বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখনো অন্যের সাহায্য নিয়েই তারা বাসায় প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করেন। বাসায়ই মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
প্রতিদিন চিকিৎসকেরা তার বাসায় যানছবি: picture-alliance/dpa/ANN/The Daily Star
বিজ্ঞাপন
দলের মহাসচিব ও কয়েকজন সিনিয়র নেতা ছাড়া অন্য কেউ তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান না। আর তাও প্রয়োজন হলে তিনিই খবর দেন। তার বাসায় নিয়মিত যান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ হাসপাতালে যান গত ১২ জুন। ওই দিন মধ্যরাতে তিনি তার গুলশানের ভাড়া বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পাঁচ দিন পর ১৭ জুন তিনি ফিরোজায় ফেরেন। ওই সময় তার কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করা হয়। তার চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, "মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে ম্যাডামকে এখন বাসায়ই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।” খালেদা জিয়া পুরনো লিভার সিরোসিস, অস্টিও আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। তার মেরুদণ্ড, ঘাড় ও হাতে সমস্যা, হাঁটুর সমস্যাসহ আরো কিছু শারীরিক জটিলতা আছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হন। গত বছরের জুন মাসে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান,"প্রতিদিন চিকিৎসকেরা তার বাসায় যান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তার চিকিৎসার জন্য যা দরকার তা করা হয়।”
‘রোজায় আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সন্তানসহ তার সঙ্গে ছিলেন’
This browser does not support the audio element.
তিনি বলেন,"এখনো তিনি একা কিছু করতে পারেন না। তবে অন্যের সহায়তা নিয়ে সব কাজকর্ম করতে পারেন।” অন্যের সহায়তা নিয়ে তিনি মাঝেমধ্যে দোতলার বারান্দায় যান। তবে নিচে কখনো নামেন না।
খালেদা জিয়ার কাছাকাছি থাকেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া বাসায় মোটামুটি স্বাভাবিক খাবারই খান। তার বাসায়ই রান্না হয়। তবে তার বোন এবং ছোট ভাইয়ের বাসা থেকে মাঝে মাঝে খাবার পাঠানো হয়। তার বোন সেলিনা ইসলামের ছেলের বউ এবং ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী প্রায় নিয়মিত বিকেলে তার বাসায় যান। খাবারও নিয়ে যান। আর গত রোজার পুরো এক মাস তার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলি রহমান। তিনি রোজার ঈদের পর লল্ডন চলে যান। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডা. আল মামুনও তার বাসায় যান। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান লন্ডন থেকে তার নিয়মিত খোঁজ নেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।
গত কোবানির ঈদে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় দেখা করেন। আর ১২ জুলাই একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার আগে ১০ জুলাই মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় দেখা করেন। আর তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং তার প্রেস উইং-এর সদস্যদের সঙ্গে তিনি প্রয়োজন হলে ডেকে কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং-এর সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান,"তার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে তার বোন, তার ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী-এরা তার বাসায় যান। গত রোজায় মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী দুই সন্তানসহ পুরো মাস তার সঙ্গে ছিলেন। তারা ঈদের পর চলে যান।তবে দলের নেতাদের মধ্যে মহাসচিবকে প্রয়োজন হলে তিনি ডেকে কথা বলেন। আর কেউ দেখা করার অনুমতি পান না। তবে গত কোরবানির ঈদে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতি ঈদেই তারা দেখা করতে পারেন। এর বাইরে আমার দেখা মতে মহাসচিব ছাড়া আর কেউ দেখা করেন না।”
খালেদা জিয়ার চার বছর
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হন খালেদা জিয়া৷ এরপর থেকে তিনি কারাগার, হাসপাতাল ও বাসায় আছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
মামলার রায়
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত৷ একই মামলায় তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ পরে আপিলে খালেদার কারাদণ্ডের মেয়াদও বেড়ে ১০ বছর হয়৷ সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকার রমনা থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ ছবিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
অভিযোগপত্রে যা বলা হয়েছিল
