1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যেসব কারণে বিজেপি জিতেছে

২৯ মে ২০১৯

একদিকে শুধুই জল্পনা-কল্পনা৷ অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা৷ এর জেরে দ্বিতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদী৷ ঐতিহাসিক জয় ও অকল্পনীয় পরাজয়ের প্রকৃত কারণগুলো কী?‌

Indien Wahl 2019 | Westbengalen, Anhänger der Bharatiya Janata Party
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

দেশের প্রতিটি কোণে গিয়ে গলা চড়িয়ে ‘‌চৌকিদার চোর হ্যায়'‌ শ্লোগানে কাজ হয়নি৷ কাজ হয়নি রাফাল দুর্নীতির অভিযোগে৷ কাজে আসেনি কৃষক দুর্নীতি, গো-‌রক্ষকদের তান্ডব ইত্যাদি অভিযোগেও৷ ভারতে সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর কোনো বিকল্প নেতা ভারতে নেই৷ প্রায় দু-‌মাসব্যাপী মোট সাত দফায় গোটা দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলেছে৷ সংবাদমাধ্যম আগাগোড়া উভয় পক্ষের (‌কংগ্রেস ও বিজেপি‌‌)‌ হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কথা বলে এসেছে৷ বাস্তব চিত্র ঠিক তার উল্টো৷ নির্বাচনি ফল বুঝিয়ে দিয়েছে, ভোটের ময়দানে কোনো টক্কর তো নয়ই, বরং ভারতবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী৷

বিরোধী শিবিরের প্রস্তুতির বর্ণনায় রাত কাবার হবে৷ ঐতিহ্যবাহী দলটির বক্তব্য ছিল, জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ঐক্যবদ্ধ জোটের প্রয়োজনে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী পদ শরিকদের কাউকে ছেড়ে দিতে রাজি আছে৷ তার আগেই উত্তরপ্রদেশের বসপা নেত্রী মায়াবতী, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহারাষ্ট্রের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির শরদ পাওয়ার এবং কর্ণাটকের এইচ ডি দেবগৌড়াদের তরফে প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে কার্যত দাবি উঠতে শুরু করে৷ দক্ষিণের ডিএমকে তো শুরু থেকেই রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়ে আসছিল৷ তারা নিজেদের রাজ্যে দলের ভোটব্যাঙ্ককে নিজস্ব সম্পত্তি মনে করে দর কষাকষিতে লেগে পড়েছিলেন৷ কেউ বুঝতেই পারেননি এইসবের ফাঁকে বিজেপি ভোটারদের মন জয় করতে উঠেপড়ে লেগেছে৷ ফল ঘোষণার পর দেখা গেল, ২০১৪ সালের মতো এবারও বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে এসেছে৷ তাদের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ৩৫২টি আসন পেয়েছে৷

প্রধান বিরোধী কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পেয়েছে ৯১টি৷ অন্যান্য দলের দখলে ৮৪টি৷ লোকসভায় মোট ৫৪৩টি আসনের ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ৫৪টি আসনের মাপকাঠি যে দল পূরণ করতে পারে তাদের নেতাকে ‘‌বিরোধী দলনেতা'‌র মর্যাদা দেওয়া হয়৷ গতবার ৪৪টি আসন পেয়ে এই মাপকাঠি ছুঁতে না পারায় প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা হারিয়েছিল সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস৷ এবারও সেই মর্যাদা আদায় করতে ব্যর্থ হলো রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ঐতিহ্যবাহী দলটি৷ পেয়েছে মাত্র ৫২টি আসন৷ সত্যিই এই ফল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো৷ এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী একটি উক্তি করেছেন৷ তা হলো, ‘‌‘এতদিন নির্বাচন এলেই আওয়াজ উঠত, সব ধর্মনিরপেক্ষ দল এক ছাতার তলায় এসো৷ এখন বিরোধীরা আর সে-কথা বলেন না৷ এই নির্বাচনে কোনো দলই ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশের আড়ালে দেশকে ভুল পথে চালিত করতে পারেনি৷ তাছাড়া এবারের নির্বাচনে মূল্যবৃদ্ধিও কোনো ইস্যু ছিল না৷ খতিয়ে দেখুন, একজন বিরোধী নেতা-নেত্রীও তাঁর ভাষণে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বলেননি৷'‌'‌

বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মনে করেন ‌বিরোধীরা বিভাজিত ছিল

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মনে করেন, ‌বিরোধীরা বিভাজিত ছিল৷ তারা অনেক বেশি জাত-‌ধর্মের রাজনীতি করেছেন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুলায়ম সিং যাদবরা মুসলিম তোষণের রাজনীতি করেছেন৷ মায়াবতী দলিতের রাজনীতি করেছেন৷ ভোটারদের সামনে তাঁদের কোনো নেতা ছিল না৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‌‘‌অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বিরোধী দলগুলোর প্রস্তাবিত জোড়াতালির সরকারে জনগণের ভরসা ছিল না৷ মানুষ মনে করেছে এমন সরকার এলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে৷ উল্টোদিকে নরেন্দ্র মোদী নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিলেন৷ ‘লার্জার দ্যান লাইফ' নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন৷ সরকারি প্রকল্পগুলোকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে মোদী সরকার৷ জাতীয় সুরক্ষা, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক ইত্যাদি বিষয়গুলো শেষের দিকে নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করেছে৷'‌'‌

বিজেপি'‌র জয়ের কারণ:

বিজেপির প্রবল উত্থানের কারণ খুঁজতে গিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপি নির্বাচন  লড়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে ঘোষণা ছিল, এনডিএ জোট জিতলে মোদীই হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ উল্টোদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ বা অন্য বিকল্প জোটের দলগুলির সামনে কোনো নেতা ছিলেন না৷ বরং বলা যেতে পারে, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল বিরোধী শিবির৷ তাঁদের একমাত্র শ্লোগান ছিল ‘‌মোদী হটাও'‌৷ রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে৷ আরো অনেকগুলি কারণের মধ্যে রয়েছে বিরোধীদের নেতিবাচক রাজনীতি৷ বিকল্প সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন কোন পথে হবে, তার চেয়েও বিরোধীদের অনেক বেশি নজর ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওপর৷ মোদীকে গালমন্দ করতেই ব্যস্ত থেকেছেন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা৷ এছাড়া একদিকে নির্বাচনের মুখে বিরোধীদের এক ছাতার তলায় আসা, অন্যদিকে ভোটপর্বের অনেক আগে থেকেই এনডিএ জোট শরিকদের নিয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি৷ শুধু কি তাই?‌ এবার দেশের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় নিরাপত্তা বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল৷ প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে ভারতবাসীর দেশপ্রেমকে প্রতি মুহুর্তে উস্কে দিতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি৷ তা সে বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক হোক বা এয়ার কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ঘটনাই হোক না কেন৷ বিরোধী শিবিরের দলগুলি এর ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেনি৷

নানা সমীকরণে অত্যন্ত খারাপ ফল হতে পারে, এমন রাজ্যগুলিতে তুলনায় ভালো ফল করেছে বিজেপি৷ দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে দলের আসন সংখ্যা কমতে পারে এমনটা ধরে নিয়ে বিজেপি বাড়তি নজর দিয়েছিল পূর্বের দুই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায়৷ সে লক্ষ্যে তারা সফল হয়েছে৷ কিন্তু, বিরোধী শিবিরের দলগুলির কাছে তেমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবার নরম হিন্দুত্বের পথে পা বাড়িয়েছিলেন৷ আগাগোড়া সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ ওঠে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে৷ সেই নিরিখে ‘‌নরম হিন্দুত্ব'‌-‌এর কার্ড কাজে আসেনি৷ উল্টোদিকে, বিজেপি ও তাদের শীর্ষ নেতারা বুক বাজিয়ে হিন্দুত্ববাদের প্রচার করেছেন৷ এতকিছুর পরেও গত পাঁচ বছরে বিজেপি নির্বাচনি সভায় মোদী সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলি তুলে ধরেছেন৷ বেশকিছু প্রকল্পের ভালো দিকগুলো সরাসরি আম জনতার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি৷

বিজেপি'‌র জয় থেকে বোঝা যায়, রাজনীতির কারবারিরা বেশি গভীরে প্রবেশ করেননি: সুগতা হাজরা

This browser does not support the audio element.

