1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘যুদ্ধ থামলেও ইরান কিন্তু পারমাণবিক প্রকল্প থেকে সরে আসেনি’

২৭ জুন ২০২৫

আপাতত থেমেছে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ। কিন্তু মূল সমস্যার কি সমাধান হলো? এই যুদ্ধের কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্বব্যাপী? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির।

ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রছবি: imago images/ITAR-TASS

ডয়চে ভেলে : ইরান-ইসরায়েলের যে যুদ্ধটি বিশ্ব দেখলো, সেটি কি এড়ানো যেত না?

এম. হুমায়ুন কবির : হ্যাঁ, এড়ানো তো যেতো। কারণ, যে যুক্তিতে যুদ্ধটা করা বা শুরু হয়েছে, এর পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্ত ছিল বলে তো জানা নেই। এমন কোনো তথ্য তো দেখিনি যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে খুব বেশি অগ্রসর হয়েছে বা এই ধরনের কিছু। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গত ২০ বছর ধরেই বলছেন, আমি যখন জাতিসংঘে কাজ করেছি, তখনও দেখেছি তিনি বলছেন, এই যে দুই মাস, তিন মাস বা এক বছরের মধ্যে ইরান পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলবে। এটা নিয়ে তিনি এক ধরনের প্রচারণা চালাতেন। এবারও কিন্তু তিনি সেই ধরনের একটা যুক্তি ধরেই আক্রমণটা শুরু করলেন। আমার বিবেচনায় বা অনেকেই যেটা মনে করেন, আন্তর্জাতিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ পরিচালনা করেছেন।

এই যুদ্ধের কী ধরনের প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বে?

একটা প্রভাব তো পড়ছেই। আমরা যেটা মনে করি, প্রত্যেকটা দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে হবে। কোনো সমস্যা থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এগুলো তো আন্তর্জাতিক রীতিনীতির অংশ। জাতিসংঘের চার্টারেও সেরকম কথা বলা আছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব আছে৷ আমরা জাতিসংঘের চার্টারের মধ্যে যে আনুগত্য দেখাই, সেটার ভিত্তিতেই যেন আমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করি। কিন্তু ইরানের ক্ষেত্রে যেটা ঘটলো, সেটা জাতিসংঘের চার্টার বলুন বা আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন বলুন, এগুলো ভেঙে ইসরায়েলের মনে হয়েছে এবং আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতেই তারা একটা আক্রমণ চালিয়েছে। এইটা যদি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা যেটাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলি, সেটার জন্য বিপদ আসন্ন। কারণ, যার যখনই খুশি হবে, অন্য দেশের উপর আক্রমন করে বসতে পারে। যে-কোনো যুক্তিতেই সেটা করতে পারে। ইসরায়েলের ইরানের উপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে এবার যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো এটা কোনো ভালো কথা নয়। আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। আগামী দিনে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার ইউরোপীয় মিত্রদের যে অবস্থান, তাতে ভবিষ্যতেও এই ধরনের যুদ্ধ আরো দেখা যেতে পারে কিনা...

পারে তো বটেই। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমন করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, সেটাকে অনুসরণ করেই ২০২২ সালে রাশিয়া গিয়ে ইউক্রেনে ঢুকলো। এখন আবার ইসরায়েল ইরানের উপর আক্রমণ পরিচালনা করল। এই দৃষ্টান্তগুলো স্থাপন হয়ে আছে যেহেতু, ফলে এগুলো দেখে অন্যরা যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে তাদের সুবিধা অনুযায়ী অন্য দেশের উপর হামলা পরিচালনা করতে পারে - এমন আশঙ্কা তো থেকেই যাবে।

এই যুদ্ধে মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোর যে অবস্থান, সেটাকে আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

সবগুলো দেশই কিন্তু এই হামলার নিন্দা করেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে তারা কোনো সক্রিয় অবস্থান নেইনি। এটাও ঠিক, আমরা শেষ পর্যন্ত যেটা দেখলাম সেক্ষেত্রে কাতার একটা ভূমিকা পালন করেছে। আমার ধারণা পেছন থেকে ওমানসহ অন্য যে দেশগুলো আছে তারাও একটা ভূমিকা পালন করেছে। তারা সবাই তো একটা ক্ষতির মুখে ছিল। তার কারণ হলো যদি যুদ্ধটা দীর্ঘায়িত হতো তাহলে নিশ্চিতভাবেই উপসারগরীয় দেশগুলো এমনকি সৌদিআরবের মতো দেশেরও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার একটা আশঙ্কা তো ছিলই। কাজেই তারা সকলেই ভীত ছিল। ফলে তারা সবাই চেষ্টা করেছে যুদ্ধটা থামাবার জন্য। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে। তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেনি ঠিকই, কিন্তু তারা কেউই ইসরায়েলের আক্রমণকে সমর্থন করেনি। এখানে তাদেরও অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক কিছু ইস্যু তো আছে। এর মধ্য দিয়ে তারা যেটুকু অবস্থান নিতে পারে, সেটুকু নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে হ্যাঁ, এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে যে, আমরা তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা দেখেছি কিনা৷ দেখিনি। কিন্তু তারা একেবারে কিছুই করেনি, সেটা ভাবাও কিন্তু ঠিক না।

‘রাশিয়া হয়তো এই মুহুর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে হয়ত চায়নি’

This browser does not support the audio element.

