'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ' বা মধ্যপ্রাচ্যে ‘আঞ্চলিক যুদ্ধ' শুরু হওয়ার শঙ্কা থাকলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে৷ আগেও অনেকবার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ফিরে এসেছে বিশ্ব৷ অচিরেই বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না বলেই মনে হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কয়েক দশক ধরে চলে স্নায়ুযুদ্ধ৷ নাৎসি জার্মানি ও অক্ষশক্তির পরাজয়ের পর পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়ে৷ একপক্ষ পুঁজিবাদী অ্যামেরিকার সঙ্গে, অন্যপক্ষ ঝুঁকে পড়ে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে৷ সোভিয়েত পতনের পর থেকে দীর্ঘদিন অ্যামেরিকা বলতে গেলে একক রাজত্ব চালিয়েছে বিশ্বজুড়ে৷ কিন্তু এখন আবার ফিরে আসছে সেই স্নায়ুযুদ্ধের যুগ৷ তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন৷
জাতীয়তাবাদের আবার পুনরুত্থান ঘটছে পৃথিবীতে৷ এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে সামরিক শাসকেরা নন, হিটলারের মতোই গণতান্ত্রিক উপায়ে বিপুল জনপ্রিয়তার হাত ধরেই নব্য ফ্যাসিবাদীরা আসছেন ক্ষমতায়৷ কিন্তু সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের বদলে উগ্র জাতীয়তাবাদের স্লোগান তুলছেন তারা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডনাল্ড ট্রাম্প, ভারতে নরেন্দ্র মোদি এর জ্বলন্ত উদাহরণ৷
যে ইউরোপ এক শতাব্দীতে দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল, সেই ইউরোপের নানা দেশেও পপুলিস্টদের উত্থান ঘটছে৷ ব্রিটেনের পপুলিস্টরা তো ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যকে বের করেই ছাড়লেন, কেবল সময়ের অপেক্ষা৷ গণতন্ত্রের তেমন একটা তোয়াক্কা না করে ক্ষমতায় থাকা রাশিয়ার পুটিন এবং চীনের শি জিনপিংও রয়েছেন৷
বিপুল পরাক্রমে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব নিয়েছে চীন৷ সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো না হলেও সামরিক শক্তিতে এবং ভূরাজনৈতিক অবস্থানে এশিয়া ও ইউরোপের মাঝখানে অবস্থান করায় রাশিয়াও দারুণভাবে ফিরে এসেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মাঠে৷ বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অর্থনীতিতে উন্নতি করছে, কিন্তু এদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়েও নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
কালে কালে জাতীয়তাবাদ
কোনো দেশ বা জাতির প্রতি আনুগত্য যেমন হতে পারে জাতীয়তাবাদ, তেমনি যে কোনো কিছুর প্রতি আনুগত্য বা বিরাগও হতে পারে এর অংশ৷ কখনোবা ক্ষমতার উত্থান-পতনের সঙ্গে রচিত হয়েছে জাতীয়তাবাদের ইতিহাস৷
ছবি: Imago/IPON
নাৎসিতে পিষ্ট ইহুদি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের উপর চালানো হয় গণহত্যা৷ হিটলারের নেতৃত্বে জার্মান নাৎসি বাহিনী ইউরোপের ইহুদি জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে৷
ছবি: Getty Images/AFP
মুসোলিনি ফ্যাসিবাদ
‘ইটালির ফ্যাসিবাদের জনক’ বলা হয় বেনিতো মুসোলিনিকে৷ ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টির এই নেতা ১৯২২-১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷ ১৯২৫ সালে গণতন্ত্রপ্রথা বাতিল করে চালু করেন একনায়কতন্ত্র এবং পুলিশের সহায়তায় দমন করনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের৷
ছবি: AP
ট্রাম্পের দেয়াল
মেক্সিকো থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অভিবাসীদের সন্তানদের আলাদা করার ঘোষণা দিয়ে সমালোচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের নির্বাহী আদেশেও স্বাক্ষর করেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
নিন্দিত মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলে দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে৷ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পরিবর্তন আনতে মোদী সরকার হিন্দুদের উৎসাহিত করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
এরদোগানের রোষানলে
