1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বই পোড়ানোর ঐতিহাসিক দিন

মার্ক ল্যুপকে/আরবি১০ মে ২০১৩

১৯৩৩ সালের ১০ই মে একটি কালো দিবস জার্মানিতে৷ ঐ দিন বার্লিনের অপেরা চত্বরে ৭০,০০০-এর মতো মানুষ সমবেত হয়েছিলেন৷ না কোনো প্রতিবাদ সভা ছিল না সেটা৷ তারা সমবেত হয়েছিলেন বই পোড়ানোর মত একটি ঘৃণ্য কাজে যোগ দিতে৷

ছবি: picture-alliance/Georg Goebel

ট্রাক ও ট্রলিতে করে ছাত্ররা ২০,০০০-এর বেশি বই পোড়ানোর জন্য ঐ জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন৷ এগুলির মধ্যে ছিল হাইনরিশ মান, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, ইওয়াখিম রিংগেলনাৎস-এর মতো প্রসিদ্ধ লেখকের গ্রন্থও৷ নাৎসিদের ছাত্র নেতা হ্যার্বার্ট গুটইয়ার ঘৃণাভরা এক বক্তব্য রাখেন এই ধ্বংসযজ্ঞ উপলক্ষ্যে৷ ‘‘আমরা যা কিছু অ-জার্মান, তা আগুনে বিসর্জন দিচ্ছি৷''

ট্রাক ও ট্রলিতে করে ২০,০০০-এর বেশি বই পোড়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিলছবি: picture-alliance/akg-images

তার সামনে আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলছিল তখন৷ পুড়ছিল অনেক বই৷ ২৩ বছর বয়সি হ্যার্বাটও এক বান্ডিল বই আগুনে ফেলেন৷

সারা জার্মানি জুড়েই এই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে সেই কালো দিবসে৷ বিশ্ববিদ্যালয় শহরগুলিতে ছাত্ররা দলে দলে বের হয়ে আসেন৷ সাথে স্তূপ করা বইয়ের বান্ডিল৷ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিভিন্ন গ্রন্থাগার থেকে বেছে বেছে বই বের করে পোড়ানোর ব্যবস্থা করেন তারা৷ তাদের মতে, এগুলি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের চিন্তাধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অ-জার্মান৷ তাই এগুলিকে বাতিল করতে হবে৷

এর মধ্যে বিশেষ করে স্থান পেয়েছিল কমিউনিস্ট ও ইহুদি লেখকদের বই৷ লাইব্রেরির কর্মচারি এবং অনেক অধ্যাপকও তাদের এই চৌর্যবৃত্তিতে বাধা দেয় নি৷

‘এমিল ও গোয়েন্দা বাহিনী'-র লেখক আন্তর্জাতিক খ্যাত এরিখ কেস্টনার সেদিন স্বচক্ষে দেখেছিলেন ঐ বই পোড়ানোর দৃশ্যছবি: picture-alliance/Georg Goebel

১৯৩৩ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিকরা ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর হিটলারের অধীনে জার্মানিতে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান৷ এরপর ছাত্র সংগঠনগুলিও যোগ দেয় তাতে৷ নাৎসিদের ছাত্র সংগঠন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রসংঘ অগ্রণীর ভূমিকা পালন করে এক্ষেত্রে৷ ১৯৩৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ‘অ-জার্মান ধ্যান ধারণার বিরুদ্ধে কর্মসূচি' নামে একটি ক্যাম্পেন চালাতে থাকে দলটি৷ আর এই কর্মসূচি চরম পরিণতি পায় ১০ই মে৷

রেডিওর মাধ্যমে কর্মসূচিটি প্রচার করা হয়৷ ছাত্ররা দলে দলে নাৎসিদের এসএস বাহিনীর ইউনিফর্ম পরে বাইরে চলে আসেন৷ সাথে বেছে বেছে আনা বই ৷ ‘আমি হাইনরিশ মান, এর্নসট গ্ল্যাসার, এরিখ কেস্টনারের বইগুলি তুলে দিচ্ছি আগুনে' এই বুলি আওড়ে আগুনে ফেলে দেন তারা সেগুলি৷

‘এমিল ও গোয়েন্দা বাহিনী'-র লেখক আন্তর্জাতিক খ্যাত এরিখ কেস্টনার বার্লিনের অপেরা চত্বরে স্বচক্ষে দেখেছেন এই ভয়ানক দৃশ্য৷ পরে তিনি লেখেন, ‘‘এটা ছিল অত্যন্ত ন্যক্কারজনক এক ঘটনা৷ ইউনিভার্সিটির অনেক প্রফেসরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷''

মধ্যরাতের দিকে সেই চত্বরে উপস্থিত হন ইয়োসেফ গোয়েবেলস৷ হিটলারের প্রচারণা মন্ত্রী৷ ডক্টরেট ডিগ্রিধারী৷ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন তিনি৷ ‘‘জার্মান পুরুষ ও নারীরা, ইহুদিদের অতিরঞ্জিত বুদ্ধিবাদের অবসান ঘটলো এবার৷''

রেডিওর মাধ্যমে বই পোড়ানো কর্মসূচির প্রচার করা হয়েছিলছবি: picture-alliance/akg-images

বহির্বিশে অত্যন্ত ভীতির সঙ্গে লক্ষ্য করা হয় বই পোড়ানোর ঘটনাটিকে৷ হয় নিন্দনীয়৷ অ্যামেরিকার ম্যাগাজিন নিউজউইকে লেখা হয়, ‘হলোকস্ট অব বুক''৷ এই ঘটনার মাত্র কয়েক বছর পর নাৎসিদের ইহুদি নিধন যজ্ঞ পর্ব শুরু হয়৷ যা হলোকাস্ট নামে পরিচিত৷

১৯৩৩ সালে শিল্পী ও সাহিত্যিকরা দলে দলে জার্মানি ত্যাগ করতে শুরু করেন৷ বিদেশে কবি ও দার্শনিকের দেশ বলে পরিচিত জার্মানি এইভাবে মেধাশূন্য হতে থাকে৷ বিশেষ করে ইহুদি লেখক বুদ্ধিজীবীরাই দেশ ত্যাগ করেন৷ তবে নির্বাসনে থেকেও অনেকে নাৎসিদের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাতে থাকেন৷ যাঁরা বিদেশে যেতে পারেননি, তাঁদের বইপত্র প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়৷ এক্ষেত্রে এরিখ কেস্টনারের নাম করা যায়৷ ১৯৩৪ সালে ৩,০০০ বই-এর ওপর সেন্সর জারি করা হয়৷

তবে দুঃখের বিষয়, জার্মানদের একটা বড় অংশই বই পোড়ানো ও সেন্সরকে মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলেন৷ যাদের মধ্যে অনেক বুদ্ধিজীবী ও অধ্যাপকও ছিলেন৷ অনেকে স্বাগতও জানিয়েছেন এই ঘটনাকে৷ আর শিক্ষার আলোকপ্রাপ্ত ছাত্রসমাজ যে উৎসাহ উদ্দীপনার নিয়েএই ঘৃণ্য কাজটি করেছে তা অত্যন্ত বেদনাবহ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