মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ৯ বছরে এসে এখন ধীরগতি স্পষ্ট৷ প্রসিকিউটররাও তা স্বীকার করছেন৷ তাঁরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরে অনেক মামলাই প্রমাণ করা যাবেনা৷
বিজ্ঞাপন
নয় বছরে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মোট ৩৫টি মামলার রায় দিয়েছে৷ আর এখন বিচার চলছে ৩৪টি মামলার৷ তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে এমন অভিযোগের সংখ্যা ২৮টি৷ প্রায় চার হাজার আসামির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৭শ'র মতো তদন্তযোগ্য অভিযোগ রয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার সহ-সমন্বয়ক এম সানাউল হক৷ আর এখনো অভিযোগ আসছে৷
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়৷ শুরুতে একটি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার কাজ শুরু হলেও ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়৷ দু'টি ট্রাইব্যুনাল একযোগে আড়াই বছর কাজ করে৷ এরপর ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুইটি ট্রাইব্যুনালকে একইভূত করা হয়৷ ফলে ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত একটি ট্রাইব্যুনালই বিচার কাজ করছে৷ একটি ট্রাইব্যুনালের পক্ষে বছরে ৪-৫টির বেশি মামলার বিচার কাজ সম্ভব হয়না৷
এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার পর্যায় যে ৩৪টি মামলা আছে তারমধ্যে দুটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ। ওই দুটি বাদ দিলে এই একটি ট্রাইব্যুনাল স্বাভাবিক গতিতে বিচার কাজ করলে ৩২টি মামলার বিচার শেষ করতে সময় লাগবে ৭ থেকে ৮ বছর৷
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আদ্যপান্ত
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে কয়েকজন মুক্তিপাগল মানুষের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ সেই জাদুঘর নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
যাত্রা শুরু
১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচার একটি পুরনো বাড়ি ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷ আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের প্রয়াস নিয়েই যাত্রা হয় এই জাদুঘরের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নতুন ঠিকানায়
ভাড়া বাড়ির স্থান-স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত স্মারকগুলো যথাযথভাবে প্রদর্শন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আগারগাঁও এলাকায় জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালের ৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন৷ প্রায় ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় জাদুঘরের নয়তলা ভবন৷ ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল নতুন ভবনে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বীরশ্রেষ্ঠদের প্রতীক
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনে সাত বীরশ্রেষ্ঠর প্রতীক হিসেবে প্রাচীন স্থাপত্যরীতির সাতটি স্তম্ভ রাখা হয়েছে৷ এই স্তম্ভগুলো নওগাঁ জেলার পত্নীতলায় দিবর দিঘিতে স্থাপিত একাদশ শতকের রাজা দিব্যকের স্তম্ভের অনুকৃতি৷ ঐতিহাসিকদের মতে, দিব্যকের সেই স্তম্ভই বাংলার প্রথম বিজয়স্তম্ভ৷ এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশিদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের স্মারক হিসেবে এই স্তম্ভগুলো স্থাপন করা হয়েছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বিশাল সংগ্রহশালা
মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক, মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, অস্ত্র, দলিল, চিঠিপত্র ইত্যাদি মিলিয়ে ১৭ হাজারের বেশি নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরের বিশাল সংগ্রহশালায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শিখা অম্লান
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলায় রয়েছে শিখা অম্লান৷ কালো মার্বেল পাথরে পানির ভেতর থেকে জ্বলছে সেই শিখা৷ উদ্বোধনের আগে সেগুনবাগিচার পুরোনো ভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্মের ৭১ জন মানুষ হেঁটে শিখা অম্লানটি নতুন জাদুঘরে নিয়ে আসেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
জাদুঘরের প্রথম তলায় শিখা অম্লানের পাশে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জ নির্মিত ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিমান ও হেলিকপ্টার
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলার দুইপাশে ছাদের সঙ্গে আটকানো রয়েছে একটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার৷ একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল বিমান ও হেলিকপ্টারটি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম গ্যালারির নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান পর্ব, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এ গ্যালারিতে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
প্রথম গ্যালারিতে আর যা কিছু
‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’ গ্যালারিতে আরও আছে ফসিল, প্রাচীন টেরাকোটা, মৃৎপাত্র, শিলাখণ্ডসহ নানা প্রকার নিদর্শনসহ ঐতিহাসিক ঘটনা ও ব্যক্তির আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
