মিয়ানমারে প্রতিবাদ-বিক্ষোভেই পালিত হচ্ছে ১৯৮৮-র সামরিক জান্তা-বিরোধী আন্দোলনের তেত্রিশতম বার্ষিকী ৷ জনগণের মধ্যে বাড়ছে সামরিক সরকারের প্রতি বিরূপ মনোভাব৷
বিজ্ঞাপন
রোববার মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরজুড়ে দেখা যায় প্রতিবাদের দৃশ্য৷ ১৯৮৮ সালের মতো আবার সামরিক সরকারের বিরোধিতায় পথে নামছেন হাজার হাজার মানুষ৷ তেত্রিশ বছর আগে যেভাবে সামরিক বাহিনী কড়া হাতে দমন করেছিল জনগণের প্রতিবাদ, তা-ও স্মরণ করা হচ্ছে চলমান প্রতিবাদের মধ্যে৷
মিয়ানমারে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে অভিনব বিক্ষোভ
সেনা অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ পর মিয়ানমারজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চরম রূপ নিয়েছে৷ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন চিকিৎসক, শিক্ষকসহ সব স্তরের মানুষ৷ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: REUTERS
চিকিৎসক আর নার্সরা প্রথম সারিতে
সেনা অভ্যুত্থানের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক ও নার্সরা ধর্মঘটের ডাক দেন৷ অন্যদেরও এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তারা৷
ছবি: REUTERS
সব শ্রেণি পেশার মানুষ
অন্যদিকে, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমজীবী মানুষ ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নেন৷ তারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দাও’, ‘আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা’৷ শনিবার রাত থেকে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন৷
ছবি: Ye Aung Thu/AFP/Getty Images
আন্দোলনে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সংহতি
বিক্ষোভকারীদের সাথে রাজপথে নেমেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা৷ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটিতে ভিক্ষুদের সংগঠন ‘সংঘ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
দেশজুড়ে বিক্ষোভ
ইয়াঙ্গুন বা মান্দালয়ের মতো বড় শহরের পাশাপাশি ছোট শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আগুন৷ শান রাজ্যের মতো আদিবাসী অঞ্চলগুলোও বাদ যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
তিন আঙুলের অভিবাদন
হলিউডের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হাঙ্গার গেমস যারা দেখেছেন তারা এই প্রতীকের সাথে পরিচিত৷ থাইল্যান্ডে বিক্ষোভের সময় আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে ‘থ্রি ফিঙ্গার গ্রিটিংস’ ব্যবহার করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা৷ মিয়ানমারেও সেই একই দৃশ্যের দেখা মিললো৷
ছবি: REUTERS
বারান্দা থেকে সংহতি
যারা রাজপথে নেমে আন্দোলনে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের অনেকেই বিক্ষোভকারীদের পানি আর খাবার দিয়ে সাহায্য করছেন, বারান্দায় দাঁড়িয়েও সংহতি জানিয়েছেন অনেকে৷
ছবি: REUTERS
সু চি’র মুক্তি
১ লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দল এনএলডি’র অনেক শীর্ষ নেতাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী৷ আন্দোলনকারীরা সবার মুক্তি দাবি করছেন৷
ছবি: Sem Van Der Wal/ANP/AFP/Getty Images
অভিনব প্রতিবাদ
বিক্ষোভ দমনে সোমবার রাতে সামরিক জান্তা ডিক্রি জারি করেছে৷ রাজধানীসহ প্রধান তিনটি শহরে পাঁচজনের বেশি মানুষের সমবেত হওয়া নিষিদ্ধ৷ রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ এই ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে অনেকে ফুল নিয়ে এগিয়ে আসেন দায়িত্বরত পুলিশের দিকে৷
ছবি: Ye Aung Thu/AFP/Getty Images
উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতি
রাজধানী নেপিদোতে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে৷ সামরিক জান্তা বিক্ষোভকে অবৈধ ঘোষণা করেছে৷ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে রাবার বুলেট আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ৷ বিক্ষোভকারীরা পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে৷ রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: REUTERS
সেনা সমর্থকরাও রাজপথে
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন সেনা সমর্থকরা৷ সেনা সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি দেশজুড়ে বেশ কিছু সমাবেশের আয়োজন করেছে৷
ছবি: Thet Aung/AFP/Getty Images
৮৮’র অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ
বর্তমান বিক্ষোভ যে রূপ নিয়েছে তা ১৯৮৮ সালের সেনা অভ্যুত্থানের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ক্ষমতা হাতে নেয় সেনাবাহিনী৷ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়, আটক করা হয়েছিল অনেককে, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন অসংখ্য আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষার্থী৷
ছবি: ullstein bild-Heritage Images/Alain Evrard
11 ছবি1 | 11
ইয়াঙ্গন, মান্দালায়, সাগায়িংসহ মিয়ানমারের বেশ কিছু শহরে দেখা যায় বিক্ষোভ সমাবেশ, জানাচ্ছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্ষমতার দখল নেয় সামরিক জান্তা৷ অং সান সু চি'র নেতৃত্বাধীন সরকারকে সরিয়ে সামরিক বাহিনী যেভাবে ক্ষমতায় আসে, তার প্রতিবাদে পথে নামতে শুরু করে জনতা৷
থেট নাইং নামের এক বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা ডিপিএকে বলেন, ‘‘তেত্রিশ বছর আগে আজকের দিনে সামরিক বাহিনীর হাতে বহু সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারান৷ তারা আজও মানুষ মেরে চলেছে৷''
নাইংসহ প্রতিবাদীরা আজও স্মরণ করেন সেই সব হাজার হাজার মানুষদের, বিশেষ করে সেই শিক্ষার্থীদের, যারা ১৯৮৮ সালে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল৷
বদলাচ্ছেবিক্ষোভের ধরন
তিন দশক আগের সময়ের মতো এখনও সামরিক বাহিনী সহিংস পদ্ধতিতে দমন করছে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর, অভিযোগ স্থানীয়দের৷ প্রতিবাদীদের মতে, নয়শরও বেশি মানুষ মারা গেছেন সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের ফলে৷
কিন্তু তারপরও থামানো যায়নি প্রতিবাদ৷ ফ্ল্যাশ মবের মতো নতুন পন্থার সাহায্য নিচ্ছে প্রতিবাদীরা, যাতে করে খুব দ্রুত নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করা যায়৷ এই পন্থায় প্রতিবাদ করে জনগণের ভিড়ে মিশে যাওয়া সহজ বলে কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ছেন না অনেকে, জানাচ্ছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম৷ এছাড়া নানা ধরনের অনলাইন প্রচারণা ও সাংকেতিক প্রতিবাদ চালাচ্ছেন তারা৷ বর্তমান প্রতিবাদের জনপ্রিয় চিহ্ন হয়ে উঠেছে ‘আট আঙুলের স্যালুট'৷ চলমান প্রতিবাদে দেখা যাচ্ছে জনগণের হাতে ধরা ব্যানার, সেখানে লেখা ‘১৯৮৮ সালে ঝরা রক্তের ঋণ শোধ হবে ২০২১ সালে'৷
নতুনপ্রজন্মেরপুরোনোলড়াই
তেত্রিশ বছর আগে বিক্ষোভরত জনতার উদ্দেশ্যে গুলি চালায় সামরিক বাহিনী, বন্দি করা হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে৷
মান্দালায় শহরে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করা কো সাই উইন সংবাদসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘১৯৮৮ সালে আমাদের দেশ অনেক কিছু হারিয়েছে, ত্যাগ করেছে, অনেকে জীবন হারিয়েছেন৷ কিন্তু স্বৈরাচার এখানে এখনও জীবিত৷''