আমোবোজেলি ন্যাশনাল পার্কে যেমন থাকে হাতিরা, তেমন থাকে মাসাইরা, তাদের গরুর পাল নিয়ে৷ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান৷ এখানে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল না খেলেও, হাতি-গরুতে জল খায়৷ সে-ও তো এক স্বর্গ, নয় কি?
বিজ্ঞাপন
অ্যান্টেনা নিয়ে খোঁজ চলেছে ১২টি হাতির একটি হাতির, যার গলায় একটি জিপিএস ট্রান্সমিটার ঝোলানো আছে৷ ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার নিধির ইভান মকালা দেখালেন, ‘‘ঐ দেখুন – যে হাতিটা অন্যদের থেকে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, ও-ই হলো কিমানা নামের পুরুষ হাতিটা৷''
তরুণ হাতিটির গলায় ছয় কিলো ওজনের ট্রান্সমিটার ঝোলানো থাকলেও, তার কোনো অসুবিধা হয় না – কেননা তার ওজন হলো পাঁচ টন! মকালা জানালেন, ‘‘হাতিরা দলে থাকতে ভালোবাসে, যেমন বড় পুরুষ হাতিরা, তেমন তরুণ হাতিরা৷ মাদি হাতিরা আর বাচ্চারা একসঙ্গে থাকে৷ পুরুষ হাতিরাও ছোট-বড় দল করে একসঙ্গে থাকতে ভালোবাসে৷ এই হাতিটা ওদের মাঝখানে রয়েছে – এছাড়া রয়েছে আরো কম বয়সি হাতিরা, যেমন ঐ ছোট্ট হাতিটা, যে পিছনে দৌড়াচ্ছে৷ ও বেচারা সদ্য দঙ্গলে যোগ দিয়েছে৷ এখন ও বড় হাতিদের কাছ থেকে শিখবে, কী করে হাতির দলের মাঝখানে ‘বিগ বুল' হওয়া যায়৷''
‘হাতি আর পশুপালন খুব ভালো খাপ খায়’
03:49
হাতিদের চলাফেরা দেখলে বোঝা যায় যে, কিমানা যখন ন্যাশনাল পার্ক ছেড়ে যায়, ও শুধু তানজানিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যায়, তার ওপারে নয়৷ তারপর ও ঘুরে দাঁড়ায়, ফিরে আসে, যেন ও জানে যে, তানজানিয়ায় হাতি শিকার নিষিদ্ধ নয়৷
আমবোজেলি ন্যাশনাল পার্ক খুব বড় নয়, মাত্র ৩৯০ বর্গমিটার৷ কিন্তু তার পারিপার্শ্বিক ও পরিবেশ আয়তনে এর ২০ গুণ বেশি৷ আমবোজেলির অববাহিকায় মোট ১,৪০০ হাতির বাস৷ সন্ধ্যায় তারা পার্কের এলাকা ছেড়ে বেরোয় খাদ্যের সন্ধানে, আর সকালে পার্কে ফেরে সেখানে পানি আছে বলে৷ মাসাইদের গরুর পালের ক্ষেত্রেও সে-কথা প্রযোজ্য৷ মকালা বলেন, ‘‘হাতি আর পশুপালন খুব ভালো খাপ খায়৷ হাতি আর গরু, দু'টি প্রাণীই তৃণভোজী; ওরা একসঙ্গে খায়, ঘোরে-ফেরে৷ আমি নিজে ওদের একসঙ্গে শান্তিতে চরতে দেখেছি, কোনো সমস্যাই নেই৷''
ডাইনোসর বিলুপ্ত, এবার হাতিও কি ধীরে ধীরে যাবে?
অতিকায় ডাইনোসর আর নেই৷ এখনো টিকে থাকা স্থলচরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতিও কি এবার বিলুপ্ত হয়ে যাবে? আন্তর্জাতিক হাতি দিবসে প্রশ্নটা খুব বড় হয়ে উঠেছে৷ ছবিঘরে দেখুন কেন এবং কীভাবে খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে হাতি৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/M. Hicken
আর মাত্র ১০ বছর?
