সারা দেশ এক মিনিটের জন্য আলোকিত হয় মোমবাতির আলোয়৷ আর এই মোমবাতি জ্বেলে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবি করা হয়৷ দাবি জানানো হয় জামায়াত শিবির নিষিদ্ধের৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এক মিনিটের জন্য মোমের আলোয় আলোকিত হয় সারা দেশ৷ শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর থেকে সে আলো ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের সবখানে৷ রাস্তাঘাট, দোকানপাট অফিস আদালত সব খানেই জ্বালানো হয় মোমবাতি৷ আর ছিল রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে গগনবিদারী স্লোগান৷
জার্মানিতে শাহবাগের ঢেউ
শাহবাগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জার্মানির বিভিন্ন শহরে আয়োজন করা হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিবাদ সমাবেশ৷ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এসব প্রতিবাদের খবর ছবিসহ যোগ করা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Sams ul Arefin
‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যে জনসমুদ্র গর্জে ঘটেছে, তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে গোটা দুনিয়ায়৷ জার্মানি বাদ থাকবে কেন? একের পর এক শহরে আয়োজন করা হচ্ছে সমাবেশ, মানববন্ধন৷ দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷
ছবি: DW/A. Islam
বনে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি
কনকনে শীত৷ তার তোয়াক্কা না করেই গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের কার্যালয়ের সামনে সমবেত তাঁরা৷ তাঁদের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, ছাত্র, কেউবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাজ ফেলে আসা বাংলাদেশি৷ বন শহরের নানা প্রান্ত থেকে তাঁরা ছুটে এসেছেন সারা বিশ্বে একটা দাবিকে ছড়িয়ে দিতে, ‘‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই৷''
ছবি: DW/A. Chakraborty
কোলোন ক্যাথিড্রালের সামনে শাহবাগ সমাবেশ
জার্মানির অন্যান্য শহরের মতো বন শহরের কাছেই কোলোনে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটেয় সমবেত হন সেই বাঙালিরা, যাদের মন রাজীবের হত্যাকাণ্ডে ক্ষুব্ধ, ভারাক্রান্ত, কিন্তু কণ্ঠে শাহবাগের সোচ্চার দাবি৷ সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম, কোলোন ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস'র আইটিটি প্রতিষ্ঠানের গবেষক এবিএম ফিরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, রাজীবের হত্যাকাণ্ড তাঁদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে৷
ছবি: Firoz
মিউনিখে প্রতিবাদ
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মিউনিখে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ম্যুনশনার ফ্রাইহাইটে সমবেত হন৷ উদ্দেশ্য শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ৷ এসময় তাঁরা রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবি জানান৷
ছবি: M. Rahman
প্রতিবাদ ম্যোনশেনগ্লাডবাখে
জার্মানির ম্যোনশেনগ্লাডবাখ শহরে ১৩ই ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন একদল বাংলাদেশি শিক্ষার্থী৷ এই সমাবেশ থেকে কাদের মোল্লা এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে৷
ছবি: Rajib Ahmed
এসেন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ
জার্মানিতে বর্তমানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় হাজারের মতো৷ বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মসূদ মান্নান জানিয়েছেন এই তথ্য৷ এই শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে আছেন বিভিন্ন শহরে৷ গত ১০ই ফেব্রুয়ারি ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেন ক্যাম্পাসে একটি সমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষার্থী, পেশাজীবীরা৷
ছবি: Sams ul Arefin
‘একাত্মতা ঘোষণা করছি’
ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেন ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবেশের অন্যতম আয়োজক শামস-উল-আরেফিন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ শাস্তির দাবিতে এক সপ্তাহ আগে ঢাকার শাহবাগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে আমরা জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা একাত্মতা ঘোষণা করছি৷’’
ছবি: Sams ul Arefin
সমাবেশ ফ্রাঙ্কফুর্টে
ফ্রাঙ্কফুর্টে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত সমাবেশের ছবি আমরা পাইনি৷ তবে এই আয়োজন সম্পর্কে ফেসবুকে রয়েছে বিস্তর তথ্য৷ আয়োজকরা সেখানে লিখেছেন, ‘ঐকান্তিক ইচ্ছা আর কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে চলার মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হতে পারলে আমরা বিশ্বাস করি ঘৃণা আর প্রতিরোধের আগুন সবখানে, সবসময়েই জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব৷’
ছবি: Sams ul Arefin
পেছনের কাজ
প্রতিবাদ জানাতে প্রয়োজন হয় লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার৷ জার্মানিতে বাংলা ভাষায় সেসব কি আর সহজে মেলে? শিক্ষার্থীরা তাই নিজেরাই নেমে পড়লেন কলম, পেন্সিল, তুলি নিয়ে৷ ছবিতে মুঠোফোন থেকে দেখে দেখে কাগজে রাজাকারের প্রতিকৃতি আঁকছেন এক আন্দোলনকারী৷
ছবি: Adnan Sadeque
আরো প্রতিবাদ কর্মসূচি
জার্মানির ফ্রাইবুর্গ, মিউনিখ, উল্ম, বার্লিন, ব্রেমেনে প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে বা হবে৷ এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আমাদের কাছে নেই৷ তবে প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজকরা চাইলে ‘Arafatul.Islam@dw.de’ ঠিকানায় ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP
10 ছবি1 | 10
মোমবাতি প্রজ্বলনের পর তরুণ প্রজন্মের একটিই কথা – যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি ছাড়া তারা ঘরে ফিরবেন না৷
এদিকে জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর কোর্ট স্টেশন এবং কাটাখালি এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর করেছে, আগুন জ্বালিয়েছে এবং পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে৷ এতে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন৷
পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিলে তারা পিছু হটে৷ জামায়াত শিবিরকে তাড়া করতে সাধারণ মানুষও পুলিশের সঙ্গে মাঠে নামে রাজশাহীতে৷
রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার এস এম মনিরুজ্জামান জানান, তারা সময় মত ব্যবস্থা নেয়ায় জামায়াত শিবির ব্যাপক নাশকতা চালাতে পারেনি৷
অন্যদিকে বুধবার ঢাকায় জামায়াত শিবিরের হামলায় আহত মতিঝিল অগ্রণী ব্যাংক প্রধান শাখার লিফটম্যান জাফর মুন্সি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন৷ পুলিশ জানায়, বুধবার সকালে মতিঝিলে ভাঙচুরের পর জামায়াত শিবিরের কর্মীরা ব্যাংকে ঢুকতে গেলে তিনি বাধা দেন৷ আর গেটে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে লাগানো পোস্টার ছিঁড়তেও তিনি বাধা দেন৷ এতে উত্তেজিত হয়ে শিবির কর্মীরা লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন৷ বৃহস্পতিবার রাতে তার মরদেহ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে নেয়া হয়৷