প্রতিশ্রুতি দিলো বিশ্বের সাতটি ধনী দেশ। জি-৭ বৈঠকে তারা বলেছে, যতদিন লাগে লাগুক, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা ইউক্রেনের পাশে থাকবে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ''আমরা ইউক্রেনকে আর্থিক, মানবিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাব। যতদিন দরকার, ততদিন দেব।''
ওই বিবৃতিতে জি-৭ দেশগুলি বলেছে, ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশস্য অন্যত্র যেতে দিচ্ছে না রাশিয়া। তাদের এই অবরোধ তুলে নিতে হবে। এই দেশগুলি জানিয়েছে, ''ইউক্রেনে রাশিয়া যে বর্বরোচিত, অন্যায্য, বেআইনি যুদ্ধ করছে এবং বেলারুশ এভাবে তাদের সাহায্য করছে, তাতে আমরা স্তম্ভিত।''
এই জি-৭ দেশগুলি হলো, ক্যানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও অ্যামেরিকা।
রাশিয়ার তেল নিয়ে
জি-৭ দেশগুলি রাশিয়ার তেলের দামের সীমা বেঁধে দিতে চাইছে। এই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জি-৭ দেশগুলি চায়, রাশিয়া যেন তেল, কয়লা, গ্যাস বিক্রি করে খুব বেশি অর্থ না পায়।
রূপকথার দুর্গে জি সেভেন সম্মেলন
২৬ জুন দ্বিতীয়বারের মতো জি সেভেন শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন হচ্ছে দক্ষিণ জার্মানির আলপাইন অঞ্চলে এলমাউ দুর্গে৷ পাঁচ তারকা এই দু্র্গের বিশেষত্ব কী? চলুন জানা যাক৷
ছবি: Marco Müller/DW
দুর্দান্ত এক অবস্থান
এমন এক স্থানে এই দুর্গের অবস্থান, এখানে বারবার ফিরে আসা যায়৷ শ্লোস এলমাউ বা এলমাউ দুর্গ জার্মানি-অস্ট্রিয়া সীমান্তে মিউনিখ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত৷ আল্পস অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর এলাকাগুলোর একটি এটি৷ প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থানের কারণে যারা নীরবতা খোঁজেন, তাদের জন্য এই দুর্গ একটি চমৎকার স্থান৷
ছবি: Marco Müller/DW
রোদ না থাকলেও চমৎকার
যখন সূর্যালোক থাকে না, তখনও এই দুর্গের চারপাশ উজ্জ্বল রঙে আচ্ছাদিত থাকে৷ বিস্তৃত এই এলাকায় সর্বত্রই সানবেডে ছাতার নীচে শুয়ে প্রকৃতি উপ৷ভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে৷ মূল ভবনটির নাম দেয়া হয়েছে হাইডঅ্যাওয়ে, অর্থাৎ নিরালা৷ কিন্তু নীরবতা খুঁজে নেয়ার মতো অনেক জায়গাই পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে৷
ছবি: Marco Müller/DW
ভিড়ের ভয় নেই
দ্য হাইডঅ্যাওয়ে নামটা বেশ যুৎসই হয়েছে৷ হোটেলটির মাত্র ৩৫ শতাংশ জায়গা ভাড়া দেয়া হয়৷ এত বড় হোটেলে এত কম জায়গা ভাড়া দেয়ার ঘটনা বেশ বিরল৷ হোটেলের বেশিরভাগ জায়গাই পাবলিক প্লেস৷ অর্থাৎ থাকার জায়গা শতভাগ বুকিং থাকলেও কখনই অতিরিক্ত ভিড় হওয়ার আশঙ্কা নেই৷ পাবলিক স্পেসের মধ্যে রয়েছে লাউঞ্জ, লাইব্রেরি, বইয়ের দোকান, পোশাকের দোকান এবং আরো নানা কিছু৷
ছবি: Marco Müller/DW
সংগীতের বিনিময়ে হোটেলবাস
শ্লোস এলমাউ এর একটি কনসার্ট হলও রয়েছে, যেখানে সঙ্গীতশিল্পীরা বছরে দুইশটিরও বেশি কনসার্ট আয়োজন করেন৷ ফলে সংখ্যার দিক দিয়ে জার্মানির সবচেয়ে বড় কনসার্ট আয়োজকদের মধ্যে একটি এই হোটেল৷ মজার ব্যাপার হলো, যেসব সংগীতশিল্পী এখানে পারফর্ম করেন, তাদের কোনো সম্মানি দেয়া হয় না৷ বরং সংগীত পরিবেশনের বিনিময়ে তারা বিনামূল্যে হোটেলটিতে থাকতে পারেন৷ অতিথিরাও বিনামূল্যেই এসব কনসার্ট উপভোগ করেত পারেন৷
ছবি: Marco Müller/DW
কাঠের বেঞ্চে ইতিহাস
এর আগে ২০১৫ সালে এই দুর্গ হোটেলে জি সেভেন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ তখন এই ছবিটি বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়ে পড়ে৷ তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কিছু একটা বোঝাচ্ছেন এবং একটি কাঠের বেঞ্চে বসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা খুব মনোযোগ দিয়ে তা শুনছেন৷ এরপর থেকে হোটেলের সামনের এই বেঞ্চটি ফটোশ্যুটের এক জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/M. Kappeler
সবখানেই হাতি
শ্লোস এলমাউয়ে সব জায়গাতেই হাতির উপস্থিতি৷ কাপড় থেকে শুরু করে সবকিছুতেই হাতি আর হাতি৷ এর পেছনে রয়েছে মজার এক গল্প৷ ভারতে থাকার সময় হোটেলের মালিক ডিটমার ম্যুলার-এলমাউ একটি দোকানের কোনে হাতির ছবি আঁকা একটি কাপড় পড়ে থাকতে দেখেন৷ ভারতীয় সংস্কৃতিতে হাতি সুবিচার এবং স্মৃতিশক্তির প্রতীক, এটা তিনি জানতেন৷ পরে হোটেলের প্রতীক হিসাবেও তিনি হাতিকেই গ্রহণ করেন৷
ছবি: Marco Müller/DW
এত ছোট টেবিল কেন?