১৯৯১ সালে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এতিমদের সহায়তায় গঠিত ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে’ চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা জমা হয়েছিল৷ কিন্তু ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঐ অর্থ দেশের প্রতিষ্ঠিত কোনো এতিমখানায় দেয়া হয়নি৷ পরে ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ গঠন করে সেখানে দুই কোটির বেশি টাকা ট্রান্সফার করে সেটা আসামিরা আত্মসাত করেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
রায় ঘোষণার দিনটি যেমন ছিল
পুরো রাজধানীতে পুলিশের সতর্ক পাহারা ছিল৷ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, হাইকোর্ট ও বকশিবাজারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল৷ দুপুর ১২টায় গুলশানের বাসা থেকে বকশিবাজারের আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হন খালেদা জিয়া৷ পথে কাকরাইল ও চাঁনখারপুলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়৷ এই সময় বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আদালত থেকে কারাগারে
রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ২০১৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ঐ কারাগারটিকে ‘সাবজেল’ ঘোষণা করেছিল সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কারাগার থেকে হাসপাতালে
চিকিৎসকদের পরামর্শে ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল৷ সেখানে টানা এক মাস দুই দিন চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
বিএসএমএমইউতে যেতে আপত্তি
২০১৯ সালের ১০ মার্চ খালেদার চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ প্রস্তুত করা হয়েছিল৷ কিন্তু তিনি সেখানে যেতে রাজি হননি৷ খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANN/The Daily Star
অবশেষে আবারও বিএসএমএমইউ
কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন৷
ছবি: Bdnews24.com
আবারও কারাদণ্ডের রায়
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার জনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় মামলায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Jahan
অবশেষে মুক্তি
শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়ে ২৫ মাস কারাভোগের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া৷ একদিন আগে খালেদাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ শর্ত হলো এই সময়ে খালেদাকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে৷ তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না৷
ছবি: bdnews24
নির্বাহী আদেশে মুক্তি
খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থতা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিয়েছেন বলে সেই সময় জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের৷
ছবি: Asif Mahmud Ove
চার দফা সময় বৃদ্ধি
২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়েছিল৷ এরপর চার দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ ছবিতে খালেদা জিয়ার বাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Hossain
এটা এখন আইনের ব্যাপার: প্রধানমন্ত্রী
১৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি এটাই কি বেশি নয়?’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি৷ ... এখানে আমার কিছু করার নাই৷ আমার যেটা করার, আমি করেছি৷ এটা এখন আইনের ব্যাপার৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
স্মারকলিপি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে স্মারকলিপি দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা৷
ছবি: bdnews24
তিনবার হাসপাতালে
২০২০ সালের মার্চে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খালেদা জিয়া৷ এর মধ্যে গত এপ্রিলে তিনি করোনা ভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
খালেদা কী অসুখে ভুগছেন
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘খালেদা জিয়া এখন ক্রনিক কিডনি ডিজিজে যেমন ভুগছেন তেমনি ক্রনিক লিভার ডিজিজেও ভুগছেন৷ এখন তার লিভারের সমস্যা বেশি হচ্ছে৷ যার কারণে জিআই (পরিপাকতন্ত্র) ব্লিডিং বেশি হচ্ছে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস আছে৷ আর রাইট হার্ট ফেইলিউরসহ আরো কিছু শারীরিক অসুস্থতা বা জটিলতা আছে৷’’
ছবি: Bdnews24.com
স্লো পয়জনিং?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘...একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে দুই বছরের বেশি সময় আটক রাখা হয়েছিল৷ পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি৷ এখন অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সেই সময়ে খালেদা জিয়াকে কোনো স্লো পয়জনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না, আমরা পরিষ্কার করে জানতে চাই৷’’
