হঠাৎ পদত্যাগ করলেন মিয়ানমারের প্রথম বেসামরিক প্রেসিডেন্ট টিন চ৷ বুধবার প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে ফেসবুকে পোস্ট করা এক বিবৃতির মাধ্যমে পদত্যাগের খবর জানানো হয়৷
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ঘোষণার কিছুক্ষণ পর নিম্নকক্ষের স্পিকার এবং সু চি'র অন্যতম সহযোগী উইন মিন তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ান৷ প্রেসিডেন্ট টিন চ এমন সময় পদত্যাগ করলেন, যখন রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটির সরকার৷ টিন জ ছিলেন মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি'র ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু৷ এর ফলে সু চি আরও সংকটে পড়লেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
প্রেসিডেন্ট দপ্তরের বিবৃতিতে পদত্যাগের কোনো কারণ জানানো হয়নি৷ বলা হয়েছে, ‘‘টিন চ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে বিশ্রাম নেবেন এবং তাঁর এই পদত্যাগ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে৷ ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে৷’’
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
৭২ বছর বয়সি এই এনএলডি নেতার স্বাস্থ্য গত কয়েক মাস ধরেই খারাপ যাচ্ছিল৷ দ্রুত তাঁর ওজন কমে যাচ্ছে এবং তিনি হৃদরোগে ভুগছেন৷ তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে এলেও মূলত সরকার চালানোর কাজটি করছিলেন অং সান সু চি৷ নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেয়ার আগ পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনারেল মিন সোয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন৷
এমন এক সময় মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট পদে পরিবর্তন আসছে, যখন রাখাইনে সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নির্মূলের’ অভিযোগ উঠেছে৷ গত বছরের আগস্টে রাখাইনে সেনা অভিযানের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৭ লাখ রোহিঙ্গা৷
বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হোর্সে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘সু চি যার উপর আস্থা রাখতে পারবেন, তাঁকেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেবেন, কেননা, সংবিধান অনুযায়ী আসলে তাঁর হাতে কোনো ক্ষমতা নেই৷ প্রেসিডেন্টের মাধ্যমেই তিনি কিছু ক্ষমতার অধিকার পেতে পারেন৷’’
প্রায় অর্ধশতক সেনা শাসনের পর ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে এনএলডির বড় জয়ে মিয়ানমারে দীর্ঘ সামরিক নেতৃত্বের অবসান ঘটে৷ সেসময় নোবেলজয়ী সু চি রাষ্ট্রপ্রধানের পদের জন্য বেছে নেন তাঁর ছেলেবেলার বন্ধু, দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত উপদেষ্টা টিন চ-কে৷
সে সময় সংবিধান সংশোধন করে সু চি'র জন্য স্টেট কাউন্সিলরের পদ সৃষ্টি করা হয়৷ রাষ্ট্রের অধিকাংশ নির্বাহী ক্ষমতাও দেওয়া হয় তাঁর হাতে৷ অবশ্য পার্লামেন্টের নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন এবং মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদ সংবিধান অনুযায়ী এখনও রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে৷