1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যে কারণে পুলিশ নির্মম এবং বেপরোয়া

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ জুলাই ২০১৭

পুলিশের বিরুদ্ধে নির্মম আচরণের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই৷ সাধারণ কোনো সভা সমাবেশ বা প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সহনীয় আচরণ দেখায় না৷ এছাড়া অপরাধী ধরার নামে পুলিশের নির্মমতার নেপথ্যে আছে উৎকোচ আদায়৷

Polizei in Bangladesch
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo

গত ১৮ জুলাই রাতে পুলিশ খুলনার খালিশপুরে শাহজালাল নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর চোখ তুলে নেয় বলে অভিযোগ৷ তাঁকে এখন আটক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ তাঁর বাবা জাকির হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন শাহজালাল আর চোখ ফিরে পাবে না৷ তাঁকে সারাজীবনের জন্য দৃষ্টিহীন হয়ে কাটাতে হবে৷''

জাকির হোসেনের অভিযোগ, ‘‘ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমার ছেলে বাচ্চার দুধ কিনতে বের হয়েছিল৷ পুলিশ তাকে রাস্তা থেকে ধরে থানায় নিয়ে মারপিট করে৷ এরপর দেড়লাখ টাকা ঘুস দাবি করে৷ আমাদের পক্ষে অত টাকা দেয়া সম্ভব ছিল না৷ পরে গভীর রাতে থানা থেকে নিয়ে গিয়ে একটি ভবনের তিনতলায় নিয়ে পুলিশ তার চোখ তুলে নেয়৷ স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে চোখ তোলার সময় রক্তে ভেসে যায় ছেলে আমার৷ তার কান্না ও চিৎকারও পুলিশের মন গলাতে পারেনি৷''

‘ছিনতাইকারী বানিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে’

This browser does not support the audio element.

তবে খুলনার খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম খান বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়লে জনগণ তাকে মারে৷ আমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি৷ পুলিশ দশ মিনিট পরে গেলে হয়ত তার লাশ পাওয়া যেত৷''

কিন্তু শাহজালালের বাবা দাবি করেন, ‘‘আমার ছেলে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়৷ তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই৷ পুলিশ শুধুমাত্র টাকা না পেয়ে তার চোখ তুলে নিয়েছে৷ আর এখন তাকে ছিনতাইকারী বানিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে৷ আমি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করব৷''

এদিকে ২০ জুলাই বিকেলে ঢাকার শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধনে পুলিশের হামলায় শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানও দৃষ্টিশক্তি হারাবার পথে৷ ঐ দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সিদ্দিকের সহপাঠী রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফরিদউদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের মানববন্ধন যখন শেষ, তখন পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়তে থাকে এবং ছাত্রদের আটকের চেষ্টা করে৷ সিদ্দিকুর আটক একজনকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে পুলিশ তাঁর চোখে টিয়ার শেল ছোড়ে৷''

‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালায়'

This browser does not support the audio element.

ফরিদউদ্দিন আরো জানায়, ‘‘আমাদের আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ৷ আমরা একটা ইটও ছুড়িনি, গাড়িও ভাঙিনি৷ শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে ছিলাম৷ তারপরও পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালায়৷''

চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘তাঁর ডান চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া যাবে না৷ তবে বাম চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসার আশা আছে৷'' জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, ‘‘সিদ্দিকুর রহমানের বাম চোখের উন্নতি হয়েছে৷ ফোলা কমেছে, কর্নিয়া ঘোলা ছিল, তাও পরিষ্কার হচ্ছে৷ কর্নিয়ার ঘোলা ভাবটা ঠিক হওয়ার পর অপারেশন করা হবে৷''

এই ঘটনায় সোমবার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের কাছে দাবি বরেন, ‘‘একটি টিয়ার শেল বা একটি ঢিলের আঘাতে একইসঙ্গে সিদ্দিকুরের দু'চোখে আঘাত লাগতে পারে না৷ যদি এমন একটা আঘাত লেগে থাকে, তাহলে নাক বা কপাল ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ কিন্তু তাঁর নাক বা কপালে কোনো আঘাত নেই৷ তাই এখানে অন্য কোনো পক্ষ থেকে স্যাবোটাজ করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখব৷ এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘তদন্তে পুলিশের যদি কোনো গাফিলতি থাকে, অতিরিক্ত বল প্রয়োগ বা অপেশাদার আচরণ করে থাকে, অবশ্যই তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে৷''

‘পুলিশে চেইন অফ কমান্ডের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে’

This browser does not support the audio element.

জানা গেছে, পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অযথা বলপ্রয়োগ না করা এবং আটকদের সঙ্গে আইন অনুযায়ী আচরণের নির্দেশ থাকেলও পুলিশের মাঠ পর্যায় তা মানছে না৷ এমনকি মানবাধিকারের প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও তা তেমন কাজে আসছে না৷ পুলিশ সভা বা প্রতিবাদ থামাতে অনেক ক্ষেত্রেই অযথা বল প্রয়োগ করছে৷ এটা পুলিশ সদস্যদের কারুর কারুর ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাজনৈতিক যোগাযোগর কারণে হতে পারে৷ অন্যদিকে আসামি বা সন্দেহভাজনের নামে ধরে নির্মম আচরণের নেপথ্যের কারণ হলো উৎকোচ আদায়৷

বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশে চেইন অফ কমান্ডের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে৷ ফলে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা কোনো নিয়ম-নীতি মানতে চাইছে না৷ আবার কোনো অভিযোগ করলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয় না৷ ফলে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই বিচারহীনতা এবং মনিটরিং না থাকায় পুলিশের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছে যে আমাদের বিছুই হবে না৷ আমাদের কিছু করা যাবে না৷ এই ঔদ্ধত্ববোধ দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এই পরিস্থিতি চলতেই থাকবে৷''

এ বিষয়ে আপনার মতামত জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