ভারতে যতই পাকিস্তানকে ‘উচিত শিক্ষা' দেওয়ার দাবি উঠুক, লোকে যতই যুদ্ধ দেখতে মরিয়া হোক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের পথে পা বাড়াবেন না৷
বিজ্ঞাপন
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে কিছু রসিকতা খুব চালু৷ যেমন ভারত যখন চাঁদে মহাকাশচারী পাঠাবার কথা ভাবছে, প্রতিবেশী পাকিস্তান তখন ভাবছে, কীভাবে কাশ্মীরে আরও কটা ফিদায়েঁ জঙ্গি পাঠানো যায়! অথবা ভারত সারা পৃথিবীতে দক্ষ তথ্য-প্রযুক্তি পেশাদার জোগান দেয়, আর পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশগুলোতে জোগান দেয় সন্ত্রাসবাদ! ভারতের টেক-স্যাভি প্রধানমন্ত্রী হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইত্যাদি ভার্চুয়াল সামাজিক অঙ্গনে নিয়মিত যাতায়াত করেন৷ তিনিও নিশ্চয়ই এই রসিকতাগুলো সময় সময় পেয়ে থাকেন৷ কারণ সদ্য এক ভাষণে মোদী এই রসিকতার ভাষাতেই খোঁচা মারলেন পাকিস্তানকে৷ কেরলের কোঝিকোড়ে বিজেপি-র দলীয় সমাবেশে মোদী সংঘ পরিবারের তাত্ত্বিক নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায়কে উদ্বৃত করে বললেন, ভারতীয় মুসলিমদের ঘৃণাও নয়, তোষণও নয়৷ বরং তাদের জনজীবনের মূল ধারায় সামিল করতে হবে৷ বিকাশের অংশ করতে হবে৷ ভারত-পাকিস্তান বিরোধের সূত্র ধরে দেশে যাতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথাও বললেন নরেন্দ্র মোদী৷
শুনে মনে হচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ঠেকাতে, দেশে ফেনিয়ে ওঠা যুদ্ধবাদী উত্তেজনা প্রশমনে তৎপর হয়েছেন খোদ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী৷ নাগরিকদের একাংশের মধ্যে যে যুদ্ধ যুদ্ধ রব উঠেছে, মিডিয়ার একাংশ যেভাবে সেই গণ হিস্টিরিয়ায় ইন্ধন জোগাচ্ছে, তার একেবারে বিপরীত মেরুতে ভারতের সরকারপ্রধানের এখনকার অবস্থান৷ দেশের প্রাক্তন সেনাকর্তারা কেউ যেখানে ভারতীয় ফিদায়েঁ গেরিলা বাহিনী তৈরির বালখিল্য পরামর্শ দিচ্ছেন, বা ইসরায়েলি কায়দায় ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক', অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের সূক্ষ্মতায় সামরিক হামলার নিদান হাঁকছেন, সেখানে হিন্দুত্ববাদী সরকারের প্রধান সম্পূর্ণ উলটো কথা বলছেন! অবশ্য কোঝিকোড়ের দলীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন যে পাঠানকোট এবং উরি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলার উপযুক্ত জবাব ভারতীয় সেনাবাহিনীই দেবে৷ কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথাগত প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘর্ষে ভারত যে যাবে না, এটা প্রধানমন্ত্রীর হাবেভাবে পরিষ্কার৷ যাঁরা এতদিন ভাবছিলেন পঞ্জাব এবং উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটা যুদ্ধ বাধিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা তোলার চেষ্টা করবে ক্ষমতাসীন বিজেপি, তাঁরাই বরং একটু হকচকিয়ে গেছেন৷
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
ছবি: Reuters
19 ছবি1 | 19
নরেন্দ্র মোদী কেন যুদ্ধ চাইছেন না? কারণটা খুব পরিষ্কার৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা ভারত আগেই জিতে বসে আছে৷ সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী এতটা শান্ত থাকতে পারছেন৷ উলটে দেশের মধ্যে যুদ্ধবাদী উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছেন৷ কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে অযথা একটা সামরিক সংঘর্ষের মধ্যে গিয়ে অর্থক্ষয়, লোকক্ষয়ের কারণ তিনি দেখছেন না৷ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাকিস্তান এবার কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিক ইস্যু করে তুলতে মরিয়া ছিল৷ ভারতের সঙ্গে লাগাতার বিরোধে কাশ্মীরই পাকিস্তানের একমাত্র হাতিয়ার এবং জাতিসংঘের নির্ধারিত অধিবেশনের মাসখানেক আগে থেকেই সেই হাতিয়ারে শান পড়ছিল৷ ভারতীয় কাশ্মীরে তথাকথিত জনরোষে যে নিয়মিত মদত জোগায় পাকিস্তান, এটা আজ আর কোনো গোপন ঘটনা না৷ গত এক মাস ধরে কাশ্মীরে জনরোষের আগুনে তাই নিয়ম করে ইন্ধন জোগানো হয়েছে৷ পরিণতিতে বহু মানুষ মারা গেছেন, বহু জখম, ভারতীয় সেনার ছররা গুলিতে অনেকেই অন্ধ হয়ে গেছেন৷ এই গণ আন্দোলনকেই জাতিসংঘের ভাষণে তুলে ধরে ভারতীয় সেনা বর্বরতার দিকে আন্তর্জাতিক নজর ফেরাতে চেয়েছিল পাকিস্তান৷ এবং শেষ কৌশল হিসেবে ঘটানো হলো উরি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা প্রত্যাঘাত করবে ভারত, এমনটাই আশা ছিল পাকিস্তানের৷
