ছোটবেলায় স্কুলে নামতা বা কবিতা মুখস্থ করতে হয়েছে অনেককেই৷ আজকাল কম্পিউটার আর স্মার্টফোনের যুগে প্রায় কিছুই মনে রাখার দরকার হয় না৷ কিন্তু স্মৃতিশক্তির প্রয়োজন মোটেই ফুরায়নি৷
বিজ্ঞাপন
আজকাল আর অচেনা শহরেও ঠিকানা মনে রাখতে হয় না৷ টেলিফোন নম্বর বা জন্মদিনও আলাদা করে মনে রাখার দরকার নেই৷ মস্তিষ্কের স্মৃতিভাণ্ডার এখন ‘আউটসোর্স' করা হচ্ছে স্মার্টফোন ও ডেটা গ্লাসের মধ্যে৷ মাথা খালি রাখাই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে৷ কিন্তু স্নায়ুবিজ্ঞানী বরিস কনরাড এই প্রবণতার বিপক্ষে৷ তাঁর মতে, ভালো স্মৃতিভাণ্ডার পেশাগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি৷ কনরাড বলেন, ‘‘স্কুলে থাকতে মনে হতো শেখার সীমা আছে৷ কখনো ভাবি নি, যে আমি নিজেই নিজের স্মৃতিভাণ্ডারের ক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারি৷''
বরিস কনরাড-এর স্মৃতিশক্তি বেশ প্রখর৷ তবে গিনিস বুক অফ রেকর্ড-এ স্থান পেতে তাঁর কোনো অসাধারণ ক্ষমতার প্রয়োজন হয়নি৷ সবটাই পেরেছেন অনুশীলনের কল্যাণে৷ তিনি বলেন, ‘‘যে কেউ, মানে যে কোনো সুস্থ মানুষ এটা করতে পারে৷ প্রতিভা বা বয়স কোনো বাধা নয়৷ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তির যথেষ্ট উন্নতি সম্ভব৷''
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ১২ উপায়
আপনি কি কাজের চাপে প্রায়ই এটা-সেটা ভুলে যাচ্ছেন বা আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে? এর পরিণাম কিন্তু হতে পারে ভয়ংকর৷ তাই বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জেনে নিন সতর্কতা এবং স্মৃতিশক্তিকে মজবুত করার কিছু উপায়৷
ছবি: jorgophotography - Fotolia.com
পর্যাপ্ত ঘুম
রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুম হলে তা বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মস্তিষ্কে বাঁধার সৃষ্টি করে, জানান রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. মাইকেন নেডেরগার্ড৷ তিনি জানান, এর জন্য জরুরি হচ্ছে গভীর ঘুম৷ এটা না হলে মস্তিষ্ক প্রায় সাত বছর বেশি বুড়িয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Colourbox
মস্তিষ্কের জন্য ঠান্ডা ঘরই ভালো
গরমের চেয়ে ঠান্ডায় স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ তিনগুণ বেশি থাকে৷ এ কথা জানান নিউ সাউথ ওয়েল্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলিয়ান মনোবিজ্ঞানী প্রফেসার ইয়োসেফ ফোরগাস৷ এছাড়া ঠান্ডা ঘর মাথাকেও ঠান্ডা রাখে, তাই ঘরের তাপমাত্রা কখনো ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রাখা ঠিক নয়, জানান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
গল্প শেষ থেকে শুরু করুন
একটি গল্প পড়ে পুরো গল্পটা মনে রাখুন৷ এবার শুরু থেকে না বলে শেষ বা পেছন থেকে গল্পটা মনে করতে থাকুন৷ এই পন্থা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল তো রাখবেই, করবে আরো শক্তিশালী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Endig
সঠিক জুতো পরে বেরিয়ে পড়ুন
নিয়মিত হাঁটাচলা বা জগিং শরীরকে ভালো রাখে – এ কথা কম-বেশি আমরা সকলেই জানি৷ সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী মার্ক ম্যাকডানিয়েল জানান, শুধু শরীর নয় হাঁটাচলা এবং জগিং ব্রেনকেও ফিট রাখে৷ তবে সবচেয়ে ভালো হয় সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটলে বা জগিং করলে৷
ছবি: Fotolia/ruigsantos
বিপরীত হাত ব্যবহারের অভ্যাস
