মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাদেক হোসেন খোকার ভাইবারে কথোপকথন কিভাবে রেকর্ড হয়েছে, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা৷ বিষয়টি জানতে কথা বলি একাধিক বিশেষজ্ঞ আর ‘ভাইবার’-এর সঙ্গে৷ পাওয়া যায় বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না এবং বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার মধ্যকার কথোপকথন, যা গোপনে রেকর্ড করে ফাঁস করা হয়েছে, গোটা বাংলাদেশে আলোড়ন তুলেছে৷ এই ফোনালাপের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক৷ তবে বিষয়টির কারিগরি দিকও রয়েছে৷
কিভাবে রেকর্ড হলো?
বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো ফোনালাপ ফাঁস হলো যা প্রচলিত মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সংঘটিত হয়নি৷ সাধারণত মোবাইলে কথা বললে সেটা সহজে রেকর্ড করতে পারে গোয়েন্দারা কিংবা তৃতীয় কোনো পক্ষ৷ কিন্তু ভাইবার-এর মতো একটি অ্যাপ, যেটা ব্যবহার করে কথা বললে তৃতীয় কারো পক্ষে সেটি শোনা কিংবা রেকর্ড করা সম্ভব নয় বলেই এতদিন বিশ্বাস করা হতো, সেই ফোনালাপ তাহলে রেকর্ড করা হলো কিভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই মঙ্গলবার সরাসরি ভাইবার-এর সঙ্গে যোগাযোগ করি৷ তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য চাই৷ ভাইবার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আলোচিত ফোনালাপের বিস্তারিত তথ্য জানতে চায়৷ তাদের কাছে সেসব তথ্য দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মেলে আনুষ্ঠানিক উত্তর৷
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
বাংলাদেশে টানা অবরোধ ও হরতালের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা৷ ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে৷ শুধু অর্থনীতি নয়, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় মুষড়ে পড়েছে পরিবহন ও শিক্ষা ব্যবস্থাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন
পুরনো ঢাকার বাবু বাজারে কাগজ বোঝাই একটি ট্রাকে জ্বলছে দুষ্কৃতিকারীদের দেয়া পেট্রোল বোমার আগুন৷ গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চলছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ৷ ডাকা হচ্ছে হরতালও৷ অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে আলোচিত পেট্রোল বোমা৷ শুধু পেট্রোল বোমার আগুনেই পুড়ে মরেছে কমপক্ষে ৬৫ জন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশ প্রহরায় চলছে পরীক্ষা
ঢাকার মতিঝিল আইডিয়িাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পুলিশ প্রহরা৷ চলমান এ অবরোধ-হরতালে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তার মধ্যে শিক্ষার্থীরা অন্যতম৷ বর্তমানে সারা দেশে চলা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন তাই অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে৷ টানা অবরোধের মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে চলছে পরীক্ষা৷ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূরপাল্লার বাস নেই বললেই চলে
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলির ডাকা অবরোধে বাংলাদেশের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্ত৷ দুপুর বেলায় তোলা এ ছবিতে মহাসড়কটি প্রায় যানবাহন শূন্য৷ কিন্তু সাধারণ সময়ে এ সড়কটি থাকে যানবাহনে ভরা৷ বাংলাদেশে চলমান অবরোধে দূর পাল্লার গাড়ি চলাচল কমে গেছে বহুলাংশে৷ একের পর এক পেট্রোল বোমার ঘটনায় ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাচ্ছেন না অনেক মালিকই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিজিবি-র টহল পর্যাপ্ত নয়
অবরোধের মধ্যে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোয়, মানে ঢাকার বাইরে বিজিবি-র টহল থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য৷ এছাড়া সম্প্রতি রাত ন’টার পরে বাস চলাচলে সকলকে নিরুৎসাহ করার কারণে বাস মালিকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকায় অস্বাভাবিক নয় যানজট
বাংলাদেশে চলমান এই অবরোধে ঢাকার ভেতরের সড়কের দৃশ্য অবশ্য আলাদা৷ যান চলাচল অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও, অনেক জায়গাতেই যানজট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসযাত্রীরা
ঢাকার ফার্মগেটে অফিস শেষে গাড়ির অপেক্ষায় বাড়িমুখী মানুষের ভিড়৷ টানা অবরোধে গণ পরিবহন ব্যবস্থা বেহাল হলেও, অর্থাৎ গাড়িঘোড়ার চলাচল কম থাকাতে দুর্ভোগ বেড়েছে অফিসমুখী ও অফিস ফেরত মানুষের৷ অফিসে যেতে বা অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সাধারণ মানুষ তাই পড়ছেন দুর্ভোগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