বিশ্বের যেসব ক্ষমতাধর দেশ আছে, তারা যে ভূমিকা নিতে পারতো, তাদের অবস্থান আপনি কিভাবে ব্যাখা করবেন?

রাশিয়ার কথা যদি বলি, তারা ইরানের বন্ধু। ইরানের অনেক প্রকল্পে তাদের ভূমিকা আছে। ইরানের সঙ্গে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। তবে এটাও বাস্তবতা- এই মুহুর্তে রাশিয়া-ইউক্রেনে অনেক বেশি যুক্ত হয়ে আছে। তার স্বার্থ ইউক্রেন যুদ্ধে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে সে এই ধরনের আরেক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য আগ্রহ বোধ করেনি বলে আমার মনে হয়। ট্রাম্পের সহযোগিতায় সেখানেও যুদ্ধ থামানোর একটা প্রয়াস আমরা দেখেছি। রাশিয়া এই মুহুর্তে ইরানের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে হয়ত চাইনি। সেজন্য আমরা কূটনৈতিক তৎপরতার বাইরে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে তাদের দেখিনি। চীনাদের ক্ষেতেও তাই। তারা নীতিগতভাবে ইরানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে, কারণ, এই যুদ্ধটা বেশিদিন চললে তাদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হতো। উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে অনেক বেশি তেল আমদানি করে চীন। এজন্য চীনারা সব সময়ই যুদ্ধ থামানোর কথা বলেছে। যদি না থামতো, তাহলে নিশ্চিতভাবে তারা ক্ষতির মুখে পড়তো। এই কারণে তারা এমন কোনো ভূমিকা নেইনি যে, যুদ্ধটা আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে বা বিস্তৃত হতে পারে। এই বাস্তবতার আলোকেই চীন বা রাশিয়ার অবস্থান বুঝতে হবে। এখন হয়ত তারা কিছুটা ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের সীমাবদ্ধতার কথাও আমাদের মানতে হবে।

যুদ্ধ তো মোটামুটি থেমে গেল। পরবর্তীতে এর কী ধরনের প্রভাব আমরা দেখবো?

যুদ্ধটা তো থেমেছে, কিন্তু সমস্যার তো সমাধান হয়নি। কারণ হলো ইরানের যে পারমাণবিক প্রকল্প, যেটার কারণে যুদ্ধটা শুরু, সেটা এখনো বজায় আছে। ইরান আজকেও ঘোষণা করেছে, তারা পারমাণবিক প্রকল্প থেকে সরছে না। এখন তারা না সরলে কী হবে? ফলে আগামী দিনের জন্য চ্যালেঞ্জ আছে। ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সঙ্গে তারা আগামী সপ্তাহে আলোচনায় বসতে চান। ইরান এখনো তার কোনো জবাব দেয়নি। আমার ধারণা তারা একটু সময় নেবে। হয়ত তারা কূটনৈতিক আলোচনায় বসবে। কিন্তু পাশ্চাত্য জগৎ যেভাবে এই সমস্যার সমাধান চাইছে, আমার ধারণা ইরান সেদিকে যাবে না। যদি ইরানকে বেশি চাপাচাপি করা হয়, তাহলে ইরান কোন দিকে যাবে তার একটা নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তারা ইতিমধ্যেই আইএইএ'র সহযোগিতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাদের মজলিস বা পার্লামেন্ট সেটা অনুমোদন করেছে। আমি খুব আশ্চর্য হবো না যদি তাদের উপর চাপ দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তারা এনপিটিতেও তাদের অবস্থান নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে। ভবিষ্যতে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতেও নতুন করে চিন্তা-ভাবনা আসতে পারে। ফলে সমস্যাটার সামাধান হয়েছে বলে মনে করছি না। যুদ্ধটা আপাতত থেমেছে।

এই যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানটা কিভাবে দেখেন? আর বাংলাদেশে কি এর কোনো প্রভাব আছে কিনা...

এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব দেখি না। তবে যুদ্ধটা দীর্ঘায়িত হলে আমাদের উপর প্রভাব পড়তে পারতো। এই মুহুর্ত পর্যন্ত তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। আর বাংলাদেশের অবস্থানের ব্যাপারে নীতিগত অবস্থানের বাইরে তো অন্য কোনো অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। সেটা বাংলাদেশ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকে যেটুকু নেওয়া যায় সেটুকু নিয়েছে। হয়ত আরেকটু সোচ্চার হওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু সরকার হয়ত সেভাবে দেখেনি। সরকার সফটার লাইনটাই ফলো করেছে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