২০১৬ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থান সামাল দেয়ার পর আরো শক্তি সঞ্চয় করা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সরকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে, সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করে এক লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষকে এবং বন্ধ করে দেয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদে শঙ্কা
উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন দেশে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে নির্বিচারে মানুষ হত্যার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে৷ অনেকই মনে করেন ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব থেকে এসব ঘটনা ঘটছে৷
ছবি: Reuters/M. Mitchell
উগ্র বামপন্থা
ইউরোপে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ইউরোপলের এক প্রতিবেদনে বামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টি সামনে আসে৷ ইটালি, গ্রিস ও সুইডেন, জার্মানির কয়েকটি স্থানে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে উগ্র বামপন্থিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/N.Liponne
সতর্ক ইইউ
ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান টের পেয়ে জনগণকে নাৎসিবাদ ও স্টালিনবাদের নিপীড়নের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ২০১৭ সালে বিবৃতি দিয়েছেন ইইউ-র নেতারা৷ উগ্র জাতীয়তাবাদ, বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতুক ভয় সৃষ্টি এবং ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: DW/T. Sparrow
8 ছবি1 | 8
অর্থনীতির এ নতুন মেরুকরণে টালমাটাল দেশগুলো৷ প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক দিয়েই এগিয়ে চলেছে৷ আফ্রিকার অনেক দেশ নতুন টাইগার বলে বিবেচিত হচ্ছে৷ ফলে অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত দেশগুলো এখন নতুন চ্য়ালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে৷ এমন অবস্থায় নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে জনগণের দৃষ্টি ফেরানো দরকার সবারই৷ সাম্প্রতিক সব যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যাবে এর সবকটির মূল কারণ একই৷
পুলওয়ামা কাণ্ডে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো বলে চিৎকার শুরু হলো৷ তখনও কিছু মানুষ ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির একটা হাতিয়ার দরকার৷ থমকে থাকা অর্থনীতি, বেকারত্ব, শিক্ষা, জীবনমান এবং অন্যসব ‘বাস্তব' সমস্যাগুলো মানুষকে টানতে পারবে না, এটা বিজেপি নেতারা ভালোই বুঝেছিলেন৷ বাস্তবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় ভারত বা পাকিস্তান কারোরই তেমন কিছু না হলেও বোকা বনেছে জনগণ, লাভ হয়েছে নরেন্দ্র মোদির৷
এবারও উগ্র হিন্দুত্ববাদের ঝাণ্ডা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মোদি৷ নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব বিল, বাবরি মসজিদ ইস্যু, ইত্যাদি নিয়ে সহজে ঘর উত্তপ্ত রাখতে পারলে পেটে পর্যাপ্ত খাবার না থাকার কথাও যে মানুষ ভুলে থাকতে পারে, এটি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ৷ ফলে ঘরের পাশে শত্রু পাকিস্তান জুজুর ভয় হয়ে ভালোই ভূমিকা রাখে নির্বাচনে৷
উত্তর কোরিয়া, মেক্সিকো এবং সবশেষ ইরানকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সকল কর্মকাণ্ডও এমন জুজু তৈরির উদাহরণ উদাহরণ৷ এরই মধ্য়ে অনেক বিশ্লেষণ হয়েছে এ নিয়ে, অভিশংসন এবং পরবর্তী মার্কিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক চাপের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প৷ কে না জানে, ঘরের বাইরে বড় শত্রু তৈরি করতে পারলে ঘরের মধ্যে শত্রুদের দমন সহজ হয়৷ নির্বাচনের আগে ঘরে বড় কোনো বিপদে পড়লে নভেম্বরের নির্বাচনের আগে এমন আরো নানা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা আমরা দেখতে পারি, সেটা ইরানও হতে পারে, আবার বিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তের কোনো দেশও হতে পারে৷
