1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বাণিজ্যবাংলাদেশ

যুদ্ধের কারণে দাম বাড়লে ভর্তুকি?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসসহ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে আপাতত ভর্তুকি দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখবে সরকার, জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী৷ তবে জ্বালানির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, বলছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী৷

Bangladesch Menschenschlange vor LKWs mit Lebensmitt´len in Dhaka
সাম্প্রতিক ছবিছবি: Abdul Halim

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা৷ টিসিবির ট্রাক এসেছে রাজধানীর মৌচাক মোড়ে৷ ট্রাক দেখতেই ছুটোছুটি৷ এই ছুটোছুটি লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে৷ বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামের কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ এখন টিসিবির পণ্যের অপেক্ষায় থাকেন৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন টিসিবির ট্রাক আসে তখন শুরু হয় হুড়োহুড়ি৷ অনেকে আবার লোকলজ্জার কারণে লাইনে দাঁড়াতে না পারলেও অন্য কাউকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পণ্য কেনেন৷ ফলে যেখানে টিসিবির ট্রাক দেখেন সেখানেই হুমড়ি খেয়ে পরে মানুষ৷

কিছুক্ষন সেখানে অবস্থান করে দেখা গেল, লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করছেন অনেকে৷ বিশেষ করে সমস্যায় পড়ছেন নারীরা৷ কাউকে কাউকে লাইন ছেড়ে যেতেও দেখা যায়৷ সেখানে থাকা এক নারী বলেন, সকাল আটটা থেকে অপেক্ষা করছেন অনেকে৷ কিন্তু টিসিবির ট্রাক আসে দেরিতে৷

টিসিবির ডিলার মিন্টু এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী শফিকুজ্জামান বলেন, ‘‘বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়ায় আসতে দেরি হয়েছে৷ এরমধ্যে শত শত লোক জমে গেছে৷ এখন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পরিস্থিতি৷ যতক্ষণ ট্রাকে জিনিসপত্র থাকে ততক্ষণ দেওয়া হবে৷''

তুলনামূলক কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর পেতে অনেকেই এমন মরিয়া৷ এ অবস্থায় আবার যদি পণ্যের দাম বাড়ে তবে কী হবে? ইউক্রেনে আক্রমণ করার কারণে রাশিয়ার ওপর এরইমধ্যে ইউরোপ ও অ্যামেরিকা অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়েছে৷ সেই অবরোধ কঠোরতর হতে পারে৷ এর প্রভাব এরই মধ্যে জ্বালানির বাজারে পড়তে শুরু করেছে৷ যুদ্ধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যোর দাম বাড়তে থাকলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে৷ এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারেরই বা প্রস্তুতি কী?

জানতে চাইলে সরকারের দু'জন মন্ত্রী দু'ধরনের কথা বলছেন৷ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘‘বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও সরকার ভর্তুকি দিয়ে আপাতত বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখবে৷'' এছাড়া যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানান তিনি৷

‘‘বাজার অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে,'' যোগ করেন মন্ত্রী৷

শূল্ক ছাড় দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেতে পারে: মোস্তাফিজুর

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে, এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু তেলের দাম না, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দামও বাড়ছে৷ তবুও আমাদের আমদানি করতে হবে৷ এই উচ্চমূল্যে আমদানি করে বিক্রি করতে হলে দুটো উপায় সামনে আছে৷ হয় ভর্তুকি দিতে হবে, না হলে জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে৷ কী করা হবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷''

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির দাম নতুন করে বেড়ে গেলেও আমদানি অব্যহত রাখবে সরকার৷

এখন ডিজিলে প্রতিদিন প্রায় ১৩ কোটি টাকার মতো লোকসান দিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, বিপিসি৷ ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিসি বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে প্রায় ৬৩ লাখ মেট্ট্রিক টন, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশই ডিজেল৷ সরকারের ধারণা এখন যেভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, সেই দামে তেল আমদানি করলে বিপিসির প্রতিদিনের লোকসান ২০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে৷

এদিকে, কোভিড মহামারীর দুর্দশা থেকে অর্থনীতি গতিশীল হওয়ার এই সময়কালে লোকসান বাড়লেও এখনই মূল্য সমন্বয়ের পথে না হাঁটার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের৷

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আপাতত ভর্তুকি দিয়েই সামলাতে হবে৷ কারণ গত নভেম্বরেই জ্বালানি তেলের দাম এক দফা বাড়ানো হয়েছে৷ এমনতিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ ফলে এখনই জ্বালানি তেলের দাম আবারও সমন্বয় করতে গেলে মানুষের উপর চাপ বাড়বে৷ সরকারকে এখন বাংলাদেশের ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়াতে হবে৷ বলা হচ্ছে, আমরা বিশাল রিজার্ভের উপর বসে আছি৷ কিন্তু এটা এখন অন্য কোন খাতে বিনিয়োগ করা যাবে না৷ বাজার নিয়ন্ত্রণ এটার প্রয়োজন৷''

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘অথবা শূল্ক ছাড় দিয়েও পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া যেতে পারে৷ তেলের দামের পর এখন কিন্তু সরকারকে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে৷ আবার এই অর্থবছরে সারের ভর্তুকির জন্য সরকার ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে৷ এখন তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সারের দামও বাড়ে৷ এখন যে দাম তাতে সরকারকে ২০-২২ হাজার কোটি টাকা সারে ভর্তুকি দিতে হবে৷ ফলে মূল্য সমন্বয় ছাড়া এটা তো সামাল দেওয়া মুশকিল৷ তবে পরিস্থিতি যাই হোক ধীরে সুস্থে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