পহেলগামের ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত শুরু হয়। সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পর রোববার রাত ছিল পুরোপুরি শান্ত।
ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানের অনেকগুলি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে, পাকিস্তানের দাবি, ভারতের ২৬টি টার্গেটে হামলা করা হয়েছে। ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
রোববার ভারতীয় সেনার ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস লেফটোন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই, বিমানবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ এয়ার অপারেশনস এয়ার মার্শাল একে ভারতী এবং নৌবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ নেভাল অপারেশনস' ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের তথ্য দেন।
তারা দাবি করেছেন, অপারেশন সিন্দুর বা সিঁদুরের ফলে ৩৫ থেকে ৪০ জন পাকিস্তানি সেনা মারা গেছেন। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। চাকলালা, রফিকি, সরগোদা, জাকোকাবাদ, ভুলারির মতো অনেকগুলি সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করা হয়েছে। ভারতের নৌবাহিনী করাচিতে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। তারা সেইমতো পজিশন নিয়েছিল।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই জানিয়েছেন, নয়টি জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা করা হয়েছিল। তার ফলে ইউসূফ আজ়হার, আব্দুল মালিক রউফ এবং মুদস্সর আহমেদসহ একশর বেশি জঙ্গির মারা গেছে। মৃত জঙ্গিদের মধ্যে আইসি ৮১৪ অপহরণ এবং পুলওয়ামা হামলায় জড়িত জঙ্গিও রয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, ভারতের লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো। পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, মুজাফফরাবাদের জঙ্গি ঘাঁটিতে আক্রমণ করে সেগুলিকে বিধ্বস্ত করা হয়েছে। পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে -তে ভারতের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা করার চেষ্টা করে। শ্রীনগর থেকে নালিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ড্রোন, পাইলটহীন বিমান দিয়ে হামলা করতে চেয়েছিল। ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সেগুলির মোকাবিলা করে এবং তা ব্যর্থ করে দেয়। পাকিস্তানের বেশ কিছু যুদ্ধবিমান ভারতীয় সীমান্তে ঢোকার আগে গুলি করে নামানো হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
ভারতের দাবি, পাকিস্তান এই আক্রমণ করেছিল বলেই ভারতকে পাকিস্তানের সামরিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে হয়েছে। নাহলে, ভারতের আক্রমণ জঙ্গি ঘাঁটি নষ্ট করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তারা জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে ভারত এই বার্তাই দিতে চেয়েছে যে, তাদের আগ্রাসী মনোভাব কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
রাজৌরিতে গোলাবর্ষণে ভাঙছে বাড়ি ঘর, নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে মানুষ
শুরু হয়েছিল ড্রোন হামলা দিয়ে। তার পাশাপাশি রাজৌরিতে ভয়ংকর গোলাবর্ষণ করলো পাকিস্তান। ভাঙলো বাড়ঘর। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
রাতে ড্রোন হামলা
শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয়েছিল আক্রমণ। রাতেরআকাশে পাক ড্রোন ধেয়ে আসতে দেখা গেছে। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সেই হামলা প্রতিহত করে বলে ভারত জানিয়েছে।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
ভোররাতে হামলা
শনিবার সকাল পাঁচটা থেকেই রাজৌরিতে চলেছে শেলিং বা গোলাবর্ষণ। এই অঞ্চল থেকে অল্প দূরেই সীমান্ত। সেখান থেকে ভোর রাতে ধেয়ে এসেছে একের পর এক গোলা। আবাসিক এলাকায় গিয়ে পড়েছে গোলাগুলি।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
গোলার আঘাতে
সীমান্ত থেকে মাত্র ছয় কিমি দূরে রাজৌরির এই গ্রামে আছরে পড়েছে গোলা। গ্রামের বাড়ির একটা বড় অংশ কার্যত গুঁড়িয়ে গেছে সেই গোলার আঘাতে।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
উড়ে যাওয়া ছাদ
এই বাড়িটির ছাদ উড়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে দেওয়াল। মাত্র কয়েক ঘণ্টার গোলাবর্ষণে বাড়িটি ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
গোলার ক্ষত
ওই গ্রামেরই ওপর একটি বাড়িতে গোলা ভেঙে ছিটকে পড়েছে। তার টুকরোগুলি বাড়ির দেওয়ালে গিয়ে লাগে। সেই ক্ষতচিহ্ন।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
সীমান্ত লাগোয়া
শুক্রবার রাতের গোলায় গুড়িয়ে যাওয়া এই বাড়িটি সীমান্তের খুবই কাছে। অনতিদূরে যে পাহাড় দেখা যাচ্ছে তার ওপারে পাকিস্তান। ওই দিক থেকেই চলছে গোলাবর্যণ।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
একমাস আগেই
এই বাড়ির মালিক চম্পা দেবী জানিয়েছেন, বাড়িটি মাত্র তিন মাস আগে তৈরি হয়েছে। তারা একমাস হলো থাকতে শুরু করেছিলেন। এখন সেই বাড়ি ছত্রখান করে দিয়েছে গোলা।
রাজৌরি থেকে পুঞ্চ যাওয়ার রাস্তায় কড়া নিরাপত্তা দেখা যাচ্ছে। সুরক্ষার কারণে সাধারণ মানুষকে এই পথে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ছবি: AB Rauoof Ganie/DW
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত নিরন্তর গোলা আক্রমণে রাজৌরির বহু মানুষ ঘর ছেড়েছেন। শনিবার সকাল থেকেই বাস, ট্যাক্সি, ভ্যানে করে তারা যাচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
