বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আটক, গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে৷ আইনজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, এ সব বেআইনি কাজের প্রধান কারণ পুলিশের ওপর সরকারের অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা৷
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ ঘটনা: সন্তানের সামনে মা-কে নির্যাতন
১৮ই সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন৷ ঐ এলাকায় ছেলের সামনে মাকে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ নির্যাতকারীদের পক্ষ নেয়৷ স্বাভাবিকভাবেই এতে জনতা প্রতিবাদী হলে তাদের দমন করতে গুলি চালায় পুলিশ৷
১১ মাসের শিশুকে আটক
১৬ই সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার একটি মামলায় রাজু আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ তাঁর স্ত্রী লিপি আক্তার এবং মাত্র ১১ মাস বয়সি শিশুপুত্র রাসেলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়৷ থানা হাজতে আটকের ১৯ ঘণ্টা পর ৪২ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের মুক্তি দেয়া হয়৷
পঙ্গু মানুষের হাতে হাতকড়া
১৫ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে আবুল হোসেন নামে এক পঙ্গু আসামিকে হাতকড়া পড়িয়ে আদালতে নেয় পুলিশ৷ আবুল হোসেনের দুই পা-ই নেই৷
মাদক মামলায় শিশু গ্রেপ্তার
৭ই সেপ্টেম্বর সাগর শেখ (১২) ও রবিন আলী (১৪) নামের দুই শিশুকে মাদক মামলায় হাতকড়া পরিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করে কাফরুল থানা পুলিশ৷
[No title]
ওপরের চারটি ঘটনাই চলতি সেপ্টেম্বর মাসের৷ তাই এর আগে থেকে হিসেব করলে এমন ঘটনার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে৷
বাংলাদেশে নারী ও শিশু আইনে স্পষ্ট বলা আছে নারী ও শিশুদের প্রতি পুলিশকে কী ধরনের আচরণ করতে হবে৷ কী ধরনের আচরণ করতে হবে পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে৷ অথচ তারপরও পুলিশ কেন আইন লঙ্ঘন করছে?
এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ আইন জেনেও আইনের লঙ্ঘন করছে৷ এর কারণ তাদের অসততা এবং সুবিধা লাভের প্রবণতা৷ আমি বলব তারা জ্ঞানপাপী৷''
[No title]
ওদিকে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ পুলিশ অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷ কারণ সরকার অতিমাত্রায় পুলিশ নির্ভর হয়ে পড়েছে৷ আর পুলিশ এই সুবিধা নিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলের কাজ করে চলেছে৷ পেশাদারিত্ব ভুলে গেছে তারা৷''
এ দু'জনই মনে করেন, যদি পুলিশকে রাজনীতির বাইরে রেখে জবাবদিহিতার আওতায় আনা না হয়, তাহলে এ ধরণের বেআইনি ঘটনা আরো বাড়বে৷ বার বার এমন বেআইনি ঘটনা ঘটাবে পুলিশ৷
‘ক্রসফায়ার’ – একটি প্রদর্শনী
‘ক্রসফায়ার’ নামের একটি প্রদর্শনী ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে ২০১০ সালের মার্চে দেখানোর কথা ছিল৷ কিন্তু উদ্বোধনীর দিন সরকার প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়৷ দাঙ্গা পুলিশে ঘিরে রাখে দৃক৷ সেই প্রদর্শনীর কিছু ছবি৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
মৃতদেহের পাশে কোনো গুলি ছিল না
পশ্চিম কুনিয়া বাগানবাড়ি, বরিশাল৷ একজন মহিলা দেখতে পেলেন ধানক্ষেতে একটা মৃতদেহ পড়ে আছে৷ ব়্যাবের লোকজন তাদের গাড়ি থেকে গুলি এনে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে৷ মহিলাটি প্রথম যখন মৃতদেহটা দেখেন তখন সেখানে কোনো গুলি ছিল না৷ আশেপাশে কোনো রক্তও ছিল না৷ ধানক্ষেতে পায়ে মাড়ানোর কোনো চিহ্ন ছিল না৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
আনিস কেন মারা গেল?
আনিসুর রহমান, ছাত্রদলের স্থানীয় এক নেতা৷ রাত আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুর থেকে তাঁকে আটক করা হয়৷ দু’জন প্রতক্ষ্যদর্শী জানান, ব়্যাব ৪-এর একটি দল আনিসের বাসায় তল্লাশি চালায়, কোনো পরোয়ানা বাদেই৷ দু’দিন বাদে সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আনিস মারা যান৷ ব়্যাবের দুই কর্মকর্তা হাসপাতাল থেকে আনিসের কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছে বলেও জানান এক প্রতক্ষ্যদর্শী৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
ক্রসফায়ারে শেষ মোহাম্মদ
মোহাম্মদ মইনউদ্দিন৷ ও আর নিজাম রোড৷ মেহেদিবাগ৷ পাঁচলাইশ থানা৷ চট্টগ্রাম৷ তাঁর বাড়িতে ফোন করে জানানো হলো তিনি ক্রসফায়ারে মারা গেছেন৷ ব়্যাবের নজরদারিতেই জেনারেল হাসপাতালে তাঁর ময়নাতদন্ত হলো৷ মৃতের পিঠে চারটি গুলির চিহ্ন বাদেও বুকে সাতটা ছোট ফুটো পাওয়া যায়৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
সেন্টুকে নিয়ে যায় ব়্যাব-৩
মো. মশিউল আলম সেন্টু৷ ছাত্রদলের সহসভাপতি৷ আনুমানিক সন্ধ্যে সাতটার দিকে সেন্টুরা রিকশায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল থেকে নীলক্ষেত মোড়ে এলেন৷ ব়্যাব ৩ লেখা একটি সাদা মাইক্রোবাস সেন্টুদের থামার নির্দেশ দিতে দিতে ওদের পেছনে পেছনে আসছিল৷ ব়্যাব কর্মকর্তারা রিকশা আরোহীদের থামিয়ে সেন্টুর বাঁ পায়ে গুলি করে৷ এরপর তোয়ালে দিয়ে চোখ বেঁধে, হাত পিছমোড়া করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়৷
ছবি: Shahidul Alam/Drik/Majority World
শরীরে বৈদ্যুতিক শকের দাগ
সুমন আহমেদ মজুমদার ছিলেন যুবলীগের সহসম্পাদক৷ বাড়ি টঙ্গির আমতলীতে৷ এক তরুণসহ সুমনকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এক রেস্তোরাঁয় বসিয়ে তাঁর হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে খুলতে বলা হয়৷ ভেতরে দু’টো ৫০০ টাকার নোট আর একটা সাদা কাগজ৷ তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ৷ হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সুমনের ডান পায়ের গভীর ক্ষত আর সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে অনুমান করেন, তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছিল৷