ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতির বিবৃতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু অ্যামেরিকার আপত্তিতে জাতিসংঘ তা প্রকাশ করতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকার ভেটো, বহু আলোচনার পরেও ইসরয়ালে এবং হামাসের লড়াইয়ে যুদ্ধবিরতির বিবৃতি ঘোষণা করতে পারল না জাতিসংঘ। মঙ্গলবার জাতিসংঘে এ নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত ঐক্যমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
জাতিসংঘে এ দিনের বৈঠকে ১৫টি দেশ আলোচনায় বসেছিল। এর মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি দেশ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিবৃতি প্রকাশ করতে গেলে নয়টি দেশকে পক্ষে ভোট দিতে হয়। স্থায়ী সদস্য দেশগুলির কেউ ভেটো দিলে বিবৃতি প্রকাশ করা যায় না।
মঙ্গলবারের বৈঠকে বিবৃতির বিরুদ্ধে ভেটো দেয় অ্যামেরিকা। ফলে তা প্রকাশ করা যায়নি। অ্যামেরিকার ঠিক বিপরীত অবস্থান নিয়েছিল ফ্রান্স। যুদ্ধবিরতির পক্ষে সওয়াল করে তারা। একই সঙ্গে মিশরকে মধ্যস্থকারী হিসেবে ব্যবহারের কথা বলা হয়। কিন্তু বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া যায়নি।
ফিলিস্তিনের মা-ভাই-বোন হারানো সেই শিশুটি
পরিবারের কেউ বেঁচে নেই ভেবে তার বাবাও মরতে চেয়েছিলেন৷ ভেবেছিলেন, ‘‘নিষ্ঠুর এ পৃথিবীতে থেকে কী লাভ!’’ ছয় বছরের সুজি সাতঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসায় তিনিও ফিরে পেয়েছেন বাঁচার আনন্দ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
সুজি ছিল ‘নিরাপদ’ ঘরে
গত রোববার গাজার সেই এলাকাটি তখন ইসরায়েল থেকে উড়ে আসা রকেটের আঘাতে বারবার সশব্দে কাঁপছে৷ রিয়াদ এশকুন্তানা আর তার স্ত্রী নিজেদের সন্তানদের একটা ঘরে রেখে এলেন৷ তাদের মনে হয়েছিল সেই ঘরটিই সবচেয়ে নিরাপদ, রকেটের আওতার সবচেয়ে বাইরে৷ অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে সুজিও ছিল সেখানে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
হঠাৎ ধসে পড়ে সব
কিন্তু এত করেও সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে পারেননি রিয়াদ এশকুন্তানা৷ রকেটের আঘাতে প্রথমে দুটি দেয়াল, তারপর ছাদও ধসে পড়ে৷ ও ঘর থেকে স্পষ্ট শোনা যায় ছেলে জাইন-এর চিৎকার, ‘‘আব্বা! আব্বা!’’সুজিও ডাকে৷ কিন্তু মাঝে দেয়াল ভেঙে পড়ে ধংসস্তূপের দেয়াল গড়ে দেয়ায় সন্তানদের উদ্ধার করতে যেতে পারেননি রিয়াদ৷ ওপরে উদ্ধারকাজ চলার সময়ের ছবি৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
রিয়াদের বেঁচে যাওয়া
ভবনটি ধসে পড়ার পর প্রতিবেশীরা এসে ইট-সুরকির নীচ থেকে চেনা মানুষগুলোকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ রিয়াদ খুব চেষ্টা করেও নিজের বেঁচে থাকার খবরটা তাদের জানাতে পারেননি৷ প্রায় ত্রিশ মিনিট পর প্রতিবেশীদের উদ্যোগেই পুলিশ আসে, উদ্ধারকর্মীরা আসে৷ ততক্ষণে কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েছেন রিয়াদ৷ ফলে তার কাতর আর্তনাদ শুনতে পান উদ্ধারকর্মীরা৷ বেঁচে যান রিয়াদ৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
রিয়াদের জীবনের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলো
উদ্ধার করে শিফা হাসপাতালে নেয়া হলো রিয়াদকে৷ সেখানে তখন স্বজনদের ভীড়৷ এক শিশুকে আনতে দেখে নারীরা সেদিকে ছুটে যান, ‘‘ইয়াহিয়া নাকি? ইয়াহিয়া!’’ চার বছরের ইয়াহিয়া তখন আর বেঁচে নেই৷ শুনে দুজন নারী সেখানেই অজ্ঞান৷ তারপর জাইনের খবর, মেয়ে ডানার খবর, স্ত্রীর খবরও জেনে রিয়াদের মনে হলো আর কেউ বেঁচে নেই৷ মনে হলো, সবাইকে হারিয়ে একা একা বেঁচে থাকার কী দরকার! ওপরে গাজার ধসে পড়া ভবনের সামনে এক নারীর কান্না৷
ছবি: Adel Hana/AP Photo/picture alliance
সাত ঘণ্টা পর প্রাণের সাড়া!
