শিল্পের কোনো সীমা নেই, এই বাস্তব আজ স্বীকৃত৷ জার্মানির এক শিল্পী বিশাল আকারে উজ্জ্বল, রঙিন সৃষ্টিকর্ম প্রস্তুত করলেও সেগুলি আবার নষ্ট করে ফেলতে হয়৷ তবে সবার আগে নিজের স্টুডিওতে নমুনা তৈরি করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
কাটারিনা গ্রসে সমসাময়িক যুগের সফলতম শিল্পীদের একজন৷ ৫৮ বছর বয়সি এই শিল্পী বার্লিন ও নিউজিল্যান্ডে বসবাস করেন৷ তাঁর ছবিগুলি জোরালো রংয়ে ভরপুর এবং একাধিক ডায়মেনশন বা মাত্রায় ভরা৷ তাঁর প্রেরণার উৎস খেলাধুলার জগত৷ তিনি বলেন, ‘‘ফুটবলের মতো মাঠভিত্তিক খেলা আমার প্রেরণার জোরালো উৎস৷ অনেকটা দূরত্ব জুড়ে নানা ধরনের মুভমেন্ট প্রতিনিয়ত বদলে চলেছে, সম্প্রসারিত হচ্ছে, নতুন স্পেস সৃষ্টি করছে৷’’
বার্লিনে সমসাময়িক শিল্পের মিউজিয়াম ‘হামবুর্গ স্টেশন’-এ জার্মানির এই শিল্পীর এক বিশাল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তাঁর সব শিল্পকর্মেই জোরালো রংয়ের মিশ্রণ কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে৷ নিজের প্রেরণার উৎস সম্পর্কে কাটারিনা বলেন, ‘‘আঁকার সময় রং হঠাৎ কোনো অংশে পৌঁছলে যেভাবে ফুলে ওঠে অথবা ছড়িয়ে পড়ে, কিংবা একেবারে নতুন এক আকার ধারণ করে, এমনকি কিছু জায়গায় চেনার অযোগ্য হয়ে ওঠে –সেই বিষয়টি আমার জন্য বরাবর বেশ রোমাঞ্চকর৷ কখনো রং এমন পাইপ বা কাটা অংশে জমা হয়৷ তখন রংয়ের চরিত্রই যেন বদলে যায়৷ আগে থেকে এমনটা কল্পনা অথবা পরিকল্পনা করা অসম্ভব৷’’
স্টাইরোফোম প্যানেলের বিশাল পাহাড় শিল্পীর ক্যানভাস৷ মেঝেও তাঁর সৃষ্টিকর্মের অংশ৷ কাটারিনা গ্রসে তুলি ও রং দিয়ে ছবি আঁকেন না, বরং স্প্রে গান নিয়ে কাজ করতেই ভালবাসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটাই আমার হাতিয়ার৷ এটা একটা লান্স৷ সামনে রং বের হয়৷ আর এটা হলো ট্রিগার৷ অনেক উপর ও দূর পর্যন্ত যাওয়া যায়, সম্প্রসারণও করা যায়৷ চার মিটার দীর্ঘ হতে পারে৷ সিঁড়ির মতো এটিরও সাহায্যে আমি শরীর বড় করতে পারি৷ শরীর সম্প্রসারণ করতে পারা আমার কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়৷ এভাবে আমি এত কম কসরৎ করেও একেবারে উপরে কোণে পৌঁছে যেতে পারি৷ এটিকে এক ধরনের জাদুময় হাতিয়ার বলা যেতে পারে৷’’
শিল্পী কাটারিনার প্রেরণার উৎস খেলাধুলার জগত
04:32
১৯৯৮ সালে তিনি ‘গ্রিন কর্নার’ নামের শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছিলেন, যেটিকে মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ তাঁর ছবি কোনো সীমা চেনে না এবং গোটা নিসর্গ উজ্জ্বল রংয়ে ভরিয়ে দেয়৷ কাটারিনা গ্রসে বলেন, ‘‘আগেও আমি রং খুব ভালবাসতাম৷ তবে আমি সত্তরের দশকে বড় হয়েছি৷ সে সময়ে সব জামাকাপড় খুব রঙিন ছিল৷ মনে আছে, কমলা রংয়ের প্যান্ট, হলুদ জামা, সবুজ ট্যাংক টপ পরতাম৷ ট্যাংক টপ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যাতে আরও রং যোগ করা যেত৷’’
বার্লিনে একটি ভবনের তিন তলা জুড়ে কাটারিনা গ্রসের স্টুডিও৷ বিশাল মাপের শিল্পকর্ম গড়ে তোলার আগে শিল্পী সবার আগে তার ছোট নমুনা তৈরি করেন৷ আপাতত তিনি ২০২১ সালের হেলসিংকি বিয়েনালে উৎসবের জন্য একটি শিল্পকর্ম তৈরির কাজে ব্যস্ত৷ সেই প্রয়াস সম্পর্কে কাটারিনা বলেন, ‘‘বাড়িটি পুরোপুরি কাঠের তৈরি৷ তাই সামনে এমন কিছু রাখতে চাই, যার কাঠামো কাঠের তৈরি৷ ভাবছি এমন কিছু আছে কিনা, যার সারফেস বা উপরিভাগ ভাঙাচোরা দেখতে৷ খুব কম পরিশ্রম করে এখানে ছোট আকারের মডেলের উপর নানা ধরনের কাঠামো বসিয়ে দেখতে পারি৷ তার উপর রং করলে সারফেস চিরে ছিদ্র সৃষ্টি হয়৷ বৃহত্তর ছবির মধ্যে সেই ছিদ্রও আমাকে খুব নাড়া দেয়৷’’
বার্লিনের প্রদর্শনীর শিল্পকর্মের মডেলও স্টুডিওতে শোভা পাচ্ছে৷ নিজের সৃষ্টিকর্ম যে স্থায়ী হয় না, সেটাও কাটারিনা গ্রসের জন্য অত্যন্ত রোমাঞ্চকর৷ কাটারিনা বলেন, ‘‘স্থায়িত্বের অভাবের মধ্যে এক বড় সৌন্দর্য রয়েছে বলে আমি মনে করি৷ কোনো ঘটনার কারণে সৃষ্টিকর্ম উধাও হতেও সময় লাগে৷ বর্তমানকালে সেই সৃষ্টি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷’’
এমন জমকালো সৃষ্টিকর্মও নষ্ট হয়ে যাবে৷ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ‘ইট ওয়াজন্ট আস’ নামের প্রদর্শনী চলবে৷
ক্রিস্টিনে লেব্যার্ট/এসবি
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