ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মাদক তৈরি বাড়তে পারে বলে সতর্ক করলো জাতিসংঘ। অন্যদিকে যুদ্ধ থেকে বেলারুশকে দূরে থাকার আহ্বান জেলেনস্কির।
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধের প্রভাবে ইউক্রেনে বাড়তে পারে মাদকের উৎপাদন। একাধিক সিন্থেটিক মাদকের কারখানা নতুন করে খুলেছে বলেও মনে করছে জাতিসংঘ। অতীতে এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যেও একই বিষয় দেখা গিয়েছিল বলে সতর্ক করেছে তারা।
জাতিসংঘের মাদক সংক্রান্ত সংস্থার নাম ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)। সোমবার সংস্থাটি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, যেখানেই যুদ্ধ হয়েছে, সেখানেই বেআইনি মাদকের উৎপাদন লাফিয়ে বেড়েছে। ইউক্রেনকে এবিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
ইউক্রেন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন পাশে পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সৌদি আরবকে উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সফল হয়নি৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও সহায়তা চেয়ে পায়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু কেন?
সৌদি যুবরাজ কথা বলতে চাননি?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেলের মূল্য বেড়ে গেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল৷ কিন্তু সালমান তার সঙ্গে কথা বলতে চাননি বলে সেই সময় জানা গিয়েছিল৷ যদিও মার্কিন প্রশাসন এই খবর অস্বীকার করেছিল৷ এর কিছুদিন পরই রাশিয়া ও চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন সালমান৷
আরব আমিরাতও কথা শোনেনি
রাশিয়ার ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের সুপারইয়ট ও সম্পদ লুকাতে না পারেন সেই অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ কিন্তু সেই অনুরোধ শোনেনি আরব আমিরাত৷ ছবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক রুশ ধনীর ইয়ট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kamran Jebreili/AP/picture alliance
জাতিসংঘে সহায়তা দিতে অনিচ্ছুক
ইউক্রেন দখলের বিরোধিতা ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন রেজুলেশন পাস করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন৷ কিন্তু সেই সমর্থন দিতে মধ্যপ্রাচ্যকে অনিচ্ছুক দেখা গেছে৷
ছবি: Spencer Platt/Getty Images
কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিজে তেল উৎপাদন শুরুর পর তাদের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব কিছুটা কমে গিয়েছিল৷ সে কারণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ৷ মার্কিন সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যারন ডি. মিলার বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের অংশীদাররা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের এখন কম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ সে কারণে তারা অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছে৷’’
ছবি: Kirill Kukhmar/TASS/dpa/picture alliance
চীনা বিনিয়োগ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক চীন৷ মোট তেল আমদানির ৪৭ শতাংশ করা হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে৷ এছাড়া সৌদি আরবের ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচিতে সহায়তা করছে চীন৷ ইরাকের তেলক্ষেত্র কিনে নেয়া এবং অবকাঠামোতেও বিনিয়োগ করছে চীন৷ ছবিতে গতবছর বাগদাদে চালু হওয়া চীনা ভাষা শিক্ষার একটি ক্লাস দেখা যাচ্ছে৷
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন৷ আর প্রেসিডেন্ট বাইডেন জুলাই মাসে সৌদি আরব যাচ্ছেন৷
ছবি: REUTERS
6 ছবি1 | 6
তাদের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুদ্ধের আগেই ইউক্রেনের মাদকের উৎপাদন চোখে পড়ার মতো বেড়েছিল। ২০১৯ সালে বেআইনি সিন্থেটিক মাদক তৈরির কারখানা যেখানে ছিল ১৭ সেখানে ২০২০ সালে তা ৭৯-তে গিয়ে পৌঁছায়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তা আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুদ্ধের সময় এধরনের কারখানা বাড়ে কারণ, ওই সময় পুলিশ গিয়ে কারখানায় তল্লাশি চালায় না। দুষ্কৃতীরা সেই সুযোগটাই ব্যাবহার করে।
জেলেনস্কির বার্তা
রোববার রাতে দৈনিক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেছেন, রাশিয়া চেষ্টা করছে বেলারুশের সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের সামিল করতে। কিন্তু তিনি জানেন, বেলারুশের সরকার এবং প্রশাসন যা-ই করুক না কেন, সেখানকার সাধারণ মানুষ রাশিয়ার ইউক্রেনের পক্ষে। কোনোভাবেই যাতে তারা যুদ্ধে অংশ নেন, সেই বার্তাই দিয়েছেন জেলেনস্কি।
শনিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন জানিয়েছেলিনে, বেলারুশকে তারা পরমাণু শক্তিসম্পন্ন মিসাইল দেবেন। আগামী মাসের মধ্যেই তা সেখানে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই জেলেনস্কির এই মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, এর আগেও বেলারুশের মাটি ব্যবহার করেছে রাশিয়া। বেলারুশের মাধ্যমে তারা ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়েছে। এবার বেলারুশ থেকে তারা সরাসরি ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
জেলেনস্কি বলেছেন, ''আমি জানি বেলারুশের নাগরিক ইউক্রেনের পক্ষে। তারা যুদ্ধে যোগ দিয়ে মরতে চান না। আপনারা রাশিয়ার হাতের পুতুলে পরিণত হবেন না।'' এদিন জেলেনস্কি জানিয়েছেন, কিয়েভ-সহ একাধিক ইউক্রেনের শহরে রাশিয়া লাগাতার গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। কিছু মিসাইল রুখে দেওয়া গেলেও সব মিসাইল আটকানোর মতো এয়ার শিল্ড ডিফেন্স তাদের হাতে নেই। পশ্চিমা দেশগুলির কাছে দ্রুত সেই সাহায্য চাইছে তারা। পশ্চিমা দেশগুলি অস্ত্র পাঠাতে দেরি করলে ইউক্রেনকে রক্ষা করা যাবে না বলে এদিন জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
পুটিনের সফর
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম দেশের বাইরে সফর করতে পারেন রাশিয়ারপ্রেসিডেন্ট। তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে যাওয়ার কথা পুটিনের। তবে তার সফরের নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি। রাশিয়া তা গোপন রাখছে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
রাশিয়ার জাতীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, পুটিন প্রথমে তাজিকিস্তান যাবেন। তাজিকিস্তান রাশিয়ার সামরিক বন্ধু। সেখানে দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা তার। সেখান থেকে তিনি তুর্কমেনিস্তান যাবেন। সেখানে কাসপিয়ান সাগরের দেশগুলির একটি সম্মেলন হওয়ার কথা। পুটিন সেখানে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন।