তথ্যপ্রযুক্তির হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আধিপত্যকে টক্কর দিতে ইইউ বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প নিয়ে ভাবছে, যা বাস্তবায়িত হলে তথ্যের দৌড়ে অনেকটাই এগোবে ইউরোপ৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার বিষয়ক কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন ও ইইউ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্গরেট ভেস্টাজের বুধবার ব্রাসেলসের একটি সংবাদসম্মেলনে জানান যে, শিগগিরই তথ্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কয়েকটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছেন তাঁরা৷ কীভাবে ইউরোপের নাগরিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থারা তাঁদের তথ্য আরো ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, তা-ই নিশ্চিত করবে ইইউ'র প্রস্তাবিত পরিকল্পনাগুলি৷
সংবাদমাধ্যমকে ব্রেটন বলেন যে, এই নীতিগুলির বাস্তবায়ন ইইউকে বিশ্বের ‘এক নম্বর তথ্য-মহাদেশ’ বানাতে সাহায্য করবে৷ এতে করে ২০১৬ সালে চালু হওয়া কঠোর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কোনো বদল না আসলেও ইউরোপের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও গবেষণা সংস্থার কাছে তথ্য আরো সহজলভ্য করে তোলা হবে৷ এই পদক্ষেপগুলি ইউরোপের ডিজিটাল অর্থনীতিতে মার্কিন ও চীনা আধিপত্য কমিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিব্যবস্থাকে বাড়তি সুযোগ দেবে বলে মনে করছেন ব্রেটন ও ভেস্টাজের৷
ভুয়া তথ্য বা খবর বুঝব কীভাবে?
গবেষণা বলছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে বিশ্বে অন্তত ৮০০ জন বা তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ ফলে খবর, তথ্য শেয়ারের সময় সতর্ক থাকতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে?
ছবি: Facebook
তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন
ভুয়া তথ্য ও খবর দ্রুত খুঁজে পাবার উপায় জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘ফুল ফ্যাক্ট’৷ ফেসবুকে কিছু শেয়ারের আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছে তারা৷
প্রথম প্রশ্ন
খবরটি কে দিয়েছে? প্রথমে নিজেকে এই প্রশ্নটিই করুন৷ সূত্র বিশ্বস্ত না হলে সেটা শেয়ার করবেন না৷ আর সূত্র নতুন হলে তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন৷
ছবি: imago images / ZUMA Press
দ্বিতীয় প্রশ্ন
কি যেন নেই? লিংকে ঢুকে পুরো খবরটা পড়ুন৷ ছবি, ব্যবহার করা নম্বর, কারও মন্তব্য এসব খেয়াল করুন৷ অনেক সময় সূত্রের উল্লেখ না করে মন্তব্য ব্যবহার করা হয় কিংবা কনটেক্সট ছাড়াই মন্তব্য দেয়া হয়৷ খবরের সঙ্গে থাকা ছবি কিংবা ভিডিও ভুয়া হতে পারে৷ ভিডিওতে ব্যবহৃত কণ্ঠ পরিবর্তিত থাকতে পারে৷
ছবি: Facebook/G.M. Masud Rana
তৃতীয় প্রশ্ন
খবরটি পড়ার পর আপনি কেমন অনুভব করছেন? যারা ভুয়া খবর ছড়ায় তারা মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে চায়৷ তারা জানে আপনাকে রাগিয়ে তুলতে পারলে কিংবা চিন্তিত করতে পারলে আপনি খবরটিতে ক্লিক করবেন৷ তাই শেয়ারের আগে নিজের অনুভূতিটা জানার চেষ্টা করুন৷ ভাল অনুভব করলে শেয়ার করুন৷ আর খটকা লাগলে অন্যান্য সূত্র দেখে যাচাইয়ের চেষ্টা করুন৷ ছবিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের শেয়ার করা একটি ভুয়া খবর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Facebook
ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট
ভারতের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘বুম লাইভ’কে বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে বিদ্যমান ছবি ও ভিডিওর যথার্থতা পর্যালোচনার দায়িত্ব দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে৷ www.boombd.com/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকেও (https://www.facebook.com/Boombangladeshnews) তাদের কাজ দেখা যায়৷
বিডি ফ্যাক্ট চেক
২০১৭ সালে কাজ শুরু করে এই ওয়েবসাইট (https://bdfactcheck.com/)৷ ফেসবুকেও তাদের একটি পাতা (https://www.facebook.com/bdfactcheck/) আছে৷ আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন, জনসভা ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করে বিডি ফ্যাক্ট চেক৷ এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভুয়া সংবাদ, ছবি কিংবা ভিডিও ভাইরাল হয় সেগুলোরও ফ্যাক্টচেক করে তারা৷
Fact খুঁজি
এটি বাংলাদেশের আরেকটি ফ্যাক্ট-চেক করা ওয়েবসাইট৷ http://factkhuji.org/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি তাদের একটি ফেসবুক পাতাও (https://www.facebook.com/factkhuji/) আছে৷
সতর্ক হন
করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসেই বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৮০০ জন বা তার চেয়েও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে ‘অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে৷ ফলে সামাজিক মাধ্যমে খবর বা তথ্য শেয়ারের আগে সবার একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/SOPA Images/A. K. Sing
8 ছবি1 | 8
যেভাবে স্বনির্ভর হবে ‘তথ্য মহাদেশ ইউরোপ’
একটি ‘ডাটা হাব’ বা তথ্যভাণ্ডার চালু করার কথা রয়েছে এই নতুন পরিকল্পনায়, যা ইউরোপের অভ্যন্তরীণ তথ্যকে সহজলভ্য করবে স্থানীয় সংস্থাদের কাছে৷ কিন্তু এবিষয়ে উঠছে তথ্যসুরক্ষার প্রশ্ন, যা ইউরোপের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়৷
এর উত্তরে, নতুন পরিকল্পনার ভূমিকা নিয়ে ভেস্টাজের বলেন, ‘‘ইউরোপের ভেতরে ইউরোপীয় সংস্থাদের ব্যবহারের জন্য মুক্ত তথ্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ আইন, যা মানুষের মধ্যে আস্থা ও ভরসা জোগাবে৷ তবে সব তথ্যই যে মুক্তভাবে ছেড়ে দিতে হবে, এমনটা নয়৷ কিন্তু যদি তা করা হয় এবং দেখা যায় যে সেই তথ্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ, সেক্ষেত্রে এই ধরনের তথ্যের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে৷’’
গুগল ও ফেসবুকের মতো বড় প্রযুক্তি প্লাটফর্মের বর্তমান মডেলের সামনে ইউরোপের এই ‘নিয়ন্ত্রিত অথচ মুক্ত' ধাঁচের মডেল নতুনত্ব বয়ে আনবে, বলে মত ভেস্টাজেরের৷ এইসব বিশেষ তথ্যের ভাণ্ডারকে তিনি বিদ্বেষী মনোভাব, ভুয়া খবর ও জাল পণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণেও কাজে লাগাতে চান৷ শুধু তাই নয়, নতুন পরিকল্পনা চালু হলে গুগল ও ফেসবুক যে অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তা-ও এই তথ্যভাণ্ডারের কাছে জমা দিতে হতে পারে৷
ব্রেটনের মত, এই ব্যবস্থার বাস্তবায়ন হলে লাভবান হবেন ইউরোপের ছোট ব্যবসায়ী ও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থারা৷ সাথে, লাভবান হতে পারে চিকিৎসা পরিষেবা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ থেকে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তিও, বলছে ইইউ৷
এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে খরচ হতে পারে মোট সাত থেকে এগারো বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৭০ হাজার কোটি থেকে এক লাখ দশ হাজার কোটি বাংলাদেশি টাকা)৷