গাছ আকাশমুখো হয়ে গজায় কেন, সেটা কোনোদিন ভেবে দেখেছেন? তার শিকড়ই বা জানে কীভাবে, যে তাকে মাটির নীচে নেমে যেতে হবে? গাছেদের এই সোজা হিসেবটা গোলমাল করে দিলে, তারা কি কাত হয়ে গজাবে?
বিজ্ঞাপন
‘মাধ্যাকর্ষণ জীববিজ্ঞানী' আলিনা শিক-এর তত্ত্বাবধানে যে গাছগুলো রয়েছে, সেগুলো ওপরদিকে গজায় না৷ বরং একটি চাতুরি করে গাছগুলোকে বুঝতেই দেওয়া হয় না, মাধ্যাকর্ষণের টানটা কোনদিকে! এ ভাবে হয়তো একদিন দেয়ালেই গাছ বসানো যাবে, বলে বিজ্ঞানীদের আশা৷
হোয়েনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিস্ট ড. আলিনা শিক বলেন: ‘‘এই কাত হয়ে গজানো গাছটাকে এবার অন্যত্র লাগানো হবে, যেমন কোনো বহুতল ভবনের দেয়ালে৷ অপরদিকে আমরা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে গাছটার বাড়ের উপর নজর রাখছি, ঘোরানোর ফলে তার কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে৷''
আলিনা শিক-এর কর্মস্থল হোয়েনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিনহাউস-গুলিতে সূর্যমুখী, আরালিয়া ইত্যাদি নানা ধরনের গাছ কাত হয়ে গজাচ্ছে৷ তাদের মধ্যে কোনোটাই আলোর দিকে বেঁকে যায় না; তার কারণ, যে টবে গাছটা বসানো, সেটা ক্রমাগত ঘুরে যাচ্ছে৷
ক্লিনোস্টাট এবং স্ট্যাটোলিথ
টবগুলো একটি ঘোরা চাকতির ওপর বসানো, সেই চাকতি ঘোরে মোটর ও চেন দিয়ে৷ এগুলোকে বলা হয় ‘ক্লিনোস্টাট', যার আবিষ্কার আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে, উদ্ভিদের উপর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করার জন্য৷ আলিনা শিক'এর ব্যাখ্যান:
‘‘এক্ষেত্রে গাছটা শুধু একদিক থেকে নয়, সব দিক থেকে আলো পাচ্ছে৷ যার অর্থ, গাছের কোনো অংশ ছায়ায় থাকছে না, ফলে ফটোসিন্থেসিস-এর হার বেড়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া দেখা হচ্ছে, আলো কিংবা মাধ্যাকর্ষণের মতো বাহ্যিক উপাদান বদলে গেলে গাছের অভ্যন্তরীণ রসায়নে কোনো অদল-বদল হয় কিনা৷ শেষমেষ আমরা দেখব, গাছের কাঠের উপর তার কী প্রভাব পড়ে৷ কাত হয়ে যে গাছ গজিয়েছে, নিজের ওজন থেকেই তার উপর অনবরত চাপ ও টান পড়ে, কাজেই তার কাঠের গুণগত বৈশিষ্ট্য অন্যরকম হতে পারে৷''
ফুল-পাতায় পৃথিবী
মার্গারেটা পার্টেল একজন বোটানিক্যাল ইলাস্ট্রেটর৷ ২০ বছর ধরে তাঁর কাজ গাছের পাতা-ফুল-শাখায় ছবি আঁকা৷ কাজ মূলত ভিয়েনা এবং ডাবলিনে৷ তবে সুযোগ পেলে নানা দেশে ঘুরে ফুটিয়ে তোলেন গাছের ছবি৷ ছবিঘরে দেখুন এমনই কিছু নিদর্শন৷
ছবি: Margareta Perl
ছবির সন্ধান
এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম লাইলিয়া পুরপুরাটা৷ মার্গারেটা কোথায় এর সন্ধান পেয়ে তাতে এমন সুন্দর ছবি এঁকেছিলেন কে জানে৷ তবে এমন গাছের সন্ধানে রং-তুলি নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াতেও তাঁর আপত্তি নেই৷
ছবি: Margareta Perl
এঁকেও মজা
চলছে হাইটেক ফটোগ্রাফির যুগ৷ প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে, ছবি তোলা হচ্ছে সহজ, অনেক বৈচিত্র্যও আসছে ছবিতে৷ তবে বোটানিক্যাল ইলাস্ট্রেশনে যেমন বৈচিত্র্য ধরা দেয় যন্ত্রের ছবিতে ততটা সবসময় আসে না৷ ওপরের ছবিটি দেখলে আপনারও তা মনে হবে৷
ছবি: Margareta Perl
সচেতনতা বাড়ায়
চারপাশের প্রকৃতির দিকে আমরা কি খুব একটা মনযোগ দিই কখনো? গাছে ছবি আঁকলে আমাদের চোখ কিন্তু গাছের দিকে যাবেই৷ এভাবে পরিবেশ, প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোতেও ভূমিকা রাখে বোটানিক্যাল ইলাস্ট্রেশন৷
