের বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ ২০১৩ সালে এই পন্থা চালু করা হয়েছিল৷ সেবছর এগারোটি দল আদালতের স্মরণাপন্ন হলেও কেউই মামলা জেতেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
আগস্ট ১৩: আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা
জার্মানিতে নির্বাচন শুরুর ছয় সপ্তাহ আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিক প্রচারণার পোস্টার বা টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না৷ চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর তারিখ ১৩ আগস্ট৷ এই দিন থেকে দলগুলো তাদের প্রচারণায় কোনো ঘাটতি রাখবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
আগস্ট ২০: কে ভোট দিতে পারবেন?
নির্বাচনের মাসখানেক আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তালিকা চূড়ান্ত হবে৷ ভোটার লিস্ট ঘোষণা করবে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কোনো জার্মান নাগরিক ভোট দিতে পারবেন৷ সে হিসেবে চলতি বছর ভোটারের সংখ্যা সাড়ে ৬১ মিলিয়ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-D. Gabbert
সেপ্টেম্বর ৩: তিন সপ্তাহ বাকি
এই সময়ের মধ্যে সকল ভোটার পোস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে ভোট দেয়ার সার্টিফিকেট পাবেন৷ যারা তখন অবধি ভোটার লিস্টে নিজেদের নাম পাননি, তারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবেন৷ আর যারা পোস্টের মাধ্যমে ভোট দিতে চান, তারা ব্যালট পেপার চাইতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
সেপ্টেম্বর ২৪: নির্বাচনের দিন
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ৷ জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর৷ সেদিন সকাল আটটায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত৷ ভোটগণনা সেদিনই শেষ হবে এবং নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ রাতে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেপ্টেম্বর ২৫: বিজয়ী এবং বিজিত
সকল প্রতিনিধি এবং দলগত ভোট গণনা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেয়া হবে ২৫ সেপ্টেম্বর৷ যদি কোনো প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় জিততে ব্যর্থ হন, তা সত্ত্বেও দলগত জয়ের কারণে তিনি সংসদে একটি আসন পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
অক্টোবর ২৪: নতুন সাংসদরা সংসদে
নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে নতুন সাংসদদের সংসদে মিলিত হওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ এ বছর সেই দিনটি হচ্ছে অক্টোবর ২৪৷ সেদিন গোপন ব্যালটের মাধ্যমে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর নির্বাচিত হবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নভেম্বর ২৪: সবকিছু কি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে?
যদি কেউ জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চান, তাহলে তার হাতে সময় থাকে নির্বাচন পরবর্তী দুই মাস৷ ভোটাররাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কেউ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রাখেন এই সময়ের মধ্যে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
12 ছবি1 | 12
জার্মানির পূর্বাংশ সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ফলে গোড়ার দিকে সিডিইউ দলের কিছু সদস্য সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণার দিকে ঝুঁকলেও, ১৯৫০ সালে প্রথম দলীয় সম্মেলনের আগেই খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরা বহুলাংশে এ বিষয়ে একমত হন যে, ‘‘সামাজিক খোলাবাজারের অর্থনীতি'' জার্মানির পক্ষে সেরা পন্থা – অর্থাৎ খোলাবাজারের পুঁজিবাদের সঙ্গে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও কল্যাণরাষ্ট্রের সংমিশ্রণই দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে৷
সিডিইউ দল ও তাদের বাভেরীয় ‘সহোদরা' ক্রিস্টিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় সামাজিক সঙ্ঘ বা সিএসইউ দল ১৯৪৯ সালের নির্বাচন ও পঞ্চাশের দশকের নির্বাচনগুলিতে বিপুল সাফল্য লাভ করে প্রধানত দু'টি কারণে: প্রথমত, দলের প্রথম দুই নেতা, কনরাড আডেনাউয়ার ও তাঁর উত্তরসুরি লুডভিশ এর্হার্ড; দ্বিতীয়ত, সিডিইউ দলের প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তিদের, এক্ষেত্রে মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকারের পরোক্ষ সমর্থন৷
