জাতিসংঘের প্রধান জানিয়েছেন, রাশিয়ার দখলে থাকা এলাকার জেলে বিস্ফোরণ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পূর্ব ইউক্রেনের ওলেনিভকা জেল এখন রাশিয়ার দখলে। চলতি সপ্তাহের গোড়ায় সেই জেলে বিস্ফোরণ হয়। অভিযোগ, জেল লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালানো হয়েছিল। রাশিয়ার দখলে থাকা ওই জেলে শতাধিক ইউক্রেনযোদ্ধা বন্দি। ঘটনায় বহু যুদ্ধবন্দির মৃত্যু হয়েছে। তারই জেরে জাতিসংঘ এই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
ইউক্রেন থেকে আবার খাদ্যশস্য রপ্তানি
ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট আরও প্রকট হয়েছে৷ রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি আবার শুরু হয়েছে৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/picture alliance
আন্তর্জাতিক উদ্যোগের ফসল
জাতিসংঘ ও তুরস্কের উদ্যোগে এক চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন থেকে আবার খাদ্যশস্য রপ্তানির পথ সুগম করা হয়েছে৷ ফলে কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে ইউক্রেনের শস্য আবার বিশ্ব বাজারে পৌঁছাতে পারছে৷ রাশিয়ার হামলার প্রায় পাঁচ মাস পর এই প্রথম এমন এক বোঝাপড়া সম্ভব হলো৷
ছবি: Khalil Hamra/AP/dpa/picture alliance
খাদ্য সংকটের মোকাবিলা করতে বোঝাপড়া
বর্তমান যুদ্ধের আগে পর্যন্ত ইউক্রেন বিশ্ববাজারে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি করে এসেছে৷ রাশিয়ার হামলার ফলে সেই সরবরাহ আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়৷ কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার অবরোধের ফলে ইউক্রেনের বন্দরগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে৷ তবে বর্তমান বোঝাপড়া কতদিন স্থায়ী হবে, সে বিষয়ে সংশয় এখনো কাটে নি৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/picture alliance
অবকাঠামো আবার সক্রিয় করার চ্যালেঞ্জ
ইউক্রেন সংকটের শুরু থেকে ৭০ লাখ টন গম, এক কোটি ৪০ লাখ টন ভুট্টার দানা, ৩০ লাখ টন সূর্যমুখী গাছের তেল বিশ্ববাজারে পৌঁছানো সম্ভব হয় নি৷ ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে৷ খাদ্য সংকটের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও বেড়ে গেছে৷ এবার রেল ও জাহাজের মাধ্যমে আবার সরবরাহ চালু করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/NurPhoto
আন্তর্জাতিক তৎপরতা
জাতিসংঘের কূটনৈতিক উদ্যোগের নেপথ্যে অনেক দেশই সক্রিয় হয়েছে৷ ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে শিল্পোন্নত দেশগুলির গোষ্ঠী জি-সেভেনের রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতি সেই তৎপরতার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ ২০২২ সালের ২৯শে জুলাই তাঁরা সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন৷
ছবি: David Goldman/AP/picture alliance
জার্মানির আগ্রহ
ইউক্রেনে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আনকা ফেল্ডহুসেন ইউক্রেনের অবকাঠামোর দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ওলেক্সান্ড্র কুবরাকভের সঙ্গে খাদ্যশস্য রপ্তানির খুঁটিনাটী বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ জি-সেভেন দেশগুলির রাষ্ট্রদূতদের প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে তিনি প্রস্তুতিপর্ব খতিয়ে দেখেন৷
ছবি: UKRAINIAN PRESIDENTIAL PRESS/REUTERS
সামরিক তত্ত্বাবধানে খাদ্যশস্য রপ্তানি