বাড়ির সবাইকে চিনতেন বলে প্রতিবেশীরা জানতেন এখনো সুজি আছে ইট-সুরকির নীচে৷ তাই ভবন ধসে পড়ার সাত ঘণ্টা পরও চলছিল তাকে উদ্ধারের চেষ্টা৷ উদ্ধারকর্মীরা ধংসস্তূপের ফাঁকফোকরে মুখ রেখে ‘‘আল্লাহু আকবর’’ বলে করছেন৷ এখানে ওখানে খুঁজে খুঁজে হঠাৎ এক জায়গা থেকে শোনা গেল শিশুর দুর্বল কণ্ঠের মৃদু চিৎকার, ‘‘আল্লাহু আকবর!’’
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
‘আমাকে ক্ষমা করো’
উদ্ধার করে সুজিকেও নেয়া হয় শিফা হাসপাতালে৷ রিয়াদের পাশের বেডেই রাখা হয় তাকে৷ ছয় বছরের মেয়েটিকে দেখে রিয়াদ আবার ফিরে পেয়েছেন জীবনের মানে৷ একটু হলে সুজিকেও হারাতে হতো- এই ভেবে বুক কাঁপে তার৷ সুজির হাত ধরে বলেন, ‘‘আমার মেয়ে, আমাকে তুমি ক্ষমা করো! তুমি তখন ডেকে তোমার কাছে যেতে বলেছিলে৷ অনেক চেষ্টা করেও আমি তোমার কাছে যেতে পারিনি৷’’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্য দ্রুত যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পক্ষে। ব্লকের ২৭টি দেশ যুদ্ধবিরতির বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র পলিসির প্রধান জোসেফ বরেল জানিয়েছেন, হাঙ্গেরি ওই প্রস্তাবে সই করতে রাজি হয়নি। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং জর্ডনের রাজা দ্রুত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ঘটনার রাজনৈতিক সমাধানের রাস্তা খোঁজা উচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন।
সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন প্রশাসনের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনার কথা বলেছিলেন বাইডেন। কিন্তু মঙ্গলবার প্রকাশ্য বিবৃতিতে আপত্তি জানায় অ্যামেরিকা।
এদিকে ইসরায়েল এবং হামাসের লড়াই অব্যাহত। মঙ্গলবার ভোরেও গাজা লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। হামাসও ইসরায়েলে রকেট ছুড়েছে। তারই মধ্যে সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন। সেনার এয়ারফোর্স বেস দেখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, হামাসকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, 'হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ ভাবতেও পারেনি তারা এত বড় ধাক্কা খাবে।' যুদ্ধবিরতির প্রশ্ন নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্ট দাবি করেছে, হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতিতে আপত্তি নেই। কিন্তু যুদ্ধবিরতির যে শর্ত ইসরায়েল চাপাতে চাইছে, তাতে তাদের আপত্তি আছে। তাদের দাবি, ইসরায়েল বলেছে, হামাস গোলাবর্ষণ থামানোর দুই-তিন ঘণ্টা পরে ইসরায়েল বিবেচনা করবে, তারা গোলাবর্ষণ থামাবে কি না। হামাস চায়, একইসঙ্গে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে যাবে।