ছবি: Asif Mahmud Ove
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলন
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী৷ এরপর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘আমি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছি৷ যা দেখেছি, সাম্প্রতিককালে এত মর্মান্তিক ঘটনা আমি দেখিনি৷ খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় দিন, কয় মিনিট বাজবেন, তা আমি বলতে পারব না৷ এটা বলতে পারি, তিনি ক্রান্তিকালে আছেন, তাকে হত্যা করা হচ্ছে৷’’
ছবি: DW/S. Hossain
17 ছবি1 | 17
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,"বিএনপির সমাবেশ ও আন্দোলনে যোগ দেয়ার আগ্রহ তার হয়তো আছে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা সম্ভব হচ্ছে না। আমি গত কয় বছরে তাকে কখনোই দেখিনি যে তিনি রাজনীতি নিয়ে তিনি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি এখন নিজে একা হাঁটাচলা করতে পারেন না। অন্যের সহায়তা লাগে। তাই কখনো নিচেও নামেন না। দোতলায়ই থাকেন।”
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা আছে। এর মধ্যে দুই মামলায় তিনি কারা ভোগ করছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যোরিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর নাইকো মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান,"ম্যাডামকে যে দুইটি মামলায় দণ্ড দেয়া হয়েছে তার আপিল পেন্ডিং আছে। তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা আছে পাঁচটি। আর দুদকের মামলা আছে পাঁচটি। এগুলোর মধ্যে আছে নাইকো, গ্যাটকো, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির মামলা। নাইকো মামলায় বিচারিক আাদালত অভিযোগ গঠন করেছে। আমরা উচ্চ আদালতে অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আপিল করেছি, আপিল পেন্ডিং আছে। আর বাকি মামলাগুলো ফৌজদারি । তিনি সেগুলোতে হুকুমের আসামি। এগুলো হামলা-ভাঙচুরের মামল। কুমিল্লা, খুলনা, ঢাকায় এরকম মামলা আছে। ওই মামলাগুলো নিয়ে আপাতত কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, "খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে আছেন নির্বাহী আদেশে। ফলে তার সঙ্গে দেখা করা বা তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে আদালত এখন আর কনসার্ন নয়।”
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে চিকিৎসার ছয় মাসের সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর থেকে তার পরিবারের আবেদনে দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে। সেভাবেই তিনি কারাগারের বাইরে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা তাকে দেশের বাইরে নিতে চাইলেও সে অনুমতি মেলেনি।
বাংলাদেশে নারীদের ‘প্রথম’
প্রথম ওয়ান ডে সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়েন ফারজানা হক পিঙ্কি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৫৬ বলে শতরান করেন তিনি। ছবিঘরে থাকছে এমনই কিছু নারীর কথা যারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঙ্গনে ‘প্রথম’।
ছবি: Andrew Cornaga/Action Plus/IMAGO
প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷ ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তার দল ক্ষমতায় আসে৷
ছবি: Getty Images
প্রথম শতরান
ওয়ান ডে সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়লেন ফারজানা হক পিঙ্কি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় ওয়ান ডেতে ১৫৬ বলে শতরান করলেন তিনি। ৫০ ওভারের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে পুরো ইনিংসে একাই ব্যাট হাতে গোটা দলকে টেনে নিয়ে যান ফারজানা। ম্যাচের একেবারে শেষ বলে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ১০৭ রানে আউট হন তিনি।
ছবি: Morgan Hancock/NurPhoto/picture alliance
প্রথম নারী স্পিকার
২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী৷
ছবি: bdnews24.com
প্রথম নারী বিচারপতি
বিচার বিভাগের ইতিহাসে হাইকোর্টের প্রথম নারী বিচারক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা৷ ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে বিচার বিভাগে যোগ দেন৷ প্রথম নারী জেলা জজ তিনি, হাইকোর্টেও প্রথম নারী বিচারপতি৷ ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন৷ ২০২১ সাল থেকে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে আছেন৷ এই পদে নিয়োগ পাওয়া প্রথম নারীও তিনি৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কবিতা খানম৷
ছবি: bdnews24.com
ফুটবলে নারীদের প্রথম সাফ জয়
১৯ সেপ্টেম্বর স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জেতেন বাংলাদেশের মেয়েরা৷