অবশ্য রণকৌশল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনও হতে পারে যে উরি হামলা পাকিস্তানের পরিকল্পনায় ছিল না৷ জঙ্গিদের সমস্ত উৎপাতের ওপর যেহেতু নিয়ন্ত্রণ থাকে না, হতেই পারে যে জঙ্গিরা একক সিদ্ধান্তে এই হামলা করেছে, যা কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে পাকিস্তানের যাবতীয় কাশ্মীর-প্রস্তুতিতে৷ যে কারণে জাতিসংঘের অধিবেশন সেরে ফেরার পথে লন্ডনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের সামনে অমন একটা বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যে, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাসন্ত্রাসের বদলা নিতেই সম্ভবত উরি হামলা৷ বোঝাতে চেয়েছেন, এ হলো ভারতের কর্মফল৷ কিন্তু তার আগেই যা হওয়ার হয়ে গেছে৷জাতিসংঘে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে শোরগোল ফেলা দূরে থাক, কার্যত নিঃসঙ্গ হয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শরিফ৷ কারণ বাকি সব সদস্য দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ভারতকে যেভাবে লাগাতার জঙ্গি সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, সেই নিয়ে৷ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মত গঠিত হয়েছে দ্রুত৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে চেয়েছে৷ অ্যামেরিকায় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও পাকিস্তানের প্রশ্নে তারা এক জায়গায় এসেছে৷ দুই শিবিরের দুই সেনেটর মার্কিন প্রতিনিধিসভায় যৌথ প্রস্তাব এনেছেন, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের মদতদাতা দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হোক৷ দক্ষিণ এশিয়ার সব প্রতিবেশী দেশ, বিশেষত বাংলাদেশ জঙ্গি হামলার নিন্দা করে ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ এমনকি চীনও পাকিস্তান আক্রান্ত হলে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে জঙ্গিপনার নিন্দা করেছে৷
ভারতে পাকিস্তানি যে ৭ তারকাকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে, এর জের ধরে এবার সাতজন পাকিস্তানি তারকাকে ভারতে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা৷ অবিলম্বে তাঁদের ভারত ছাড়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
ফাওয়াদ খান
বর্তমানে বলিউডে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাকিস্তানি তারকা ফাওয়াদ খান৷ ২০১৪ সালে ‘খুবসুরত’ মুভির মাধ্যমে তিনি বলিউডে ঘাঁটি গাড়েন৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
মীরা
পাকিস্তানি অভিনেত্রী মীরা যখন বলিউডে পদার্পণ করলেন, তখন তাঁকে নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল৷ বলিউডে তাঁর সবশেষ মুভি ‘ভড়াস’, যা ২০১৩ সালে মুক্তি পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বীণা মালিক
বীণা মালিক বিগ বস-এর মাধ্যমে ভারতীয় মিডিয়ায় আলোচনায় আসেন৷ এরপর তিনি বলিউডে প্রবেশ করেন৷ ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’ তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি৷ কিন্তু দর্শক তাঁকে ভালোভাবে নেয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
আতিফ আসলাম
গায়ক অভিজিতসহ বলিউডের বেশ কিছু ব্যক্তি বরাবরই আতিফ আসলামের বিরোধিতা করে আসছেন৷ কিন্তু এরপরই বলিউডের বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের সুপারহিট গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আতিফ আসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
জাবেদ শেখ
‘জান্নাত’, ‘যুবরাজ, ‘তামাশা’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে জায়গা করে নিয়েছেন জাবেদ শেখ৷
ছবি: DW/T. Saeed
আলী জাফর
‘তেরে বিন লাদেন’ ছবির মাধ্যমে দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন আলী জাফর৷ এরপর বেশ কিছু হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/W. Gashroo
রাহাত ফাতেহ আলী খান
‘তুঝে দেখ দেখ সোনা’ রাহাত ফাতেহ আলী খানের অন্যতম জনপ্রিয় গান৷ এরপরও বহু হিন্দি চলচিত্রে অনেক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি শ্রোতাদের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Dunham
7 ছবি1 | 7
কিন্তু কে আক্রমণ করবে পাকিস্তানকে? ভারত নয়৷ নরেন্দ্র মোদী নিশ্চিত মরার ওপর খাঁড়ার ঘা দিতে চাইবেন না৷ কারণ পাকিস্তানকে ফের আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে করার কাজে ভারত সফল৷ ওদিকে বালোচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন জানিয়ে পাকিস্তানকে আরও কোণঠাসা করার চেষ্টাও শুরু হয়েছে৷ পুরনো বন্ধু আফগানিস্তানকে নিয়ে ভারতের চিন্তা নেই৷ বরং ভারত এখন বেশি মনোযোগী নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর খুঁজে বের করতে৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কোনো দরকারই নেই ভারতের৷ দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্র নির্মাণ সেনার মতো উগ্রবাদী সংগঠন পাকিস্তানি শিল্পীদের বিরুদ্ধে জিগির তুলবে, যেমন এর আগে হয়েছে গজল শিল্পী গুলাম আলির ক্ষেত্রে৷ বা সিন্ধু নদের জল ভাগ করা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি উঠবে৷ সংবাদমাধ্যমের একাংশ যুদ্ধ যুদ্ধ বলে বাজার গরম করবে৷ গণ উত্তেজনার গরম হাওয়া বেরিয়ে যেতে দেওয়ার জন্যে সেটুকু অসভ্যতা করতে দেবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷ কিন্তু যুদ্ধ করবে না৷ করার কোনো কারণ নেই৷
কাশ্মীর সমস্যার সমাধান কি সম্ভব?
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সহিংসতা আবারো এই প্রশ্নকে উস্কে দিয়েছে৷ কি চায় কাশ্মীরের জনগণ? আর ভারত সরকার কি সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে? কাশ্মীরের বর্তমান সংকট নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/T.Mustafa
সংঘর্ষের সূত্রপাত
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৮ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথিত সংঘর্ষে স্থানীয় হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে৷ বুরহান নিহত হওয়ার প্রতিবাদে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা সড়কে নেমে নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর ইট পাটকেল ছুড়লে পাল্টা গুলি চলে তাদের ওপর৷ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪০ এরও বেশি নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Yasin
কারফিউয়ে জনজীবন অচল
কাশ্মীরি নেতাদের বনধের ডাকে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকার জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ কারফিউ জারি করেও নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না প্রতিবাদকারীদের৷ অন্যদিকে, খাবার ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে৷ মোবাইল ও ইন্টারনেট এবং ট্রেন সার্ভিস বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
আরো সেনা মোতায়েন
সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে চলতি সপ্তাহে ওই অঞ্চলে বাড়তি ৮শ’ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
নিহতদের বেশিরভাগই তরুণ
সাম্প্রতিক সহিংসতার নিহত ৪৪ জনের মধ্যে বেশিরভাগই বয়সে তরুণ৷ তাদের বয়স ১৬ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে৷ আহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে শতাধিক মানুষ
চিকিৎসকদের আশঙ্কা, কারফিউয়ের কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং রক্তের অভাবে আরো অনেকের মৃত্যু হতে পারে৷ প্রায় শতাধিক মানুষের চোখে শটগানের গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন তারা৷ দ্রুত চিকিৎসা না হলে তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন৷
ছবি: Reuters/D.Ismail
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক
কাশ্মীরে চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান অভিযোগ করায় দু’পক্ষের সম্পর্ক আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ভারত সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে৷ ইসলামাবাদে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যাবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Information Bureau
চাপে মোদী সরকার
কাশ্মীর পরিস্থিতির কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও পড়তে পারেন বলে সরকারের একাংশের আশঙ্কা৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, মোদীর পাকিস্তান নীতি নিয়েও৷ নরেন্দ্র মোদী সরকারের শুরুটাই হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির বার্তা দিয়ে৷ পাঠানকোট হামলার পর পরিস্থিতি বদলে যায়৷ আর কাশ্মীর ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিন্দায় চাপে পড়েছে মোদী সরকার৷
ছবি: DW/J. Akhtar
কাশ্মীর কার ভূখণ্ড?
ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে৷ দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে ওই অঞ্চলটি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে আছে পরমাণু শক্তিধর এই দুই রাষ্ট্র৷ এই সময়ের মাঝে দুটি দেশই দুইবার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
যে কারণে সহিংসতা
মুসলিম অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাশ্মীরের স্বাধীনতার লক্ষ্যে অস্ত্র তুলে নেয়৷ এরপর থেকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর পরিস্থিতি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Tauseef
9 ছবি1 | 9
শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা
দেবারতি গুহ
আপনার কী মনে হয়? ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কি আসন্ন? লিখুন নীচের ঘরে৷