ইরানে গত বছর দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়৷ বহু ছাত্রসহ কয়েক হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ কিন্তু বিক্ষোভ দমন করা যাচ্ছিলো না৷ মাঝেমধ্যেই নানা জায়গায় দেখা দিচ্ছিলো অসন্তোষ৷ ফলে ইরানের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানি নিহত হলেও মার্কিনবিরোধী চেতনা আবার জাগিয়ে তুলে ঘরের অসন্তোষ আপাতত চাপা দেয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে ইরানের ইসলামি সরকারের৷ সোলেইমানির মৃত্যুর পর তার প্রতিটি জানাযায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ও ‘ডেথ টু অ্যামেরিকা' স্লোগান একটি শত্রু তৈরি করে ঘরের শত্রুদের মুখ বন্ধ করতে পেরেছে রৌহানি সরকার৷
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প, কিন্তু বাস্তবে করেননি কিছুই৷ বরং কিম জং উনের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকের পর উন সম্পর্কে প্রশংসাই শোনা গেছে ট্রাম্পের মুখে৷ লাতিন অ্যামেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে হুমকিধামকি দিলেও এখনও সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকি নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ এর সব কয়টি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী ভূমিকায় ছিল রাশিয়া ও চীন৷ ফলে অভিশংসনের বিষয়টি না এলে হঠাৎ ইরানের সোলেইমানিকে হত্যার এতো বড় ঝুঁকি ট্রাম্প নিতেন না বলেই মনে হচ্ছে৷
সিরিয়ায় সব পক্ষই প্রক্সি যুদ্ধে নেমেছিল৷ আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করার প্রাথমিক লক্ষ্যে যে অ্যামেরিকা রাশিয়ার কাছে পরাজিত, তা প্রমাণিত৷ কিন্তু উল্লেখ্য, সিরিয়াতেও বিরোধী অবস্থানে থেকেও মুখোমুখি কোনো লড়াইয়ে জড়ায়নি কোনো পরাশক্তিই৷ বরং একসময় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলেও পরে তা আইএসবিরোধী যুদ্ধে পরিণত হয়৷ সব পক্ষের কমন শত্রু হওয়ায় সব পক্ষই নিজেদের এ যুদ্ধে জয়ীও প্রমাণ করতে পেরেছে৷
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
আরো একটি উদাহরণ বর্তমান লিবিয়া৷ গৃহযুদ্ধে রাশিয়া ও তুরস্ক মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল৷ সেখানেও নিজেরা লড়াইয়ে না জড়িয়ে বরং যুদ্ধবিরতির পথই বেছে নিয়েছে দেশ দুটি৷ মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব বিভিন্ন ঘটনায় মুখোমুখি হয়েছে৷ কিন্তু গত বছর সৌদি আরবের দুটি বড় তেলক্ষেত্রে হামলায় ইরানকে দায়ী করলেও এ নিয়ে আর কথা বাড়ায়নি সৌদি আরব৷ ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধরত দুই পক্ষে ইরান ও সৌদি আরব প্রক্সি লড়াই করলেও কেউ নিজেরা সরাসরি মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি কখনই নেয়নি৷
ফলে একথা নিশ্চিতভাবেই বলা সম্ভব, এই মুহূর্তে বিশ্বযুদ্ধ তো নয়ই, দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধে জড়ানোর মতো হঠকারি সিদ্ধান্তও এখন কোনো দেশই নেবে না৷ বিভিন্ন দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত যে কয়টি সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সবই প্রক্সি ওয়ার বা হুমকিধামকির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা অনেকটাই পুঁজিবাদ বনাম সমাজতন্ত্রের আদর্শকেন্দ্রীক মেরুকরণের ফলে৷ কিন্তু সে মেরুকরণ ব্যর্থ হয়েছে৷ নিশ্চিতভাবেই সমাজতন্ত্র পরাজিত হয়েছে৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চীন সমাজতান্ত্রিক সরকার কাঠামোতে থাকলেও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পরিণত হয়েছে এক খিচুড়িতন্ত্রে৷ উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি আর নতুন করে হয়তো বলারও প্রয়োজন পড়ে না৷
সামরিক শাসন হোক, গণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদ হোক, একনায়কতন্ত্র হোক, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ অথবা ইসলামি বা হিন্দুত্ব উগ্রবাদ হোক, ক্ষমতা ধরে রাখাটাই এখন শাসকদের একমাত্র উদ্দেশ্য৷ ফলে যুদ্ধে জড়িয়ে সে ক্ষমতাকে অকারণ হুমকিতে ফেলার ঝুঁকি আগামী কয়েক দশকে কেউ নেবে বলে অবস্থা বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে না৷ আপাতত চূড়ান্ত কোনো মেরুকরণ তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ‘দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ' চলতেই থাকবে৷
