বার্লিনে জার্মান সংসদভবনকে কাপড়ে মুড়ে দিয়েছিলেন; মুড়েছিলেন প্যারিসে পঁ আলেকজঁদ্র ত্রোয়া ব্রিজটিকে৷ সেই ক্রিস্টো এবার ইটালির একটি হ্রদের জলের ওপর ভাসান তাঁর সর্বাধুনিক শিল্পকর্ম, ‘দ্য ফ্লোটিং পিয়ার্স'৷
বিজ্ঞাপন
মিলান শহরের উত্তরপূর্বে ইসিও লেকের উপর লোকে লোকারণ্য! ক্রিস্টোর ‘দ্য ফ্লোটিং পিয়ার্স' বা ভাসন্ত পাটাতন দেখতে প্রথম সপ্তাহান্তেই আসেন লক্ষাধিক দর্শক৷ তাঁরা সবাই অভিভূত৷ ‘‘দারুণ, বলে বোঝানো শক্ত৷ খুব ভালো লাগছে৷'' ‘‘যেন জলের ওপর দিয়ে হাঁটছি৷ দারুণ!'' ‘‘আমি খালি পায়ে যাব৷ দারুণ লাগবে...৷''
ক্রিস্টোর ‘দ্য ফ্লোটিং পিয়ার্স’
02:36
ক্রিস্টোর ক্যানভাস হল ইসিও হ্রদ৷ আঁকেন কমলা রংয়ের কাপড় দিয়ে৷ ছবিটি কিন্তু ১৬ দিন পরেই শেষ হয়ে যাবার কথা৷ আদতে বুলগেরিয়ার মানুষ ক্রিস্টো গত ৪০ বছর ধরে এই ভাসন্ত পাটাতন বানানোর স্বপ্ন দেখেছেন৷ শেষমেষ দু' লাখ বিশ হাজার ভাসন্ত কিউব দিয়ে পাটাতনটি তৈরি করা হয়৷
এক লাখ বর্গমিটার কাপড় দিয়ে তা ঢাকা হয়৷ কাপড়টি বিশেষ অর্ডার দিয়ে জার্মানিতে তৈরি করা হয়েছিল৷ কাপড়টি এমন যে, আবহাওয়া ও প্রহর অনুযায়ী তার রং বদলায়৷ ক্রিস্টো বলেন, ‘‘এটা খুবই শারীরিক, কেননা আপনি শুধু দেখছেন না, আপনি শিল্পকর্মটির উপর দাঁড়িয়ে আছেন৷ সব কিছু দেখার জন্য আপনাকে হেঁটে যেতে হচ্ছে৷ আপনি সবসময় চলেছেন৷ আপানার পাশে জলও বয়ে চলেছে৷''
ক্রিস্টোর নতুন সৃষ্টি: ‘ভাসন্ত পাটাতন’
ইটালির ইসিও হ্রদের উপর ‘দ্য ফ্লোটিং পিয়ার্স’ বানিয়েছেন মার্কিন শিল্পী ক্রিস্টো৷ ক্রিস্টোর এই ভাসন্ত পাটাতন বহু মাসের প্রস্তুতি আর দলগত প্রচেষ্টার ফল৷
ছবি: Getty Images/F.Monteforte
ক্ষণিকের অতিথি
প্রদর্শনী চলাকালীন প্রতিবার প্রায় বিশ হাজার দর্শক ক্রিস্টোর ভাসন্ত পাটাতনের ওপর দিয়ে যেতে পারবেন, উপভোগ করতে পারবেন জলের ওপর দিয়ে হাঁটার অনুভূতি৷
ছবি: Getty Images/F.Monteforte
সুলজানো
সুলজানো গ্রামের মেয়র ফিওরেল্লা তুর্লা খুবই খুশি৷ ১৮ই জুন থেকে তেসরা জুলাইয়ের মধ্যে উত্তর ইটালির এই ছোট্ট গ্রামটিতে প্রায় আট লাখ অতিথির সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ সকলেই আসবেন ক্রিস্টোর ‘দ্য ফ্লোটিং পিয়ার্স’ দেখতে৷ তিন কিলোমিটার পাটাতন দিয়ে সুলজানোকে ইসিও লেকের আরো দু’টি দ্বীপের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ক্রিস্টো৷
ছবি: Getty images/F.Monteforte
‘ক্রিস্টোর ভেলকি’
সুলজানোর প্রধান ফিওরেল্লা তুর্লা ভাসন্ত পাটাতনগুলির নাম দিয়েছেন ‘ত্রিস্টোর ভেলকি’৷ ১৬ মিটার বা ৫২ ফুট চওড়া পাটাতনগুলি ভাসন্ত পন্টুন বা ফাঁকা ধাতব কাঠামোর ওপর বসানো হয়েছে৷ এর ফলে দর্শকরা সুলজানো থেকে মন্তে ইসোলা ও সাও পাওলো দ্বীপ দু’টি পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন৷ নয়তো মন্তে ইসোলা থেকে তীর অবধি একটি ফেরি চলাচল করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/F.Monteforte
ক্রিস্টো আর জিন-ক্লদ
