অন্তত ৩০ লক্ষ শিশু জন্ম থেকে শুধু দেখছে, যুদ্ধের আতঙ্ক ও মৃত্যুর তাড়া ছাড়া জীবনে যেন আর কিছু নেই৷ এক সাক্ষাৎকারে জার্মানির ফেডারেল সাইকোলজিক্যাল সেন্টারের চেয়ারম্যান বলেন, এই শিশুদের সারাজীবনই যু্দ্ধাতঙ্কে কাটার আশঙ্কা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফেডারেল সাইকোলজিক্যাল সেন্টারের চেয়ারম্যান এলিজে বিটেনবাইন্ডার৷ শিশুদের মনরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর৷দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধাতঙ্কগ্রস্ত শিশু ও পূর্ণ বয়স্কদের চিকিৎসা করছেন৷ সিরিয়ার শিশুদের বিষয়ে তাঁর সঙ্গেই কথা বলেছেন জেনেট স্ভাইনক৷
সাক্ষাৎকারে এলিজে বিটেনবাইন্ডার জানান, সিরিয়ার অনেক শিশু নিজের কিংবা বন্ধুর বাবা-মায়ের মৃত্যু, স্কুল পুড়ে যাওয়া, ঘরছাড়া হওয়া বা এমন অন্য কোনো বড় ভীতিকর স্মৃতি নিয়ে বাঁচছে৷ এমন দুঃসহ স্মৃতির প্রভাব পড়ছে শিশুমনে৷ ফলে অনেক শিশুই সর্বক্ষণ আতঙ্কগ্রস্থ৷ মানসিক এই অবস্থার প্রভাবে কারো কারো মাথাব্যথা কমছে না, কেউ কেউ রাতে ঘুমাতে পারছে না, কারো কারো আবার সব কাজেই মন বসাতে সমস্যা হচ্ছে৷
প্রখ্যাত মনরোগ চিকিৎসক বিটেনবাইন্ডার মনে করেন, যুদ্ধাক্রান্ত এই শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে ব্যাপক উদ্যোগ দরকার৷ এবং তিনি মনে করেন শিশুদের পাশে দাঁড়ালে তারা হয়ত ধীরে ধীরে ভয়াবহ অতীত ও বর্তমানকে পেছনে ফেলে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে, কারণ, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিশুদের জীবনে আশা ও সম্ভাবনা থাকে৷ নতুন অভিজ্ঞতা তাদের আত্মবিশ্বাসী ও সৃষ্টিশীল করে৷''
এলিজে বিটেনবাইন্ডারের মতে, ছোট ছোট সুখ বা অভিজ্ঞতা, যেমন খেলাধুলা, নিজেদের গোষ্ঠী বা পরিবারের মধ্যে থাকতে পারার মতো কারণেও খুশিতে ভরে উঠতে পারে শিশুদের জীবন৷ তবে শিশুমন যদি দীর্ঘকাল যুদ্ধাতঙ্কেই ঘুরপাক খায় তাহলে জীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়৷ ‘সেভ দ্য চিলড্রেন'-এর এক প্রতিবেদন বলছে, ইতিমধ্যে সিরিয়ার কয়েক লক্ষ শিশু মাদক বা অ্যালকোহলের নেশায় আক্রান্ত হয়েছে৷
প্রতিদিন সিরিয়া ছাড়ছে অসখ্য মানুষ৷ আশ্রয় খোঁজা মানুষদের মধ্যে আছে শিশুরা, যারা যুদ্ধের বিভীষিকা নিজের চোখে দেখেছে৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করা তেমনই এক মেয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
বাড়িটা যেমন ছিল
সিরিয়ার এক শরণার্থী মেয়ে কলম আর কাগজ বেছে নিয়েছে তার জীবনের গল্প বলতে৷ এই ছবির ক্যাপশনে সে লিখেছে, ‘‘এটা সিরিয়া, মৃত্যু দূত৷ সিরিয়ার রক্ত ঝড়ছে৷’’ মেয়েটির আঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্যাঙ্ক থেকে একটি শহরের দিকে গোলা ছোড়া হচ্ছে৷ একইসঙ্গে আকাশ পথে চলছে হামলা৷ ফলে বাড়িগুলো আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আর একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একজন তা দেখছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
মৃত্যু এবং হতাশা
‘‘এটা আমার বাবা, মা এবং পরিবারের - এবং সিরিয়ার সকল পরিবারের কবর,’’ মেয়েটা লিখেছে৷ তার কথায়, ‘‘সিরিয়ার শিশুদের অবস্থা এমন৷’’ তার হাতে থাকা ছবিটিতে তিনটি কবর এবং শুয়ে থাকা কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
শিশুরা মারা যাচ্ছে
এখানে এজিয়ান সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো আয়লান কুর্দির মরদেহ আঁকার চেষ্টা করেছে মেয়েটি৷ তার মৃত্যু গোটা ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে শিশুদের চরম দুর্দশা ফুটে উঠেছিল কুর্দির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘এটা সিরিয়ার মানুষের আসল ট্রাজেডি’
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে৷ অনেক শিশু হারিয়েছে তাদের অভিভাবক৷ অবৈধ পথে সিরিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
থমকে যাওয়া জীবন
গ্রিসের ইডোমেনি শরণার্থী শিবিরে কিছু শিশু ছিল যারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আশায় ছিল৷ তাদের বাবা-মা সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আগেই ইউরোপে প্রবেশে সক্ষম হয়েছিল৷ কিন্তু বাকিদের আশা ধীরে ধীরে ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হচ্ছে৷ ছবির ক্যাপশন, ‘‘শিশুদের সব আশা, স্বপ্ন এখন ময়লার বাক্সের মধ্যে আছে৷’’
ছবি: DW/M.Karakoulaki
হারানো স্বপ্ন
‘‘শিশুদের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে-’’ লিখেছে মেয়েটি৷ তার কথায়, শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক শিশু ইউরোপে শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল৷ কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছে, সেই স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তব হওয়ার আশা নেই৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘তাদের বুঝতে হবে যে তারা শিশু’
দশ বছর বয়সি এই শিশুটির মতো আরো অনেক শিশু ইডোমেনি ক্যাম্পে রয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, শরণার্থী শিবিরে শিশুদের দিকে আলাদাভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে না৷