ছবি: Margareta Perl
টিকে আছে, টিকে থাকবে
গাছে ছবি আঁকা নতুন কিছু নয়৷ শত শত বছর ধরে চলে আাসছে বোটানিক্যাল ইলাস্ট্রেশন৷ কখনোই মনে হয়নি, এমন ছবি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Margareta Perl
মাদাগাস্কারের অর্কিড
মাদাগাস্কার অর্কিডের জন্য বিখ্যাত৷ অ্যারাংগিস ডিসটিঙ্কটা বৈজ্ঞানিক নামের এই গাছে মার্গারিটা এমন রংয়ের আঁচড় দিয়েছিলেন সেখানে গিয়েই৷
ছবি: Margareta Perl
গাছের বন্ধু
গাছের অনেক প্রজাতি বৈজ্ঞানিক নামকরণের আগেই হারিয়ে যায়৷ বোটানিক্যাল ইলাস্ট্রেশন হয়ে গেলে নাম তো পায়ই, ছবিও থেকে যায় গাছের৷ ছোট ছোট অনেক গাছ ছবি হয়ে থেকে যায় সাদা কাগজে৷
ছবি: Margareta Perl
রাখতে হয় যত্ন করে
ছোট ছোট গাছ যত্ন করে ছবি করে রাখেন মার্গারেটা৷ গাছের শেঁকড়ও যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়৷ ড্রাকোসেফালুম অস্ট্রিয়াকুম গাছটিকে সেভাবেই রেখেছেন মার্গারেটা পার্টেল৷
ছবি: Margareta Perl
7 ছবি1 | 7
বিজ্ঞানী হিসেবে আলিনা শিক জানতে চান, গাছের বড় হওয়ায় আলো এবং তাপ ছাড়া মাধ্যাকর্ষণ কী ভূমিকা পালন করে৷ এক্ষেত্রে প্রথমেই জানতে হবে, গাছেরা মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করে কিনা৷ সেজন্য আগে বুঝতে হবে, গাছেরা সাধারণত খাড়া হয়ে গজায় কেন:
‘‘উদ্ভিদরাও অন্যান্য প্রাণীদের মতো তথাকথিত স্ট্যাটোলিথ-এর মাধ্যমে মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করে – ছবিতে আমরা যেমন দেখতে পাচ্ছি৷ এই ‘ভারীত্বের কণাগুলি' মাধ্যাকর্ষণের ফলে নীচে পড়ে গিয়ে তলার কোষটির উপর চাপ দেয় – ঠিক এখানে যেমন দেখা যাচ্ছে৷ সাধারণ পরিস্থিতিতে উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া হবে, শিকড়গুলো নীচের দিকে বাড়বে, বাকি ডালপালা ওপর দিকে উঠবে৷''
সবুজ স্থাপত্য
টব একটানা ঘুরে যাওয়ার ফলে গাছেদের মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করার ক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে:
‘‘এ ভাবে ঘোরার ফলে স্ট্যাটোলিথগুলো আর নীচের দিকে পড়ে না, তলার কোষের উপর চাপ দেয় না৷ কাজেই গাছটি আর মাধ্যাকর্ষণ অনুভব করতে পারে না এবং কাত হয়েই গজাতে থাকে৷''
কাত হয়ে গজানো গাছ দেখলে মানুষজন আজও চমকে যান, খুশি হন৷ তথাকথিত পরিবেশ-বান্ধব, ‘সবুজ' স্থাপত্যেও ইট-কাঠ-পাথরের দেয়াল থেকে কাত হয়ে গজানো গাছ খুব সুন্দর মিলে যাবে৷ গাছে ভরা দেয়াল বাড়ির শীততাপ, আর্দ্রতা ও ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে:
‘‘কাত হয়ে গজানো গাছ বাড়ির দেয়ালে বাগান করায় কাজে দিতে পারে – সবুজ স্থাপত্য! সে ক্ষেত্রে গাছগুলো অবিরাম ঘুরে যাওয়ার ফলে গরম আর ধোঁয়াশা কমানো যায় কিনা, তাও দেখা হচ্ছে৷ আবার ঘোরানো গাছ বাড়িতে ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ কাত হয়ে গজানো ঘুরন্ত গাছ দেয়ালে বসালে তা সুন্দর দেখাবে বৈকি৷''
বিশ্বের সব দেশেই আজ শহরের কেন্দ্রে জায়গা নেই বলে হাই-রাইজ বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে৷ এ যাবৎ গাছপালা সেই সব বাড়ির দেয়ালে লতানো ছিল কিংবা বারান্দার টবে লাগানো ছিল৷ এবার তারা দেয়াল থেকে কাত হয়ে গজাতে পারবে৷
তবে সেটা যে কবে ঘটবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷ আলিনা শিক একটি কোম্পানি সৃষ্টি করে বিনিয়োগকারী খুঁজছেন – তবে তাঁর কাত হয়ে গজানো গাছ বাজারে আসতে আরো কিছুদিন সময় লেগে যাবে৷