কিন্তু এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় লাভ হচ্ছে কার, ক্ষতিই বা হচ্ছে কার? ওবামাকে টেক্কা দিয়ে মার্কিন জনগণকে নতুন কিছু দেয়ার ক্ষমতা রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের ছিল না৷ ফলে ট্রাম্প বেছে নিয়েছেন, বাইরের শত্রুকে৷ ওবামা প্রশাসনের স্বাস্থ্যসেবা বিল, বিশ্ব নেতাদের করা জলবায়ু চুক্তি, ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি সব ছুঁড়ে ফেলেছেন ট্রাম্প৷ এর আগে বুশ যেমন ‘শয়তানের অক্ষশক্তি' হিসেবে ইরান, ইরাক, উত্তর কোরিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন, সে তুলনামূলক সহজ ধারাকেই আবার ফিরিয়ে আনলেন ট্রাম্প৷
এর ফলে মার্কিন জনগণ নিজেদের ঘরে নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ও হবেন, এমনকি ঘরের বাইরেও শত্রুতে পরিণত হচ্ছেন৷ কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদের ঝাণ্ডার তলে এসে তারাই আবার ‘মেইক অ্যামেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' স্লোগানে ট্রাম্পকেই ভোট দিচ্ছেন৷
প্রায় প্রতিটি দেশেই এখন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে৷ ‘আমরাই সেরা' স্লোগান তুলে ক্ষমতায় থাকা সহজ হলে খাওয়া-পরার চাহিদা মোটানোর কষ্টকর পথ কে বেছে নেয়! বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে- যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই৷ এর অর্থটি জনগণেরও জানা, কিন্তু সঠিক প্রয়োগটি জানেন শুধু পপুলিস্ট নেতারাই৷
ইরানের শত্রু-মিত্র
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সর্ম্পকের অবনতি ঘটে৷ প্রভাব পড়ে বাকি দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগেও৷ ছবিঘরে দেখুন ইরানের আজকের শত্রু-মিত্র কারা, কার সঙ্গে তার কেমন সম্পর্ক৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Taherkenareh
যুক্তরাষ্ট্র: বন্ধু থেকে শত্রু
১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় মোসাদ্দেক সরকার উৎখাত হওয়ার পর ইরানের ক্ষমতায় আসেন রেজা শাহ পাহলভি৷ পরর্বতী ২৬ বছর ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ছিল একে অপরের বন্ধু৷ ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবে শাহ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই সম্পর্ক শত্রুতায় রূপ নেয়৷ ১৯৮০ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ একে অপরকে তারা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবেও অ্যাখ্যায়িত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Barria
ইসরায়েল: আন্তরিকতা থেকে অবিশ্বাস
তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া ২য় মুসলিম দেশ ইরান (১৯৫০ সাল)৷ রেজা শাহের শাসনকালে দুই দেশের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক ছিল৷ ১৯৭৯ সালে খোমেনি ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইসরায়েলকেও শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন৷ তেহরান পরমানু অস্ত্র বানাচ্ছে বলে ১৯৯০ সালের পর থেকে অভিযোগ করছে ইসরায়েল৷ দেশটির বিরুদ্ধে হামাস ও হেজবোল্লাহকে মদদ দেয় ইরান৷ অন্যদিকে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রেকে সমর্থন দেয় ইসরায়েল৷
ছবি: AP
সৌদি আরব: ঘাড়ের কাছে শত্রু
মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা বিস্তারের লড়াইয়ে ইরানের চিরশত্রু সৌদি আরব৷ ১৯৭৯ সালে তেহরানের ক্ষমতায় পরিবর্তন আসার পর থেকেই তা প্রকট আকার ধারণ করেছে৷ দুই দেশ কখনও সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও চলছে তাদের ছায়াযুদ্ধ৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিবদমান গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দেয়৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদির দুইটি তেলক্ষেত্রে হামলার পেছনে ইরান রয়েছে বলে দাবি করেছে রিয়াদ৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yorulmaz