ছবি: Rauoof Ganie/DW
10 ছবি1 | 10
ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ বলেছেন, পহেলগামের ঘটনার পরে ভারতীয় নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ, রণতরী, বিমান-সহ সমস্ত বিভাগকে সমুদ্রে মোতায়েন করা হয়েছিল। নৌবাহিনী ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে আরব সাগরে বেশ কিছু জায়গায় কৌশলগত অবস্থান নেয়। তারা করাচি-সহ পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করার জায়গায় ছিল। পাকিস্তান পুরোপুরি রক্ষণাত্মক অবস্থান নেয়।
সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচজন ভারতীয় সেনা সংঘাতে মারা গেছেন।
ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বস হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে, তারা বলেছেন, লড়াইয়ে কিছু ক্ষতি হয়ে থাকে। যেহেতু সংঘর্ষে এখনো সম্পূর্ণভাবে থামেনি, তাই এই বিষয়ে এখনই তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে সব পাইলট নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের দাবি
পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল পাবলিক রিলেশনস এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদ, নৌবাহিনীর ন্যাভাল স্টাফ(অপারেশন) ডেপুটি চিফ ভাইস অ্যাডমিরাল রাজা রাব নওয়াজ ওবং পাকিস্তান সেনার প্রধান মুখপাত্র লেফটোন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
তাদের দাবি, ভারত পাকিস্তানের আকাশসীমা লংঘন করার পর তারা অপারেশন বুনিয়ানউম মারসুস শুরু করেন। ভারতের ২৬টি সামরিক টার্গেট লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এই টার্গেটের মধ্যে ছিল সুরাতগড়, সিরসা, আদমপুর, ভুজ, নালিয়া, ভাতিন্দা, বারনালা, হালওয়ারা, অবন্তীপুর, শ্রীনগর, জম্মু, মামুন, আম্বালা, উধমপুর ও পাঠানকোট। প্রতিটি জায়গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, কলকাতার স্কুলে মক ড্রিল
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে বুধবার তার প্রশিক্ষণ পেলো কলকাতার চারটি স্কুলের পড়ুয়া সহ আরো অনেকে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দিল্লি পাবলিক স্কুলে
দিল্লি পাবলিক স্কুলের একটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সেই মহড়া চলছে। শেখানো হচ্ছে, কোনো ধরনের আক্রমণ হলে নিজেকে এবং অন্যদের বাঁচানোর জন্য কী করতে হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এই প্রশিক্ষণ?
২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হানায় ২৬ জন ভারতীর মৃত্যুর পর থেকে ভারত-পাক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়। ৭ ও ৮ মে-র দিবাগত রাতে পাকিস্তানের নয়টি জায়গায় আক্রমণ চালায় ভারত। বুধবার রাতে ভারতের ১৫টি শহরে পাকিস্তান হামলা করার চেষ্টা করে এবং সেই আক্রমণ প্রতিহত করা হয় বলে ভারত জানিয়েছে। তবে সরকার আগে থেকেই এই নিরাপত্তা মহড়ার কথা জানিয়েছিল। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম এই নিরাপত্তা মহড়া হলো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যে কোনো পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত রাখার শিক্ষা
কেবলমাত্র যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি নয়, যে কোনো সংকটকালীন পরিস্থিতিতেই কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায় তার জন্যেও চলে প্রশিক্ষণ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
লা মার্টিনিয়ার স্কুলে
কলকাতার মিন্টো পার্ক অঞ্চলের লা মার্টিনিয়ার গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তাদের শেখানো হয়েছে সুরক্ষিত থাকার কৌশল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ধোঁয়া মোকাবিলা
প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে, জরুরি পরিস্থিতিতে ধোঁয়া এবং গ্যাসের সাথে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা শিখেছে শিক্ষার্থীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে
শত্রুপক্ষের হামলার সময় ডেস্কের নিচে লুকিয়ে থাকতে শেখানো হয়েছে এই প্রশিক্ষণে। কোনো আক্রমণ হলে নিরাপদ জায়গার খোঁজের শিক্ষা এভাবেই দেখানো হয়েছে পড়ুয়াদের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণ
স্কুল ছাড়া অন্যত্রও চলে এই প্রশিক্ষণ। উপরের ছবিতে রেলকর্মীদের জরুরি পরিস্থিতিতে ধোঁয়া এবং গ্যাস মোকাবিলা করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কীভাবে অন্যদের উদ্ধার করতে হবে
সরকারি কর্মীদের শেখানো হয়, কীভাবে বিপদের সময় অন্যদের উদ্ধার করতে হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাঁচানোর চেষ্টা কীভাবে করতে হয়
কলকাতার ডিআরএম স্পোর্টস গ্রাউন্ডে জরুরি মহড়ার আয়োজন করেছিল ভারতীয় রেলওয়ের শিয়ালদহ ডিভিশনের নাগরিক প্রতিরক্ষা দল। সেখানে শেখানো হয়, জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করতে হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
9 ছবি1 | 9
তাদের দাবি, ব্রক্ষ্মস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারত পাকিস্তানে হামলা করেছিল। সেই ফেসিলিটি ধ্বংস করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সেনাকর্তাদের দাবি, তাদের নৌবাহিনী মুম্বইয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছিল।
তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির অনুরোধ করেনি। কেউ যদি যুদ্ধে নামে তাহলে দুই পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নামবে। তাই পাকিস্তান খুবই সংযত ও পরিণতভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে।