যুদ্ধ আর সহিংসতার চেয়ে দূষণে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে
২০ অক্টোবর ২০১৭
যুদ্ধ, দুর্যোগ আর ক্ষুধার চেয়ে এখন প্রতি বছর দূষণে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে৷ এমনকি এসব কারণে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে বলেও এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে৷ মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি ঘটছে মাত্র দুটি দেশে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ‘দা ল্যান্সেট মেডিকেল জার্নাল-'এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ধূমপান, ক্ষুধা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে পরিবেশ দূষণে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে৷
গবেষণাটি বলছে, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী যে ৯০ লাখ মানুষ অকালমৃত্যুর মুখে পড়ে তাদের প্রতি ছয় জনের একজন বায়ু বা পানি বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগের কারণে মারা যায়৷
এর মধ্যে বায়ু দূষণ ৬৫ লাখ ও পানি দূষণ ১৮ লাখ মৃত্যুর জন্য দায়ী৷
গবেষকদের মতে, যে ৯০ লাখের অকালমৃত্যুর এ সংখ্যা ধূমপানের কারণে মৃত্যুর চেয়ে দেড় গুণ বেশি এবং এইডস, যক্ষা ও ম্যালেরিয়ায় মোট মৃত্যুর চেয়ে তিনগুণ বেশি৷ মৃত্যুর এই সংখ্যা যুদ্ধ বা অন্যান্য সহিংসতায় নিহতের সংখ্যার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি৷
দূষণজনিত কারণে শতকরা ৯২ ভাগ মৃত্যু ঘটছে স্বল্প বা মধ্য-আয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ এর মধ্যে তালিকার শীর্ষে আছে ভারত, ২৫ লাখ এবং তারপরই চীনে ১৮ লাখ৷
অর্থনৈতিক লোকসান
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দূষণের কারণে মৃত্যু, অসুস্থতা ও কল্যাণ তহবিলের পেছনে বর্তমানে ব্যাপক ৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা বিশ্ব অর্থনীতির শতকরা ৬ দশমিক ২ ভাগ ব্যয় হচ্ছে৷
গবেষনার লেখক ও গ্লোবাল পলিউশন ওয়াচডগ পিওর আর্থ এর প্রধান রিচার্ড ফুলার বলেন, ‘মানুষ কি বুঝতে পারে না যে দূষণ কী পরিমাণ অর্থনীতির ক্ষতি করে৷ অসুস্থ বা মৃত ব্যক্তিরা অর্থনীতিতে কোন অবদান রাখতে পারে না৷ উল্টো তাদেরই দেখাশোনা করতে হয়৷'
বহুমাত্রিক দূষণের কবলে কলকাতা
‘রক্তে বিষ মিশে আছে প্রিয়তমা’— কবিতার লাইন সত্যি হয়েছে৷ দিল্লি বা বেঙ্গালুরুর তুলনায় দূষণ অনেকটাই কম কলকাতায়৷ তবুও আজ বহুমাত্রিক দূষণের কবলে মিছিলনগরী৷
ছবি: DW/Payel Samanta
সভ্যতার বিষবাষ্প
নিঃশ্বাসের সঙ্গে রোজ নানা ধরণের বিষাক্ত উপাদান গ্রহণ করেন কলকাতার মানুষ৷ বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেশি৷ শহর ও শহরতলির কারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া বাড়াচ্ছে হাঁপানি ও ফুসফুসের অসুখ৷গত ৫ জুন ছিল আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস৷ এই দিনে কলকাতা কি কিছু শিখল?
ছবি: DW/Payel Samanta
জলে যখন মারণ রোগ
কলকাতার দূষণের নেপথ্যে অপরিকল্পিত শহর হিসেবে তার গড়ে ওঠা৷ লিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং, ক্রোম-লেদার প্রসেসিং এবং ইলেকট্রনিক ওয়েস্ট ডাম্পিংয়ের বর্জ্যে দূষিত খাল-বিল৷ জলাশয় বুজিয়ে চলছে নগরায়ন৷
ছবি: DW/Payel Samanta
বিপদে গঙ্গা
রাসায়নিক বর্জ্য দূষিত করে গঙ্গার মতো নদীকেও৷ পাশাপাশি বিসর্জনের প্রতিমা বা ফুল-মালায় হচ্ছে জলদূষণ৷ বিপন্ন ছোট মাছ, শামুক এবং বকেরা৷
ছবি: DW/Payel Samanta
ছিঃ ছিঃ এত্তা জঞ্জাল!
সুপ্রিম কোর্টের ঘোষণা অনুযায়ী, কলকাতার সবচেয়ে দূষিত এলাকা ট্যাংরা-তিলজলা৷ তবে শহরের যত্রতত্র এমন ডাঁই করা আবর্জনা দেখলে মনে হবে, সারা শহরটাই দূষিত! ঘুমিয়ে কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য প্রশাসন৷
অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখতে এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন ঠেকাতে গাছ লাগানোই সঠিক পন্থা৷ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বরানগরে গাছ লাগানোর কর্মসূচিতে শিশুদের পাশে বড়রা৷
ছবি: DW/Payel Samanta
প্রাণের আরাম
কলকাতায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা দেশের বাকি মহানগরগুলির তুলনায় অনেকটা কম৷ গাড়ি-দূষণের মোকাবিলায় রাজপথে রয়েছে সবুজের সমারোহ৷
ছবি: DW/P. Samanta
দূষণ প্রতিরোধে
যানজটের জন্য থমকে থাকা গাড়ির ধোঁয়া দূ্ষণের মাত্রা বাড়ায়৷ তা রুখতে বিকল্প জ্বালানিনির্ভর যানবাহন রাস্তায় নেমেছে৷ তার অন্যতম এলপিজি চালিত অটো৷
ছবি: DW/Payel Samanta
যত্নের অভাব
কর্তব্যের খাতিরে ব্যস্ত রাস্তার ধারে হয়েছে বৃক্ষরোপণ৷ কিন্তু তার ঠিক মতো দেখভাল হয় না৷ জলের অভাবে ধুঁকছে, শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ৷
ছবি: DW/Payel Samanta
বর্জ্য হইতে সাবধান
হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, অশোধিত কাঁচের যন্ত্রপাতি দূষণ ও সংক্রমণের আকর৷ মাটিতে মিশে যাওয়া জৈব এবং না মিশে যাওয়া অজৈব বস্তুগুলিকে আলাদা রাখাই শ্রেয়৷ আবর্জনা ঘেঁটে যাঁদের জীবিকা নির্বাহ হয়, তাঁদের ভালো রাখা সবার কর্তব্য৷
‘দা ল্যান্সেট' এর সম্পাদক পামেলা দাস ও রিচার্ড হর্টন বলেন, এটি একটি উদ্বেগপূর্ণ সময়, স্কট প্রুয়েটের নেতৃত্বে মার্কিন সরকারের যে পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা কাজ করছে তা পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়মকানুনগুলোকে উপেক্ষা করে৷
ইতিমধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান' বাতিল করা হবে বলে চলতি মাসে ঘোষণা দিয়েছেন প্রুয়েট৷