হাতি যে হারে কমছে, তাতে ১০ বছর পর চিড়িয়াখানা ছাড়া আর সব জায়গা থেকে এই প্রাণীটির চিহ্ন মুছে গেলে নাকি অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷ আশঙ্কাটা যে মোটেই বাড়াবাড়ি নয়, তা দুটো তথ্য দিলেই বুঝতে পারবেন৷ একশ’ বছর আগে আফ্রিকায় মোট এক কোটি হাতি ছিল৷ এখন সেখানে মাত্র সাড়ে চার থেকে সাত লাখের মতো হাতি টিকে আছে৷ এশিয়ায় আছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হাতি৷ গত দশ বছরে নাকি সারা বিশ্ব থেকে ৬২ ভাগ হাতি কমেছে!
ছবি: picture-alliance/R. Harding
দাঁতের জন্য মরছে হাতি
কথায় আছে, মরা হাতির দাম লাখ টাকা৷ সত্যিই তাই৷ বিশেষ করে হাতির দাঁত তো হীরা-মুক্তা-জহরতের মতোই মূল্যবান৷ সেই দাঁতের লোভে আফ্রিকার জঙ্গল থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একশ’টি হাতি মারা হয়৷ হাতির দাঁত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চীনে৷ গত জুলাই মাসে জুরিখ বিমানবন্দরে ২৬২ কিলোগ্রাম ওজনের হাতির দাঁতসহ ধরা পড়ে এক চীনা নাগরিক৷
ছবি: Reuters/R. Sprich
জঙ্গিদের টাকার উৎসও হাতি!
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অবৈধ ব্যবসা এই হাতির দাঁতের কেনাবেচা৷ মাদক এবং মানবপাচারের পরই এর স্থান৷ অনেক যু্দ্ধ-দাঙ্গা-হাঙ্গামার পেছনেও ভূমিকার রাখে হাতির দাঁত৷ আফ্রিকা অঞ্চলের দুই ইসলামি জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম এবং আল-শাবাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্র কেনে হাতির দাঁতের বিনিময়ে!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/African Parks
জঙ্গল কমছে, কমছে হাতি
জনসংখ্যা বাড়ছে৷ আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ পড়ছে জঙ্গলের ওপর৷ মানুষ জঙ্গল কেটে সেখানে গড়ছে বাসস্থান, কলকারখানা৷ ফলে জঙ্গলের প্রাণীরা পড়ছে বিপদে৷ হাতির জন্যও জঙ্গল ক্রমশই কমছে, বাড়ছে বিপদ৷ গত এক শতকে আফ্রিকার জনসংখ্যা চারগুণ বেড়েছে৷ হাতির সংখ্যা সেখানে এক কোটি থেকে কমে সাত লাখ বা তারও কম হওয়াই তো স্বাভাবিক, তাই না?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
হাতিরক্ষায় তৎপর ওবামা
চীনের পর হাতির দাঁত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় যুক্তরাষ্ট্রে৷ তবে ধীরে ধীরে হয়ত সেখানে অবৈধ এ ব্যবসাটা কমবে৷ গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এই ব্যবসা একেবারে বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/M. Hicken
5 ছবি1 | 5
এই গরুর পাল হলো মাসাইদের সব৷ কে বড়লোক, কে গরিব, তার মাপ হলো, কার কত গরু আছে৷ মাসাইদের বাড়ির দেয়াল তৈরি হয় মাটির সঙ্গে গোবর মিশিয়ে৷ তবে মাসাইদের সময় ভালো যাচ্ছে না৷ মাসাই কিশোর গিডিয়ন সাইতাবু সিনিয়োক-এর বয়স ১৬, তার স্কুলে যাবার ইচ্ছে, কিন্তু স্কুলে যাবার সামর্থ্য নেই৷ গিডিয়ন বলে, ‘‘এ গাঁয়ে অনেক পরিবারের বাস৷ আমরা সকলে মিলেমিশে সুখে-শান্তিতে থাকি, গরু পুষি৷ কিন্তু এখন আকাল চলছে৷ ২০০৮-০৯ সালে অনেক গরু মরে গেছে৷ আকালের আগে কোনো কোনো মাসাই-এর এক হাজারের বেশি গরু থাকত৷ আজ তা কমে দশটা গরুতে দাঁড়িয়েছে৷''
যেসব তারকা প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করেন
বিশ্বব্যাপী প্রাণীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে বেশ কিছু সংগঠন৷ তাদের কার্যক্রমে মানুষকে আকৃষ্ট করতে তারকাদের সহায়তা নেয় এসব সংস্থা৷
ছবি: AP
রায়ান গোসলিং
ক্যানাডীয় অভিনেতা ও সংগীত শিল্পী গোসলিং ২০০৩ সালে কেএফসির কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন৷ মুরগি পালন ও জবাইয়ের ক্ষেত্রে আরেকটু মানবিক হতে কেএফসিকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ পরবর্তীতে ম্যাকডোনাল্ডসকেও একইরকম বার্তা পাঠান গোসলিং৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Horcajuelo