রাশিয়া: দখলদার থেকে মিত্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইরানে আস্তানা গাড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও কয়েকবছর দখলদারি বজায় রাখে তারা৷ শাহের শাসনামলেও সম্পর্ক ভাল ছিল না৷ এমনকি ইরাক-ইরান যুদ্ধে সাদ্দামকে সহায়তা দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ তবে ১৯৯১ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে ইরান হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদার৷
ছবি: AP GraphicsBank
ইউরোপ: আলোচনায় সমাধান
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইউরোপের সঙ্গেও তেহরানের সম্পর্ক শীতল হয়ে ওঠে ৷ তবে প্রেসিডেন্ট আলী আকবর রাফসানজানির সময়ে এই সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়৷ পরমাণুসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইইউ বরাবরই ইরানের সঙ্গে আলোচনার উপর জোর দিয়ে আসছে৷ ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পরমাণু কার্যক্রম স্থগিতকরণ চুক্তি বাতিল করলেও ইউরোপের দেশগুলো তা এখনও বজায় রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
চীন: অস্ত্র আর বাণিজ্যের সম্পর্ক
১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে তেহরানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল চীন৷ বেইজিংয়ের শীর্ষ তিনটি অস্ত্র ক্রেতা দেশের একটি ইরান৷ অন্যদিকে ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন৷ যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর সেখান থেকে তেল আমদানি ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিতে হয়েছে চীনকে৷ কাসেম সোলেইমানিকে হত্যাকাণ্ডের পর চীন জানিয়েছে তেহরানের সঙ্গে বেইজিংয়ে সম্পর্ক অটুট থাকবে৷
ছবি: AP / DW-Fotomontage
ইরাক: সর্ম্পকে নতুন মোড়
সাদ্দাম হোসেনের চালানো হামলা থেকে শুরু হওয়া ইরাক-ইরান যুদ্ধ অব্যাহত ছিল আট বছর৷ তবে বর্তমানে বাগদাদের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে তেহরানের৷ দেশটির একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকেও সামরিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে ইরান৷ এইসব গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে৷
কথিত আছে লেবাননের হেজবোল্লাহ গোষ্ঠীর উত্থান ইরানের মাধ্যমেই৷ তাদের মূল টার্গেট মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শত্রু ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আস্তানাগুলো৷ ২০১৮ সালে হেজবোল্লাহ ও তাদের জোট দেশটির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ যার মধ্য দিয়ে লেবাননের সরকারে ইরানের প্রভাব আরো বেড়েছে৷ এছাড়াও ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী আর ফিলিস্তিনের হামাস ইরানের মিত্রশক্তি৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
ভেনেজুয়েলা: শত্রু যখন একই
অবরোধ, অর্থনৈতিক সঙ্কট আর দুই দেশের একই শত্রু, ইরান-ভেনেজুয়েলাকে নিয়ে এসেছে কাছাকাছি৷ ২০০১ সালে ইরানের মোহাম্মদ খাতামি আর ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের মাধ্যমে সহযোগিতামূলক এই সম্পর্কের গোড়াপত্তন৷ আহমদিনেজাদ ক্ষমতায় আসার পর তা আরো নিবিড় হয়৷ একক শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে দুইদেশ বেশি কিছু চুক্তিও করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/ABACA/Iran Presidency
বাংলাদেশ: পাঁচ দশকের সম্পর্ক
১৯৭১ সালের পর থেকে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক৷ বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের রাষ্ট্রীয় সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ১৯৯৫ সালে প্রেসিডেন্ট রাফসানজানি ঢাকা এসেছিলেন৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ৷ অক্টোবরে বাকুতে ন্যাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসার রুহানি ‘সাইডলাইন বৈঠক’ করেন৷ গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ১.৭৭ কোটি ডলারেরর পণ্য রপ্তানি করেছে দেশটিতে৷