যাঁরা ডান হাতে সব কিছু করেন, তাঁরা বাঁ হাতে আর যাঁরা বাঁ হাতে সব কিছু করেন, তাঁরা ডান হাতে সপ্তাহে অন্তত একবার সব কাজ করার চেষ্টা করুন৷ অর্থাৎ উল্টো হাতে খাওয়া-দাওয়া, দাঁতব্রাশ করা বা অন্যান্য টুকটাক ঘরের কাজ করার অভ্যাস করতে পারেন৷ এতেও ব্রেন সচল থাকে৷
ছবি: Fotolia/Photo_Ma
বন্ধুত্ব লালন করুন
মানুষের সাথে কথাবার্তা বলা বা টেলিফোনে যোগাযোগ মস্তিষ্ককে তরুণ রাখে৷ এই তথ্যটি জানিয়েছেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট ড. স্টুয়ার্ট রিচি৷ তিনি বলেন, দিনে মাত্র ১০ মিনিটের যোগাযোগই নাকি মানুষের স্মৃতিশক্তিকে বেশ জোড়ালোভাবে জাগিয়ে তুলতে সহায়তা করে৷
ছবি: Fotolia/szeyuen
প্রতিদিনের নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসুন
ব্রেনকে সব সময় নতুন কিছু শিখতে হয়৷ তা না হলে মস্তিষ্ক নির্জীব হয়ে যায়৷ তাই প্রতিদিনের রুটিন ভেঙে অন্যকিছু করুন৷ মাঝে মাঝে অন্য রাস্তা দিয়ে কর্মস্থলে বা কলেজে যান৷ নতুন কোনো ভাষা বা যন্ত্র বাজানো শিখুন৷ এতে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি শতকরা ৭৫ ভাগ কমে যায়৷ নিউ ইয়র্কের আলবার্ট আইনস্টাইন মেডিকেল কলেজের করা এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এ তথ্য৷
ছবি: Fotolia/Peter Atkins
পায়ের আঙুলের ম্যাসাজ
প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে পায়ের আঙুল ম্যাসাজ করুন৷ প্রথমে আঙুলের ওপর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে টিপে টিপে নীচের দিকে যান৷ এই ম্যাসাজ মস্তিষ্কের কোষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে৷
ছবি: Elenathewise - Fotolia.com
শপিং লিস্ট
বাজারে বা দোকানে যাওয়ার আগে কী কী কিনবেন তার একটি লিস্ট তৈরি করে নিন এবং ইচ্ছে করেই সেটা বাড়িতে রেখে শপিংয়ে চলে যান৷ ফিরে এসে দেখুন ক’টা ভুলে গেছেন আর ক’টা মনে রাখতে পেরেছেন৷ এই নিয়ম যত বেশি করা হবে, ব্রেন তত দীর্ঘ সময় মস্তিষ্কে ‘সেভ’ করে রাখতে পারবে তথ্যগুলো৷
ছবি: imago/blickwinkel
দুই কাপ কফিই যথেষ্ট
দিনে দুই কাপ কফি পান করলে আলৎসহাইমার ঝুঁকি কমে শতকরা ২০ ভাগ৷ একটি সমীক্ষার ফলাফল থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন ডিমেনশিয়ার পর্তুগিজ গবেষক ড. কাটারিনা সান্তোস৷ কারণ কফি পান তিরিশের বেশি বয়সিদের মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে অনেকটাই রোধ করে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে৷
ছবি: Fotolia/Kim Schneider
রুটিন চেকআপ
হৃদপিণ্ডের নানারকম অসুখের ঝুঁকির কারণেও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে৷ তাই বছরে একবার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টোরলের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত৷
ছবি: Fotolia/Andrei Tsalko
মস্তিষ্কের খাবার
আখরোটের ‘পলিফেনল’ ব্রেনের স্মৃতি শক্তি বাড়িয়ে দেয়৷ তাছাড়াও সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, পালং শাক, ডার্ক চকলেট, গ্রিন টি, অলিভ অয়েল, শাক-সবজি ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই জরুরি৷
ছবি: picture alliance/Beyond
12 ছবি1 | 12
বিশ্ব স্মৃতিশক্তি চ্যাম্পিয়ন ৫২টি তাসের বিন্যাস মুখস্থ করতে চান৷ সাধারণ মানুষের কাছে যা অসম্ভব মনে হয়, তাঁর কাছে সেই বিষয়টি মোটেই অস্বাভাবিক নয়৷ শেখার প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের কাছে কাজের মতো৷ প্রতিটি নতুন তথ্য স্নায়ুকোষগুলির মধ্যে পথগুলি সম্প্রসারণ করে ডেটা হাইওয়ে সৃষ্টি করে৷ তার যত ব্যবহার হয়, ভবিষ্যতে তত দ্রুত জ্ঞানের নাগাল পাওয়া যায়৷