মোদী ও বিজেপি'‌র এই বিপুল জয়ের পেছনে একদিকে বিজেপি'‌র সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও রাজনৈতির রণকৌশল ছিল৷ কিন্তু বিরোধী শিবিরের ভরসা ছিল শুধুমাত্র জল্পনা-‌কল্পনা৷ এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুগত হাজরা৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‌‌‘‌এবার নির্বাচনে বিজেপি'‌র বিপুল জয় থেকে বোঝা যায়, রাজনীতির কারবারিরা বেশি গভীরে প্রবেশ করেননি৷ তাই আগাম আঁচ করা যায়নি৷ গরিবের ঘরে ঘরে রান্নার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও শৌচালয় পৌঁছে দিয়েছেন৷ শেষের দিকে ‘আয়ুষ্মান ভারত' নামে স্বাস্থ্য প্রকল্প আনলেও সেটি বাস্তবায়িত হয়নি৷ কিন্তু মানুষ মনে করেছে মোদী এটাও করে দেখাবেন৷ কংগ্রেস-‌সহ বিরোধীদের কৃষক, দুর্নীতি এবং নগদ অর্থ ও চাকরি দেওয়ার প্রলোভনের প্রচার এসবে প্রভাব ফেলতে পারেনি৷ ফলে ধামাচাপা পড়ে গেছে বিরোধীদের ভুরি ভুরি অভিযোগ৷'‌'‌

ধুলিসাৎ আঞ্চলিক দলগুলি:

এবার সাধারণ নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলির অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ৩৪ থেকে ২২টিতে নেমে এসেছে৷ পরিস্থিতি এমন যে, দু-‌বছর পর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে নিজের গড় ধরে রাখাই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে৷ তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও তো ‘‌কিং মেকার'‌ ‌হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন৷ অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি সরকার গড়তে আঞ্চলিক দলগুলির নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছিলেন তিনি৷ এবার মোট ১৭টি আসনের মধ্যে ৯টিতে জিতেছে তাঁর দল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি৷ অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশম পার্টি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু আবার ইউপিএ গড়তে সবাইকে পেছনে ফেলে গোটা দেশে দৌড়ঝাঁপ করেছেন৷ মমতা, মায়া, অখিলেশ, কেজরিওয়াল কাউকে দলে টানার চেষ্টায় কসুর করেননি৷ কিন্তু ভোটের ফল তাঁকে নিরাশ করেছে৷ শোচনীয় পরাজয় হয়েছে তাঁর৷ একটিও আসন পাননি৷ হারিয়েছেন রাজ্যের শাসনভারও৷ বিহারেও নাস্তানাবুদ বিরোধীদের মহাজোট৷ লালুপ্রসাদ যাদবের দল রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ভাঁড়ার শূন্য৷ কর্নাটকে এইচ ডি দেবগৌড়ার দলের দখলে একটি মাত্র আসন৷ মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারের দল মাত্র পাঁচটি আসনে জিতেছে৷ একইভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলের মহাজোট৷ এনডিএ ৬৪টি আসন দখল করেছে৷ মহাজোটের হাতে ১৫৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী নিজেই স্মৃতি ইরানির কাছে হেরেছেন আমেঠি কেন্দ্রে৷ শুধুমাত্র রায়বরেলি থেকে জয়ী হয়েছেন তাঁর মা সোনিয়া গান্ধী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