চল্লিশের দশকের শেষেই পশ্চিমি শক্তিদের চোখে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল সিডিইউ দলের চেয়ে বেশি জাতীয়তাবাদী ও জার্মান পুনর্মিলনের পক্ষপাতী বলে বিবেচিত হতে শুরু করেছিল – প্রয়োজনে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সুযোগসুবিধা দিতেও এসপিডি দ্বিধা করবে না, বলে মিত্রশক্তিদের ধারণা ছিল৷ অপরদিকে সিডিইউ দলের অর্থনৈতিক ধ্যানধারণা ও কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে আরো একটি শক্তি হিসেবে দলটি পশ্চিমি শক্তিদের সমর্থন পাচ্ছিল৷
জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি
জার্মানরা শুধু সিডিইউ বা এসপিডি নয়, কিছু ছোট এবং বিরল দলকেও ভোট দিতে পারে৷ এই যেমন, প্রাণী সুরক্ষা পার্টি কিংবা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি৷ ভাবছেন, এরা কারা? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
প্রাণী সুরক্ষা দল
জার্মানিতে প্রাণী অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা সুযোগ পেলে পুরো হাইওয়ে বন্ধ করে দেন যাতে ব্যাঙেরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে৷ এমন দেশে তাই ‘অ্যানিমেল প্রোটেকশন পার্টি’ বা প্রাণী সুরক্ষা দল থাকবে না, তা কি হতে পারে? তবে গ্রিন পার্টির কারণে এ দলের পালে হাওয়া কম থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
দ্য রিপাবলিকানস
ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর৷ জার্মানির রয়েছে নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টি, নাম আরইপি৷ তবে এই দলের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই৷ জার্মান রিপাবলিকনরা হচ্ছেন ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী, যারা নিজেদের ‘রক্ষণশীল দেশপ্রেমিক’ এবং দেশের ‘সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়’ রক্ষায় লড়াইরত বলে মনে করেন৷
ছবি: DW
দ্য পার্টি
হ্যাঁ, এই দলের নাম ‘দ্য পার্টি’৷ জার্মানির স্যাটায়ার ম্যাগাজিন ‘টাইটানিক’ এর সম্পাদকরা ২০০৪ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ দলটির প্রধান হচ্ছেন মার্টিন স্যোনেবর্ন (ছবিতে)৷ ২০১৪ সালে তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে দলটির জন্য একটি আসন নিশ্চিত করেন৷ ভবিষ্যতে দলটির অবস্থা আরো ভালো হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon/M. Ossowski
গণভোট দল
জার্মানির রেফারেন্ডাম পার্টি বা গণভোট দলের কাছে সুইজারল্যান্ড এক বিশাল অনুপ্রেরণা৷ দলটি চায় দেশের সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গনভোটের মাধ্যমে জনগণ নেবে৷ সুইজারল্যান্ডে ২০১৬ সালে তেরোটি গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি
জার্মানির এমএলপিডি একটি ছোট দল, যদিও দেশটির অর্ধেক মানুষ এক সময় কমিউনিস্ট ছিলেন৷ মানে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৯ সাল অবধি যখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানি তখন শাসন করেছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি৷ বর্তমানে উগ্র বামপন্থি এমএলপিডি’র জার্মান রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Link
ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি
‘অ্যালায়েন্স সি - ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি’ একটি ক্রিশ্চিয়ান পার্টি, যেটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে৷ খ্রিষ্টান-মৌলবাদীদের একটি দল এবং শ্রমিক, পরিবেশ এবং পরিবারভিত্তিক একটি দল একত্র হয়ে এই দল গড়ে৷ বাইবেলের মান রক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে চায় এই দল৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall
6 ছবি1 | 6
আডেনাউয়ারের আমল