দ্বিতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের দ্বিতীয় গ্যালারির নাম ‘আমাদের অধিকার আমাদের ত্যাগ’৷ এই গ্যালারি থেকেই দর্শক সরাসরি ঢুকে পড়বেন মহান মুক্তিযুদ্ধের পর্বে৷ স্বাধীনতার দাবিতে রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭০ সালের ৩ জানুয়ারির সমাবেশ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি৷ মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল আর গুলির বাক্সসহ আছে শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অপারেশন সার্চলাইট
দ্বিতীয় গ্যালারির একটি অংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যার চিত্র৷ অন্ধকার এই গ্যালারিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইটের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকছে হেডলাইট জ্বালানো একটি সামরিক যান৷ গাড়ির সেই আবছা আলোয় দেখা যাবে মেঝের চারপাশে পড়ে থাকা গুলিতে নিহত মৃতদেহ৷ আর দেয়ালে আছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চালানো গণহত্যার আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তৃতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের তৃতীয় গ্যালারিটি চতুর্থ তলায়৷ এর নাম ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’৷ এখানে আছে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জীবনযাত্রা, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বড় আকারের ডিজিটাল প্রিন্ট৷ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ হওয়া, রাজাকারদের তৎপরতা, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয়স্থল এসব৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
তৃতীয় গ্যালারিতে আরো আছে পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ বিটলসের বিখ্যাত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানের জর্জের নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি ও সুরের স্টাফ নোটেশন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
চতুর্থ ও সবশেষ গ্যালারি
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সর্বশেষ গ্যালারিটির নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’৷ এতে আছে নৌযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন৷ বিলোনিয়ার যুদ্ধের রেলস্টেশনের রেলিং, ট্রলি ইত্যাদি৷ এছাড়া আছে মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনাদের আক্রমণ, দগ্ধ বাড়িঘর৷ সবশেষে বিজয় অর্জন৷ শেষ হয়েছে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অনুলিপিটি দিয়ে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় ঘুরে প্রদর্শনী করা হয়৷ ২০০১ সাল থেকে দু’টি বড় বাসের মাধ্যমে এ ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ইতিমধ্যেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছে, তুলে ধরেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সময়সূচি ও অন্যান্য তথ্য
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন (মার্চ-সেপ্টেম্বর) সময়সূচি সকাল ১০টা-বিকেল ৬টা৷ আর শীতকালীন (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) সময়সূচি হলো সকাল ১০টা-বিকাল ৫টা৷ রোজার মাসে জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত৷ জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ রোববার৷ প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
16 ছবি1 | 16
আলোচনায় নেই ট্রাইব্যুনাল
শুরুর কয়েক বছর ট্রাইব্যুনাল যেভাবে আলোচিত ছিল, মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল, সেই আলোচনা আর আগ্রহ এখন ট্রাইব্যুনাল নিয়ে নেই৷ সাধারণ মানুষও এখন আর আগের মতো রায়ের জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে না৷ এখন রায় হলে সংবাদমাধ্যম গুরুত্বহীনভাবে খবর পরিবেশন করে৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর একটা কারণ হয়ত হতে পারে যে আলোচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হয়ে গেছে৷ অনেকের দণ্ডও কার্যকর হয়ে গেছে৷ ফলে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে গেছে৷ কিন্তু সরকারের ঘোষণা ছিল, দেশে একজন মানবতাবিরোধী অপরাধী থাকা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের কাজ চলবে৷
আলোচিত মামলা
ট্রাইব্যুনাল এপর্যন্ত যে ৩৫টি মামলার রায় দিয়েছে তাতে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৮০ জন৷ তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে ৫২ জনকে৷ পুরো বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে সাত জনের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হলেন, জামায়াতে ইসলামীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মজলিসে সুরা সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী৷
বিরল ছবিতে বাংলাদেশের ইতিহাস পরিক্রমা
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১- এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়৷ এসব অধ্যায় অনেকটাই ফুটে উঠেছে এই ছবিগুলোতে৷
ছবি: Journey/M. Alam
ভাষা আন্দোলন
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে শহিদদের খবর প্রকাশিত হয় পত্রিকায়৷ ছবিটি ফটোগ্রাফার রফিকুল হকের তোলা৷
ছবি: Journey/R. Hoque
একুশের প্রভাতফেরি
১৯৫৩ সালে একুশের প্রথম প্রভাতফেরি৷ সেখানে নারীদের সাহসী পদচারণার ছবিটিও তুলেছেন রফিকুল হক৷
ছবি: Journey/R. Hoque
৬৬’র ছাত্র আন্দোলন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ১৯৬৬ সালের ছাত্র আন্দোলনের ছবিটি তুলেছেন আজমল হক৷
ছবি: Journey/A. Hoque
মধুর ক্যান্টিন
মধুর ক্যান্টিন৷ বাংলাদেশের অনেক আন্দোলনের সূত্রপাতই এখান থেকে৷ ১৯৬৭ সালে ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার রশিদ আহমেদ৷
