1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুদ্ধের মধ্যে গোয়েন্দাগিরি ও সংবাদকর্মীর কাজ করেন রাজিয়া

১৩ জুলাই ২০১১

নারীদের কর্মকাণ্ড যখন ছিল নানা বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বাঁধা, সেই ১৯৬২ সাল থেকে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে আছেন সংগ্রামী নারী রাজিয়া সরকার৷ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও খাবার সরবরাহ এবং মূল ভূখণ্ডে থেকে তথ্য সরবরাহের কাজ করেন রাজিয়া৷

Razia Sarker, Freiheitskämpferin in 1971, Dinajpore, Bangladesch Datum: 13.11.2009 Eigentumsrecht: Zeenat Rahman, Dinajpore, Bangladesch Eingereicht von: AHM Abdul Hai im Juli 2011
সংগ্রামী নারী রাজিয়া সরকারছবি: Zeenat Rahman

ঢাকার ঘোড়াশালে জন্ম রাজিয়া সরকারের৷ পিতা রইসুদ্দিন আহমেদ এবং মাতা জগত বেগম৷ তরুণ বয়স থেকেই বাম আদর্শে উজ্জীবিত রাজিয়া৷ ১৯৬০ সালে বৈবাহিক সূত্রে দিনাজপুর চলে আসেন৷ তবে বিয়ের পরও শুধু ঘর-সংসারের চার সীমানায় আটকে ছিলেন না তিনি৷ ১৯৬২ সাল থেকে ভাসানী ন্যাপ এর সাথে কাজ করেন৷ পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন৷ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে ঘিরে আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে ছিলেন৷ এছাড়া পূর্ববাংলা স্বাধীন করার জন্য মাওলানা ভাসানীর ডাক ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, পূর্ববাংলা স্বাধীন করো' এই স্লোগানে সাড়া দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন রাজিয়া৷

স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে কালিয়াগঞ্জ অঞ্চলে জুন মাস পর্যন্ত অবস্থান করেন তিনি৷ সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করতেন এই সাহসী নারী৷ মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সংরক্ষণ ও খাবার সরবরাহ করতেন৷ তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে লুকিয়ে রেখে রাতের আঁধারে ভারতে পাঠাতেন প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য৷ রাজিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের কথা জানার পর কেরোসিন ঢেলে তাঁদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় পাক সেনা ও তাদের দোসররা৷ যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে ফিরে নিজের সাজানো-গোছানো সংসারের কিছুই পাননি রাজিয়া৷ এমনকি বাড়ির দরজা, জানালাও অবশিষ্ট ছিল না৷ ছিল শুধু ছাদ আর মেঝে৷

বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত ভাষণ...ছবি: bdnews24

কালিয়াগঞ্জে কর্মরত অবস্থায় রণকৌশল হিসেবে রাজিয়া এবং তাঁর কলেজ শিক্ষক স্বামী যুদ্ধ পরিস্থিতির মাঝেও গাইবান্ধায় পাড়ি জমান৷ সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলেজে শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে থাকেন রাজিয়ার স্বামী৷ এর পেছনে একমাত্র লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা যেহেতু শহরে প্রবেশ করতে পারতো না, তাই শিক্ষকের ভূমিকায় শহরে বাস করে পাক সেনাদের গতিবিধি এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করা৷ একদিকে গোয়েন্দাগিরি এবং অন্যদিকে সংবাদকর্মীর দায়িত্ব পালন করতেন রাজিয়া এবং তাঁর স্বামী৷

এই ভয়ংকর গোপনীয় কাজের কথা ডয়চে ভেলেকে জানালেন রাজিয়া সরকার৷ তিনি বলেন, ‘‘কালিয়াগঞ্জে কাজ করার সময় আমার স্বামীকে তাঁর ছাত্ররা বলল যে, স্যার আপনি যেহেতু রাজনীতিতে প্রকাশ্য ছিলেন না৷ ফলে আপনি গাইবান্ধা শহরে গিয়ে শিক্ষকতা চালিয়ে যান৷ এর ফলে আমরা সেখান থেকে আপনার মাধ্যমে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সব খবর পাবো৷ ফলে জুন মাসের শেষের দিকে আমরা সপরিবারে গাইবান্ধা চলে আসি৷ সেখান থেকে প্রতিদিন সারাদিনের খবরা খবর আমরা চিঠিতে কিংবা কোন কাগজের টুকরায় লিখে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে আসতাম৷ মুক্তিযোদ্ধারা এসে তাদের সুবিধামতো সময়ে তা নিয়ে যেতো৷ আবার তারাও তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানার জন্য কাগজে লিখে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে যেতো, আমরা সেখান থেকে নিয়ে আসতাম এবং সেগুলোর জবাব দিতাম৷''

সেই সব হারিয়ে যাওয়া মানুষরা...ছবি: bdnews24

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয়মাসের অসংখ্য ঘটনার মধ্য থেকে একটি বিশেষ ঘটনার কথা জানালেন রাজিয়া৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘গাইবান্ধায় আমাদের সামনের বাড়ির একজন ছাত্র কেবল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ শেষ করে আসল৷ কিন্তু এরপরই যুদ্ধ শুরু হলে সে যুদ্ধে চলে যায়৷ এদিকে, সেই বাসার উপর চোখ পড়ে পাক সেনাদের৷ তারা কয়েকদিন সেই বাড়িতে অভিযান চালানোর জন্য আসে৷ আমি বিষয়টি টের পেয়ে পাক সেনারা আসলেই আমি বাসা থেকে বের হয়ে তাদের সাথে আধা উর্দু আধা বাংলা মিশিয়ে কথা বলা শুরু করতাম৷ আমারও যে সর্বনাশ হতে পারে সেই কথা আমার একটুও মাথায় আসতো না৷ সেসময় আমার লক্ষ্য ছিল শুধু ঐ বাড়ির পরিবারটিকে বাঁচানো৷ তাই আমি পাক সেনাদের আমার বাসায় বসতে দিতাম, চা খাওয়াতাম৷ তারা যখন আমাকে জিজ্ঞেস করতো ঐ পরিবার সম্পর্কে তখন বলতাম যে, ঐ বাড়িতে শুধু এক বুড়ি মা ছাড়া আর কেউ নেই৷ প্রায় তিন চার দিন আমি পাক সেনাদের সাথে এভাবে ভাব জমিয়ে ঐ পরিবারটিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম৷''

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও দেশ ও জাতির কাজে নিবেদিত রয়েছেন রাজিয়া সরকার৷ মহিলা পরিষদ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে কাজ করছেন তিনি৷ সমাজের নির্যাতিত নারী-শিশুর অধিকার রক্ষায় সোচ্চার সাহসী নারী রাজিয়া সরকার৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