এলমাউ দুর্গ হোটেলে প্রত্যেকের পছন্দ অনুযায়ী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ মোট নয়টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে হোটেলে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো মিকেলিন স্টারড লুচে দি’ওরো, যার প্রধান শেফ ক্রিস্টোফ রাইনার৷ ১২ পদের খাবার নিয়ে এই আয়োজন করা হয়৷ প্রতিটি টেবিলের পাশে ছোট একটি টেবিল রয়েছে৷ এসব টেবিলে কে বসে? আপনার ব্যাগ৷
ছবি: Marco Müller/DW
স্পা এর সুযোগ অফুরন্ত
এই গম্বুজাকৃতির কক্ষ দেখে স্পার্টান মনে হলেও এই ওরিয়েন্টাল হাম্মাম আসলে বেশ আধুনিক৷ ৫০০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের স্পায়ের মূল কক্ষ এটি৷ এছাড়া চারটি চিকিৎসাকক্ষ, তিনটি গম্বুজাকৃতি কক্ষ, দুটো বাষ্পীয় স্নানাগার, একটি ওরিয়েন্টাল টি লাউঞ্জ এবং একটি মাসাজ চিকিৎসাকেন্দ্রও রয়েছে৷ জি সেভেন সম্মেলনে বৈশ্বিক রাজনীতির চাপের মধ্যে এখানে একটু নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেতেই পারেন বিশ্বনেতারা৷
ছবি: Marco Müller/DW
হোটেলের মধ্যে হোটেল
২০১৫ সালে জি সেভেন সম্মেলনের জন্য হোটেলের মধ্যে দ্য রিট্রিট নামে আরেকটি হোটেল চালু করে শ্লোস এলমাউ৷ দ্য হাইডঅ্যাওয়ে থেকে ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত এটি৷ এতে রয়েছে ৪৭টি সুইট৷ বিশ্ব নেতারা এখানে অন্য অতিথিদের চেয়ে আলাদা থেকে নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারেন৷ জি সেভেনে কিছু সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং তাদের সহযোগীরা দ্য রিট্রিটে কক্ষ বরাদ্দ পান৷ বাকিদের অবশ্য দ্য হাইডঅ্যাওয়েতেই থাকতে হয়৷
ছবি: Marco Müller/DW
এমন দৃশ্য থাকতে টিভির দরকার কী!
প্রতিটি বেডরুমের তিন পাশেই মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত কাঁচের দরজা৷ ফলে যেকোনো রুম থেকেই ভেটারশ্টাইন পর্বত এবং উপত্যকার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷ এমন কক্ষে বাস করলে কি টিভির প্রয়োজন হয়? অবশ্য তারপরও সব কক্ষেই একটি করে টিভি রয়েছে৷ সম্মেলনের জন্য বরাদ্দ প্রতিটি কক্ষে একটি লিভিং রুম, একটি বাড়তি ছোট রুম এবং হলওয়ে রয়েছে৷
ছবি: Marco Müller/DW
10 ছবি1 | 10
অ্যামেরিকা বৈঠকে জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পকে টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। তাহলে রাশিয়ার সেনার কার্যকারিতা কমবে।
এক কর্মকর্তা সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, জি-৭ দেশগুলির উদ্দেশ্য দুইটি। প্রথমত, রাশিয়া যাতে তেল-গ্যাস-কয়লা বিক্রি করে খুব বেশি আয় না করতে পারে। দ্বিতীয়ত, এই লড়াইয়ের প্রতিক্রিয়া যেন তাদের ও অন্য দেশের উপর খুব বেশি না পড়ে।
শলৎসের বক্তব্য
জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস জানিয়েছেন, ইউক্রেনে হামলার আগে রাশিয়ার সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিল, সেখানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তার মতে, রাশিয়া সব নিয়ম, সব চুক্তি ভেঙেছে। কিন্তু সহিংসতার মাধ্যমে সীমান্ত বদল করা যায় না। জি-৭ দেশগুলি প্রয়োজনাীয় সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত বলেও শলৎস জানিয়েছেন।
জেলেনস্কির ভাষণ
ভিডিওর মাধ্যমে জি-৭ বৈঠকে ভাষণ দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি জি-৭-এর কাছ থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, খাদ্যশস্য রপ্তানি করার সুযোগ করে দেয়ার অনুরোধ করেছেন। তিনি রাশিয়ার উপর আরো নিষেধাজ্ঞাও চেয়েছেন।