চিকিৎসায় ঔষধি গাছের সাহায্য নিন
হাজারো বছর আগে থেকেই নানা অসুখ-বিসুখে ঔষধি গাছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ বর্তমান যুগেও এসব গাছের ব্যবহার আছে, তবে কিছুটা অন্যভাবে৷ সেরকম কিছু ঔষধি গাছের গুণাগুণ নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Fotolia/Theißen
ঔষধি গাছ
হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ অসুখ-বিসুখে ঔষধি গাছের পাতা, শেকড় ও রস ব্যবহার করে আসছে৷ সে সময় প্রায় সবাই বাড়ির আঙিনায় স্বাস্থ্যকর ফুল, গাছ আর লতা-পাতা লাগাতো৷ মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব অসুখের জন্যই কোনো না কোনো ঔষধি গাছ রয়েছে৷
ছবি: Marina Lohrbach - Fotolia.com
হজম ক্ষমতা বাড়ায় মৌরি
মৌরি যে হজম শক্তি বাড়ায় সে কথা বোধ হয় আর কারো অজানা নেই৷ জার্মানিতে মৌরির চা খুবই জনপ্রিয়৷ খাবারের পরে অনেকেই এই চা পান করেন৷ শুধু বড়রা নয়, ভালো হজমের জন্য ছোট্ট শিশুদেরও মৌরি চা পান করানো হয়, যা শিশুদের জন্য আলাদাভাবে প্রক্রিয়াজাত করা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাথাব্যথায় পুদিনা পাতা
প্রাকৃতিক ওষুধে বিশেষজ্ঞ ডা. জেসিকা ম্যান্টেল বলেন, ভয়, উত্তেজনা কিংবা মানসিক চাপের কারণে মানুষের মাথাব্যথা হয়ে থাকে৷ তখন বেশিরভাগ মানুষই চট করে ট্যাবলেটের দিকে হাত বাড়ায়৷ তবে এসব ক্ষেত্রে পুদিনা পাতার চা বা কপালে তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায় বলে জানান তিনি৷
ছবি: Fotolia/gaai
মাইগ্রেনে ল্যাভেন্ডার
মিষ্টি রং-এর ল্যাভেন্ডার ফুলও কিন্তু মাথাব্যথায় বেশ উপকারি৷ বিশেষ করে মাইগ্রেনের মতো জটিল মাথাব্যথায়৷ মাইগ্রেনের সময় ল্যাভেন্ডার ফুল নাকের সামনে কিছুক্ষণ ধরে রাখলে ফুলের উগ্র গন্ধ ব্যথা কমিয়ে বেশ আরাম দেয়৷
ছবি: DW / Nelioubin
কোমর ও হাড়ের ব্যথায় গোলমরিচ
অনেক সময় দেখা যায় ঘুম থেকে ওঠেই শরীরে কেমন যেন ব্যথা ভাব অনুভূত হয়৷ হতে পারে বিছানার তোশক বা অন্য কোনো কারণ৷ আবার কখনো কোনো কারণ ছাড়াই কোমর বা শরীর ব্যথা হতে পারে৷ এই অবস্থায় গোলমরিচের সাহায্য নিতে পারেন৷ কারণ গোলমরিচের ঝাঁঝ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে৷
ছবি: Fotolia/macroart
রসুনের গুণ
পাশ্চাত্যের দেশগুলো থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রসুনের ব্যবহার অনেক বেশি৷ রসুন যেমন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, তেমনি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়৷ এছাড়া রসুন উচ্চরক্তচাপ কমায় এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া হিসেবে কাজ করে৷ জার্মানদের রান্নাঘরে আজকাল রসুনের ব্যবহার বাড়ছে৷ রসুনের ট্যাবলেট ছাড়াও পাওয়া যাচ্ছে রসুনের জুস৷
ছবি: Fotolia/Floydine
দারুচিনি
কোলেস্টেরেল কমাতে সাহায্য করে৷ এছাড়া এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখতে সাহায্য করে৷ হৃদরোগ প্রতিরোধেও দারুচিনি ভূমিকা পালন করে৷
ছবি: Fotolia/Floydine
লবঙ্গ
ফুলের মতো ছোট্ট সুন্দর লবঙ্গ রুচি ও খিদে বাড়ায় এবং কাশি দূর করে৷ লবঙ্গ শরীরে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে এং দাঁতের ব্যথা সারাতে কার্যকর৷ লবঙ্গ তেলের রয়েছে জীবাণু ধ্বংসের ক্ষমতা যা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কাজ করে৷