তাসের পরীক্ষার জন্য কনরাড-এর এক বিশেষ কায়দা আছে৷ একবার দেখে নিয়ে তিনি শুধু স্মৃতিশক্তি কাজে লাগিয়ে সব তাস আগের মতো হুবহু সাজিয়ে ফেলতে পারেন৷ এমন অসাধারণ কাজ করতে হলে মস্তিষ্ককে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে কাজ করতে হয়৷ তাস মুখস্থ করতে কনরাড-এর রেকর্ড ৩০ সেকেন্ড৷ একেবারে ক্রমানুসারে তাস সাজিয়েছেন তিনি৷ কোনো ভুল হয় নি৷ এর জন্য জিনিয়াস হবার দরকার নেই, অত্যন্ত সহজ উপায়ে এটা করা সম্ভব৷ বরিস কনরাড বলেন, ‘‘সব ধরনের মেমারি ট্রেনিং-এর ভিত্তি একই৷ সেটা হলো ছবির মাধ্যমে ভাবা৷ তাতে বাড়তি অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ ফলে বেশি জিনিস মনে রাখা সম্ভব৷''
কিন্তু ৫২টি তাসের বিন্যাস মনে রাখার উপায় কী? কনরাড প্রতিটি তাসের জন্য মনে আলাদা ছবি তৈরি করেন৷ সেগুলি দিয়ে একটি রুট তৈরি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথম তাসটি রুইতনের ৫৷ তার জন্য আমি স্ট্যাচুর হিরোকে কল্পনা করলাম৷ সে একচাকা সাইকেলে দাঁড়িয়ে৷ তারপর এল হরতনের ৯৷ তার জন্য আমি সিঁড়ির ছবি বেছে নিলাম৷ কল্পনা করলাম, সিঁড়িতে বসে কেউ চুমু খাচ্ছে৷ তারপর এলো হরতনের ৩, যেটা কানের মতো দেখতে৷ কল্পনা করলাম, দেয়াল থেকে অনেক কান বেরিয়ে আছে৷ এভাবেই বাকিগুলিও ছবি তৈরি হয়৷''
এ এক অসাধারণ সাফল্য, সবারই অনুকরণের যোগ্য৷
মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর পাঁচটি খাবার
কিছু খাবার এত সুস্বাদু যে যতই খাওয়া হোক, তৃপ্তি যেন মেটেনা৷ কিন্তু সব খাবার তৃপ্তি মিটিয়ে খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি৷ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জনপ্রিয় পাঁচটি খাবার একটু বেশি খেলে মস্তিষ্কের জটিল রোগও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Kesu
গরুর মাংস, খাশির মাংস...
মাংস অনেকেরই প্রিয়৷ গরু বা খাশির মাংস, চিকিৎসকরা যেগুলোকে ‘রেড মিট’ বলেন, সেগুলো তো কারো কারো প্রতিদিনের খাবার৷ এসব মাংস প্রতিদিন তো নয়ই, সপ্তাহে চার বারের বেশি না খাওয়াই উত্তম৷ গবেষকরা বলছেন, ‘রেড মিট’ সপ্তাহে চারবারের বেশি খেলে আলৎসহাইমার ঝুঁকি বাড়ে৷
ছবি: HLPhoto/Fotolia.com
মাখন বেশি খেলেও মহাবিপদ
দিনে এক চা চামচের পরিমাণ মাখন বা (বিভিন্ন প্রাণীর চর্বি থেকে তৈরি) মার্জারিন খাওয়া যেতে পেরে, কিন্তু এর বেশি হলেই বিপদ৷ গবেষকরা বলছেন, মাখন বা মাখনজাতীয় খাবার না খেয়ে খাদ্য তালিকায় অলিভ অয়েল যোগ করা সবচেয়ে নিরাপদ৷ তাহলে মস্তিষ্কের রোগের আশঙ্কা খুব একটা থাকবেনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Eebener
বেশি খেলে পনিরও ক্ষতিকর
পনির খুব সুস্বাদু৷ মস্তিষ্কের জটিল রোগ আলৎসহাইমার থেকে দূরে থাকতে চাইলে সপ্তাহে মাত্র একবার পনির খেতে হবে৷
ছবি: Fotolia/Volker Gerstenberg
তেলে ভাজা এবং ফাস্টফুড
তেলে ভাজা খাবার এমনিতেই নানা রোগের কারণ৷ ফাস্টফুডও তাই৷ এ ধরণের খাবার ডাক্তাররা এমনিতেই কম খেতে বলেন৷ আলৎসহাইমার-এর ঝুঁকি আছে এমন লোকদের তো এসব থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতেই হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেস্ট্রি এবং অন্যান্য মিষ্টি খাবার
মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি৷ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য তো মিষ্টি এক অর্থে ‘হারাম’, অন্যদেরও উচিত মিষ্টি কম খেয়ে মস্তিষ্কটাকে নিরাপদ রাখা৷ বেশি মিষ্টি খাচ্ছেন? তাহলে আলৎসহাইমারের সঙ্গে কিন্তু আপনার দূরত্ব কমছে!