এলেন ডিজেনেরাস
মার্কিন এই কমেডিয়ান টেলিভিশনে প্রচারিত তাঁর জনপ্রিয় শো-তে নিয়মিতভাবে প্রাণী অধিকারের বিষয়টি তুলে আনেন৷ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৯ সালে তাঁকে ‘ওমেন অফ দ্য ইয়ার’ খেতাব দেয় প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্বের অন্যতম বড় সংগঠন ‘পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিমেল’ (পেটা)৷
ছবি: Getty Images/K. Winter
ক্রিস্টেন বেল
মার্কিন অভিনেত্রী ও সংগীত শিল্পী বেল ১১ বছর বয়স থেকেই ভেজিটেরিয়ান৷ পেটা ২০০৬ সালে তাঁকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে যৌনআবেদনময়ী ভেজিটেরিয়ান’-এর খেতাব দেয়৷ প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনকে তিনি আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন৷ মাঝেমধ্যে তাঁদের কার্যক্রমেও অংশ নেন বেল৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sanchez-Gonzales
কেশা
২৮ বছর বয়সি মার্কিন এই সংগীত শিল্পী সীল, সিংহ ও হাঙরের মতো প্রাণীর অধিকারের জন্য তাঁর জনপ্রিয়তা কাজে লাগাচ্ছেন৷ কসমেটিকস তৈরিতে বিভিন্ন প্রাণী নিধনের বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার৷ এ ধরনের কাজের জন্য তিনি স্বীকৃতিও পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভিওলা ডেভিস
সার্কাসের হাতিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা বাধ্য করে আইন করতে যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড স্টেটের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী ভিওলা ডেভিস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ডেমি মুর
সার্কাসের হাতিদের প্রশিক্ষণে অঙ্কুশ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রাণীদের প্রতি তাঁর অনুভূতির জানান দেন ডেমি মুর৷
ছবি: Getty Images
পল ম্যাকার্টনি
নিজেদের পালিত একটি ভেড়াকে জবাইয়ের পর নিজেদের প্লেটে মাংস হিসাবে রূপান্তরিত হতে দেখে ভেজিটেরিয়ান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিটলসখ্যাত পল ও তাঁর স্ত্রী লিন্ডা ম্যাকার্টনি৷ সেই থেকে এই দম্পতি পেটা সহ অন্য আরেকটি প্রাণী অধিকার বিষয়ক সংগঠনকে সহায়তা করে থাকে৷ তাঁরা বলেন, ‘‘যদি কসাইখানাগুলোর দেয়াল কাচের হতো তাহলে সবাই ভেজিটেরিয়ান হয়ে যেত৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Scheidemann
প্যামেলা অ্যান্ডারসন
বেওয়াচখ্যাত অভিনেত্রী প্যামেলা অ্যান্ডারসন পেটা-র হয়ে অনেকগুলো কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন৷ যেমন ২০০৩ সালে তিনি পেটা-র ‘পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক পরার পরিবর্তে আমি নগ্ন হয়ে থাকব’ কর্মসূচিতে অংশ নেন৷ ২০০১ সালে তিনি কেএফসি-র বিরুদ্ধে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘প্রতিবছর কেএফসি সাড়ে সাতশ মিলিয়ন মুরগির সঙ্গে যা করে তা গ্রহণযোগ্য নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
বলিউড তারকারাও সোচ্চার
বেশ কয়েকজন বলিউড তারকাও প্রাণী অধিকারের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের অবস্থান জানিয়েছেন৷ এঁদের মধ্যে আছেন হেমা মালিনি, মাধুরী দীক্ষিত, জন আব্রাহাম, সেলিনা জেটলি, শিল্পা শেঠী, অর্জুন রামপাল ও শাহেদ কাপুর৷
ছবি: UNI
9 ছবি1 | 9
মাসাই পুরুষরা গরুর পালের দেখাশোনা করেন, বাকিটা হলো মহিলাদের কাজ৷ গিডিয়নের মা সাফারিতে আসা টুরিস্টদের মালা, পুঁতি ইত্যাদি বিক্রি করে তাঁর আট সন্তানকে একা মানুষ করছেন৷
পশুদের ‘সেলফি’!