অবরোধে নদীপথের ভিন্ন চিত্র
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদীবন্দর ঢাকার সদরঘাটের চিত্র এটি৷ গত একমাসেরও বেশি সময়ের এই অবরোধে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য বড় কোনো সহিংসতা ঘটেনি নদীপথে৷ তাই নদীপথে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিকই আছে৷ ঢাকা থেকে প্রধানত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যাচ্ছে না দূরপাল্লার বাসগুলো
বিএনপি ও সমমনা দলের জোটসমূহের ডাকা হরতাল-অবরোধে ঢাকার অন্যতম প্রধান বাস স্টেশন গাবতলীর দৃশ্য এটি৷ বেশিরভাগ দূর পাল্লার রুটের বাসই এ স্টেশনে পার্ক করে রাখা৷ হরতাল-অবরোধে দূর পাল্লার বাস চলাচল অনেকাংশেই বন্ধ আছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
খদ্দেরহীন এক রেস্তোরাঁ
ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশনের খদ্দেরশূন্য মোহাম্মাদীয়া রেস্তোরাঁ৷ অবরোধের কারণে এ রেস্তোরাঁর লোকবল ১৬ জন থেকে ৮ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ বাকি যে আটজন আছেন তাঁদেরও নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না মালিক৷ গাবতলী স্টেশন থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল কম থাকায় এ রেস্তোরাঁটি দিনের বেশিরভাগ সময় খালি থাকছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ
অবরোধ আর হরতালকারীদের প্রধান লক্ষ্য সড়কে চলাচলকারী বাস আর ট্রাক৷ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগেই যাত্রীবাহী বাস কিংবা ট্রাকে৷ এতে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পোড়ায় ক্ষত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছেন আরো শতাধিক সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
কমলাপুর রেল স্টেশনে অপেক্ষায় যাত্রীরা
অবরোধে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করলেও, সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ৷ বিভিন্ন সময়ে অবরোধকারীদের রেল লাইনের ‘ফিশপ্লেট’ খুলে ফেলার কারণে কয়েকটি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনায় ট্রেনের গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে৷ তাই বেশিরভাগ ট্রেনই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন৷
ছবি: DW/M. Mamun
খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা
টানা অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ফুটপাথের ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা৷ স্বল্প পুঁজির এ সব ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে অনেকেরই৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুঁজি ভেঙে চলছে যাঁর সংসার
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকার ফুটপাথে কম্বলের ব্যবসা করেন গাজীরুল ইসলাম৷ দুপুরবেলা পর্যন্ত এ দিন তাঁর বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৭’শ টাকার একটি কম্বল৷ তাও তার কেনা দামের থেকে ৩০০ টাকা কম৷ লাভ তো দূরের কথা সংসার চালাতে এখন পুঁজি টুকুনিই ভরসা৷
ছবি: DW/M. Mamun
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রই যখন ভরসা
ঢাকার নবাবপুর থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ফিরছেন এক গাড়ি চালক ও তাঁর সহকারী৷ টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা হিসেবে নিজেদের গাড়িতে এখন থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
তাৎক্ষণিক ম্যাসেজ এবং ভিওআইপি অ্যাপটির কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়, ভাইবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এমন কোনো ত্রুটির কথা তাদের জানা নেই, যেটার সুযোগ নিয়ে ব্যবহারকারীর কথোপকথন এভাবে রেকর্ড করা সম্ভব হতে পারে৷
ভাইবার অ্যাপের মাধ্যমে যে কথোপকথন বা ভয়েস ডাটা পরিবহন হয় তা ‘স্ক্রাম্বেল' করা থাকে এবং টেক্সট চ্যাটগুলো থাকে ‘এনক্রিপ্ট' অবস্থায়৷ ভাইবার লিখেছে, ‘‘তাদের পক্ষে এটা বিশ্বাস করা অত্যন্ত কঠিন যে তাদের অ্যাপ-এর কোনো দুর্বলতার কারণে তৃতীয় কোনো পক্ষ ভাইবার-এর কথোপকথন রেকর্ডে সক্ষম হচ্ছে৷''
ভাইবার-এর বক্তব্যে একটা ছোট্ট ফাঁকা রয়েছে৷ তারা বলেনি যে তাদের ‘স্ক্রাম্বেল' বা ‘এনক্রিপ্ট' করা তথ্য কোনোভাবেই তৃতীয় কারো পক্ষে ‘ইন্টারসেপ্ট' বা ‘ডিকোড' করা সম্ভব নয়৷ ফলে এই সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, খুবই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কোনো ‘সার্ভিলেন্স' সিস্টেম ব্যবহার করে ভাইবারের কথোপকথনও রেকর্ড সম্ভব হতে পারে৷ নিরাপত্তার এই দিকটা নিয়ে একটু পরে আলোচনা করছি৷