ওডেসা বন্দরে জাহাজে শস্য বোঝাই করার প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷ বোঝাপড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওডেসায় রুশ হামলা গোটা প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে৷
ছবি: NACHO DOCE/REUTERS
প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা
২০২২ সালের ১লা আগস্ট সিয়েরা লিওনে নিবন্ধিত মালবাহী জাহাজ রাজোনি ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে শস্য বোঝাই করে ইস্তানবুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে৷ পানির উপর ভাসমান মাইন ও রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় নাবিকদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করতে হয়েছে৷
ছবি: TURKISH NATIONAL DEFENSE MINISTRY/AA/picture alliance
7 ছবি1 | 7
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল পাঠানো হবে ওলেনিভকা জেলে। গুতেরেসের দাবি, ইউক্রেন এবং রাশিয়া দুই পক্ষই তদন্তের দাবি জানিয়েছে। রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেনের সেনা মিসাইল হামলা চালিয়েছে। কারণ, যুদ্ধবন্দিরা রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অন্যদিকে, ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়া এই কাজ করেছে কারণ, রাশিয়া ওই বন্দিদের উপর প্রবল অত্যাচার চালিয়েছে। তা যাতে বাইরে না বের হয়, তার জন্যই তাদের মেরে দেয়া হয়েছে।
রেডক্রস অবশ্য আগে জানিয়েছিল, রাশিয়া তাদের ওই জেলে ঢুকতে দেয়নি। একাধিকবার বলা সত্ত্বেও তাদের ভিতরে যেতে দেয়া হয়নি।
গ্যাসপ্রোমের নতুন বক্তব্য
রাশিয়ার তেল কোম্পানি গ্যাসপ্রোম নর্ড স্ট্রিম ১ নিয়ে নতুন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। সম্প্রতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্যাস লাইনটি বন্ধ করা হয়েছিল। একটি টারবাইন সারানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল ক্যানাডায়। যা নিয়ে ইউক্রেন ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। সেই টারবাইন সারাই হয়ে জার্মানিতে এসেছে। কিন্তু গ্যাসপ্রোমের বক্তব্য, রাশিয়ার উপর পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞা থাকার জন্য ওই টারবাইন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের কিছু সমস্যা হতে পারে। যদি তারা টারবাইন না নেয়, তাহলে গ্যাসের সরবরাহে সমস্যা বাড়বে।
ইউক্রেনে মৃত্যুর হাতছানির মাঝেই শিশুর জন্ম
রুশ হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেন৷ গোলাবর্ষণের মাঝেই কখনো সখনো ভেসে আসছে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ৷ যুদ্ধের মাঝেই পৃথিবীর আলো দেখছে শিশু৷ ডনবাসের পোকরোভস্কের ক্লিনিকের এমনই কিছু মা ও শিশুদের কথা রইলো ছবিঘরে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
‘সময়ের আগে’ জন্ম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধের আগে, ইউক্রেনের প্রায় নয় শতাংশ শিশু সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছিল অর্থাৎ তারা ‘প্রি-ম্যাচিওর বেবি’৷ রুশ আগ্রাসনের পর থেকে, পোকরোভস্ক হাসপাতালে সময়ের আগে জন্মের এই হার বেড়ে ১৬.৫ শতাংশ হয়েছে৷ এমনিতে অন্তত ৪০ সপ্তাহ পর শিশুর জন্ম নেয়ার কথা, তবে গর্ভকালের সময়সীমার ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্ম নেয় অপরিণত শিশু৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে
অন্তঃসত্ত্বাদের উপর চাপ মারাত্মক৷ জানলায় বসানো বালির ব্যাগগুলি শেল, স্প্লিন্টার থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে৷ কিন্তু মার্চ মাসে মারিউপোলের হাসপাতালে যেমন সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছিল, তেমন হলে এই বালির ব্যাগে কোনো কাজ হবে না৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
