চীনা পণ্যের ওপর আরো একশ' বিলিয়ন ডলার শুল্ক আরোপের হুমকির জবাবে চীন বলেছে, যে কোনো মূল্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধের শেষ দেখতে চায় তারা৷
বিজ্ঞাপন
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রোর হুমকির জবাব দেয়া হয়৷ সেখানে বলা হয়, ‘‘যদি চীন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আপত্তির পরও যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যায়, তাহলে এর শেষ দেখে ছাড়বে চীন৷''
বলা হয়, ‘‘আমরা বাণিজ্য যুদ্ধ চাই না, কিন্তু সে যুদ্ধে অংশ নিতে আমরা ভীত নই৷''
এর আগে, গত মঙ্গলবার চীনের বিরুদ্ধে মেধাসত্ত্ব ও প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশে চীনের রপ্তানির ওপর ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার শুল্ক আরোপ করে একটি তালিকা প্রকাশ করে৷ চীন যুক্তরাষ্ট্রে মূলত কারখানার যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি করে৷
পরদিন চীন তাদের দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্য, যেমন সয়াবিন, গাড়ি ও ছোট বিমানের ওপর ৫০ বিলিয়ন শুল্ক আরোপ করে৷
এরপর দিনই আবার ট্রাম্প বেইজিংয়ের ওপর কর আরো দ্বিগুণ বাড়ানোর হুমকি দেন৷ ওয়েবসাইটে তার জবাবই আজ দিলো চীন৷
বাণিজ্য যুদ্ধ হলে কী ক্ষতি হবে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি রূপায়ন করতে আমদানির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন৷ সেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য কাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago/Ralph Peters
বাণিজ্য যুদ্ধের অর্থ কী?
কোনো দেশ কোনো এক বা একাধিক পণ্য আমদানির উপর কর, শুল্ক বা অন্য কোনো আর্থিক বোঝা চাপালে বাকি দেশগুলিও পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকা ও চীনের মতো বিশাল দেশের সংঘাতের জের ধরে গোটা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য যুদ্ধের আকার নিতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা মোটেই সহজ হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Peter
অতীত দৃষ্টান্ত
১৯৩০-এর দশকে শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা বিশাল মন্দা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুবার সে বছর শুল্ক সংক্রান্ত নতুন আইন কার্যকর করার ফলে ২০ হাজারেরও বেশি পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো হয়েছিল৷ ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে যে, এ ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ও দেশের জন্য শুল্ক চাপানো হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/Library of Congress
ট্রাম্প কেন বাণিজ্য যুদ্ধের পথে এগোচ্ছেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিকূল বাণিজ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তোপ দেগে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে সমালোচকদের মতে, এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তিনি অ্যামেরিকার সার্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থ দেখতে পাচ্ছেন না৷ কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কাঠামো তোলপাড় হয়ে গেলে আখেরে অ্যামেরিকারই ক্ষতি হবে৷ ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
ছবি: picture-alliance/K. Ohlenschläger
পালটা পদক্ষেপ
ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করলে বাকি দেশগুলিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না৷ ক্যানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যামেরিকার বিরুদ্ধেও পালটা পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার চেয়ে বহুপাক্ষিক সমাধানসূত্রের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
অ্যামেরিকার ক্ষতি
সব সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ট্রাম্প যদি সত্যি আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপান, তার পরিণতি অ্যামেরিকার জন্যও ইতিবাচক হবে না৷ যেমন, ইস্পাত আমদানির উপর শুল্ক চাপালে অ্যামেরিকার বাজারেও তার মূল্য বেড়ে যাবে৷ তার ফলে মার্কিন ইস্পাত কোম্পানিগুলির লাভ হলেও ক্রেতাদের বাড়তি মূল্য গুনতে হবে৷ যে কোম্পানিগুলি ইস্পাত ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে, তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Weihrauch
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকায় ইস্পাত রপ্তানি করতে না পারলে চীন ইউরোপের বাজারে তা আরও সস্তায় বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারে৷ স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হলে এমন আরও দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে৷ সামগ্রিকভাবে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা নানাভাবে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক নানা সংকট কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সবে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন নতুন করে এমন বিপদ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/XinHua
আইনি লড়াই
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ডাব্লিইউটিও সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বাণিজ্যের বিধিনিয়ম স্থির করে এসেছে এবং বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছে৷ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে৷ সব পক্ষ ডাব্লিইউটিও-র রায় না মানলে এই সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে৷ এমন কাঠামো তার কার্যকারিতা হারালে ভবিষ্যতে সেই ক্ষতি পূরণ করা সহজ হবে না৷
ছবি: Reuters/N. Kharmis
7 ছবি1 | 7
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আচরণ ঠিক করার পরিবর্তে চীন আমাদের কৃষক ও শিল্পমালিকদের ক্ষতি করার পথ বেছে নিয়েছে৷''
ট্রাম্প জানান যে, চীনের এমন অন্যায্য আচরণের জবাবে ‘আরো একশ' বিলিয়ন ডলার' শুল্ক আরোপ করা যায় কি না তা ক্ষতিয়ে দেখতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য আলোচনায় বসতেও রাজি আছেন৷ তবে সেজন্য ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও পরিপূরক' বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকতে হবে৷
চীন বৃহস্পতিবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও-তে ট্রাম্পের প্রথমবারের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে৷ তারা ডাব্লিউটিও-র বিরোধ নিষ্পত্তি ইউনিটের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব জানায়৷
পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের এ সব ঘোষণা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি৷ তবে বলাই বাহুল্য এগুলো চালু হলে তা পুরো বিশ্বের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে৷
এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের পুঁজিবাজারগুলোতে৷