সম্ভাব্য তিন উপায়
একাধিক তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং নজরদারি ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে মান্না এবং খোকার মধ্যকার কথোপকথন রেকর্ডের তিনটি সম্ভাব্য উপায়ের কথা জানা গেছে৷ যাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাঁদের কেউ কেউ নিজেদের নাম প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করেছেন৷ তাই পরিচয় যতটুকু প্রকাশ সম্ভব, ততটুকুই প্রকাশ করা হয়েছে৷ উপায়গুলো হচ্ছে:
১. অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর ফোনসেটে সহজেই বিভিন্ন ধরনের স্পাই অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা সম্ভব৷ সেক্ষেত্রে কেউ হয়ত মান্না বা খোকার মোবাইল ফোনসেটে সেটা সেটআপ করে দিয়েছেন৷ আর সেই অ্যাপ্লিকেশন সকল ধরনের কথোপকথন, সেটা ভাইবার কিংবা স্কাইপ কিংবা সাধারণ ফোনকল – যাই হোক না কেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড করেছে৷ এটা সবচেয়ে সহজ উপায় এবং কার্যত যে কেউ করতে পারেন৷ তবে একটু সতর্ক হলে সেটা ধরা সম্ভব৷
২. দ্বিতীয় উপায়টি প্রথমটির মতো৷ তবে কিছুটা কঠিন৷ এক্ষেত্রেও স্পাই সফটওয়্যার ঢুকিয়ে দেয়া হয় কাঙ্খিত ব্যক্তির মুঠোফোনে৷ তবে দূর থেকে, ভিন্ন কোনো উপায়ে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘স্পাইং ইউটিলিটিগুলো সোশ্যাল টিকস ব্যবহার করে রিমটলি ইন্সটল করা সম্ভব৷ এবং যেহেতু এগুলো গোপনে ফোনের মধ্যে চলতে থাকে, তাই সাধারণ ব্যবহারকারীর পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব৷''
তথ্য প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আলমাস জামানও ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন একথা৷ তিনি বলেন, ‘‘রিমোট স্পাইওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন কোনো ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমে একবার ইন্সটল হলে সে ডিভাইসটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব এবং এক্ষেত্রে হ্যাকার ঘরে বসে সব তথ্য পেতে পারেন৷ বর্তমানে হ্যাকাররা এমন রিমোট স্পাইওয়্যার বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড গেম ও সাধারণ অ্যাপ্লিকেশনে লুকিয়ে রাখে৷''
৩. তৃতীয় উপায়টি অত্যন্ত জটিল৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সর্বাধুনিক মোবাইল ফোন নজরদারি উপকরণ কিনেছে৷ একাধিক তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, মান্না ও খোকার কথোপকথন এ সব উপকরণ ব্যবহার করে রেকর্ড করা হয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা৷ ঢাকায় গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করেন এমন একজন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশে সরকার সাম্প্রতিক যে সার্ভিলেন্স ক্যাপাসিটি উন্নয়ন করেছে তাতে টার্গেট ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সব ধরনের অ্যাকটিভিটি মনিটর করা সম্ভব৷ ফোন, টেক্সট, জিমেইল, ভাইবার, হোয়াটসআপ সবকিছুই মনিটর করা সম্ভব৷''
আলমাস জামানও স্বীকার করেছেন, ‘‘সার্ভিলেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে এটা করা সম্ভব৷ রিমোট স্পাইওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন থেকে এ ধরনের সার্ভিলেন্স সিস্টেম কয়েকগুণ শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং যে কোনো অপারেটিং সিস্টেম এর নিরাপত্তা ভেঙে ফেলতে পারে৷'' এই প্রক্রিয়ায় বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেয়া হয়ে থাকতে পারে বলেও মত দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ৷
মান্না ও খোকার মধ্যকার ভাইবার কথোপকথন কিভাবে রেকর্ড হয়ে থাকতে পারে তাঁর একটি সম্ভাব্য উপায় ভাইবার-ও জানিয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এই দু'জনের কারো একজনের বা উভয়ের মোবাইল ফোন ‘সার্ভিলেন্স ইক্যুইপমেন্ট' ব্যবহার করে ‘ট্যাপ' করা হয়ে থাকতে পারে৷ আর সেক্ষেত্রে শুধু ভাইবার নয়, ফোনগুলোতে যে অ্যাপই ব্যবহার করা হোক না কেন, তা রেকর্ড করা সম্ভব৷
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ভাইবার-এর বক্তব্যের সঙ্গে তাঁদের বক্তব্যের মিল পেয়েছি আমি৷ পৃথক পৃথকভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে৷ তবে উপায় যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের গোয়েন্দারা এখন প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছেন, মান্না-খোকার ফোনালাপ ফাঁস তার পরিষ্কার প্রমাণ৷ আর এভাবে ভবিষ্যতে আরো অনেক ফোনালাপ ফাঁস হলে আমি অন্তত বিস্মিত হবো না৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