ছবি: Mir Farid
ক্রিকেটে নারীদের প্রথম এশিয়া কাপ জয়
২০১৮ সালে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল৷
ছবি: Suhaimi Abdullah/Getty Images
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য
২০১৪ সালের ২ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ফারজানা ইসলাম৷ তিনিই কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হওয়া প্রথম নারী৷
ছবি: bdnews24.com
বিজিএমইএ-র প্রথম নারী সভাপতি
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ-র প্রথম নির্বাচিত নারী সভাপতি হয়েছিলেন রুবানা হক৷ ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি৷
ছবি: bdnews24.com
প্রথম বেসামরিক নারী বৈমানিক
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিমান চালানোর অনুমতি পেয়েছিলেন সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা৷ ১৯৮৪ সালে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি ফকার বিমান অবতরণ করাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাইলট কানিজসহ বিমানের ৪৫ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Ramany
প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক
২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর বিমানবাহিনীর পাইলট অফিসার তামান্না-ই-লূৎফী দেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক হিসেবে সফলভাবে একটি হেলিকপ্টার ওড়ান৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে
২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন বিমানবাহিনীর দুই ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফী (বামে) ও নাইমা হক৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
প্রথম নারী প্যারাট্রুপার
২০১৩ সালে সিলেট সেনানিবাস সংলগ্ন পানিছড়া ড্রপ জোনে এক হাজার মিটার উচ্চতা থেকে প্যারাস্যুট নিয়ে নিরাপদে মাটিতে নেমে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্যারাট্রুপারের গৌরব অর্জন করেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস৷ (ছবিটি প্রতীকী)
ছবি: Gavriil Grigorov/TASS/dpa/picture alliance
প্রথম এভারেস্টজয়ী নারী
প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্ট জয় করেন নিশাত মজুমদার৷
ছবি: Lakpa Sherpa/AFP/Getty Images
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ শৃঙ্গে
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন৷ ২০১১ সালে আফ্রিকার কিলিমানজারো দিয়ে শুরু করে ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর ওশেনিয়ার কার্সটেসনস পিরামিড দিয়ে শেষ করেছিলেন ওয়াসফিয়া৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রথম নারী নাবিক
২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ১৩ জন নারী নাবিক কাজ শুরু করেন৷ তারা সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করে সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি পান৷ এই নারী মেরিন ক্যাডেটরা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজে যোগ দিয়েছিলেন৷
ছবি: Reuters
প্রথম নারী ট্রেন চালক
২০০৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে সহকারী চালক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে দেশের প্রথম নারী ট্রেন চালক হয়েছিলেন সালমা খাতুন৷
ছবি: privat
গিনেস বুকে প্রথম বাংলাদেশি নারী
১৬ বার জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০০২ সালে জোবেরা রহমান লিনুর নাম গিনেস বুকে ওঠে৷
ছবি: Khandakar Tarek
এসএ গেমসে সোনাজয়ী প্রথম নারী
দক্ষিণ এশিয়ান গেমস এসএ গেমসে বাংলাদেশের সোনাজয়ী প্রথম নারী অ্যাথলেট কাজী শাহানা পারভীন৷ ১৯৯১ সালে কলম্বো গেমসে শুটিংয়ে সোনা জিতেছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Xhemaj
এসএ গেমসে সাঁতারে সোনাজয়ী প্রথম নারী
২০১৬ সালে ভারতের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় গেমস এসএ গেমসে ৫০ মি: ও ১০০ মি: ব্রেস্টস্ট্রোকে দুটি স্বর্ণপদক অর্জন করেন মাহফুজা খাতুন৷
ছবি: bdnews24.com
এসএ গেমসে ভারোত্তলনে সোনাজয়ী প্রথম নারী
২০১৬ সালে ভারতের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় গেমস এসএ গেমসে ভারোত্তলনে বাংলাদেশের ইতিহাসে মেয়েদের মধ্যে প্রথম সোনা জেতেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত৷
ছবি: Khandakar Tarek
আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনায় প্রথম বাংলাদেশি নারী রেফারি
বাংলাদেশের প্রথম নারী রেফারি হিসেবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন জয়া চাকমা৷ ২৩ জুন মালয়েশিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ফিফা প্রীতি ম্যাচ পরিচালনা করেন তিনি৷