কঠিন পরিস্থিতিতে শিশুর জন্ম
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ড. ইভান সিগানক বলেন, ‘‘গোলাগুলি চলার সময়ও কখনো কখনো শিশুদের জন্ম দিতে হয়েছে৷ শিশুর জন্ম এমন একটি প্রক্রিয়া, যা কখনো বন্ধ করা যায় না৷’’ এই অন্তঃসত্ত্বাদের মানসিক চাপের সঙ্গে অকালপ্রসবের সংখ্যা বেড়ে চলার যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা৷ বিশ্বের নানাপ্রান্তের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় এমনটাই হয়ে থাকে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
স্ট্রেসের মধ্যে গর্ভধারণ
২৬ বছরের মেরিনা তুপাতা বলেন, ‘‘গর্ভাবস্থা অনুভব করার কোনো সুযোগ ছিল না৷ ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করতাম৷ সেই সময়টা বাড়িতে থাকার চেষ্টা করেছি৷’’ ছয়দিন বয়সি মেয়ে সোফিয়ার সঙ্গে মেরিনার ছবিটি দেখে মনে হবে, ‘আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক৷’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
গোলাবর্ষণ সত্ত্বেও নিশ্চিন্তে শিশুর ঘুম
মায়েরা এই নবজাতকের মতো নিশ্চিন্ত নন, জানিয়েছেন ওলেসিয়া কুশনারেনকো৷ ডক্টরাল থিসিসের জন্য, গাইনোকোলজিস্ট ওলেসিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি থাকতেন এমন নারীদের পরীক্ষা করেছেন৷ ওই অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে স্ট্রেস, মানসিক চাপের পরিমাণ উচ্চমাত্রার৷ অর্ধেকেরও বেশি সময় গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন ভ্রুণটি অপর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং পুষ্টি পেয়েছে৷ সময়ের আগে শিশু জন্ম নেয়ার অন্যতম কারণ এটি৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
সবকিছু ঠিক থাকবে?
কাটিয়া বুরাভতসোভা তার ছেলে ইলিউশাকে আঁকড়ে রেখেছেন৷ পোকরভস্ক কেন্দ্রে ২৮ সপ্তাহের মাথায় শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন এই মা৷ তার সন্তানও ‘প্রিম্যাচিওর’৷ বছর পঁয়ত্রিশের কাটিয়া সন্তানকে আঁকড়ে বলেন, ‘‘সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
6 ছবি1 | 6
পশ্চিমা দেশগুলির বক্তব্য, ইচ্ছে করেই টারবাইন সারানোর জন্য ক্যানাডায় পাঠানো হয়েছিল। যার জেরে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বিপুল পরিমাণ কমে গেছে। এবার যদি গ্যাসপ্রোম টারবাইন ফেরত না নেয়, তাহলে গ্যাস সরবরাহও বাড়বে না। টারবাইনের অজুহাত দেখিয়ে রাশিয়া আসলে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে চাইছে।
জার্মান চ্যান্সেলর জানিয়েছেন, টারবাইনটি রাশিয়ায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত। রাশিয়া প্রয়োজনীয় কাস্টমসের কাগজ তৈরি করলেই তা পাঠানো সম্ভব হবে। কিন্তু গ্যাসপ্রোমের বক্তব্য, নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে কোনোভাবেই তা নেয়া সম্ভব নয়।
লেবাননের পথে প্রথম খাদ্যশস্যের জাহাজ
ইস্তাম্বুল থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পেয়ে গেছে ইউক্রেন থেকে রওনা হওয়া প্রথম খাদ্যশস্যের জাহাজ। ২৫ হাজার টন ভুট্টা নিয়ে জাহাজটি যাচ্ছে লেবানন। কয়েকদিনের মধ্যেই তা লেবাননে পৌঁছে যাবে বলে জানা গেছে। রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক এবং জাতিসংঘ সকলেই ওই জাহাজটি পর্যবেক্ষণ করছে। যৌথ উদ্যোগেই খাদ্যশস্য বোঝাই জাহাজ লেবানন যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম কোনো জাহাজ ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে কৃষ্ণসাগরে নামতে পারলো।