যুদ্ধাপরাধীরা ভোটার হতে পারবেন না৷ তাই তাঁরা কোনো নির্বাচনে প্রার্থীও হতে পারবেন না৷ মন্ত্রিসভা সোমবার এই আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে৷ আইনজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে রাজনীতি ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভুইঞা জানান, জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনে আইনের খসড়া বিল আকারে উত্থাপিত হবে এবং এই অধিবেশনেই সেটি পাস হওয়ার কথা৷
আইনটি পাস হলে দালাল আইন ১৯৭২ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর আওতায় কোনো ব্যক্তি দণ্ডিত হলে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে৷ তাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে না নির্বাচন কমিশন৷ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ, ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে জানান, যুদ্ধাপরাধীরা যেহেতু ভোটার হতে পারবে না তাই তাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগও থাকবেনা৷ তারা রাজনীতি এবং সামাজিক অনেক বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন৷
মুজাহিদের ফাঁসি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বুধবার (১৭.০৭.১৩) ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ বুধবার (১৭.০৭.১৩) দেওয়া রায়ে তাকে ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
আমৃত্যু কারাদণ্ড
মাত্র দু’দিন আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নব্বই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ বয়স বিবেচনায় এনে আযমকে মৃত্যুদণ্ড দেননি আদালত৷
ছবি: Nashirul Islam/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশ সরকারের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়েছিল৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
আলবদর কমান্ডার
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ বর্তমানে তিনি কারাবন্দি আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
‘‘মানুষ হত্যা করেছেন মুজাহিদ’’
যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুজাহিদ শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যার পরিকল্পনাকারীই ছিলেন না, তিনি নিজেও সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন৷ ফরিদপুর এলাকায় তার নৃশংসতার সাক্ষী এখনো আছে৷’’ এই রায়ে সন্তুষ্ট বাদল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
ফেসবুক প্রতিক্রিয়া
ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই রায় মানি৷’’ আর শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘‘যে যাই বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমি শতভাগ তৃপ্ত না হলেও এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতেও আমি অনেক খুশি৷’’ তবে তপু হোসেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘এটা ভুয়া রায়... মানিনা মানবো না৷’’
ছবি: Reuters
‘‘এটি প্রহসনের রায়’’
জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে৷ মুজাহিদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটি প্রহসনের রায়৷ রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি৷’’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানান ইসলাম৷
ছবি: Reuters
দুই দিনে নিহত ৯
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৫ ও ১৬ জুলাই সহিংসতায় কমপক্ষে নয় ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী এই সময় হরতাল পালন করেছে৷ মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে চার ব্যক্তি৷ আর সোমবার পাঁচ ব্যক্তি৷ দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি এবং সর্বশেষ সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
এপর্যন্ত মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৬ জন দণ্ডিত হয়েছেন৷ তাঁরা হলেন, জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদ, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, কামারুজ্জামান, গোলাম আযম এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ৷ বিচার চলছে আরো ৫ জনের৷ তদন্ত চলছে আরো অনেকের বিরুদ্ধে৷
অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম জানান এই আইনটির অনেক প্রয়োজন ছিল৷ এর আগে একাধিকবার ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে বলেছে যুদ্ধাপরাধীরা যাতে রাষ্ট্র এবং সমাজের কোনো পদে বা কাজে নিয়োজিত হতে না পারে তার ব্যবস্থা করবে সরকার৷ এই আইনটি পাস হলে যুদ্ধাপরাধীরা দেশের মন্ত্রী-এমপি হয়ে গাড়িতে জাতীয় পতাকা নিয়ে ঘুরতে পারবেনা৷
তিনি বলেন অতীতে নানাভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পুরস্কৃত করা হয়েছে৷ আর তারা দম্ভ করে বলেছে, ‘বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটেনি৷' তিনি বলেন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও দলীয় প্রতীক না হোক স্বতন্ত্র বা অন্য কোনোভাবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল৷ কিন্তু নতুন এই আইনে জামায়াতসহ যে-কোনো দলের যুদ্ধাপরাধীরা নির্বাচন করতে পারবেন না৷ হারাবেন ভোটাধিকার৷