এটা সেলফির যুগ৷ তা মানুষ কোটি কোটি সেলফি তুললে পশুদের থাকবে না কেন? তানজানিয়ার সেরেংগাতি ন্যাশনাল পার্কে বিজ্ঞানীরা একটা-দুটো নয়, ৩ লাখ ২২ হাজার ‘সেলফি’ হাতে পেয়েছেন৷ সবই পশুদের! দেখুন পশুদের মজার কিছু ছবি৷
ছবি: DLCcovert.com/Snapshot Serengeti
হরিণ, হাসো তো দেখি...
সেরেংগেটিতে পশুদের ছবি তোলার আয়োজনটা ছিল ব্যাপক৷ ‘স্ন্যাপশট সেরেংগেটি’ নামের এই প্রকল্পে কাজ করেছেন ২৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবী৷ পশুদের ৩ লাখ ২২ হাজার ছবি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে তাঁদের৷ তাঁদের বেছে নেয়া ছবিগুলোর মধ্যে গোমড়ামুখো এই অ্যান্টিলোপের ছবিটিও ছিল৷ লুকানো ক্যামেরার একেবারে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল হরিণটি৷ খুবই গম্ভীর এক হরিণ৷ ‘স্মাইল, প্লিজ’ বললেও হাসতো কিনা কে জানে!
ছবি: DLCcovert.com/Snapshot Serengeti
এত কাছে!
১ হাজার ১২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সেরেংগেটির আনাচে-কানাচে ২৫৫টি ক্যামেরা লুকিয়ে রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা৷ একটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে এই শকুন৷ ‘ভদ্রলোক’, ক্যামেরার এত কাছে চলে এসেছিলেন যে তার মাথায় উকুন থাকলে সেই উকুনটাও দেখা যেত৷
ছবি: DLCcovert.com/Snapshot Serengeti
বন্ধুতা
গণ্ডারের পিঠে পাখি৷ বন-জঙ্গলে এমন দৃশ্য বিরল না হলেও এই ছবিটি কিছুটা বিরল৷ পাখিটির নাম অক্সপেকার৷ এরা মূলত পোকামাকড় খায়৷ গণ্ডারের পিঠের পোকা খুব প্রিয় ওদের৷ ছবির এই পাখিটিও গণ্ডারটির পিঠের পোকা খাচ্ছে৷
ছবি: DLCcovert.com/Snapshot Serengeti
হায়েনার শিকারের মুহূর্ত
৩ লাখ ২০ হাজার ছবির জন্য নিতে হয়েছে ১২ লাখ স্ন্যাপ৷ বিরল অনেক দৃশ্য ধরা পড়েছে ক্যামেরায়৷ হায়েনার এই পাখি শিকার মুহূর্তটিও কিন্তু বলে-কয়ে ছবি তুলতে গেলে ফ্রেমবন্দি করা যেত না৷