যুদ্ধপরবর্তী জার্মানিকে ধ্বংস থেকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়া ও জার্মানিকে ইউরোপীয় তথা পশ্চিমি দেশগুলির কাছে পুনরায় গ্রহণযোগ্য করে তোলার পিছনে কনরাড আডেনাউয়ার-এর অবদান জার্মানি তথা বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত৷ ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৩ সাল অবধি চ্যান্সেলর ছিলেন আডেনাউয়ার – তথাকথিত ‘জার্মান অর্থনৈতিক আশ্চর্যের' সূচনা তাঁরই কর্মকালে৷ ১৯৫২ সালে ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত সমিতি গঠনে সংশ্লিষ্ট ছিলেন আডেনাউয়ার – যা কিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক পূর্বসুরি বলে গণ্য করা যায়৷ ১৯৫৫ সালে ‘বুন্ডেসভের' নাম দিয়ে নতুন জার্মানি সেনাবাহিনি সৃষ্টিও তাঁর কাজ৷ আডেনাউয়ারের পর চ্যান্সেলর হন লুডভিশ এরহার্ড, যাঁকে ‘জার্মান অর্থনৈতিক আশ্চর্যের' জনক বলা হয়ে থাকে এবং যিনি চ্যান্সেলর হবার আগে আডেনাউয়ারের মন্ত্রীসভায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন৷ এরহার্ড চ্যান্সেলর ছিলেন ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৬ সাল অবধি৷ তাঁর পরে চ্যান্সেলর হিসেবে আসেন কুর্ট গেয়র্গ কিসিংগার, যিনি ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল অবধি ঐ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন৷ অতঃপর সিডিইউ দলকে পুনরায় চ্যান্সেলর পদাভিষিক্ত হবার জন্য দীর্ঘ ১৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়৷
হেলমুট কোল-এর আমল
তবে সে প্রতীক্ষা স্বার্থক হয়, বলা চলে৷ সদ্য প্রয়াত হেলমুট কোলকে দুই জার্মানির পুনর্মিলনের জনক বলা হয়ে থাকে৷ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তিনি প্রথমে পশ্চিম জার্মানি, অতঃপর পুনরেকীকৃত জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন৷ অপরদিকে আডেনাউয়ারের ‘পৌত্র' প্রজন্মের রাজনীতিক হেলমুট কোল ছিলেন ‘পিতামহের' মতোই ইউরোপীয় ঐক্যের ধারণার ধারক ও বাহক – স্ট্রাসবুর্গের পার্লামেন্টে প্রথম ইউরোপীয় রাজনীতিক হিসেবে তাঁর জন্য বিশেষ শোকানুষ্ঠান যার প্রমাণ৷
যেসব বিষয়ে সমঝোতার পর জার্মানিতে জোট
বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্যের কারণে এক মাস ধরে জার্মানির জোট সরকারের ব্যাপারে আলোচনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ ১৮ ঘণ্টা আলোচনার পর জোট গঠনে একমত হলেও কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন তা ঠিক হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনে চুক্তি সম্পন্ন
অনেক বিষয়ে মতানৈক্য থাকায় কয়েক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা চললেও জোট সরকার গঠনের প্রয়াস সাফল্যের মুখ দেখছিল না৷ বার্লিনে ১৮ ঘণ্টার বৈঠক শেষে বুধবার সকালে সে অপেক্ষার অবসান হয়েছে৷ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় দুটি দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী (সিডিইউ) ও সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি) দল৷ দলের প্রতিনিধিরা সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে৷ মন্ত্রণালয় বণ্টনের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷
ছবি: JOHN MACDOUGALL/AFP/Getty Images
সমঝোতার পথ
সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের পর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পেয়েছিল অন্তত ৪২ ভাগ ভোট৷ অনেকেই সিগমার গাব্রিয়েলের নেতৃত্বাধীন সামাজিক গণতন্ত্রী দলকে ম্যার্কেলের দলের ভবিষ্যৎ অংশীদার হিসেবে দেখেছিলেন৷ যদিও দু দলের মধ্যে অনেক বিষয়েই মতপার্থক্য ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ন্যূনতম মজুরি : নীতির লড়াই
জাতীয় ন্যূনতম মজুরি – এই একটি ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে নীতিগত ব্যবধান অনেক বেশি৷ চূড়ান্ত চুক্তিতে প্রতি ঘণ্টার ন্যূনতম মজুরি সাড়ে আট ইউরো নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমনটা এসপিডি দাবি করেছিল৷ কিন্তু ২০১৫ সালের আগে এটি কার্যকর হবে না৷ সিডিইউ-র আশঙ্কা এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক মানুষ চাকরি হারাবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মহাসড়কে টোলের প্রস্তাব
জার্মানির মহাসড়কগুলোতে টোল দেয়ার বিষয়টিতে দুই দলই রাজি নয়৷ কিন্তু সিডিইউ’র বাভারিয়ান সহযোগী সিএসইউ’র প্রধান হর্স্ট জেহোফার তাঁর ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের উপর টোল আরোপ করলেই কেবল তিনি কোনো জোটে যাবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কে বেশি পেনশন পাবে?
