রাশিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানিয়ে দিলেন, যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব তারা মানতে পারছেন না।
গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। ছবি: Oleg Petrasiuk/Ukrainian 24th Mechanized brigade/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
রিয়াবকভ বলেছেন, ''অ্যামেরিকা যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব করেছে, আমরা তা খুব ভালোভাবে খতিয়ে দেখেছি। কিন্তু বর্তমান আকারে এই প্রস্তাব আমরা মানতে পারছি না।'' রাশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন তিনি।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল। তার আগে ২০১৪ সালে তারা ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া দখল করে নেয়।
গত সপ্তাহান্তে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনকে নিয়ে বিরক্ত। রাশিয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব না মানলে মস্কোর তেলের উপর আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন।
ইউক্রেনকে ৩৫০ কোটি ইউরো দিলো ইইউ
ইউক্রেনকে ৩৫০ কোটি ইউরো দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩১০ কোটি ইউরো হলো সহজ শর্তে ঋণ এবং চারশ ইউরো অনুদান।
এই সাহায্য হলো ইইউ-র ইউক্রেন ফেসিলিটি প্রগ্রামের অংশ। ২০২৭ সাল পর্যন্ত ইইউ পাঁচ হাজার ইউরো সাহায্য দেবে ইউক্রেনকে।
এখনো পর্যন্ত কিয়েভ এক হাজার ছয়শ কোটি ইউরো পেয়েছে। এই অর্থ দিয়ে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে তারা নিজেদের রক্ষা করবে। রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণ করে।
পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে ঠিক কতটা সহায়তা দিয়েছে?
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এর ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে বড় ধরনের সংকট তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Gent Shkullaku/IMAGO
কেন সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা?
হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথাকাটাকাটির পর তার যুক্তরাষ্ট্র সফর ভণ্ডুল হয়ে যায়৷ বিরল খনিজ আহরণে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন চুক্তিও সই হয়নি৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, জেলেনস্কির এমন বক্তব্যের পর এক ঘোষণায় ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার কথা বলেছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Saul Loeb/AFP/Getty Images
মস্কোর দিকে ঝুঁকছে ওয়াশিংটন?
এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকেরা৷ ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধের মাধ্যমে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তিন বছর পর ট্রাম্প মস্কোর দিকে ঝুঁকছেন বলেই ধারণা করছেন তারা৷
ছবি: Aleksander Kalka/NurPhoto/picture alliance
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার উপর প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক সক্ষমতা সরবরাহ করে৷ তবে এই সামরিক সহায়তা স্থগিতের প্রভাব যুদ্ধক্ষেত্রে পড়তে সময় লাগবে৷ ইউক্রেন এখন আগের তুলনায় মার্কিন সরবরাহের উপর কম নির্ভরশীল৷ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ইউরোপীয় অংশীদাররা এখন ইউক্রেনকে বড় ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে৷
ছবি: Xenia Polska/DW
সার্বিক সহায়তা হিসাবের চ্যালেঞ্জ
ইউরোপের দেয়া সহায়তার পরিমাণ বাস্তবে আরো অনেক বেশিও হতে পারে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ন্যাটোর সদস্য সব দেশ ইউক্রেনের প্রতি তাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ পরিমাণ প্রকাশ করে না৷ বিশেষ করে সংবেদনশীল তথ্য বিবেচনায় সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুত পরিমাণ অনেকক্ষেত্রেই গোপন রাখা হয়৷ ফলে প্রদত্ত মোট তহবিলের পরিমাণ হিসাব করাও বেশ কঠিন৷
ছবি: Wojtek Radwanski/AFP/Getty Images
সামগ্রিক আন্তর্জাতিক সাহায্য
কিল ইনস্টিটিউটের গবেষণায় স্বল্পমেয়াদী এবং বহু-বছর মেয়াদী সাহায্য, ঋণ এবং সামরিক সহায়তার প্রকাশিত তহবিলের পরিমাণ জানা যায়৷ এই গবেষণায় দেখা গেছে ইউক্রেনে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে অ্যামেরিকার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইউরোপ৷ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আর্থিক, সামরিক এবং মানবিক সহায়তায় ১৩২ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে ইউরোপ৷ অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে সহায়তা দিয়েছে ১১৪ বিলিয়ন ইউরো৷ (১ ইউরো = প্রায় ১৩০ টাকা)
ছবি: DW
সামরিক সহায়তায় এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তায় ইউরোপ এগিয়ে থাকলেও সামরিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে রয়েছে৷ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সামরিক সহায়তা বাবদ ৬৪ বিলিয়ন ইউরোর বেশি বরাদ্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ অন্যদিকে সামরিক বরাদ্দে ইউরোপ সহায়তা করেছে ৬২ বিলিয়ন ইউরোর কম৷ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে ট্যাংক, ব্র্যাডলি যানবাহন, হাউইটজার, হাইমার্স রকেট লঞ্চার এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা৷
ছবি: European Union 2025 - Source : EP
6 ছবি1 | 6
সুইজারল্যান্ডে রাশিয়ার আটশ কোটি ডলার ফ্রিজ
সুইজারল্যান্ডে রাশিয়ার আটশ কোটি ডলারেরও বেশি সম্পদ ফ্রিজ হয়ে আছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর মস্কোর সম্পদ ফ্রিজ করা শুরু হয়।
মঙ্গলবার সুইস সরকার জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সেই সম্পদের পরিমাণ হলো ৮৪০ কোটি ডলার। এক বছরে আরো ১৮০ কোটি ডলারের সম্পদ চিহ্নিত করে ফ্রিজ করা হয়েছে।
যে সব সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে, রিয়েল এস্টেট, বিলাসবহুল গাড়ি এবং শিল্পদ্রব্য।
সুইজারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ নয়। তা সত্ত্বেও তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউ-র নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি সমর্থন করে।