ক্রিস্টো এই প্রকল্পটির পরিকল্পনা করেন তাঁর স্ত্রী জিন-ক্লদ-এর সঙ্গে৷ ২০০৯ সালে জিন-ক্লদ পরলোকগমন করেন৷ ক্রিস্টো নিজেও চেয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কিংবা জাপানে তাঁদের যৌথ পরিকল্পনাটিকে বাস্তবায়িত করতে, কিন্তু অনুমতি পাননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Favre
‘মেড ইন জার্মানি’
জার্মানির হামিঙ্কেলন শহরের সেটেক্স টেক্সটাইল কোম্পানি জ্বলজ্বলে নাইলন কাপড়টি তৈরি করেছে, যা দিয়ে পাটাতনগুলো ঢাকা হয়েছে৷ প্রায় ৯০ বর্গকিলোমিটার কাপড় দিয়ে শুধু তিন কিলোমিটার পাটাতনই নয়, সেই সঙ্গে সুলজানো ও তার কাছাকাছি গ্রামগুলির পথঘাট ঢেকে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Wolfgang Volz
নাইলনের কাপড়
জার্মানির ল্যুবেক শহরের ‘জিও - দি লুফ্টভের্কার’ কোম্পানিকে পাঁচ মিটার লম্বা কাপড়ের রোলগুলো তৈরি করার জন্য এক বছর সময় দেওয়া হয়েছিল৷ প্রতিটি রোলের ওজন ছিল দু’শ কিলোগ্রাম৷ সেগুলো পরিবহণের জন্য বিশেষ মোটা ব্যাগের প্রয়োজন পড়েছিল৷ সেরকম দু’শ ব্যাগ ট্রাকে করে সুলজানোতে পাঠানো হয়৷
ছবি: Wolfgang Volz
সুবিশাল সেলাই কল
কাপড়টা এতটাই ভারী যে, সেগুলো সেলাই করার জন্য প্রতিটি সেলাই কলে দু’জন করে লোক রাখতে হয়েছে৷ একটি আল্ট্রাসাউন্ড লেজার ব্যবহার করে কাপড়টাকে নিখুঁতভাবে কাটা হয়েছে৷ পন্টুনগুলোয় একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে কাটা কাপড়ের টুকরোগুলোকে জোড়া দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Monteforte
পাটাতন ভাসে কিভাবে
ক্রিস্টোর এই সুবিশাল ইনস্টলেশন শুধু শিল্পকলা নয়, একটা লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জও বটে৷ পলিইথিলিনের দু’ লাখ বিশ হাজার ভাসন্ত কিউব তৈরি করাতে হয়েছে, যা দিয়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পন্টুন ব্রিজগুলি বানিয়ে তা কমলা রঙের কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wolfgang Volz
জলের ওপর হাঁটতে পারেন ক্রিস্টো
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর ভাসন্ত পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে ক্রিস্টো৷ তাঁকে খুব খুশি দেখা যাচ্ছে, কেননা, এখানে দাঁড়িয়েও জলের নড়াচড়া অনুভব করতে পারছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wolfgang Volz
9 ছবি1 | 9
শনিবার সকালে ভোর আটটা কুড়ি থেকে দর্শকরা ছোট্ট শহর সুলজানো থেকে ভাসন্ত পাটাতনে ওঠার সুযোগ পেয়েছিলেন৷ ক্রিস্টো চেয়েছিলেন যে, কোনোরকম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াই দর্শকরা ‘দ্য ফ্লোটিং পিয়ার্স'-এ উঠতে পারবেন৷ ক্রিস্টো ও তাঁর দলবল আসবেন অন্যদিক থেকে ও স্বল্পসময়ের মধ্যেই জনতা ও মিডিয়ার কাছ থেকে বিদায় নেবেন৷
১৬ মিটার প্রস্থের ও সব মিলিয়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভাসন্ত পাটাতনগুলি হ্রদের তীর থেকে মন্টে ইসোলা দ্বীপ, ও সেখান থেকে ছোট্ট সান পাওলো দ্বীপ অবধি চলে গেছিল৷ দ্বীপের দেড় কিলোমিটার তীরভূমিও কমলা রঙের কাপড়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল৷ মন্টে ইসোলা দ্বীপে যেন মেলা বসেছিল৷
দেখতে যাবেন নাকি এই ‘ভাসন্ত পাটাতন’? লিখুন নীচের ঘরে৷