এসপিডি’র দাবি, যেসব কর্মী ৪৫ বছর ধরে চাকরি করছেন, তাদের পূর্ণ পেনশন দিতে হবে, যদি তাদের বয়স ৬৩ বছরও হয়৷ এমনকি ১৯৯২ সালের আগে যাদের সন্তান আছে সেসব মায়েদের পেনশন বোনাস দেয়ার পক্ষে সিডিইউ৷ চূড়ান্ত চুক্তিতে দুটি দাবিকে একসাথে করা হয়েছে, যার ফলে জার্মানির কয়েকশ’ কোটি ইউরো খরচ হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীর্ষ চাকরিগুলোতে বেশি নারী
বিএমডাব্লিউ’র বোর্ড সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১২.৫ ভাগ নারী৷ দুই দলই বলেছে, এটা যথেষ্ট নয়৷ তারা দেখতে চায়, পাবলিক কোম্পানিগুলোর শীর্ষ পদে নারীদের নিযুক্ত করা হচ্ছে৷ তারা শীর্ষ পদগুলোতে নারীদের নিয়োগ ৩০ ভাগ বাড়ানোর পক্ষে একমত হয়েছে, যা বর্তমানের চেয়ে তিনগুন বেশি৷
ছবি: imago/Sven Simon
স্বাস্থ্যসেবা
স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে খুব দ্রুতই সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দল৷ বিমার পরিমাণ বাড়ানো হবে এবং জনস্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম শেষ করা হবে৷
ছবি: Waldbreitbacher Franziskanerinnen
পররাষ্ট্রনীতি
আশা করা হচ্ছে, সামাজিক গণতন্ত্রী দলের ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন৷ ফলে জার্মান পররাষ্ট্রনীতিতে অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে, বলে ধারণা করছেন অনেকে৷ তবে, সিডিইউ এর কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ে অর্থমন্ত্রী বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জ্বালানি নীতিতে সমঝোতা
দুই দলই দেশের চাহিদা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ বাড়ানোর পরিকল্পনায় একমত হয়েছে৷ এসপিডি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎখাতে ৭৫ ভাগ ব্যবহারের পক্ষে, অন্যদিকে সিডিইউ বলেছে, ৫০ থেকে ৫৫ ভাগই যথেষ্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তৃণমূল কর্মীদের অধিকার
জার্মানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলের সদস্যরা জোট সমর্থনের অধিকার পেয়েছে৷ ফলে এসপিডি তার তৃণমূল সমর্থকদের জিজ্ঞেস করবে তারা এই জোটে যাবে কিনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
কোল ও তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ-র মধ্যে সখ্যতা যে শুধু জার্মান পুনর্মিলনের পথ খুলে দিয়েছিল, শুধু তাই নয়; অতঃপর ইউরো মুদ্রার প্রচলন থেকে শুরু করে শেঙেন চুক্তি বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বমুখী সম্প্রসারণ – এক কথায় ইইউ বলতে মানুষ আজ যা কিছু বোঝে, তার সব কিছুর পিছনেই কাজ করেছে ঐ ফরাসি-জার্মান মৈত্রী, যা এমন একটি ধারা, যা হালের ম্যার্কেল-ম্যাক্রোঁ সম্পর্কেও অটুট আছে৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেলের আমল
হেলমুট কোল ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ সাল অবধি জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির যে সিডিইউ রাজনীতিককে তিনি তাঁর উত্তরসুরী হিসেবে অজান্তেই গড়ে দিয়েছিলেন, তিনি হলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল, যিনি ২০০৫ সাল থেকে জার্মানির চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত – এবং জরিপ বলছে যে, আগামী সেপ্টেম্বরের সংসদীয় নির্বাচনে তাঁর একটি চতুর্থ কর্মকাল প্রাপ্তির সম্ভাবনা কম নয়৷ অপরদিকে যাকে একদিন কিছুটা তাচ্ছিল্য করে ‘কোল-এর খুকি' বলা হত, তিনি আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাস্তবিক নেতা, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী ও স্বাধীন বিশ্বের নেত্রী হিসেবে বর্ণিত ও বিবেচিত হচ্ছেন৷
রক্ষণশীল কিন্তু বাস্তববাদী
খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন বা সিডিইউ একটি রক্ষণশীল দল – রাজনৈতিক বিচারে তারা নিজেদের ‘মধ্যম-ডান' বলে থাকে৷ একটি ‘ফল্কসপার্টাই' বা গণদল হিসেবে দলের জনসমর্থনের প্রশস্ত ভিত্তি বজায় রাখাই হল দলের সর্বোচ্চ লক্ষ্য৷ নয়তো অপরাধীদের দণ্ডদানের মাত্রা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদের ঘটনায় সেনাবাহিনীকে নিয়োগ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রসঙ্গে দলের রক্ষণশীল মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়৷ অপরদিকে বিপুল সংখ্যায় উদ্বাস্তু আগমন সত্ত্বেও আঙ্গেলা ম্যার্কেল দলের খ্রিষ্টীয় কর্তব্যের দোহাই দিয়েছেন ও কোনো সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্দিষ্ট করতে অস্বীকার করে এসেছেন৷ সিডিইউ দল চায় যে, বহিরাগতরা জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হোন ও জার্মান সমাজের অঙ্গ হয়ে উঠুন৷ বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সিডিইউ দল ইউরোপীয় সংহতির সমর্থক – অপরদিকে সিডিইউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বিশ্বাস করে৷ সিডিইউ দল বর্তমান পরিস্থিতিতে তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্য হওয়ার বিরোধী৷