ছবি: Journey/R. Ahmed
৬৯-এর প্রভাতফেরি
১৯৬৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরির ছবিটি তুলেছেন এনামুল হক৷
ছবি: Journey/A. Hoque
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান
১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে পল্টন ময়দানে বক্তব্য রাখছেন তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ৷ ছবিটি তুলেছেন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার রশীদ তালুকদার৷
ছবি: Journey/R. Talukder
বঙ্গবন্ধু’র ঐতিহাসিক উচ্চারণ
‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’’৷ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর এ ছবিটি তুলেছেন মোহাম্মদ আলম৷
ছবি: Journey/M. Alam
মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীরা
ছবিটি ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে তোলা৷ তীর, ধনুক হাতে সেদিন উপস্থিত হয়েছিলেন আদিবাসীরাও৷ ছবিটি তুলেছেন মোহাম্মদ আলম৷
ছবি: Journey/M. Alam
প্রতিবাদী শিল্পীরা
পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষনের বিরুদ্ধে সোচ্চার শিল্পী সমাজ৷ ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চ ছবিটি তোলেন রশীদ তালুকদার৷
ছবি: Journey/R. Talukder
পত্রিকায় ২৫শে মার্চ
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছিল সেই তথ্য৷
ছবি: Journey
কারফিউ ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কারফিউ ভাঙার অপরাধে এক বাঙালিকে শায়েস্তা করছে পাকবাহিনী৷ ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার রশিদ আহমেদ৷
ছবি: Journey/R. Ahmed
বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ
১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের লাশ পড়ে আছে৷ ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ছবিটি তোলেন ফটোগ্রাফার এনামুল হক৷
ছবি: Journey/A. Hoque
অস্ত্র সমর্পণ
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারির ছবি এটি৷ ঢাকা স্টেডিয়ামে অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠান৷ বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ ছবিটি তুলেছেন মোহাম্মদ আলম৷
ছবি: Journey/M. Alam
মিত্র বাহিনীর বিদায়
১২ মার্চ, ১৯৭২ সাল৷ মিত্র বাহিনীর বিদায় অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ সঙ্গে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জগজিত সিং অরোরা৷ ঐতিহাসিক এই ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলম৷
ছবি: Journey/M. Alam
শহিদ মিনারের পরিবর্তে মসজিদের পরিকল্পনা
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১-এর ১৮ ডিসেম্বর বিধ্বস্ত শহিদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে ডাকসুর তৎকালীন জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন৷ পাশে মসজিদ লেখাটি দেখা যাচ্ছে৷ পাকিস্তানিরা শহিদ মিনার গুঁড়িয়ে দিয়ে এখানে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল৷ ছবিটি তুলেছেন এনামুল হক৷
ছবি: Journey/A. Hoque
শহিদ মিনার পুনর্নিমাণ
পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদ মিনার ভেঙে ফেলে৷ ১৯৭২ সালে শহিদ মিনার পুনর্নিমাণের ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী এনামুল হক৷
ছবি: Journey/A. Hoque
অপরাজেয় বাংলার উদ্বোধন
১৯৭৮ সালে ডাকসুর উদ্যোগে নির্মিত অপরাজেয় বাংলা উদ্বোধনের ছবি এটি৷ উদ্বোধন করেন দুই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা৷ ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার আজমল হক৷
ছবি: Journey/A. Hoque
স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন
এরশাদের স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাতে সারাদেশে তখন গণজোয়ার৷ ১৯৯০ সালের ২৮শে নভেম্বর ছবিটি তুলেছেন ইউসুফ সাদ৷
ছবি: Journey/Y. Saad
18 ছবি1 | 18
আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী৷ ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে৷ আর আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আবদুল আলীমকে৷ এই দুই জন রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল করেছিলেন৷ কিন্তু কারাগারেই তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়৷ ফলে তাদের আপিল অকার্যকর হয়ে গেছে৷
২৮ আপিল, শুনানি হয়না ৩ বছর
ট্রাইব্যুনাল যেসব মামলার রায় দিয়েছে তার বিরুদ্ধে ২৮টি আপিল এখনো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিস্পত্তির অপেক্ষায় আছে৷
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম ও মুহাম্মদ আবদুস সুবহান এবং জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মো. কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল শুনানির জন্য কয়েকবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠলেও তার শুনানি এখনো শুরু হয়নি৷ কার্যত গত তিন বছর ধরে আপিল শুনানি আর হচ্ছেনা৷
যেভাবে কাজ করে ট্রাইব্যুনাল
টাইব্যুনালের দু'টি অংশ: তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন৷ তদন্ত সংস্থা কোনো মামলার তদন্ত পুরো শেষ করে প্রসিকিউশনকে দিলে প্রসিকিউশন মামলা করে ট্রাইব্যুনালে৷ ট্রাইব্যুনাল মামলার বিচার কাজ শেষ করে রায় ঘোষণা করে৷ তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা যায়৷ ফলে রায় কার্যকর হয় আপিল বিভাগের রায়ের পরই৷ আপিল বিভাগের রায়ের পরও রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার আইনি সুযোগ আছে৷
কেন ধীরগতি?
ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা ফাইল করলেইতো হবেনা, তাতো প্রমাণ করতে হবে: তুরিন আফরোজ
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ মামলার এই ধীরগতির কথা স্বীকার করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলার যে ধীরগতি তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই৷ আর এখন মাত্র একটি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে৷ দু'টি ট্রাইব্যুনাল করা হলেও একটি ট্রাইব্যুনাল এখন আর নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘তারপরও ট্রাইব্যুনাল যে সব মামলার বিচার শেষ করেছে তার বড় একটি অংশ আপিলে আটকে আছে৷ আপিল নিস্পত্তিতো আর ট্রাইব্যুনালের হাতে নেই৷ ট্রাইব্যুনাল শুধু মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করলেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগতো শুধু এই এক ধরণের মামালার আপিলই শোনেননা৷ তারা আপিলযোগ্য সব মামলারই আপিল শোনেন৷ আর ট্রাইব্যুনাল এই ধরণের মামলা করতে করতে অভিজ্ঞ৷''
ব্যারিস্টার আফরোজ আরো বলেন, ‘‘অন্যদিকে তদন্ত সংস্থার তদন্ত যদি সঠিক না হয় তাহলেও মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে যায়৷ আবার তদন্ত করাতে হয়৷ কারণ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা ফাইল করলেইতো হবেনা, তাতো প্রমাণ করতে হবে৷''
একটি মাত্র ট্রাইব্যুনাল থাকায় মামলা নিস্পত্তি ও বিচারের গতি অনেকটাই কম: এম সানাউল হক
তদন্ত সংস্থার সহ-সমন্বয়ক এম সানাউল হকও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন একটিমাত্র ট্রাইব্যুনাল থাকায় মামলা নিস্পত্তির হার কমে গেছে৷ ফলে বিচারের গতি অনেকটাই কম৷ আর গত তিন বছর ধরে কোনো আপিল শুনানি হচ্ছেনা৷ আপিল শুনানি না হওয়া হলেতো মামলার চূড়ান্ত নিস্পত্তি হয়না৷ রায়ও কার্যকর হয়না৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘তদন্ত সংস্থায়ও কাঠামো অনুযায়ী জনবল নেই৷ আমরা জনবলের জন্য আবেদন করেছি৷''
ধীরগতি জটিলতা সৃষ্টি করবে
তুরিন আফরোজ বলছেন, ‘‘আমরা বলেছি দেশে একজন যুদ্ধাপরাধী থাকাপর্যন্ত আমাদের কাজ চলবে৷ কিন্তু সাক্ষ্য প্রমাণ থাকতে হবে তো? অনেক সাক্ষী এরই মধ্যে মারা গেছেন৷ অনেক ডকুমেন্ট এখন আর পাওয়া যায়না৷ ফলে এই ধীরগতি ভবিষ্যত বিচারে জটিলতা সৃষ্টি করবে৷ মামলা প্রমাণ কঠিন হয়ে পড়বে৷''
তদন্ত সংস্থার সহ-সমন্বয়ক এম সানাউল হক বলেন, ‘‘আমরা তদন্তের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি৷ প্রতি মাসেই ২-৩টি তদন্ত শেষ করছি৷ এখন আমরা চেষ্টা করছি অভিযোগের মেরিট বুঝে যে অভিযোগগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর তদন্ত আগে শেষ করতে৷ আমরা চেষ্টা করছি সাক্ষীরা জীবিত থাকতেই তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করতে এবং তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনালের ধীরগতির কারণে এখন অনেক বাদি এবং সাক্ষী আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন৷ তাঁরা মনে করছেন মামলায়তো কিছু হচ্ছেনা৷ তাহলে এসব করে কী হবে? তারপরও এখনো অভিযোগ আসছে৷''